মনার বাপ: অ মনার মা কই গেলা? মনার মা ও মনার মা।
মনার মা: আইতাছি, কি মনার বাপ আইজক্যা তাড়াতাড়ি আইলা কেন? (তার একহাত পঙ্গু)
মনার বাপ: গাড়ি আর চালামু না, গাড়ি দিয়া আইছি মালিকেরে।
মনার মা: কেন মনার বাপ? তাইলে এত বড় সংসার চইলব ক্যামনে?
মনার বাপ: কেন মনার মা তোমার ক্ষতি পূরণের টেহায়!
মনার মা: এত বড় সংসার চলব! এই টেহায়? আমি দিমু না টেহা। তুমি কাম কাজ কর।
মনার বাপ: তুমি আমারে টেহা দিয়া দেহ ক্যামনে আমি সংসার চালাই!
মনার মা: আমি দিমু না তোমারে টেহা।
মনার বাপ তখন মনার মাকে একহাত চেপে ধরে। আর চাবি খানা নিয়ে টাকা নিয়ে চলে যায়।
উপরোক্ত কথোপকথনটি রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত মহিলা ও তার স্বামীর। রানা প্লাজায় পঙ্গু বরণকারী মহিলার স্বামী সংসার চালানোর নাম করে তার টাকাগুলো নিয়ে যায়। যদিও তাদের ভাষায় টাকাগুলো ক্ষতিপূরণের টাকা ছিল, কিন্তু টাকাগুলো ছিল প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দেওয়া জনগণের সাহায্যের টাকা। সরকার আজ পর্যন্ত এক টাকাও ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেয়নি। সরকার আজ রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে মহিলাটির স্বামীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আছে। নিম্নে কিছু নমুনা দেখুন:
ইতিহাসের ভয়াবহ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে ৫ হাজার এর অধিক শ্রমিকের পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্বশেষ তথ্যমতে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। চিরদিনের জন্য পঙ্গু বরণ করেন ৮৫০ জন শ্রমিক ও আহত হয় প্রায় ২ হাজারের অধিক শ্রমিক। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সাহায্য দেন ১২৭ কোটি টাকা। ১২৭ কোটি টাকা থেকে নিহত ৯০৯ জনের পরিবারকে দেওয়া হয় ২২ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৭২০ টাকা মাত্র (সূত্র: বাংলা নিউজ)। কিন্তু বাকি ১০৪ কোটি টাকা কই? উত্তর প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে আছে। তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল কি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের না দিয়ে ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখার জন্য? ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৩ হাজারের শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ৯০৯ জনকে এই সাহায্য করা হয় বাকি শ্রমিকগুলো কিভাবে দিন কাটাচ্ছে এই কথা কি ভাবেনি কেউ? চাকুরী হারানো ৫ হাজার শ্রমিকের মধ্যে সরকার ৭৭৭ জনকে ও বিজিএমই ১১৪ জনকে চাকুরী দেয়। কিন্তু প্রশ্ন বাকি ৪ হাজারের অধিক শ্রমিক কিভাবে দিন কাটাচ্ছে? রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার ১৫ মিলিয়ন ডলার জমা করে এই টাকা গুলো কই? নিশ্চয় শ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে! তাহলে প্রতিদিন শ্রমিকরা সাহায্য ও ক্ষতিপূরণের জন্য আন্দোলন করছে কেন? শ্রমিক চোষা বিজিএমই নাকি মাত্র ১৪ কোটি টাকা সাহায্য করে? তাদের কি শুধু এই টাকার সামর্থ্য? সরকার আজও পর্যন্ত এক টাকাও ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেয়নি। বরং সাহায্যের ১০৪ কোটি ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখা হয়! এই কথাটি বলার পর আমার এক বন্ধু বলল দেবে, সরকার নিশ্চিত ক্ষতিপূরণ দেবে! আরে ভাই নিজের বিয়ের উলিমা স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দেওয়ার মত!
আসলে এই রকম ট্র্যাজেডি হলে লাভ হর্তা কর্তাদের। চিরদিন আমরা ছোটলোক ছোটলোকই থেকে যাব। আমাদের কান্না কেউ দেখে না আর দেখবে না। সরকার ও মহিলাটির স্বামীর মধ্যে কোন তফাৎ দেখতে পাইনা।
সার ক্লাসে দাঁড়িয়ে রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করলো। কিন্তু আমি দাঁড়াতে পারিনি। আমার বিবেক আমাকে দাঁড়াতে দেয়নি। আমরা শুধু লোক দেখানো কাজে ব্যস্ত থাকি! কিন্তু যদি বলা হত যে যে ধর্মের অনুসারী সবাই নিজ ধর্ম থেকে তাদের জন্য প্রার্থনা কর। তাহলে কি একটু লাভ হতনা? লোক দেখানো জাতি হিসাবে বাঙালী আজ আত্মপ্রকাশ করছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:০২