আজ অনেক দিন পর সিগারেট টা আবার হাতে নিয়েছি। দীর্ঘ ৬ মাস ছুয়েও দেখি নি। কারণ আমি যে প্রমির সাথে কথা দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ প্রমির সাথে খুব ঝগড়া করেছি তাই আবার হাতে নিলাম। মেয়েটার নিজের প্রতি কোনো কেয়ার নেই। সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে চিন্তা। কতো করে বলেছি ভালো করে লেখাপড়া করতে। আমার চিন্তা করতে করতে পরীক্ষায় ২ বিষয় ফেল করছে। আচ্ছা আমাকে নিয়ে কি এতো চিন্তা করতে হয়? তাই আজ খুব রাগারাগি করেছি। হঠাত দেখি পকেটের সুপরিচিত মোবাইল নামক বাক্সটা কেঁপে উঠলো। সাথে আমার হার্ট ও কেঁপে উঠলো। এখন আবার কে? মোবাইল টা তুলে নামটা দেখলাম আমার বাবুনি প্রমি ফোন করেছে। >>হ্যালো (প্রমি) → হুম বলো। >> বিকেলে একটু দেখা করতে পারবা? (কাঁদা কাঁদা কন্ঠে) → হুম পারবো। কোথায় , কখন? >> ৪টার দিকে পার্কে আসবে। → ওকে আসবো। >> ওকে এখন রাখি। . টুট টুট।।।।।।।।। বিকেলে পার্কে বেঞ্চে বসে আছি। দেখি আমার রাজকুমারী আমার গিফট দেওয়া সবুজ শাড়িটা পড়ে এসেছে। আজ খুব সেজেছে। আমি মেয়েটার সাথে যেদিন ঝগড়া করি সেদিন মেয়েটা খুব সাজে। কি আজব মেয়েরে বাবা। প্রমি আমার পাশে বসলো। কিছুক্ষণ পর আবার দাড়িয়ে গেলো। তারপর বললো >> এই তুমি আজকে আবার সিগারেট খাইছো? → কই নাতো। >> একধম মিথ্যা বলবা না। তোমার গায়ে সিগারেট এর গন্ধ এখনো আছে। [ সেকিরে ধরা খেয়ে গেলাম। আর কিছু বলতে পারলাম না। দেখি ও বেঞ্চে বসে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। রাগলে মেয়েটাকে আরো বেশি ভালো লাগে। রাগে গাল দুটো পুরো লাল হয়ে যায়] → প্রমি ও প্রমি,,, >> এই তুমি তোমার ওই অপবিত্র মুখে আমার নাম ধরে ডাকবা না। → প্লিজ এমন করোনা আর কখনও খাবো না। >> প্রমিশ করো। → ওকে প্রমিশ। >> জানো তুমি আমাকে যখন বকেছো তখন অতটা কস্ট লাগে না। কিন্তু যখন জানলাম তুমি আবার সিগারেট খাইছো তখন অনেক অনেক কস্ট পেয়েছি। → ওকে আর কস্ট পেতে হবে না। বললাম তো আর খাবো না। >> ওকে। → আচ্ছা তুমি আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করো কেনো বলতো? এই যে এখন পরীক্ষায় ফেল করছো। আমার কি খারাপ লাগে নি বলো? >> কি করবো? স্যার আমাকে ফেল করায়। → স্যার এর সাথে না তোমার শত্রুতা আছে যে তোমাকে ইচ্ছা করে ফেল করাবে। >> হতেও পারে। → আচ্ছা তোমাকে একটা প্রমিজ করতে হবে। >> কি প্রমিশ? → তোমাকে ঠিক মতো পড়ালেখা করে ভালো একটা রেজাল্ট করতে হবে। >> ওকে প্রমিশ। তবে তোমাকেও একটা কথা দিতে হবে কি? → কি? >> আর জিবনেও কখনও সিগারেট হাতে নিতে পারবা না। → ওকে প্রমিশ জান। . ৬ মাস পর। . আজ প্রমির SSC পরীক্ষার রেজাল্ট দিছে। আমি আর ও পার্কের সেই বেঞ্চে বসে আছি। ও চুপ করে আছে। আমি ভেবেছি ও ফেল করেছে। তাই ঠাস করে একটা চড় দিয়ে বললাম......... → কতোবার বললাম ভালো করে পড়ালেখা করতে। এখন যে পরীক্ষায় ফেল করছো এখন কি হবে? ও আমার দিকে দেখি একটা কাগজ এগিয়ে দিলো। দেখি এটাতো ইন্টারনেট থেকে নামানো মার্কশিট। দেখি ও তো গোল্ডেন A+ পেয়েছে। আমি কি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম..... → আমি বুঝতে পারি নি। আমি ভেবেছি প্রমি তুমি ফেল করেছো। >> কান্না বন্ধ করো। আমি মিষ্টি নিয়ে এসেছি। এবার মিষ্টি মুখ করো। . আমি চোখের পানিকে ধরে রাখতে পারলাম না। । >> আবার কাঁদছো। → ওকে আর কাঁদবো না। আজ আমার আর প্রমির বিয়ে। পারিবারিক ভাবেই বিয়েটা হচ্ছে। আমি ভার্সিটিতে থাকতেই জব করতাম। তাই প্রমির পরিবার আমাকে খুব সহজেই মেনে নিয়েছে। দেখতেও ছিলাম পুরো একপিছ। ২ বছর পর। . ডাক্তার আমাকে একটা বাচ্চা দিয়ে বললো আপনার বউয়ের ছেলে হয়েছে। আর আপনাকে প্রমি ডাকছে। আমি প্রমির কাছে গেলাম। . >> তুমি খুশি হয়েছো? → খুব খুশি, আচ্ছা কি নাম রাখবে আমাদের বাবুটার? → তোমার নাম তো হৃদয়। তোমার নামের সাথে মিলিয়ে রিহান রাখি? →আচ্ছা তোমার পছন্দের নামই রাখো। >> হুম তাইলে রিহান ই রাখবো । আরো ৩ বছর পর। . অফিস থেকে বাসায় ফিরে কলিং বিল দিতে দেখি দরজা খুলে এক লাফে রিহান আমার কোলে উঠলো। তারপর বললো... . >> আব্বু আম্মু না আমাকে আজকে বকেছে। → কেনো আব্বু? >> আমি ভাত খাই নি বলে। তুমি এখনই আম্মুকে বকে দিবে। ওকে? → হুম ওকে। তবে একটা শর্ত আছে। >> কি? → আমার সাথে পেট ভরে খেতে হবে। >> ওকে খাবো। এভাবেই চলতে থাকুক তাদের এই ছোট্ট পরিবারের ভালোবাসা।
ফরিদ আহমেদ হৃদয়
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:০৯