somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাঁটার সিরিজ: পর্ব ৩: হাঁটার ভুল নিয়ম ও সাবধানতা

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব: ২ এ হাঁটার নিয়ম গুলো জেনেছেন| সেখানে বলেছিলাম হাঁটার ক্ষেত্রে সব সময় মনে রাখতে হবে যে-- পুরা শরীর কে সঠিক posture এ রেখে, হাত ও পা ব্যবহার করে, মন স্থির করে, পর্যাপ্ত শক্তি দিয়ে হাঁটতে হবে|হাঁটা যতই সোজা ব্যায়াম মনে করুন না কেন, হাঁটার নিয়ম জানার পাশাপাশি হাঁটার ভুল দিক গুলো ও সতর্কতা জানতে হবে| তাহলেই হাঁটা সঠিক হবে ও হাঁটার ফল পাওয়া যাবে| আপনার কষ্ট সার্থক হবে| কারণ এত কষ্ট করে হাঁটবেন আর সেটা ঠিক নিয়মে হচ্ছে কিনা সেটা না জানলে হাঁটার সময়টি নষ্ট হবে|
আমি দেখেছি অনেকেই হাঁটার সময় posture এর দিকে মনোযোগ দেয় না, মেরুদন্ড সোজা করে হাঁটে না| এতে শারীরিক সমস্যা, যেমন: ব্যাক পেইন,নেক পেইন, ইত্যাদি হয় ও দেহের গঠন নষ্ট হয়ে যায়|
তাই হাঁটার নিয়ম গুলো যখন জেনেছেন, তাই হাঁটার ভুল নিয়ম গুলো জেনে নিলে সঠিক ভাবে হাঁটতে সাহায্য করবে|
তাছাড়া যেকোনো ব্যায়ামেরই সতর্কতা আছে, তাই হাঁটার সতর্কতা গুলোও মেনে চলা দরকার|তা না হলে যেকোনো বিপদ বা শারীরিক সমস্যা হতে পারে|

হাঁটার যে ভুল নিয়মগুলো এড়িয়ে চলবেন:

ওয়ার্ম আপ ও কুল ডাউন না করা|
অধিক সময়, যেমন: ৩০ মিনিট হাঁটলে, ওয়ার্ম আপের পরে স্ট্রেচিং না করা|
শরীর সামনে বা পেছনে বাকানো| এতে ব্যাক মাসেলে চাপ পড়ে সমস্যা হতে পারে|
মেরুদন্ড বা ব্যাকবোন বাকানো |
নিচের দিকে মাথা হেলানো বা তাকানো| এতে আপনার ঘাড়, কাঁধ ও ব্যাকে সমস্যা বা ব্যথা হতে পারে|
হাঁটার সময় হাত দুটো ব্যবহার না করা
হাঁটার সময় হাত দুটোকে বেশি চেপে বা বাকিয়ে পেছনে নেয়া| এতে আপনার হাতে যেমন বেশি চাপ পড়বে, তেমন আপনার ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে|
সামনে আগানোর সময় পা দুটোকে কোনাকুনি বা বাকা ভাবে বাড়ানো|
হাত দুটো শরীরের প্রায় সাথে না লাগিয়ে সামনে বা পাশে প্রসারিত করা| হাত দুটো বেশি সামনে ও পেছনে নেয়া|
পায়ের পাতা ফেলার সময় আগে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে তারপর গোড়ালি দিয়ে হাঁটা| এতে আপনার পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে|
থপ থপ করে শব্দ করে হাঁটা বা কোমরে চাপ দিয়ে হাঁটা | এতে আপনার পায়ে বা কোমরে ব্যথা হতে পারে|
বড় বড় স্টেপ ফেলে(overstride) আগানো ভুল নিয়ম|এতে অতিরিক্ত শক্তি খরচ হবে, কোমরে চাপ পড়বে| ফলে, আপনি পরে আর হাঁটার শক্তি পাবেন না|
সব সময় একই গতিতে হাঁটা ভুল| ধীরে ধীরে হাঁটলে তেমন লাভ নেই| দ্রুত গতিতে হাঁটতে হবে, যাকে বলে হন হন করে হাঁটা|
অনেক পুরানো, আরামদায়ক নয়, খুব ভারী বা ছোট জুতা পরে হাঁটা|
খুব আটসাট ও ভারী পোশাক পরা|
সাথে ভারী ব্যাগ ও অনেক জিনিস নিয়ে হাঁটা
হাঁটার দিকে মন না দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে ও মন খারাপ করে হাঁটা
হাঁটার সময় বই পড়া ও হাঁটতে হাঁটতে অন্য কাজ করা|
ভরপেট খাবার খেয়ে সাথে সাথে হাঁটবেন না|
হাঁটতে হাঁটতে একবারে অনেক বেশি যেমন দুই তিন গ্লাস পানি খাবেন না |
খালি পেটে বা ক্ষুধার্ত অবস্থায় হাঁটবেন না| তাহলে শক্তির অভাবে হাঁটা সঠিক হবে না, হাঁটায় মন বসবে না|
সপ্তাহে একদিন হলেও শরীর কে বিশ্রাম না দেয়া| শরীরকে বিশ্রাম না দিলে আপনার ব্যায়াম কাজে আসবে না কারণ, বিশ্রামের ফলে মাসেল তৈরী হবে, শক্তি ফিরে আসবে ও ব্যায়াম কাজ করবে| |
অনেক সময় ধরে, যেমন: ২/৩ ঘন্টা হাঁটবেন না| এতে আপনি খুব ক্লান্ত হবেন, পরবর্তিতে আর কোনো কাজ করতে পারবেন না| তাছাড়া অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়| সব কিছুই করতে হবে পরিমানমত| তাই অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের জন্য ভালো নয়--এটা মনে রাখবেন|
নিচের ভিডিওটি দেখুন ও হাঁটার ভুল নিয়ম গুলো জানুন:

[youtube Click This Link

বাইরে হাঁটার সাবধানতা :

বাইরে হাঁটতে গেলে একজন সঙ্গী থাকলে ভালো, বিশেষ করে যাদের কোনো শারীরিক সমস্যা আছে, যেমন: ডায়বেটিস, প্রেসার ইত্যাদি
সাথে অবশ্যই মোবাইল, পরিচয় পত্র, নাম,ঠিকানা, বাসার বা আত্মীয়-স্বজনের ফোন নাম্বার, ইত্যাদি রাখা উচিত
ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেসারের রোগীরা ডাক্তারের নির্দেশ মত হাটবেন
হার্ট, কিডনি, লিভার, arthritis ইত্যাদির কোনো সমস্যা থাকলেও ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে হাঁটুন|
পায়ে বা শরীরের কোথাও কোনো ব্যথা, ফুলা ইত্যাদি থাকলে, হাঁটবেন না|
ব্যাক পেইন থাকলে ডাক্তারের নির্দেশ নিয়ে হাঁটতে হবে|
জ্বর বা কোনো রকম অসুখ নিয়ে হাঁটবেন না| সুস্থ্য হয়ে হাঁটবেন|
রাতের বেলা খুব নির্জন জায়গায় হাঁটতে যাবেন না
দিনের বেলা ব্যস্ত রাস্তায়, কোলাহল পূর্ণ রাস্তায় না হাঁটাই ভালো
খোলামেলা, পরিষ্কার, মুক্ত বাতাস পূর্ণ জায়গায় হাঁটতে হবে
শরীর খারাপ লাগলে অবশ্যই হাঁটা বন্ধ করে দিবেন
একটু ক্লান্ত লাগলে অল্প পানি খেয়ে নিবেন ও ভালো লাগলে হাঁটা শুরু করবেন
হাঁটতে হাঁটতে কোনো খাবার খাবেন না|
হাঁটার ঠিক আগে ক্যাফেইন যুক্ত পানীয়, যেমন: চা, কফি খাবেন না| এগুলো শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে পানিশুন্যতা সৃষ্টি করতে পারে|
হাঁটার আগে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন যুক্ত খাবার, অধিক ক্যালরি,ফ্যাট, ও শর্করা যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন| কারণ এগুলো হজম হতে অনেক সময় লাগে| তাই হাঁটার আগে এগুলো খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে|
ভারী খাবার খাওয়ার ৩-৪ ঘন্টা, হালকা খাবার খাওয়ার ২-৩ ঘন্টা, এবং হালকা স্ন্যাকস খাবার ১ ঘন্টা পরে হাঁটবেন| তবে এটি এক এক জনের জন্য এক এক রকম হতে পারে|
একেবারে কিছু না খেয়ে অথবা সারাদিন কিছু না খেয়ে হাঁটবেন না, এতে হাঁটার সময় শক্তি পাবেন না
হাঁটা শেষ করার ১৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা পরে খাবেন|
বেশি ঘাম হলে, অনেক সময় ও অনেক দূরত্বে হাটলে, electrolyte এর ঘাটতি হয়| সেক্ষেত্রে ডাবের পানি বা স্যালাইন খেতে পারেন|
হাঁটার সিরিজ কেমন লাগছে তা জানাতে ভুলবেন না|আশা করি হাঁটার উপর পোস্ট গুলো আপনাদের কাজে লাগবে|
আপনি ফিটনেস বিষয়ে আর কি জানতে চান তা জানান| আর আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন ফিটনেস বাংলাদেশের পোস্ট গুলো| কোন পোস্ট গুলো ভালো লাগছে তা জানাতেও ভুলবেন না| ধন্যবাদ|
ফিটনেস বাংলাদেশের লেখা ভালো লাগলে, ইমেইলে নিয়মিত নতুন পোস্ট পেতে ফিটনেস বাংলাদেশ ব্লগে আপনার ইমেল ঠিকানাটি লিখে subscribe করুন|
আগামী প্রকাশনা: ট্রেড মিলে হাঁটার নিয়ম

Image by: freeworkoutsguide
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×