ভ্রমর কুয়াসার রাত...
পাকুড় বৃক্ষের ডাল বেয়ে নেমে আসা করুন গিরগিটির মতোন কী ভয়ঙ্কর এক একটা রাত অবলীলাক্রমে হেটে আসে কাছে । ভ্রমর কুয়াসার সে রাত তার বাতায়ন খুলে নগ্ন হয়ে এলে সংগোপনে তাকে বাঁধতে হয় অজগরী বাহুডোরে । নিলীমার চিরকালের শরীরি সব উতল-অবতল রেখা সে মন্হনে বিলীন হয়ে গেলে পড়ে থাকে শুধু স্খলনের দাগ । সিঁথির সিঁদুর ধুঁয়ে যায় তার নগ্ন নির্ঝরে । গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে দিলেও সে সব রাতের পবিত্র কৌমার্য্য, কুসুম কোরকের মতো ফুঁটে ওঠেনা কিছুতেই আর । শরীরে আজন্ম লালিত লোমকূপে যে স্বেদ জমে জমে ভারী হয় দিনের ফেরী শেষে, তার কস্তুরী ঘ্রান বিনম্র করজোড়ে হাঁটু গেড়ে বসে থাকে পেতে রাখা বুকের একটুকরো উঠোনে । .........
রোদ্দুরের ডানায় ভর করে উড়ে যাওয়া দিনে নিলীমা শিখিয়েছিলো কি করে ভালোবাসতে হয় ---- জলকলমীর ভালোবাসা যেমন জলের সাথে । শিখিয়েছিলো কি করে হাসতে হয় ---- ঝর্ণার জল, ছলাৎছল যেমন ভাঙে হাসি । দিনমানের সে খেলা সাঙ্গ হলে চুপি চুপি কিশোরী রাত তার অন্ধকারের ঝাঁপি খুলে বসে আরো গভীর সেজে উঠবে বলে । ধীরে ধীরে সে ঝাঁপি থেকে বেরিয়ে, বেলকূঁচি পাতার ফাঁক গলে মেটেল সব গিরগিটি হেটে আসে ভয়ঙ্কর রাত হয়ে । তখন মনে পড়ে, নিলীমা শিখিয়েছিলো কি করে চোখে চোখ রাখতে হয় । কি করে ঝরাতে হয় জল চোখে - শ্রাবন মেঘ যেমন ঝরে ঝরঝর ।
আমি অন্ধকারের চোখে রাখি চোখ । বিজন ঘাসে ছায়ারা দোলে । দোলে টলমল পায়ে শিশিরবিন্দু । রাতের গা বেয়ে বৃষ্টি নেমে আসে ঝিরিঝিরি । তাতে কি মুছে যায় মন-দেয়ালের সব দাগ ?
যদি সব খোলস খুলে ফেলা যেতো .....যদি সব নোলক খুলে ফেলা যেতো ..... যে জাল বুনে গেছে সুযোগ সন্ধানী মাকড়সা তা ছিঁড়ে ছিঁড়ে গিরগিটি রাত অপ্সরা হয়ে উড়ে যেতে পারতো ।
নিলীমা শিখিয়েছিলো কি করে বাঁচতে হয় । বলেছিলো - জীবন যে উপাদান সমৃদ্ধ হবার প্রত্যাশায় থাকে প্রতিদিন, কর্ম তাকে পরিশোধিত করে ; তারই যোগান দেয় । আর এর ফলেই জীবন মরুতে জলসিঞ্চিত হয় ।
তাই নয়ন পলকে সিঞ্চিত করে রেখেছি যতো অশ্রুজল তাকে ঝরতে দেই নিরূপায় বর্ষার মতো করে । যে জোনাকি লুকিয়ে রেখেছি চোখে, তাকে মেলতে দেই শিথিল ডানা। তবুও এ রাতপ্রহর অনাদিকাল ঝুলেই থাকে । প্রতি রাতে নিলীমাকে যতোই ভেঙেচুরে আবার নয়ন মেলে দেখি ততোই রহস্যময়ী হয়ে ওঠে । অশ্রুজল শেষ হয় , শেষ হয়না গিরগিটির মতো হেটে আসা রাতের রহস্য মিছিল ।
শুধু কতোবার টেনে নিয়েছি বাতাস তা গুনে গুনে মেপে যাই জীবন । মূহুর্তগুলি কতোবার শ্বাসরূদ্ধ করে দিয়েছে মাপি তা দিয়েও । হিসেব মেলে না, যেমন মেলেনা নিলীমার হৃদয়তল । অন্ধকারে ভরাভয় বাতিঘরের মতো নিলীমা শুধু ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে । পথ দেখাতে চায় । জলমুকুরে তার ছায়া যে শান্ত রোদের মতো ভাসে, তেমন কনক আভায় ভেসে যাওয়া ভালোবাসাময় এক জীবন খুঁজে ফিরি অন্ধকারে... অন্ধকারে ।
নিলীমা শিখিয়েছিলো কি করেই বা কাঁদতে হয় । তেমন করে কেঁদে কেঁদে কেটে যায় আমার সব ভ্রমর কুয়াসার রাত ..............
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩০