একবার ইষ্টার্ণ প্লাজা থেকে রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলাম। বাংলা মোটরের ট্রাফিক জ্যামে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখলাম, পরিচিত একটা মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে। রিকশাওয়ালাকে বললাম, রিকশা সাইড করতে। বলেই মেয়েটার কাছে গেলাম, জিজ্ঞ্যেস করলাম, রুমকি ( আসল নাম না) কি হয়েছে? রুমকি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল ।যতদূর জানতাম ও শুধু ভাল ছাত্রীই ছিল না ব্যাক্তিগত ভাবেও একজন ভাল মানুষও ছিল।
মেয়েটি আমাকে দেখে আরো কাঁদতে লাগলো। বললাম আসো আমার সঙ্গে, রিকশায় ওঠো। রিকশায় ওঠার পর ওকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে আসলাম। পুরোটা রাস্তায় মেয়েটা কাঁদছিল, কিছুই বলছিল না। অনেকক্ষণ পর রুমকি যখন শান্ত হলো আমি ওকে জিজ্ঞ্যেস করলাম, বলোতো কি হয়েছে?
রুমকি উত্তর দিলো, ও আজ ভার্সিটির বাসে উঠতে পারেনি। তাড়া ছিল তাই শাহবাগে এসে বিআরটিসির পাবলিক বাসে উঠেছিল।ভীড়ের মাঝে বসার জায়গা পায়নি। পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন আপত্তিকর ভাবে ওর গায়ে হাত দিয়েছে। রুমকি পিছন ঘুরে দেখে মধ্য বয়সী ভদ্র চেহারার এক লোক এমনটা করে ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। ও প্রথমে একটু সরে গিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু লোকটা ওর পিছন ছাড়ছিল না। আবারো পূনারাবৃত্তি ঘটালো সেই ঘটানার। এরপর আর সহ্য করতে পারেনি রুমকি। জোরে কষে একটা চড় মারলো লোকটার গালে। আশে পাশের লোকরা জিজ্ঞ্যেস করলো কি হয়েছে? কি সমস্যা? ঐ লোকটা বললো, আমার মোবাইল ফোন চুরি জন্য পকেটে হাত দিয়েছে তাই হাত ধরে ফেলাতে আমাকে চড় মারলো, এই কথা বলে নাকি লোকটা ওকে সবার সামনে উল্টো চড় মেরেছে। বাসের লোকেরা রুমকিকে জিজ্ঞ্যেসও করেনি কি হয়েছে? সবাই মিলে অপমান করে বাংলা মোটরে বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছে।
আজ অনেকদিন পর রুমকির সঙ্গে যোগাযোগ হলো। রুমকি খুব ভালো আছে। পড়ালেখা শেষ করে আজ সে দেশের একটি নামকরা স্কুলে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে কাজ করছে। আর বাসের সেই লোকটির খবর জানিনা। সম্ভবত এখনও বাসে বাসে একটি নারী শরীর খুঁজে বেড়াচ্ছে।
ফারজানা কবীর খান (স্নিগ্ধা)