somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুদ্ধতম পরকীয়া (উপন্যাসিকা)

২৭ শে মে, ২০১১ দুপুর ২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পূর্ব প্রকাশনার পর- ২)
দুই / (সম্পুর্ন একত্রে )

“ না পিনা হারাম হ্যায়, না পিলানা হারাম
পি কে হোস্ মে আনা হারাম হ্যায় ।”

বেশ কাটছিলো দিনগুলি । এক একজনকে এক এক রকমের খেলায় মজিয়ে রেখেছিলাম । খেলছিলাম এক এক রকমের খেলা । নেশার ঘোর যে সর্বনাশা । মাঝখানে ঐ ব্যাপারটা না ঘটলে একটা আত্মতৃপ্তি পাওয়া যেত । কে বুঝেছিলো তখন ! এভাবে ফেঁসে যাবো বুঝতে পারিনি । কেন যে এমন একটা জঘণ্য মিথ্যে দিয়ে শুরু করলাম ব্যাপারটা ! নিজের সত্যিকারের জীবনটাকে ঐ একজনের কাছে মিথ্যে বানিয়ে দিলাম । এটা কি আমার একার দোষ, দোষ তো নভেরা’র ও । ও তখন এই নতুন খেলায় আমাকে ঠেলছিলো বলেই না ! এতো লজ্জা আমি এখোন কোথায় রাখবো । এভাবে হেরে গেলাম, খুব বিশ্রী ভাবে ! পৃথিবীর একজন মাত্র মানুষের কাছে হলেও খুব নোংরা হয়ে গেলাম যে । যাকে ভালোবাসিনি, শুধু অভিনয় করে গেছি, তার জন্যে আমার এতো ভাবনা কিসের ! এতো কষ্ট কেন ! একটা নিষিদ্ধ নেশার ঘোর থেকে কেন যে বেড়ুতে ইচ্ছে করছেনা !

নিজেকে ধরা না দিয়েও বেশ তো চলছিলো প্রেম প্রেম খেলা । ক’জনার সাথে যে এরকম খেলা খেলছিলাম, নিজেরই মনে নেই । ইন্টারনেটে এই এক সুবিধে । হাযারো সাইট রয়েছে বন্ধুত্ব পাতানোর । নিজের একটা প্রোফাইল খোলো, চোখে বা মনে ধাঁধা লাগে এমন একখানা রহস্যজনক ছবি দাও, দেখবে পতঙ্গের মতো প্রজাপতি হাজির । তারপর বাঁধভাঙ্গা প্রেমের জোয়ার । যতোদিন ভালো লাগে চালিয়ে যাও । শ্লীল-অশ্লীল যা কিছু আছে মেইলে বা ছবিতে তা পাঠাতে থাকো । দেখবে, শরীর-মন কেমন কেমন যেন শিরশির করে উঠছে । এ এক ধরনের নিষিদ্ধ খেলা, নেশার মতো । এরপরে একদিন না বলে-কয়ে ডুব দাও । দু’পক্ষই জানে, এরকম খেলা হঠাৎ করেই জ্বলে উঠে আবার হঠাৎ করেই নিভে যায় । দমকা বাতাসের মতো । একটুখানি ঘূর্ণি তোলা, উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া সবকিছু তারপরেই সুনসান চারদিক । নো হার্ড ফিলিংস্ ।
নভেরা’র পাল্লায় না পড়লে এ জগতটা আমার জানা হতোনা । কেমন যেন একটা নেশায় পেয়ে গেছিলো । আসলে পুরুষগুলো কি বোকা ! নাকি বোকা বোকা ভান করে থাকে ? সটকেও পরে কেউ কেউ মিথ্যের সত্যটা বুঝতে পেরে । আমিও তো কতজনকে সিকনীর মতো ঝেড়ে ফেলেছি মজাটা লুটে নিয়ে । কিন্তু এ ভাবে তো কেউ বলেনি আমাকে কোনদিন । আমার নির্জলা মিথ্যেটা বুঝতে পেরেও সটকে পরেনি বরং আরো বেশী কাছে এসেছে । আরো গভীর করে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে রেখেছে নিজের কাছে । সবার সাথে তো শুরু থেকেই বানানো গপ্পো বলে গেছি । এক একজনের কাছে একেক রকম । এই ফাঁদটা পাততে গিয়েই যতো বিপত্তি । কেন যে অজস্র মিথ্যের মধ্যে আসল নিজেকে কিছুটা মিশেল দিয়ে তাকে কাছে টানলাম ! আসলে সবটাই কি নভেরা’র দোষ, আমার নিজের কি কোনই ভুমিকা ছিলোনা সেখানে ! একটু যেন মন কেমন কেমন করা !

সেদিন গুমোট গরম ছিলো । ইলেক্ট্রিসিটি নেই বলে ঘামছিলাম খুব । আমার আবার ঐ একটি দোষ, গরম সইতে পারিনা একদম । নাক ঘেমে যায় সবার আগে । নাক ঘামলে নাকি ভালোবাসা পাওয়া যায়, সবাই খুব ভালোবাসে । তাই কি ! এইমাত্রই তো একজনের সাথে এই ভালোবাসা-ভালোবাসা খেলাটাই খেলছিলাম, তাকে কি ভালোবাসা বলে ? টোয়েন্টি - টোয়েন্টি ক্রিকেটের মতো খন্ডকালীন খেলা । অথচ দারুন উত্তেজনাময় । দু’জনেই বেশ জানি এটা ফাঁকি । তারপরেও খেলতে হয় । নেশার লাটিম ঘুরতেই থাকে যে । ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল , নইলে ব্যাটাকে আর একটু নাচাতে ইচ্ছে ছিলো । আর তক্ষুনি নভেরা এসে হাজির । নভেরা এলে সময় যে কোথা দিয়ে কেটে যায়, টের পাইনা কেউ । ঘর সংসারের কাজ বাক্সবন্দী পড়ে থাকে । কি উচ্ছল, প্রানবন্ত মেয়ে । আমার মাঝে মাঝে ওর মতো হ’তে ইচ্ছে করে । সেদিন নভেরাই বলেছিলো, “শীলা, এতোদিন তো কেবল লালটু আলু আলু মার্কা অল্প বয়েসী ছেলেদের সাথে প্রেম প্রেম খেলেছিস । এবার একজন বেশী বয়সের পুরুষ ধর । দেখবি আলাদা এক মজা । বয়স্ক পুরুষের প্রেম যখন উৎলে ওঠে না, তখন দেখবি তোর দু’কুল ভেসে গেছে। এবার দেখি একা একা তুই কদ্দুর যেতে পারিস সাঁতরে ।”
আমি যে কোথাও যেতে পারিনি । আমি যে ডুবতে বসেছি । এতো লজ্জার পরে তো আমার ডুবে মরার ই কথা ছিলো ।

কেন যে আমি তাকে লিখতে গেলাম, “য়্যু রিমাইন্ড মি অব সামওয়ান ভেরী ক্লোওজ ট্যু মাই হার্ট । আই লভ্ড হিম ইন মাই য়্যুনিভার্সিটি লাইফ বাট দ্যাট ওয়্যজ ওয়ান সাইডেড ওনলি, ফ্রম মাই সাইড ।” তিন তিন বার আমি তাকে তার প্রোফাইলে নক্ করেছি । প্রথমবারে সাড়া না পেয়ে জেদ চেপে গিয়েছিলো । শেষে যখন তার সাড়া মিললো, বুঝলাম জিতে গেছি । সে আমার দেয়া এ্যাড্রেসে লিখেছিলো, “হ্যা, ওকে । বন্ধুত্ব হ’তে পারে”।
আমি তড়িঘড়ি মেইলে তাকে অন্য একটি ম্যাসেঞ্জারের এ্যাড্রেস দিয়ে বললাম, এক্ষুনি চ্যাটে কথা বলো । আমার সেলফোনের নম্বর দিয়েছিলাম, দিয়েছিলাম একটা ছবি । তার বয়স তো আমি জানি ই, বিস্তর ফারাক । তোয়াক্কা করলাম না । প্রথমেই তুমি সম্বোধন । একটু ভয় ছিলো মনে, যদি ধরা পড়ে যাই । আমার ভাঙা স্বর সেদিন কি আরো ভেঙে গেছিলো ! ওপাশ থেকে এক মায়া ঝরা কন্ঠের আকুলতা যেন আমার এই অপূর্ণতাকে ঢেকে দিলো পূর্ণতার সুতো বুনে বুনে ।

সে একটি রাত গেছে আমার । কী মধুর, কী আশ্চর্য্য একটি রাত । সে রাত যেন কোজাগরী পূর্ণিমার রাত । বসন্ত বাতাসের সাই সাই রাত। এরকমের রাত আমার আর কাটেনি কারো সাথে । মরি টেনে নেয়া বাঘিনির মতো আমি তাকে টেনে নিয়েছিলাম, আগলে রেখেছিলাম । বুঝলাম , আমি নিজেই নিজের পাতা ফাঁদে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি । কিন্তু ততোক্ষনে ঢিল ছোঁড়া হয়ে গেছে । আমার পাঠানো লম্বা মেসেজটিতে যে কাহিনী আমি তাকে লিখেছি, তা যে তাকে কোনও ভাবে রেখাপাত করেছে কি করেনি, প্রথম রাতের আলাপে তার কনাটুকু রেশ ও আমাকে সে পেতে দেয়নি । তার গভীর সঘন, সহজিয়া বাক্যালাপ তাকে অনন্য করে তুলছিলো । সোজা-সাপ্টা, সাহসী, সংকোচহীন । একদম আলাদা । এরকম মানুষের দেখা আমি পাইনি ।
ন্ .. না তার সাথে আমার দেখা হয়নি ! এরকম একজন মানুষের সাথে আগে কখনও যোগাযোগ হয়নি, এটাই বোঝাতে চাইছি ।
পরের দিন খুব সকালেই তাকে এসএমএস করে লিখলাম, “ এ কাপ অব হট্ কিসেস……” ।
আমিও কি আবেগে ভেসে যাচ্ছিলাম !
নিজেকে সমর্পন করার এ কি তীব্র আকুতি আমার মধ্যে ! যে আমি দিনের পর দিন প্রেম প্রেম খেলা খেলে গেছি অনেকের সাথে অবলীলায়, সে আমার কি হ’লো আজ ! মিথ্যে দিয়ে যার শুরু হয়েছিলো, আমি তাকে সত্যের কাছাকাছি টেনে আনলাম কেন ! আমার কি মতিভ্রম হয়েছে ? এতোদিন তো কেবল নেশাই ধরিয়ে দিয়েছি অনেকের , এবার যে আমি নিজেই নেশার ঘোরে মাতাল । দিকশুন্যহীন এ কোন অথৈ পাথারে এসে পড়লাম আমি ! আমার হোশ ফিরবে তো !

অনলাইনে তার প্রোফাইল পড়ে কারো বন্ধুত্ব পাতানোর কথা নয়, শুধু তার বয়সের কারনে ।বিশেষ করে ইয়াং মেয়েদের তার প্রতি আকর্ষনের কোনও কারন নেই । বিদেশী মেয়েদের কথা আলাদা । ওরা নাকি বয়েসের তোয়াক্কা থোরাই করে । আমাদের বাঙালী মেয়েদের এদিকে সূচীবাই আছে । যদিও প্রোফাইলে দেয়া নিজের ছবিতে অনেক তরুন দেখাচ্ছিলো তাকে । বেশ স্লীম লাগছিলো দেখতে, তরুন কেউ । বয়েস বোঝা যাচ্ছিলো না । অথচ বয়সের ঘরে অন্য অঙ্ক লেখা । ইচ্ছাকৃত ভাবেই বয়স ভাড়িয়েছে ? চেহারাও আহামরি কিছু নয়, প্রথম দর্শনেই ভালোলাগার হয়তো কোনও কারন নেই । আমার কেবল তার প্রোফাইলে লেখা একমাত্র লাইনটা খুব ভালো লেগেছিলো । সচারচর যা কেউ লেখেনা । নিজেকে সবাই খুব উঁচুতে তুলে ধরতে, নিজের গুনগান গাইতেই ব্যস্ত সব সময় । এক একজন যেন স্বয়ং ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির, চরিত্রে রামচন্দ্র । এখানে তার ছিটেফোঁটাও নেই।
কেবল একটি লাইনে নিজেকে সে তুলে ধরেছে এভাবে, “ আমি যা, আমি তাই ” ।
ক’জনার বুকের সাহস আছে এভাবে লেখার ।আমার ভালো লেগেছিলো, আর তাকে একটু বাজিয়ে দেখতে দারুন ইচ্ছে করছিলো । তিন তিনবার তাকে আমি আমন্ত্রন পাঠিয়েছি সাড়া মেলেনি ।
রাগ করে কিনা ! কোনও তরুনীমেয়ের আহ্বানে সাড়া দিতে কোনও পুরুষের এতো সময় লাগার কথা নয় । আমাকে বাজিয়ে দেখতে চাইছিলো কি ! বরং আমিই তো বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম তাকে ।

সেদিন ও ইলেক্ট্রিসিটি ছিলো না । ইলেক্ট্রিসিটি কখন আসবে বা যাবে এগুলো এখন সম্ভবত সবার জানা ।তাই আগেভাগেই হাতের কাজগুলো গুছিয়ে রেখেছি যাতে রাতের বেলা হাতে কোনও কাজ জমে না থাকে । ইন্টারনেটে যেন বসা যায় । আমার যে না বসলেই নয় । কেউ কিছু মনে করবে ? আমার মতো একটি মেয়ে রাতের বেলা ভদ্রস্থ সময়ের বাইরেও ইন্টারনেটে ঘন্টা কাবার করে দেবে, এতে তো মনে করার অনেক কিছুই থাকে । আমার এখানে মনে করার কেউ নেই । থাকলেও কেয়ার করি না । তারা জানে আমি কি চীজ ।
জানালার পর্দ্দা খানিকটা সরিয়ে সামনের খোলা জায়গাটাতে চোখ রেখে গ্রীল ধরে দাঁড়িয়েছিলাম । অন্ধকার তখোন সবে ঘষামাজা করে নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছিলো ধীরেধীরে আরো কৃষ্ণকলি হয়ে উঠবে বলে । আমার মতোই নিজেকে মেলে ধরার ইচ্ছে প্রবল হচ্ছিলো বোধহয় তারও মনের গভীরে কোথাও । প্রতিদিনই এমোন করে নিজেকে মেলে ধরে সাঁঝের অন্ধকার ।
মনটা ভালো লাগছিলো না । ক্লান্তি যেন একটু একটু করে শরীর বেয়ে উঠছিলো । পরিশ্রমের ক্লান্তি, নাকি মনের গ্লানি থেকে উঠে আসা অবসাদ ঘিরে ধরতে চাইছে ! যে খেলাটার নেশা শুরু থেকে এ পর্য্যন্ত তাড়িয়ে তাড়িয়ে রক্তের ভেতর আবেশে নীল হয়ে উঠছিলো তাকে যে এখন আলবিদা বলার সময় হয়ে এলো । একটা কষ্ট । দুঃখ রোমন্থনেরও একটা নিকষ ভালোলাগা আছে । যন্ত্রনা যখন তীব্র যন্ত্রনাময় হতে থাকে তখোন যেন শরীরে কেমন নেশার ঝিম আসতে থাকে । মন তখোনই যেন বলে - আরো আরো । এ যেন হাতের শিরায় ড্রাগ পুশ্ করার মতো । শুধু ঝিম মেরে থাকো । কষ্টের জঠরে জন্ম নেয়া একটা আনন্দ যেন শিরশির করে বইতে থাকে সারা ধমণীতে । একটা আনন্দবোধ হতে থাকে ভেতরে ভেতরে । এ আনন্দ বোধহয় সুখভোগের আনন্দের চেয়েও অনেক তেজী । অন্য রকম চরিত্র এর । ঠিক বোঝানো যায়না তার মাত্রা । যেন চুঁইয়ে চুঁইয়ে গলছে এক একটা ধারা ।
আবার নতুন করে শেষের অভিনয়টুকু করতেও ইচ্ছে করছেনা । কদিন থেকেই আস্তে আস্তে জাল বুনে যাচ্ছিলাম বিচ্ছেদ এর । তাকে লিখেছিলাম কথা বলা যাবেনা, ব্যস্ত থাকতে হবে ক’দিন । সে লেখার পর থেকেই মাঝে মাঝে মনটা উদাস হয়ে যাচ্ছে । এভাবে না হয় ক’দিন চালিয়ে নেয়া যাবে, তারপরে ! শেষের ঘাতক তীরটি কি ধরনের বিষ মাখানো হবে ! কোথায় বিঁধবে তা !
ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসা নভেরার গলা শুনতে পাচ্ছি । আমার মেয়েকে ডাকছে । বড় অদ্ভুত মেয়ে । আমি ওর তল খুঁজে পাইনা । কি ঘোরের মাঝে যে থাকে সারাদিন ।
- “শীলা, তুই বারান্দায় কি করছিস রে একা একা ?” নভেরার গলা ।
- “কিস..ছু নারে । বারান্দায় আসবি ?” বলতে বলতে বারান্দা থেকে ঘরের দিকে ফিরে দাঁড়াই ।
মেয়েকে কোলে নিয়ে বরং নভেরাই এগিয়ে আসে ।
- কি রে, কি হয়েছে তোর ? মুখখানা শুকনো দেখাচ্ছে ।
ভালো করে নযর করে দেখে নভেরা । ও যখোন এভাবে তাকায় আমার খুব ভয় করে । যেন ভেতরটা পড়ে নিতে চায় । ভাগ্যিস আলো নেই । গাঢ় হবো হবো অন্ধকারে আমি অন্যদিকে ফিরে কিছু যেন লুকোনোর চেষ্টা করি ।
- ওম..মা, তুই কাঁদছিলি নাকি ?
নভেরার কথায় চমকে উঠি ।চোখ কি জ্বালা করে একটু, শিরশির ! কথা ঘুরাতে চেষ্টা করি –
- বা… রে কাঁদবো কেন ?
- বাজে কথা বলিস না । তোর চোখে জল ।
- অন্ধকারে তুই কি থেকে কি দেখছিস, তুই ই জানিস ।চোখে কি যেন একটা গেল, পোঁকা-টোকা হবে হয়তো ।তুই একটু দেখতো, কি গেল । বলতে বলতে এগিয়ে আসি নভেরার দিকে । সামিয়া নভেরার কোল থেকে ঝপ করে নেমে আমার গলা ধরে ঝুলে পড়ে । কি হয়েছে, মামনি ? দেখি দেখি । এই আর এক মেয়ে, নভেরার ট্রেনিং পেয়ে পেয়ে পাক্কা বুড়ী হয়ে যাচ্ছে ।আমার বড় আদরের । সামিয়াকে নিয়ে তখনই আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি ।নভেরার জেরা থেকে বাঁচতে চাইছি কি ! অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে নভেরা দু’টো হাত বুকের ঢালুর নীচে আড়াআড়ি ফেলে রেখে চুপচাপ আমাকে দেখতে থাকে । পিছন ফিরে দাঁড়াই তবুও অনুভব করি নভেরার ছোট হয়ে আসা চোখদু’টো আমার পিঠে আমুল বিঁধে যাচ্ছে । অস্বস্তি লাগছে খুব । এযাত্রা ওর হাত থেকে নিস্কৃতি পাবো কিনা ভেবে একটু আৎকে উঠতে হয় । আর তখনই নভেরার গলা, শীলা কথা শুনে যা ।
শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেল কি !

নভেরা আমার ছোটবেলার বন্ধু । পাশাপাশি ঠিক নয় এক পাড়াতেই ছিলাম অনেকদিন, স্কুলেও । নভেরা ছাড়াও আরো বন্ধু যে ছিলোনা তা নয় । তবে কেন যে ওকেই বেশী পছন্দ ছিলো আজও বুঝে উঠতে পারিনি । এরকমটা কারো কারো বেলায় হয় মনে হয় । ভালো লেগে যায় কাউকে কোনও কারন ছাড়াই । আবার কোন কারনটা ছেড়ে কোন কারনটা বেশী জোড়ালো তাও খুঁজে পেতে বিড়ম্বনা । মনিকা তো একদিন বলেই বসলো, কি দেখলি নভেরার মধ্যে যে ওকে ছাড়া তোর একদম দিন কাটেনা ? তারপরেই ওর সহজাত মিস্টি গলায় গেয়ে উঠেছিলো, “ আমার দিন কাটেনা । রাত কাটেনা ….” । আর খিলখিল হাসি । নভেরার মধ্যে আসলে কি ছিলো যা আমাকে টানতো ? আজও বুঝে ওঠা হোলনা আমার । তবে ও যে একলহমায় আমার ভেতরটা পড়ে ফেলতে পারে, এটাতেই আমার যতো ভয় ।

নভেরা যাচ্ছেনা কেন… ?


( চলবে..... অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন তিন/চার দিন )

তৃতীয় অধ্যায় / (প্রথম অংশ)
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×