এক.
২৬ মার্চ জাতির পিতা প্রথম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত বেতার ভাষণে বলেছিলেন, ‘আজ আমি যখন আমার সোনার বাংলার দিকে তাকাই তখন দেখতে পাই যুদ্ধবিধ্বস্ত ধূসর পাণ্ডুর জমি, ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রাম, ক্ষুধার্ত শিশু, বিবস্ত্র নারী, আর হতাশাগ্রস্ত পুরুষ। ‘… ১৯৭২ সালে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ‘স্বাধীনতা অর্জন করলেও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে সব সময় নির্ভর করতে হবে বিদেশি সাহায্যের ওপর। ‘ বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন- ‘বাংলাদেশ হলো একটা তলাবিহীন ঝুড়ি, এখানে যতই সাহায্য দেওয়া হোক, কোনো কাজে আসবে না। ‘ বাংলাদেশের গৌরবময় অভ্যুদয়ের পর বারবার ঘুরে-ফিরে বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্নটিই বড় হয়ে এসেছিল। ১৯৭২-৭৩ এ বিশ্বব্যাংকের প্রধান রবার্ট ম্যাকনামারা ‘বাংলাদেশ’ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের সব সময়ই বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভর করেই চলতে হবে। এভাবে চলতে থাকা যেকোনো রাষ্ট্রের জন্যই অসম্ভব।’
মার্কিন অর্থনীতিবিদ ডাগলাস মন্তব্য করেছিলেন, ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মডেল হবে এ দেশটি। ‘ এ সময় অনেকে ‘বাংলাদেশ’ কত দিন স্বাধীন থাকবে, তা নিয়ে গবেষণাও করেছেন। এদের মধ্যে দুজন ছিলেন মার্কিন অর্থনীতিবিদ ডাস্ট ফাল্যান্ড এবং পারকিনন্স। বাংলাদেশকে তারা ‘উন্নয়নের পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। তারা বলেছিলেন ‘বাংলাদেশে যদি উন্নয়ন সম্ভব হয় তাহলে বিশ্বের যে কোনো দেশেই উন্নয়ন সম্ভব। ‘
দুই.
১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ ছিল এক দুঃখিনী মা। অভাব-অনটনে, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ, বন্যায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুপথযাত্রী এক রাষ্ট্র। বাংলাদেশ মানেই চোখের সামনে ভেসে উঠত এক কঙ্কালসার মানুষের মুখচ্ছবি আর অরাজকতার চিত্র।
তিন.
স্বাধীনতার এত বছর পর আমরা যদি ফিরে দেখি তাহলে দেখব, সামাজিক প্রায় সব সূচকে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। অথচ ১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন ‘দুঃখিনী বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রেই ভারতের চেয়ে পিছিয়ে ছিল। ‘৭১-এ বাংলাদেশের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ছিল ৩৯ বছর ভারতের ছিল ৫০ বছর আজ বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ু ৬৯ বছর, ভারতের ৬৬ বছর। ৭১-এ বাংলাদেশের জন্মহার ছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, ভারতের ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এখন বাংলাদেশের জন্মহার ২ দশমিক ২ শতাংশ, ভারতের ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক এবং বিভিন্ন উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা যত প্রতিবেদন এবং গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে তার প্রায় সবই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক সূচকের অগ্রগতি সম্পর্কে অতীতে বিশ্বব্যাংক এবং ইদানীং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) যা বলেছিল, তা সব ভুল।
চার.
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের কাছে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের চিঠি তুলে দেওয়া হয়। ছবি: জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন
পাঁচ.
কবিরা সমাজের চিত্র আকেন ভাবনায়। কেউ কেউ প্যারোডি লিখেন, মুল কবিতায় আশ্রয় নিয়ে, সমাজের বাস্তব চিত্রের ব্যংগ করে। এই সময়ে এই প্যারোডি অনেক বেমানান কি?
.
উত্তম ও অধম
মূল: শেখ সাদী
ভাষান্তর : সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
রূপান্তর : ইমতিয়াজ মাহমুদ
.
মানুষ আসিয়া এমন লাথি দিল কুকুরের গায়
লাথির আঘাতে পাঁজরের হাড় ভেঙে গেল তার প্রায়,
ফুটপাতে শুয়ে রাত্রে বেচারা বিষম ব্যথায় জাগে,
ছানাটি তাহার তারি সাথে হায় জাগে শিয়রের আগে।
বাপেরে বলে ভর্ৎসনা ছলে কুকুরের সেই ছাও
তুমি কেন বাবা, ছেড়ে দিলে তারে তোমার কি নেই পাও?
কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল “তুই রে হাসালি মোরে,
পাও আছে বলে মানুষের গায়ে লাথি দেই কেমন করে?
মানুষের কাজ মানুষ করেছে লাথি দিয়েছে গায়,
তা বলে মানুষকে লাইত্থানো কিরে কুকুরের শোভা পায়?”
তথ্যসূত্রঃ
কেমন আছে আমার বাংলাদেশ
সৈয়দ বোরহান কবীর
নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।
ফেসবুক স্ট্যাটাস:ইমতিয়াজ মাহমুদ
প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:২৯