somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘কর্পোরেট শপথ’··· বন্ধ হোক এ বায়ুরথ?

২৯ শে মে, ২০০৯ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১·
ছুটছে শপথ যান, একটি নয় তিনটি। ঘুরে ঘুরে শপথ সংগ্রহ করছে। কাদের? যারা বৃদ্ধ (কিছুদিন পর মারা যাবেন) এবং যারা কিশোর বা স্কুলবয় (যারা কিছুদিন পর খেলতে খেলতে খেলা ভেবেই ভুলে যাবে)।

২·
টুকটুকে লাল বউ সেজে ছুটছে লাল মাইক্রোবাস। ধুলো উড়িয়ে সব বদলে দেবে গাড়িগুলো। যেমনটা হেলিকপ্টারের পাখার বাতাসে ধানতে-পাটতে-খড়ের চালা উড়িয়ে নিয়ে পিষে ফেলে গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে বেড়াতেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান··· অনেকটাই কি তেমন না? লাল মাইক্রোবাস থামছে আর শপথ টোকাচ্ছে। কাদের শপথ? কত শতাংশের শপথ? কমপ ে১০০ জনের সাথে আলাপ করে নিশ্চিত হয়েছি, এই সংখ্যা কোনো ভাবেই মোট জনসংখ্যার ২/৩ শতাংশের বেশী না। দেখা যাক শপথ কয়টা ওঠে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় বসানো শপথ টেবিলে কিছু ছেলেপেলে দেখেছি, যারা প্রতিদিনই একাধিক শপথ লিখছে। মোট হিসাবে এরাও কিন্তু থাকবে··· বুঝতে হবে।

৩·
প্রথম আলো খেপেছে। অনেক শপথ চাই। কোটি ছুঁতেই হবে··· যদিও দেশের কোটি লোক একটা পুরো বাক্য লেখতে পারে কি-না সন্দেহ··· তা নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। কোটি ছোঁয়ার চাপটা এসে পড়ছে বন্ধুসভার এ প্রজন্মের ক’টা বোকাসোকা ছেলে-মেয়েদের ঘাড়ে। এরাই পাতার পর পাতা জুড়ে হাতের লেখা-কালি-কলম বার বার বদলে বদলে লিখে যাচ্ছে শপথের পর শপথ। এত শপথ সাপ্লাই দেয় কে? এটাই প্রশ্ন।

৪·
শপথের একটা মজা দেখলাম। যে যে যার যার ত্রে নিয়েই শপথ করছে। ব্যাতিক্রম দু’একজন আছে। তবে চালাকরা নিজের কর্মËেত্রই শপথ সীমাবদ্ধ রাখতে ভালোবাসছে। এটা ভালো। প্রফেশনাল। তবে প্রফেশনালদের শপথে জাতির কতটুকু কি যায় আসে? প্রফেশনালরা যে কেবলই পুঁজিবাজারের লভ্যাংশ চেটে-পুটে খেয়ে গরীবের দিকে কেবল ‘আ- হা- রে- ’ ছাড়া আর কিছুই কখনো বলেননা। প্রথম আলোর ডাকে যারা শপথ নিচ্ছেন এবং সেই শপথ আট-কলাম বিজ্ঞাপনে স্থান পাওয়ায় নিজেকে ধন্য ও গর্বিত মনে করছেন, ফ্রান্সের গিমে জাদুঘরে আমাদের প্রাণের শিল্পকর্মগুলো যাবার সময় এবং দু-দুটো মুর্তি চুরি যাওয়ার পর তারা কোন গর্তে ছিলেন?
প্রথম আলো··· প্রথম আলো···
ডাক শুনে সব গর্ত থেকে বেরিয়ে এলো?

৫·
শপথ আসছে কাগজে কলমে, শপথ আসছে এসএমএস-এ। কোজ-আপ ওয়ান-এর সূত্রে এসএমএস লেখার অভ্যাসটা বাঙালির বেশ ভালোই হয়েছে। স্বার জ্ঞান সম্পন্ন লোকের চেয়ে এসএমএস জ্ঞান সম্পন্ন লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম না। এজন্য বলছি যে, কোজ-আপ ওয়ান সভ্যাতার প্রথম বর্ষে আমি ৪/৫ বছর বয়সের শিশুদেরও দেখেছি দোকানো গিয়ে দিনে কয়েকবার এসএমএস করতে। ময়মনসিংহ বেড়াতে গিয়ে সেসময় আমার এক আত্মীয়ের সাড়ে চার বছর বয়সী শিশুটিকে আবদার রার্থে আমিও জনৈক নোলক বাবুর প দোকান থেকে এসএমএস করার জন্য নগদ ১০ টাবা দিয়েছি। এবারও কি তেমন হচ্ছে? হয়তো না··· শপথ বলে কথা। ওই ২/৩ শতাংশের বাইরের মানুষগুলো যার এক্কেবারেই বাইরে। তবে এমন তো হতেই পারে যে, আলপিন··· থুক্কু··· রাস+আলোতে জিজ্ঞাসা ছাপানোর মতো প্রথম আলোর কোনা-কাঞ্চিতে শপথের সাথে নামটা যদি ছাপায়, এই বাসনায় কেউ কেউ সারাদিন বসে বসে দুর্দান্ত ক্রিয়েটিভ সব শপথ বানাচ্ছে আর এসএমএস করছে। হতেই তো পারে···। ভালোই তো! শপথ একই সঙ্গে মতিবাবুর পুত্রধনের বানিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের পুত্র-কন্যাধনদের ক্রিয়েটিভিটি বাড়াচ্ছে!! তবে এটুকু ঘোষণা মতিবাবু না দিলেও আমিই দিয়ে দিলাম- ‘শপথ পাঠান··· শপথ লিখুন, যার যত ইচ্ছে, সংখ্যা কোনো ব্যাপার না, তাই সারাদিন শপথ লিখুন আর পাঠিয়ে দিন ০৪২০ নম্বরে··· ডাইরেক্ট মতিবাবুর হাতের মোবাইলটিতে···’।

৬·
সব শপথ টোকানো হয়ে গেলে কি হবে? অনেক কিছু হবে শুনছি। এমনও শুনেছি যে, অনেক বড় স্পন্সর জুটেছে। স্পন্সর হালাল করতেই নাকি ট্রাস্ট বানানো হয়েছে··· ‘প্রথম আলো ট্রাস্ট’। এই স্পন্সরের টাকায় কঙ্বাজার বিচে নাকি বিশাল শপথ প্রদর্শনী হবে বলেও শুনছি। কেউ কেউ বলছে, এর সাথে নাকি বিশ্বকাপ ক্রিকেটেরও একটা সম্পর্ক আছে। বাণিজ্যটা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।

৭·
শপথের বিষয়টা আসলে কি? শপথ কি ভেবে করা উচিৎ? না-কি যা মনে হলো তাই লিখে দেয়া? আগে জানতাম যে প্রথমটি ঠিক। প্রথম আলো সূত্র জানিয়েছে, ঠিক দ্বিতীয়টা। না হলে দেশের এক-দুই-তিনের মধ্যে থাকা বুদ্ধিজীবীটিও লিখে বসলেন, ‘বাসার ছোট কাজের ছেলেকে স্কুলে পাঠাবো’। বিস্ময়কর··· তবুও ওনার বাসায় ছোটো কাজের ছেলে রাখতেই হবে! ইটস্‌ কল কর্পোরেট শপথ। বোঝা গেছে এবার?

৮·
শপথ সংগ্রহ প্রক্রিয়া শুরুর আগে প্রথম আলোতে খবরাখবর ছাপা হতো ৩০/৩৫ শতাংশ, বাদবাকি ছাপা হতো বিজ্ঞাপন। শপথের পর খবর কমে দাঁড়িয়েছে ১৫/২০ শতাংশে। বিজ্ঞাপনেরও জায়গা কমেছে। পাক্কা ৪০ শতাংশ দখল করেছে ‘শপথ’। ফিচার পাতার অবস্থা তো যাচ্ছেতাই। সবগুলো ফিচার পাতাও শপথে টইটুম্বুর··· এমনকি স্বাস্থ্যপাতাটাও··· ডাক্তারদের শপথে। একটা ডাক্তারকেও দেখিনি বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে সেবা দেয়ার শপথ নিতে। আবারো কর্পোরেট শপথ।

৯·
প্রথম আলোর সর্বশেষ সাফল্যের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের বারোটা বাজানোর কাজটা ছিলো অন্যতম। প্রথম আলো পড়েই জেনেছি এবং শিখেছি যে রাজনীতিবিদরাই এদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এখনো প্রথম আলো’র পাতায় পাতায় বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের প্রতি বিষেদাগার অব্যহত আছে। তো ভাই, শপথে তো এদেরই বেশী দরকার। রাজনীতিবিদদের শপথ বিষয়টাতে মতিদাদু চুপ যে?

১০·
শপথ বিষয়ে ভুল ধরলাম অনেক। এবার একটু জ্ঞান দেই। শপথ এমন হলে কেমন হয়-
“ আমি শপথ করিতেছি যে, জাতির সম্পত্তি সংগ্রহ করে তা একাত্তরের চিঠি নামে পুস্তক আকারে ছাপালেও এর স্বত্ব নির্লজ্ব বেহায়ার মতো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করিয়া নিজের নিজের দখলে রাখার মাধ্যমে যে বিকৃত মস্তিষ্কের পরিচয় দিয়াছি, তাহা আর কখনোই করিবো না।”
মতিদাদুও তো একটা শপথ লিখবেনই··· দেখা যাক সেটা কি হয়?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০০৯ রাত ১১:০২
১৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×