somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘটনা ঘটে যাবার আগে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় না?

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগিটি মারা গেল’- ব্যাকরণ ক্লাসে পুরাঘটিত অতীত কালের উদাহরণ হিসাবে ব্যবহৃত এই বাক্যটির সাথে আমরা সকলেই কম বেশি পরিচিত। স্কুল জীবনের সেই শিক্ষাকে আমরা শুধু একটি উদাহরণের পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না রেখে জাতীয় জীবনের নানা কর্মকাণ্ডে এর প্রয়োগ ঘটাতে শুরু করেছি এবং ক্রমেই এটি একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ফলে রোগির নাভিশ্বাস না ওঠা পর্যন্ত চিকিৎসক রোগির শয্যার পাশে উপস্থিত হবার সময় পান না, কোনো বহুতল ভবন ধ্বসে পড়ার পরে খোঁজ নেয়া হয় ভবনটির নকশায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছিল কিনা এবং কোথাও দাঙ্গা হাঙ্গামা শুরু হলে দু চারটি লাশ পড়ার পরেই কেবল পুলিশ সেখানে হাজির হয়। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার দিকে চোখ ফেরালে এই হাইপোথিসিস সত্য বলে প্রমাণিত হতে পারে।

এ মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর নন্দীপাড়া ইস্ট পয়েন্ট এডুকেশন স্কুল এ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে কুলসুম ঋতু যখন একদল বখাটের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তারপরে তার স্কুলের সহপাঠি ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকগণ মানব বন্ধন করেছেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদানের। এলাকাবাসী একটি সম্ভাবনাময় মেয়ের অকাল মৃত্যুতে শোক ও সহানুভূতি প্রকাশের পাশাপাশি দোষীদের গ্রেফতারের দাবীতে বিক্ষোভ করেছেন। এমনকি পুলিশ পর্যন্ত প্রধান আসামী উত্যক্তকারী শিমুল চন্দ্রের কথিত এক সহযোগীকে গ্রেফতার করার মতো তৎপরতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। অথচ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং ইেিলক্ট্রনিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে সহজেই অনুমান করা যায় ঋতুর স্কুলের শিক্ষক, পাড়া প্রতিবেশীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ একটু তৎপর হলেই এই প্ররোচনাজনিত মৃত্যু রোধ করা সম্ভব ছিল।

বন্যা ঝড় জলোচ্ছাসে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মতো সামাজিক কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনার আভাস দেওয়া হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু একটি গ্রামে বা শহরে পাড়া মহল্লায় বসবাসকারী মানুষ কি তার নিজের জনপদে ঘটে যাওয়া নিত্যদিনের ঘটনা থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখেন? তারা কি চারপাশের ঘটনা থেকে কিছুই আঁচ করতে পারেন না? তারা কি ধোঁয়ার আভাস পেলেও আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠার জন্যে অপেক্ষা করবেন?

কোথাও কোনো ঘটনার আভাস পেলে বিলম্বে প্রতিক্রিয়া দেখানো অথবা সমসাময়িক কোনো ধরনের ঝুট-ঝামেলায় একবারেই একবারেই না জড়ানো আমাদের নাগরিক সমাজে এখন অবশ্য খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে করা হয়। সবক্ষেত্রে গা বাঁচিয়ে চলার এই সুশীল শ্রেণির রীতিতে অভ্যস্ত মানুষ নিজের ঘরে ডাকাত পড়ার আগে পর্যন্ত সব কিছুই ঠিকঠাক চলছে মনে বেশ নিরাপত্তাজনিত সুখ অনুভব করেন। অন্যদিকে নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত তারা প্রায় সকল সময়েই সবল প্রতিপক্ষের পক্ষ অবলম্বন করেন। সেই কারণেই ঋতুর গার্মেন্টস শ্রমিক বাবা মার আর্তি পুলিশের দরজা পর্যন্ত পৌঁছায় না, কিন্তু হত্যা মামলার আসামি শিমুলের বাবাকে গ্রেফতার না করে নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে দেয়ার পরে জনরোষ থেকে বাঁচাতে পুলিশই তার বাড়ি পাহারা দেয়
সামাজিক ঘটনাবলীর মতো সড়কে-মহাসড়কে, রেলপথে এবং জলযানে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও বড় রকমের কোনো বিপর্যয় না ঘটলে সব কিছু স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে। আমরা অপেক্ষা করে থাকি একটি মিরেশ্বরাই অথবা পিনাক-৬ এর জন্যে এবং তারপরেই কেবল সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে একটু নড়াচড়া লক্ষ করা যায়। ভূমিকম্প ছাড়াই যখন রানা প্লাজার মতো বহুতল ভবন ধ্বসে পড়ে যখন সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, তখনই এই ভবনের কাগজপত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

গত এগারোই সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাওরান বাজারের এলাকার লেভেলক্রসিং সংলগ্ন এলাকায় দুটি ট্রেনের মাঝখানে পড়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন একজন কৃষি কর্মকর্তা ও একজন ফেরিওয়ালাসহ দুইজন নারী। রেল লাইনের পাশে প্রতিদিনের ভাসমান বাজার এই দুর্ঘটনার কারণ বলে জানিয়েছেন বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ মানুষ। এমন কি পুলিশের ভাষ্যেও জানা গেছে কমলাপুর থেকে মহাখালি পর্যন্ত অরক্ষিত রেল লাইনের পাশে সকাল সন্ধ্যায় এ সব অনুনোমোদিত বাজার বসার ফলে ইতিপূর্বেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ সব ‘ছোটখাট’ দুর্ঘটনা যথারীতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে অথবা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে বলা যায়, রেল কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও পুলিশ এবং স্থানীয় মাস্তানদের সহযোগিতায় গত চল্লিশ বছর ধরে বছরের পর বছর টিকে আছে এ সব বাজার এবং বস্তি।

একসঙ্গে চারজনের মৃত্যু এবং আরও অন্তত পনের জনের গুরুতর আহত হবার বিষয়টি সম্ভবত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছে, এবারে কিছু একটা করা দরকার। ফলে নতুন করে শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান এবং রেল লাইনের দুপাশে কাঁটাতারের বেড়াসহ মানুষের চলাচল বন্ধ করতে নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতার কথাও ভাবা হচ্ছে। অথচ এখানে যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে- এই সত্যটির প্রতি বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এতা মৃত্যুও কোনো প্রয়োজন ছিল না। তথ্যগুলো সংশ্লিষ্ট সকলের নিশ্চয়ই জানা আছে, ঢাকা নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা টঙ্গির মাত্র ৪০ কিলোমিটার রেলপথে ৫৮ টি লেভেলক্রসিং, যার ২৩টিরই অনুমোদন নেই। এই রেলপথে বাজারের সংখ্যা ২০ থেকে ২৫টি আর বস্তিবাসী মানুষের সংখ্যা কয়েক হাজার।

মাননীয় নৌ পরিবহন মন্ত্রী সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, ফিটনেস বিহীন লঞ্চ পাওয়া গেলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর কথা নিশ্চয়ই মিথ্যা আশ্বাস নয়, ব্যবস্থা হয়তো নেয়া হবে। যেমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ‘পিনাক-৬’ এর ক্ষেত্রে তিন শতাধিক মানুষের জীবন এবং স্বজন হারানো অসংখ্য নারী পুরুষের কান্নার বিনিময়ে। একটি ঈদের পরে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরার সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি মিলিয়ে যাবার আগেই আরও একটি ঈদ আসছে। অসংখ্য ফিটনেস বিহীন লঞ্চ, অনুমোদনহীন ট্রলার এবং অদক্ষ চালকের হাতে চলাচলের অযোগ্য মোটরযান অবাধে জলে-স্থলে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে। প্রয়োজন দেখা দিলে এদের কারও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তাও আমাদের জানা। তবে তার জন্যে আমাদের আরও একটি বড় দুর্ঘটনার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×