অজানাকে জানার স্পৃহা মানুষের চিরন্তন। বাক্যস্ফুরণ আরম্ভ হইলেই শিশু প্রশ্ন করিতে থাকে এটা কি? ওটা কি? বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্কুলে,কলেজে ও কাজে-কর্মে অনুরূপ প্রশ্ন চলিতে থাকে এটা কি,ওটা কি,এরূপ কেন হইল,ওরূপ কেন হইল না ইত্যাদি। এই রকম ‘কি’ ও ‘কেন’র অনুসন্ধান করিতে করিতেই মানুষ আজ গড়িয়া তুলিয়াছে বিজ্ঞানের অটল সৌধ। প্রশ্নকর্তা সকল সময়ই জানিতে চায় সত্য কি? তাই সত্যকে জানিতে পারিলে তাহার আর কোন প্রশ্নই থাকে না। কিন্তু কোন সময় কোন কারণে কোন বিষয়ের সত্যতায় সন্দেহ জাগিলে উহা সম্পর্কে পুনরায় প্রশ্ন উঠিতে থাকে।
(আরজ আলী মাতুব্বর)
কিছু প্রশ্ন নানা দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কে দিবে এর উত্তর?
পৃথিবীর সর্বোচ্চ খরচে কেন রাস্তা নির্মান করতে হয়?
পৃথিবীর মধ্যে সরবোচ্চ খরচে রাস্তা নির্মাণ করে আওয়ামী লীগ সরকার; প্রতি কিলোমিটার ৯৫ কোটি টাকায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ ব্যয় ১০ কোটি টাকা। আর চীনে তা গড়ে ১৩ কোটি টাকা। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৫৩ কিলোমিটার চার লেন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০২৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হবে প্রায় ৯৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে শতভাগ সরকারি অর্থায়নে। ফলে মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয়ে বিশ্বে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। এ ছাড়া রংপুর-হাটিকুমরুল মহাসড়কের ১৫৭ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীতকরণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১৭৫ কোটি টাকা, কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে ৫২ কোটি ৭ লাখ টাকা। আর ঢাকা-সিলেট ২২৬ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২,৬৬৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ৫৬ কোটি ৪ লাখ টাকা। সারা দেশে মোট ১৭৫২ কিলোমিটার ৪ লেইন করা হচ্ছে। উচ্চ খরচ হলেও কাজের অতি নিম্নমান চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে নতুন রাস্তা ৬ মাসের মধ্যে ভেঙ্গে গেছে।
দি ডেইরি ষ্টার ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, জুন ২১, ২০১৭ / সর্বশেষ সংশোধিত: ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, জুন ২১, ২০১৭ থেকে জানা যায়-
প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে প্রতিবেশী ভারত ও চীনের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশ। এই বাড়তি খরচের জন্য উচ্চ মাত্রায় দুর্নীতি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া ও দরপত্রে প্রতিযোগিতা না থাকাকে দায়ী করেছে বিশ্বব্যাংক।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে গতকাল বিশ্বব্যাংক তার ঢাকা অফিসে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের সাথে অন্যান্য দেশে অবকাঠামো নির্মাণ খরচের একটি আনুষ্ঠানিক চিত্র তুলে ধরে বৈশ্বিক ঋণদানকারী সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংক জানায়, চার লেন সড়ক নির্মাণের মধ্যে রংপুর-হাটিকুমরুল মহাসড়কে সড়কের প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৬৬ লাখ ডলার, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৭০ লাখ ডলার, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে এক কোটি ১৯ লাখ ডলার, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২৫ লাখ ডলার ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ২৫ লাখ ডলার খরচ নির্ধারিত হয়েছে।
অন্যদিকে চার লেন সড়ক তৈরিতে ভারতে ১১ লাখ থেকে ১৩ লাখ ডলার ও চীনে ১৩ লাখ থেকে ১৬ লাখ ডলার খরচ হয়।
এই হিসাব অনুযায়ী ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার খরচ ভারতের কিছু সড়কের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি।
কেন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছি?
২৪ জুলাই, ২০১৬, ‘গ্লোবাল সিটিজেনস ফোরাম অন সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট সামিট-২০১৬’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘দরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি টিআর ও কাবিখা-র বরাদ্দের ৮০ শতাংশই চুরি হয়ে যায়। ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হলে ১৫০ কোটি টাকা যায় এমপির পকেটে। বাকি ১৫০ কোটি টাকার সিংহভাগ যায় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের পকেটে। আমরা চোখ বন্ধ করে এই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছি।’
রাজকোষ কাদের হাতের ছাপে নিয়ন্ত্রিত?
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৫০০০ কোটি টাকা রিজার্ভ চুরির চেষ্টা হয়- ৮’শ কোটি টাকা নিয়ে পগার পার। দেশবাসী আরও জানতে চায় কেন দেশের আইটি সেক্টরকে অবহেলা করে বিদেশী লোক বা আইটি গ্রুপের হাতে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড তুলে দেয়া হয়? ৪ দেশে তৈরি হওয়া সফটওয়্যারের সমপর্যায়ের সফটওয়্যার কেন বিদেশ থেকে বেশি দামে কেনা হচ্ছে? তা কি উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয়? ৫
পিসিনিউজ২৪.কম ২৩ এপ্রিল ২০১৬, ড. তুহিন মালিক তার ফেইসবুক পেইজে লিখেছেন, অর্থমন্ত্রীকে কেন বলতে হয়েছিল, “ছয়জন লোকের হাতের ছাপ ও বায়োমেট্রিকস নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভে আছে। নিয়ম হলো, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়—এভাবে ষষ্ঠ ব্যক্তি পর্যন্ত নির্দিষ্ট প্লেটে হাত রাখার পর লেনদেনের আদেশ কার্যকর হবে।“
তাহলে কি, এই ছয়টা হাতের ছাপ বাংলাদেশ ব্যাংকের কারো নয়? যে ছয়জনের হাতের ছাপ ও বায়োমেট্রিকস নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভে আছে তারা কি বাইরের কেউ? তাহলে এখন সরকারকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে, রাজকোষ কাদের হাতের ছাপে নিয়ন্ত্রিত?
বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, কোথায় হারালো আজকে তারা?
বাংলাদেশের পুলিশ, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, ইঞ্জিনিয়ার সহ বিভিন্ন প্রোজেক্টের অফিসারদের প্রত্যেকের শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। দুদকের সদ্য বিদায়ী কমিশনার শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সম্পদের পরিমান ৮০০ কোটি টাকার মতন। সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল (যিনি রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন) মামলা তোলার কন্ট্রাক্ট নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন।
আর কত টাকা আর সম্মান পেলে থামবে এই অভিযান?
খবরে প্রকাশ, কোন এক ব্যাপক প্রভাবশালীর (?) আমেরিকার এক একাউন্টেই আছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বা ২৫০০ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্র সরকার আরো একাউন্ট আছে বলেও, দাবী করে। এ পর্যন্ত সে ১৭ দফা নগদ ডলার নিয়ে ঢুকেছে যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকো চেকপোষ্ট দিয়ে, পাসপোর্ট চেক করলেই পাওয়া যাবে। একবারেই ধরা পড়েছে ৯ লাখ নগদ ডলার ইউএস এয়ারপোর্ট কাস্টমসের কাছে। সেবার বাংলাদেশ এম্বেসী মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়, কিন্তু ডলার বাজেয়াপ্ত হয়।
কেন এই অর্থ পাচার?
মে, ২০১৬, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বাজেট রিপোর্টিং বিষয়ক এক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, গত ২০১৩ সালে দেশ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার তথা প্রায় ৭০ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যে টাকা দিয়ে তখনকার হিসাবে তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভবপর ছিল। সাবেক গভর্নর বলেছেন, দেশের অনেকের সঙ্গে বিদেশের দুষ্টচক্র টাকা পাচারে জড়িত!
সুইটজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশটির ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় প্রায় বিশ শতাংশ বেড়েছে।এই অর্থের পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় নিবাস বা সেকেন্ড হোম নির্মাণ কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণের তালিকায় বাংলাদেশিরা তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।
সুইস ব্যাংকগুলোতে এবছর বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ প্রায় বিশ শতাংশ বৃদ্ধির খবর এসেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে।ঢাকায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি'র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলছিলেন, সুইস ব্যাংকের হিসাব প্রকাশ হওয়ার পর অর্থ পাচারের ইস্যু আবার সামনে এসেছে।কিন্তু গত কয়েকবছরে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ বিদেশে গেছে, তার একটা ছোট অংশ সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
রবীন্দ্রনাথের প্রশ্ন
ভগবান, তুমি যুগে যুগে দূত, পাঠায়েছ বারে বারে
দয়াহীন সংসারে,
তারা বলে গেল “ক্ষমা করো সবে’, বলে গেল “ভালোবাসো–
অন্তর হতে বিদ্বেষবিষ নাশো’।
বরণীয় তারা, স্মরণীয় তারা, তবুও বাহির-দ্বারে
আজি দুর্দিনে ফিরানু তাদের ব্যর্থ নমস্কারে।
আমি-যে দেখেছি গোপন হিংসা কপট রাত্রিছায়ে
হেনেছে নিঃসহায়ে,
আমি-যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে
আমি-যে দেখিনু তরুণ বালক উন্মাদ হয়ে ছুটে
কী যন্ত্রণায় মরেছে পাথরে নিষ্ফল মাথা কুটে।
কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে, বাঁশি সংগীতহারা,
অমাবস্যার কারা
লুপ্ত করেছে আমার ভুবন দুঃস্বপনের তলে,
তাই তো তোমায় শুধাই অশ্রুজলে–
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো।
আরও তথ্য দেখুন:
শ্বেতপত্র- ২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:০৬