সিলেটের রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট এর নাম ও ছবি অনেক দেখেছি। এবার টার্গেট ছিল এটা দেখতে হবেই। সবাই বলে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট আর আমি বলি পানির উপর বন। আবার অনেকে বলে জলাবন। যেহেতু পুরা বনটাই পানির উপর তাই পানির উপর বন বা জলাবনই উপযুক্ত নাম।
এটা বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন এবং বন্যপ্রাণী অভ্যারণ্য, যা সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত।বনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১একর। আর এরমধ্যে ৫০৪ একর বনকে ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এটি পৃথিবীর মাত্র কয়েকটি জলাবনের মধ্যে অন্যতম একটি বন।
মেইন রাস্তা পার হয়ে আমরা এই গ্রামের রাস্তায় চললাম রাতারগুলের দিকে
চিরসবুজ এই বন গুয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত এবং চেঙ্গিস খালের সাথে একে সংযুক্ত করেছে। এখানে সবচেয়ে বেশি জন্মায় করচ গাছ। বর্ষাকালে এই বন ২০/৩০ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। বাকি সারাবছর পানির উচ্চতা ১০ ফিটের মত থাকে। বর্ষাকালে এই বনে অথৈ পানি থাকে চার মাস। তারপর ছোট ছোট খালগুলো হয়ে যায় পায়ে চলা পথ। আর তখন পানির আশ্রয় হয় বন বিভাগের খোঁড়া বিলগুলোতে। সেখানেই আশ্রয় নেয় জলজ প্রাণীকুল।
ঐ দেখা যাই গুয়াইন নদী
নদীর পাড়ে এসে আমরা নৌকা ভাড়া নিলাম।
আমরা মেইন রোড পার হয়ে একটা গ্রামের ভেতর ঢুকে গেলাম। রাস্তা খুবই খারাপ, সেই খারাপ রাস্তা দিয়ে চললাম গোয়াইনঘাট নদীর পাড়ে। নদীর পাড় আসার সাথে সাথেই নৌকার দালাল আমাদের ধরলো, তার অনুমতি ছাড়া এবং তার ঠিক করে দেওয়া দাম ছাড়া নাকি কেউ নৌকা দিবেনা। প্রথমে ভাড়া তিন হাজার চাইলেও পরে আমরা দেড় হাজারে ঠিক করে নৌকা নিলাম। নদীর পাড়ে ছোট ছোট বাচ্চারা রোদ থেকে মাথা বাচানোর জন্য এক রকম ক্যাপ আর লাইফ জ্যাকেট ভাড়া দেয়, তাদের থেকে আমরা প্রতিটা ২০ টাকা করে ভাড়া নিলাম।
এই পিচ্চিরা মাথায় দেওয়ার ক্যাপ আর লাইফ জ্যাকেট ভাড়া দেয়, সারাদিনের জন্য একেকটা ২০ টাকা।
এই আমাদের নৌকা
আমাদের মাঝির নাম মজনু। মজনু মিয়া আমাদের নিয়ে চললো রাতারগুল পানির বনে। আমরা যে পাশ থেকে নৌকায় উঠলাম সেখান থেকে বন খুবই কাছে। এখানকার নৌকার সবচেয়ে যা ভালো লেগেছে তা হচ্ছে নৌকায় ইঞ্জিন নাই, হাতে চালিত সব নৌকা।
আমরা রাতারগুলে নৌকা নিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম কেউ কেউ নদী থেকে তাজা মাছ ধরে বিক্রি করছে।
সবগুলি মাছ মাত্র দেড় হাজার টাকায় আমাদের দিতে চাইলো কিন্তু আমরা ঘুরতে গিয়ে মাছ দিয়ে কি করবো, তাই আর কেনা হয়নি।
আমাদের সাথে ছিল নিয়াজ ভাই, উনি আগেও এই রাতারগুল ঘুরেছেন তাই সব কিছু জানা উনার। উনি মাঝিকে বললেন প্রথমে আমাদের বনের ভেতর যে ওয়াচ টাউয়ার আছে সেখানে নিয়ে যেতে, ওয়াচ টাওয়ার থেকে নাকি পুরা রাতারগুল মন দেখা যায়। আমরা নৌকা ওয়াচ টাওয়ারের কাছে রেখে সিঁড়ি দিয়ে একদম উপরে উঠলাম। উপর থেকে পুরাটা বন দেখতে একদম ডিমের আকৃতির মত লাগছিল।
ওয়াচ টাওয়ার
ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখা বন
এই ছেলে বনের মধ্যেই নৌকায় বসে চা, বিস্কিত, ঝাল মুড়ি সহ আরো অনেক কিছু বিক্রি করে। আমরা চা আর বিস্কিত কিনে খেয়েছি। চা বেশ মজার।
আমাদের নৌকার মাঝি। সে খালি গলায় আমাদের চমৎকার একটা গান শুনিয়েছে।
আমরা অনেকক্ষণ ছিলাম উপরে, অনেক ছবি তুললাম।তিন বা চার তলা উচ্চতার সমান হবে ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ার থেকে নেমে দেখি বনের মধ্যে নৌকায় এক মাঝি চা,ঝালমুড়ি, বিস্কিত বিক্রি করছে। আমাদের মাঝিকে বললাম আমাদের নৌকা ওখানে নিয়ে যেতে। রাতারগুল পানির বনে নৌকায় বসে আরেক নৌকা থেকে আমরা চা বিস্কিত খেলাম। পুরা বন ঘুরে দেখার মত সময় ছিলনা আমাদের, তাই অল্প একটু ঘুরেই আমরা চলে এসেছি।
আমরা যখন রাতারগুল বনে গেলাম তখন ভরা বর্ষা, পুরা বন পানির নিচে, শুধু গাছের মাথা উপরে জেগে আছে। আমরা যখন ঘুরছিলাম মনে হচ্ছিল আমরা গাছের মাথার উপর দিয়ে নৌকায় ঘুরছিলাম।
আমরা যখন রাতারগুল থেকে বের হয়ে আসি, তখন দেখি আরো অনেকেই নৌকা নিয়ে বন ঘুরতে যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ ভোর ৪:৩৯