somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেদারল্যান্ড ভ্রমণ। উইন্ডমিল, চিজ ফ্যাক্টরি, কাঠের জুতার ফ্যাক্টরিতে ঘুরাঘুরি

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৭:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাস্টারডামে একটা সিটি বাস ট্যুর আরেকটা ক্যানেল বোট ট্যুর শেষ করে পরের দিনের জন্য উইন্ড মিল, চিজ ফ্যাক্টরি আর হলান্ডের বিখ্যাত কাঠের জুতার ফ্যাক্টরি দেখার জন্য টিকেট কেটে নিয়ে আসলাম। ট্যুরিষ্ট বাস ছাড়ার আধা ঘন্টা আগেই ট্যুরিষ্ট অফিসের সামনে মিটিং পয়েন্টে আমাদের চেক ইন দিতে বলে দিয়েছিল।



নিদির্ষ্ট সময়ে সব কিছু শেষ করে ট্যুরিষ্ট বাসে বসার পর সবার হাতে একটা করে হেড ফোন দিয়ে দিল গাইড। গাইড প্রথমেই তার নাম পরিচয় দিয়ে আমরা আজকে কোন কোন জায়গায় যাবো তার কথা বলে আবার কয়টায় আমাস্টারডাম ব্যাক করবো তা বললো। বাস চলছে আর গাইড সব কিছুর বর্ণনা দিচ্ছে। আমাদের প্রথম গন্তব্য উইন্ডমিল। আগে যখন নেদারল্যান্ড পানিতে ডুবে থাকতো তখন এই উইন্ডমিল দিয়ে পানি সরানোর ব্যবস্থা করা হতো, মশলা , আটা এসব ভাংগার কাজ করা হতো উইন্ডমিল দিয়ে। উইন্ডমিল বাতাসের মাধ্যমে চলে। পানির নিচে ডুবে থাকতো বলে সেই শতশত বছর আগে নৌকায় ছিল তাদের একমাত্র বাহন। এই উইন্ডমিলে কাঠ কাটার কাজ হত, সেই কাঠ দিয়ে নৌকা, জাহাজ বানানো হত।






এই কাঠ উইন্ডমিলে কাটা হয়



আমরা উইন্ড মিল এলাকাতে যখন গেলাম নামার আগে গাইড বলে দিল যে আবার কয়টায় আমাদের বাস ছাড়বে, বললো এক মিনিট দেরি করে কেউ আসলেও কারো জন্য বাস অপেক্ষা করবেনা। আমরা সবাই উইন্ডমিল এলাকাতে যে যার মত ঘুরে দেখছিলাম, ছবি তুলছিলাম। আমি ভাবলাম দুই চার মিনিট দেরি করলে আর এমন কি সমস্যা।






দূরে তাকিয়ে দেখি জাহাজ ব্রিজের নিচ দিয়ে আসার সময়, পুরা ব্রিজ উপরে দাঁড়িয়ে গেছে।



ঘুরেফিরে আমি আর আমার ছেলে কয়েক মিনিট পর এসে দেখি বাস আমাদের ছেড়ে চলে গেছে পরের গন্তব্যে। তারা যে সময়ের এমন যথাযথ ব্যবহার করে নিজে ভুক্তভুগি নাহলে বুঝতাম না। তারপর বাস না পেয়েতো আমার অবস্থা খারাপ, একদিকে এতগুলি টাকা দিয়ে আজকের জন্য টিকেট কাটলাম আবার অচেনা দেশে আমাষ্টারডামই কি করে ফিরবো সেই চিন্তায় অস্থির। আমি যে ট্যুর অফিসের থেকে টিকেট কাটলাম সেই অফিসের আরেকটা বাস দেখে সেই বাসের গাইডের কাছে সাহায্য চাইলাম, সে বলে তাদের বাসে কোন সিট নেই, পরের বাসের জন্য যেন অপেক্ষা করতে, পরের বাস আসার পর গাইড নিজেই আমাকে খুঁজে বের করে বলে তুমি বাস মিস করেছো, সমস্যা নাই আমাদের বাসে সিট খালি আছে দুইটা, তুমি আমাদের সাথে জয়েন করো।


উইন্ডমিল এলাকার আশেপাশে মাঠ ভর্তি ভেড়া






আমাদের দেখাচ্ছিল কিভাবে চিজ তৈরি করা হয়

তারপর উইন্ডমিল এলাকাতে তাদের সাথে আরো একবার ঘুরে আমরা গেলাম চিজ ফ্যাক্টরি। হলান্ডের চিজ বিশ্ব বিখ্যাত। চিজ ফ্যাক্টরিতে আমাদের প্রথমে দেখালো কিভাবে দুধ থেকে চিজ তৈরী করা হয়। তারপর বিভিন্ন রকম চিজ সবাইকে দিল টেষ্ট করার জন্য। এরপর আমাদের নিয়ে গেল চিজের শোরুমে। ওখানে নানা রকম চিজ সাজানো আছে। আছে চিজ কাটার নানা যন্ত্র। সবাই ব্যাগ ভর্তি করে চিজ কিনেছে, কেউ কেউ বিভিন্ন স্টাইলে চিজ কাটার যন্ত্রও কিনেছে।


নানা ডিজাইনের চিজ



চিজ ফ্যাক্টরি দেখার পর গাইড আমাদের নিয়ে গেল সাগর পাড়ে। ওখানে সি ফুড, ওয়েফার, ওয়াইন সহ নানা খাবার। সবাইকে বিভিন্ন খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গাইড একটা জাহাজ দেখিয়ে বললো আমরা যেন ঠিক সাড়ে চারটায় জাহাজে থাকি, জাহাজ আমাদের নিয়ে যাবে কাঠের জুতার ফ্যাক্টরিতে, গাইড বললো সেও অই জাহাজেই থাকবে। সিফুড অর্ডার করলাম, সিফুডের সাথে এক গ্লাস ওয়াইন ফ্রি। আমি যেহেতু ওয়াইন খাইনা তাই শুধু সিফুড আর কফি খেয়েছি। আগের বার সময়ের মূল্য না দেওয়াতে শিক্ষা হয়েছে, এবার তাই আরো ১০ মিনিট আগেই জাহাজে উঠে বসলাম।










আমাদের জন্য এই জাহাজ ঠিক করা ছিল, সাগর পাড়ি দিয়ে কাঠের জুতার ফ্যাক্টরি দেখার জন্য

জাহাজের দোতলায় খোলা ছাদের নিচে বসে সাগরের ঢেউ দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম হলান্ডের বিখ্যাত কাঠের জুতার ফ্যাক্টরিতে। জাহাজ থেকে নামার পর গাইড আমাদের বলছিল এই এলাকার লোকজন কত কষ্ট করেছে যখন পানিতে তাদের ডুবে থাকতে হতো, আর তখনি এই কাঠের জুতা তারা তৈরি করেছিল । জুতার ফ্যাক্টরিতে আমাদের দেখানো হল এক টুকরা কাঠকে কিভাবে মেশিনে জুতার আকৃতি দেওয়া হয়, তারপর মেশিনের আর কাজ নাই, সব কিছু করতে হয় হাতে। ওখানেও আছে কাঠের জুতার বিশাল শোরুম। আমাদের ঘন্টা খানেক ফ্রি টাইম দেওয়া হলো যাতে সবাই ঘুরেফিরে দেখতে পারে, জুতা কিনতে পারে। অনেকেই জুতা কিনেছে, এই জুতা পড়ার চেয়ে ডেকোরেশনেই বেশি ব্যবহার করা হয়। ওখানে বেশ কিছুক্ষন থেকে আমরা কিছুদূর হেটে এসে আবার ট্যুরিষ্ট বাসে ফিরে আসলাম আমাস্টারডাম। ট্যুরিষ্টদের জন্য ট্যুর অফিস থেকে সব কিছু এত সুন্দরভাবে অর্গানাইজ করা যে দেখে মুগ্ধ হতে হয়।


এখানে এসে আমাদের জাহাজ থেমেছে


এই গ্রামেই আমাদের নিয়ে আসা হয়,জুতার ফ্যাক্টরি দেখতে, গ্রাম যে এত সুন্দর হয় তা দেখেই মুগ্ধ






জুতা তৈরির প্রথম ধাপ














কাঠের তৈরি টিউলিপ






জুতার ভেতর ফুলের চাষ





সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৭:৫২
৩২টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×