somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

The world is running out of antibiotics... Why? এন্টিবায়োটিকের কথা। দ্বিতীয় পর্ব

১০ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্বগুলির লিংক -
“The world is running out of antibiotics...” এন্টিবায়োটিকের কথা।
The world is running out of antibiotics... Why? এন্টিবায়োটিকের কথা। প্রথম পর্ব

[“বাঁচতে হলে লড়তে হবে” এই সূত্র ধরে ক্ষুদে ক্ষুদে অনুজীবগুলোই এখন মানুষকে প্রতি নিয়ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। মানুষ পড়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে। যে হারে অনুজীবগুলো তাদের বিরূদ্ধে ব্যবহৃত ঔষধগুলোর প্রতি রেসিষ্ট্যান্ট হয়ে যাচ্ছে ততো দ্রুত কিন্তু মানুষ নতুন নতুন ঔষধ নামক অস্ত্র সরবরাহ করতে ব্যর্থ। অনুজীবগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষ “সময়” নামের ফ্যাক্টরটিকে কব্জা করতে পারছেনা কিছুতেই। যথেচ্ছ ব্যবহারে হাতের কাছের সর্বশেষ এন্টিবায়োটিকটিও যদি অকেজো হয়ে যায় তবে আগামী দিনগুলোতে কঠিন কঠিন রোগগুলো থেকে মানুষকে আর বাঁচিয়ে আনা সম্ভব হবেনা।]

ব্যাকটেরীয়ার চরিত্র থেকেই শুরু করি আমরা –

একটি প্যাথোজন (Pathogen) হলো একটি অনুজীব যা কোনও প্রানী, উদ্ভিদ বা পতঙ্গে রোগসৃষ্টির কারন হয়ে দাঁড়ায়। আর এই প্যাথোজেনগুলোর থাকে প্যাথোজেনেসিটি (Pathogenicity) যা তার রোগ সৃষ্টির ক্ষমতাকে বোঝায়। একটি অনুজীব তার এই প্যাথোজেনেসিটির প্রকাশ ঘটায় তার ভ্যিরুলেন্স (Virulence) বা ক্ষতিকারকতা দিয়ে । আর এই ভ্যিরুলেন্স হলো অনুজীবগুলোর সংক্রমন ঘটানোর ক্ষমতার মাত্রার পরিমান। এই ভ্যিরুলেন্সের মাত্রা নির্ভর করবে তার জেনেটিক অথবা জৈবরাসায়নিক অথবা শারীরিক গঠনের বৈশিষ্টগুলোর উপর। যেমন খারাপ বংশের সন্তান খারাপই হবে, ভালো বংশের ভালো।

অনুজীব কর্তৃক সংক্রমনের প্রথম ধাপটিই হলো “কলোনাইজেশান” (Colonization) বা বসতি স্থাপন। যা হলো আপনার শরীরের উপযুক্ত প্রবেশ পথে অনুজীবটির নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা । এই বসতি স্থাপন করতে গিয়ে অনুজীবগুলি আপনার দেহের সেইসব টিস্যুগুলিকেই পছন্দ করে যে সব টিস্যু বাইরের আবহাওয়ার সংস্পর্শে রয়েছে এবং অনেকটাই আদ্র। এই এলাকাগুলো হলো আপনার ত্বক (Skin) শ্বাসনালী (Respiratory tract), পরিপাকনালী (Digestive tract), মূত্রনালী (Urinary tract) এবং চোখের পর্দা (Conjunctiva)। এই সকল এলাকায় যে সকল অনুজীব কলোনী তৈরী করে তারা সাধারনতঃ টিস্যুতে আটকে থাকা যায়, নিজের ভেতরে এমন একটা পদ্ধতি তৈরী করে নেয় এবং আপনার নিজস্ব ডিফেন্স সিষ্টেম বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অব্যাহত চাপকে অতিক্রম করা বা বাঁধা দেয়ার ক্ষমতাও অর্জন করে নেয়। আপনি জেনে অবাক হবেন, আপনার ঐ সকল জায়গাতে যে অনুজীব (নর্মাল ব্যাকটেরীয়াল ফ্লোরা) বিরাজ করে তারা সংখ্যায় আপনার দেহে যে ৫০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ আছে তার চেয়েও কয়েকগুন বেশী। এরা সবাই-ই যে কান কাটা কামাল বা মুরগী মিলনের মতো খতরনাক, তা কিন্তু নয়। অনেক ছোটখাটো মাস্তানের পাশাপাশি কিছু ভালো অনুজীবও আছে এদের মধ্যে। এদেরকে আমরা বলি “সিমবায়োটিক” (Symbiotic)। এরা আপনার শরীরকে আশ্রয় করেই ঘুরে ফিরে বেড়াবে আর আপনার শরীর থেকেই খাবার খেয়ে বেঁচে থাকবে কিন্তু বিনিময়ে তারা আবার আপনার কিছু উপকারও করে দেবে। যেমন- ল্যাকটোব্যাসিলাস। এরা আপনার খাবারের দুগ্ধজাতীয় অংশকে হজমে সাহায্য করবে এবং কিছুটা “ভিটামিন-কে” তৈরী করবে। আছে- ব্যাকটেরয়েডস থিটাআওটামাইক্রন (Bacteroides Thetaiotamicron) যারা আপনার খাবারের উদ্ভিজ জাতীয় খাবারের মধ্যের গুরুপাচ্য অংশকে সহজপাচ্য করতে সাহায্য করবে। এদেরকে আপনি আপনার শরীরের “পেয়িং গেষ্ট” বলতে পারেন।


ছবি - আপনার শরীরে লেগে থাকা যতো অনুজীব ।

কিছু অনুজীব আছে মিনমিনে স্বভাবের। এদেরকে বলা হয় “কমেনসাল” (Commensal)। এরাও আপনারটা খেয়ে পড়েই বেঁচে থাকবে, আপাত নিরীহ দর্শন কিন্তু সুযোগ পেলেই আপনার ক্ষতি করতে ছাড়বেনা। এরা হলো আপনার “নন-পেয়িং গেষ্ট”। যেমন আপনার বাড়ীতে কেউ কেউ বেড়াতে আসে, দু’চারদিন থাকে, খায়-দায়, ঘোরে-ফেরে, নেহাৎ ভদ্দরলোক। কিন্তু তারা চলে গেলে দেখা যাবে আপনার মোবাইলটি হাওয়া, সান-গ্লাসটি নেই, লিপিষ্টিকটা আর খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনকি হয়তো লুঙ্গিটাও নেই ! আপনার শরীরের উপরিভাগে থাকা লক্ষকোটি অনুজীবই এই শ্রেনীর। এরা সুযোগসন্ধানী।
আর কিছু আছে ভয়ঙ্কর যাদেরকে বলা হয় “প্যাথোজেনিক”। এরা শুধু আপনার শরীরে রোগই ঘটায় না আপনার আয়ুষ্কালের বারোটা বাজিয়ে দিতেও পারে।
এইসকল অনুজীব যে কেবল আপনার দেহেই থাকে তা নয়, থাকে আপনার চারপাশের আবহাওয়া আর পরিবেশে, প্রথম পর্বের শুরুতে যে এনভায়রনমেন্ট বা পরিবেশের কথা বলা হয়েছে সেখানে।

ব্যাকটেরীয়ার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে আপনার কিছুটা ধারনা হলো, এবারে জেনে নিন এন্টিবায়োটিকের চরিত্র এবং এর খুটিনাটি কিছু দিক -
১৯২৯ সালের কোনও একদিন স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং “পেনিসিলিন” নামের প্রথম এন্টিবায়োটিকটি আবিষ্কার করে বসলেন নেহাৎ ঘটনাচক্রেই। একটি এ্যাগার ( Agar যা অনুজীবদের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকটা মাছকে আকৃষ্ট করার জন্যে আপনি বড়শীতে যে “আদার” বা “চাড়” বা “ফিড” ব্যবহার করে থাকেন তেমন একধরনের খাবার) পাত্রে ষ্ট্যাফাইলোকক্কাই নামক একটি ব্যাকটেরীয়ার বংশবৃদ্ধি লক্ষ্য করছিলেন ফ্লেমিং। অবাক হয়ে দেখলেন, বংশবিস্তার তো ঘটেই-নি উল্টো ব্যাকটেরিয়াগুলোই মারা পড়েছে। খুঁজে পাওয়া গেলো কারনটি। এ্যাগারের পাত্রটিতে পেনিসিলিয়াম নামের এক ধরনের ছত্রাক বাসা বেঁধেছে। সেই ছত্রাকের নিঃসৃত রসের কারনেই মারা পড়েছে ফ্লেমিংয়ের ব্যাকটেরিয়াগুলি। আবিষ্কার হলো “পেনিসিলিন” নামের প্রথম এন্টিবায়োটিকটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং যুদ্ধের আঘাতজনিত ক্ষতে ব্যাকটেরীয়ার সংক্রমনের অবশ্যম্ভাবীতা ছিলো পেনিসিলিনের থেরাপিউটিক ভ্যালু বা প্রয়োগিক উপযোগীতা মূল্যায়নের একটি প্রেরনা। ১৯৪৬ সাল নাগাদ পেনিসিলিন ব্যাকটেরীয়াল সংক্রমনের চিকিৎসায় সহজলভ্য হয়ে গেলো। প্রথম দিকে ষ্ট্যাফাইলোকক্কাই এবং ষ্ট্রেপটোকক্কাই ব্যাকটেরীয়া দ্বারা সংগঠিত সকল ইনফেকশানের চিকিৎসায় পেনিসিলিন হয়ে উঠলো ধন্বন্তরী। মানুষের দেহের অনেক ইনফেকশানের বিরূদ্ধে এর অবিশ্বাস্য কার্যকরীতা, পাশাপাশি মানুষের টিস্যুর উপর এর কোনও ক্ষতিকারক প্রভাব না থাকার ঘটনাটিই এন্টিবায়োটিক কেমোথেরাপীর মৌলিক নীতিমালাকে সামনে নিয়ে এলো। আর এ থেকেই জীবন রক্ষায় “সিলেক্টিভ টক্সিসিটি” বা বিশেষভাবে চিহ্নিত বিষক্রিয়ার প্রসঙ্গটিও উঠে এলো। ইনফেকশান বা সংক্রমনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত এন্টিবয়োটিকগুলোকে অবশ্যই ব্যাকটেরীয়ারদের বিরূদ্ধেই কার্যকর হতে হবে কিন্তু কোনও হোষ্ট বা প্রানীকোষের উপরে এরা কোনও বিষক্রিয়া বা প্রভাব ফেলতে পারবেনা। তাই বাজারে হরেক রকমের এন্টিবায়োটিকের দেখা পাচ্ছেন আপনি কারন ব্যাকটেরীয়ার উপর একেক শ্রেনীর এন্টিবায়োটিকের কাজের ধরন আলাদা আলাদা। এরা কেউ ব্যাকটেরীয়ার কোষপ্রাচীর তৈরীতে বাঁধা দেয় অর্থাৎ কোষের দেয়াল তুলতে দেয়না যেমন- পেনিসিলিনস, সেফালোস্পোরিনস (সেফালেক্সিন, সেফুরোক্সাইম, সেফট্রায়াক্সন,সেফিক্সাইম,সেফেপাইম)। কেউ কেউ এদের ডি-এন-এ তৈরীতে প্রভাব ফেলে যেমন-ফ্লুরোকুইনোলনস ( সিপ্রোফ্লক্সাসিন, লিভোফ্লক্সাসিন, স্পারফ্লক্সাসিন ইত্যাদি)। কেউ ব্যাকটেরীয়ার প্রোটিন সংশ্লেষনে বাঁধা দিয়ে তাদেরকে ভাতে মারে পানিতে মারে যেমন- টেট্রাসাইক্লিনস, ক্লোরামফেনিকল, এজিথ্রোমাইসিন ইত্যাদি ইত্যাদি।
আপনার সহজ বুদ্ধিতেই আপনি জানেন যে, এন্টিবায়োটিক একটি মারাত্মক রাসায়নিক বস্তু। এই সব রাসায়নিক বস্তু ব্যাকটেরীয়া কোষের বিভিন্ন জায়গাতে মরনঘাতী আঘাত হানে যা উপরেই বলা হয়েছে। অথচ আপনার দেহটিও তো কোষ দ্বারা তৈরী তার কেন ক্ষতি হয়না? হয়না, কারন ব্যাকটেরীয়ার কোষ যা যা দিয়ে যেমন ভাবে তৈরী, আপনার কোষটি কিন্তু তেমন করে তৈরী নয়। যেমন - ব্যাকটেরীয়ার কোষপ্রাচীর তৈরীতে “পেপটাইডোগ্লাইকেনস” নামক একটি প্রোটিন লাগে। আপনার কোষ তৈরীতে এই বস্তুটির দরকার নেই।
এখন দেখা যাক মানুষের তৈরী এই সব মারনাস্ত্রের বিরূদ্ধে ব্যাকটেরীয়াগুলোর প্রতিক্রিয়া কেমন। আপনি মানুষ নামের মহাপরাক্রমশালী প্রানী হয়ে ব্যাকটেরীয়াদের মতো ক্ষুদে প্রানীগুলোকে ক্রসফায়ারে ফেলে দেবেন আর তারা নিরবে তা মেনে নেবে, তা কি হয় ? “বীরভোগ্যা বসুন্ধরা” এমন একটা প্রবচন তো আছেই। তাই বাঁচতে হলে লড়তেই হবে। তাই টিকে থাকতে গিয়ে এই নগন্য প্রানীগুলো হয়তো আপনাকে ব্রাশফায়ারে নিপাত করতে পারবেনা ঠিক কিন্তু লাঠিসোটা নিয়ে আপনার বিরূদ্ধে সন্মুখ সমরে নেমে যেতে তো পারবে! তা যদি নাও পারে তবে দূর থেকে ইট-পাটকেল তো ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করবেই। তাতেও যদি বাঁধা পরে তবে মনে মনে কিছু গালাগালি তো তারা দেবেই । অর্থাৎ আপনার ছুঁড়ে দেয়া এটমবোমার বিরূদ্ধে ব্যাকটেরীয়াগুলোও তাই সম্ভাব্য সকল উপায়ে লড়ে যাবে এবং যাচ্ছেও সেই এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর থেকেই।
পেনিসিলিনের আবিষ্কার ও ব্যবহারের অল্পকালের মধ্যেই ষ্ট্যাফাইলোকক্কাই এর কিছু প্রজাতির (Strains) মধ্যে পেনিসিলিনের বিরূদ্ধে রেসিষ্ট্যান্ট হয়ে ওঠার ঘটনা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ষ্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস নামের ব্যাকটেরীয়ার সকল প্রজাতির ৮০%ই কিন্তু পেনিসিলিনের বিরূদ্ধে রেসিষ্ট্যান্ট। আপনার শরীরে পূঁজ হওয়া সংক্রান্ত প্রায় সকল ইনফেকশানের ( যেমন - ফোঁড়া, বিষফোঁড়া, কান-পাকা, টনসিলাইটিস) পেছনে মূলত এরাই দায়ী। তবে বিস্ময়কর ভাবে স্ট্রেপটোকক্কাস পাইওজেনস (গ্রুপ-এ) নামক ব্যাকটেরীয়াটি যারা আপনার শ্বাসনালীর প্রদাহ, টনসিলাইটিস, বাতজ্বর, কিডনীতে নেফ্রাইটিস ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে তারা কখনই পেনিসিলিনের বিরূদ্ধে সম্পূর্ণভাবে রেসিষ্ট্যান্স গড়ে তুলতে পারেনি। সেজন্যেই স্ট্রেপটোকক্কাল ইনফেকশনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পেনিসিলিন একটি যুক্তিসংগত পছন্দ হিসেবে থেকে গেছে। এখন যদি আপনি সব ধরনের সংক্রমনেই পেনিসিলিন ব্যবহার করতে চান তবে সেটা হবে ভুল।
এই সব ব্যাকটেরীয়া যে পাইরোজেনিক এক্সোটক্সিন আপনার শরীরে ছড়াবে তা থেকেই হবে আপনার “জ্বর”। তাই জ্বর হলো একটি প্রটেক্টিভ রেসপন্স যে কথা আগেই বলা হয়েছে।

এখন ঐ যে বললুম, ব্যাকটেরীয়াগুলোও এন্টিবায়োটিকের বিরূদ্ধে সম্ভাব্য সকল উপায়ে লড়ে যাচ্ছে সেই এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর থেকেই, তাই একে একে এরা প্রায় সকল এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে কালে কালে রেসিষ্ট্যান্ট হয়ে যাচ্ছে। ১৯৪০ দশকের শেষার্ধ থেকে ১৯৫০ সালের প্রথমার্ধে স্ট্রেপটোমাইসিন, ক্লোরামফেনিকল এবং টেট্রাসাইক্লিন এর আবিষ্কার এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে এদের সংযোজন সূচিত করেছে পূর্ণমাত্রায় এন্টিবায়োটিক যুগের। যত্রতত্র, যখন তখন ব্যবহৃত হতে থাকলো এইসব ঔষধ। বেশিদিন যেতে পারেনি ১৯৫৩ জাপানে একটি সিজেলা ( Shigella) বা আমাশয় জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে গেলে দেখা গেলো মাল্টিড্রাগ রেসিষ্টান্ট হয়ে গেছে এমন একটি ডিসেন্ট্রি ব্যাকটেরীয়ার আবির্ভাব ঘটেছে। এরা তখন প্রচলিত সব এন্টিবায়োটিক যেমন ক্লোরামফেনিকল, টেট্রাসাইক্লিন, সালফোনামাইড, স্ট্রেপটোমাইসিন এর বিরূদ্ধে রেসিষ্ট্যান্স তৈরী করে ফেলেছে। আরো দেখা গেল, ব্যাকটেরীয়া যে মাল্টিড্রাগ রেসিষ্টান্ট জিনকে নিজেদের একে অপরের ভেতরে চালান করে দিতে পারে তেমনি অন্য প্রজাতির ব্যাকটেরীয়ার ভেতরেও চালান করে দিতে পারে তার স্বাক্ষ-প্রমান দিন দিন বাড়ছে। এ থেকে বোঝা গেলো যে, দীর্ঘদিন এন্টিবায়োটিকের বহুল ব্যবহারে ব্যাকটেরীয়াগুলোও শিখে ফেলেছে এদের হাত থেকে বাঁচার কায়দা-কানুনগুলো।

ব্যাকটেরীয়াগুলো কি করে রেসিষ্ট্যান্ট হয়, আপনাদের আরও ভালোভাবে বোঝার সুবিধার জন্যে আবার তা খোলাসা করে বলাটা নিশ্চয়ই বাহুল্য হবেনা -
যখন আপনি একটি ব্যাকটেরীয়াল ইনফেকশানের হাত থেকে বাঁচার জন্যে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তখন আপনার ইমিউন সিষ্টেম যা আপনার শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, তার উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়। অনুপ্রবেশকারী ব্যাকটেরীয়ার বিরূদ্ধে যখন এই ইমিউন সিষ্টেমটাকে নামতেই হয় একটা যুদ্ধে তখন একটা এন্টিবায়োটিককে আনা হয় অক্সিলারী ফোর্স বা আনসার বাহিনী হিসেবে। দাঙ্গা দমনে যখন সাধারন পুলিশ বাহিনী দিয়ে দাঙ্গা সামাল দেয়া যায়না তখন যেমন স্পেশাল দাঙ্গাপুলিশ নামাতে হয় , ব্যাপারটি অনেকটা তেমনই। এই এন্টিবায়োটিকগুলি অনুপ্রবেশকারী ব্যাকটেরীয়ার বিরুদ্ধে ততক্ষন পর্য্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যায় যতোক্ষন পর্য্যন্ত না আপনার ইমিউন সিষ্টেম বিদেশী আক্রমনের ধাক্কা সামলে উঠে বাকী আক্রমনকারীদের ধংস করে ফেলতে পারে। ওদিকে দাঙ্গাকারীরা যেমন হরেক কৌশল বা রাস্তা বের করে পুলিশকে পিছু হঠাতে চায় তেমনি ব্যাকটেরীয়াগুলিও প্রতিরোধের বিভিন্ন উপায় নিয়ে হাজির হয়। যেমন-
এন্টিবায়োটিকগুলিকে তার লক্ষ্যস্থলে পৌঁছুতে না দেয়া- যখন আপনি কাউকে এড়িয়ে চলতে চান তখন আপনি কি করেন? হয় আপনি পালিয়ে থাকেন নয়তো তাদের ফোন কল রিসিভ করেন না বা সহজেই তাকে কাছে আসতে দিতে চাননা। ব্যাকটেরীয়াগুলোও এন্টিবায়োটিককে দূরে সরিয়ে রাখতে আপনার মতোই কৌশলগুলো ব্যবহার করে। একটি এন্টিবায়োটিককে তার লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছুতে বাধা প্রদান করার কার্যকর পদ্ধতি হলো তাকে মোটেও গ্রহন না করা অর্থাৎ ধারে কাছে ঘেসতে না দেয়া। ব্যাকটেরীয়াগুলো ঠিক এই কাজটিই করে থাকে, তার কোষ আবরণীর ভেদ্যতা(Permeability) পরিবর্তন করে ফেলে অথবা তার কোষাভ্যন্তরে প্রবেশের যতোগুলো দরজা খোলা ছিলো( এই দরজাগুলো তার দরকার হয় খাদ্যগ্রহন, রেচন, শ্বাসপ্রশ্বাস ইত্যাদির জন্যে) তাদের অনেকগুলিকেই বন্ধ করে দিয়ে ঔষধ প্রবেশে বাঁধা প্রদান করে। এছাড়াও তারা আর একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে। জুয়া খেলার আড্ডাগুলোতে গন্ডোগোল পাকানো জুয়ারীদের চ্যাংদোলা করে দরজার বাইরে ছুঁড়ে ফেলার জন্যে যেমন মাস্তান বা Club Bouncer পোষা হয় তেমন এন্টিবায়োটিককে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করার জন্যে তারা ‘মলিকিউলার ইকুইভ্যালেন্ট’ তৈরী করে ফেলে। কতক ব্যাকটেরীয়া আবার ATP থেকে শক্তি সংগ্রহ করে পাম্পের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিককে বাইরে বের করে দেয়।
লক্ষ্যবস্তুর পরিবর্তন - অনেক এন্টিবায়োটিক তাদের ব্যাকটেরীয়াগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে আঠার মতো লেগে থাকে আর ব্যাকটেরীয়ার কোষের অন্যান্য অনুগুলোর সাথে এই লক্ষ্যবস্তুর স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ চলতে বাঁধা দেয়। ব্যাকটেরীয়াগুলো এখানে একটি চালাকী করে থাকে। তারা এই লক্ষ্যবস্তুর গঠন পরিবর্তন করে ফেলে এমনকি তাকে আর একটি নতুন অনু দ্বারা প্রতিস্থাপন করে যাতে এন্টিবায়োটিক তাদের চিনে ফেলতে না পারে অথবা লেগে থাকতে না পারে। যেমনটা, শত্রুর আস্তানা খুঁজে না পেলে আপনি সেখানে ঢুকবেন কি করে?
এন্টিবায়োটিককে ধংসকরন - এই পদ্ধতিটি ব্যাকটেরীয়ার জন্যে এন্টিবায়োটিকের সাথে পাল্লা দেয়ার চূড়ান্ত পর্যায়। এখানে ব্যাকটেরীয়াগুলি সরাসরি তার প্রতিদ্বন্দী এন্টিবায়োটিকটিকে নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যম বেঁচে থাকে। কিছু ব্যাকটেরীয়া আছে যারা ‘বিটা-ল্যাকটামেজ” নামের একধরনের এনযাইম উৎপাদন করে যা সরাসরি এন্টিবায়োটিকটিকে ধংস করে দেয়।
এখন কথা হলো, ঔষধের সাথে যুদ্ধ করার এই কলাকৌশলগুলি ব্যাকটেরীয়ারা পেল কোথায়?
কতক ব্যাকটেরীয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের আদৌ কোনও যুদ্ধকৌশল নেই। আর কতক ব্যাকটেরীয়া আছে যারা তাদের জন্মগত ক্ষমতাকেই কাজে লাগায়। তৎস্বত্তেও অনেক ব্যাকটেরীয়াই একটি নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিকের বিরূদ্ধে প্রথম থেকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়নি। তারা এই ক্ষমতা গড়ে তুলেছে একই প্রজাতির অন্য ব্যাকটেরীয়া থেকে গৃহিত জিন (Gene) এর কপি থেকে যা পরিবর্ত একটি প্রোটিনের বা বিটা-ল্যাকটামেজ এর এনকোড। এমনকি তারা ভিন্ন প্রজাতি থেকেও একই রকম জিন এর একটি কপি পেয়ে থাকে।
এইরকম রেসিষ্ট্যান্ট জিন পেতে ব্যাকটেরীয়াদের রয়েছে বিভিন্ন রাস্তা। এই রকম একটি রাস্তা হলো, রূপান্তরের সময় সমগোত্রীয় অনুজীবগুলি পরষ্পর সংলগ্ন হতে পারে এবং একে অপরকে ডি-এন-এ আদান প্রদান করতে পারে। আরেকটি রাস্তা আছে - প্লাজমিড (Plasmid)। প্লাজমিড হলো ব্যাকটেরীয়াল ক্রোমোজমের এর বাইরে থাকা ডি-এন-এর একটি ক্ষুদ্র ও গোলাকার অংশ। এই প্লাজমিডগুলো বিভিন্ন এন্টিবায়োটিকের বিরূদ্ধে প্রতিরোধের নির্দেশনা এনকোড করতে পারে। অনেকটা রেকর্ড কিপারের মতো কাজ এদের। এরা সেই রেকর্ড অন্য ব্যাকটেরীয়াকে ধরিয়ে দিতে পারে। ক্লিনিক্যাল প্রাকটিসে আমরা যে সব এন্টিবায়োটিক রেসিষ্ট্যান্সের ঘটনা দেখি তার বেশীর ভাগই এই প্লাজমিডের কাজ।


ছবি - প্লাজমিডের কাজের ধরন

তৃতীয় রাস্তাটি হলো- ট্রান্সপোজন (Transposon)। এরা হলো নাচুনে এক একটি জিন। এরা DNA এর একটি ছোট টুকরো যারা লাফিয়ে লাফিয়ে DNA এর একটি অনু থেকে আর একটি DNA অনুতে যেতে পারে।এরা একবার একটি ক্রোমোজম বা প্লাজমিডের নাগাল পেলে তার মধ্যে গেড়ে বসে।
আর শেষের রাস্তাটি হলো মৃত বা পচনশীল ব্যাকটেরীয়ার DNA খুঁজে বের করা।

ব্যাকটেরীয়াগুলো এভাবেই জন্মগত বা প্রাকৃতিক উপায়ে মিউটেশান ও সিলেকশানের মধ্যে দিয়েই এন্টিবায়োটিকের বিরূদ্ধে যতো রেসিষ্ট্যান্স গড়ে তোলে। আমাদের দূর্ভাগ্য এই যে, যদি একটি ব্যাকটেরীয়া তার ক্রোমোজমাল ডিএনএ’ন ভেতর একই রকম একটি প্রতিরোধ সক্ষম জিন পেয়ে যায় অথবা ঘুরে বেড়ানো একটি প্লাজমিডকে খপ করে ধরে ফেলতে পারে তবে তার বংশধরগন উত্তরাধিকার সূত্রে সেই জিনটির গুনাবলী পেয়ে যাবে এবং গোষ্ঠী পরম্পরায় চলতে থাকবে প্রতিরোধ। এখন প্রশ্ন, কেন এই প্রতিরোধ সক্ষম জিনটি বেঁচে থাকে আর কেনই বা তা সকল ব্যাকটেরিয়া গোষ্ঠীতে ছড়িয়ে যায় ? উত্তরটি আর কিছুই নয়, ডারউইনের “সারভাইবাল অব দ্য ফিটেষ্ট” সূত্র অনুযায়ী রেসিষ্ট্যান্ট জিন সম্বলিত ব্যাকটেরীয়াটি মানুষের তৈরী অস্ত্রের বিরূদ্ধে সংগ্রাম করে টিকে থেকে বংশ বিস্তার চালিয়ে যেতে থেকে আর তা একসময় সাসেপটিবল বা সংবেদনশীল ব্যাকটেরীয়ার সংখ্যা ছাড়িয়ে যায়। আর আপনি হয়তো জানেনই , ব্যাকটেরীয়াদের বংশবিস্তার হয় ম্যালথাসের সূত্র অনুযায়ী- জ্যামিতিক হারে এবং তা কয়েক ঘন্টার ভেতরেই।


ছবি - ব্যাকটেরীয়াল মিউটেশান।

তো ব্যাকটেরীয়া যদি এমনিভাবে বারবার বুদ্ধিমান মানুষকে হারিয়ে দিতে চায় তবে মানুষ কি করবে? সে রেসিষ্ট্যান্ট হয়ে যাওয়া এন্টিবায়োটিকের খোল নলচে (কেমিক্যাল ষ্ট্রাকচার) পাল্টে ফেলবে যাতে ব্যাকটেরীয়াগুলো তাকে চিনতে না পারে। মানুষ করেছেও তাই। ১৯৬১ সালে পেনিসিলিনের কেমিক্যাল ষ্ট্রাকচার খানিকটা পাল্টে দিয়ে মানুষ বানিয়েছে এমপিসিলিন। এই নতুন ঔষধ ব্যাকটেরীয়ারা আগে দেখেনি কখনও, জানেনা কি করে এর বিরূদ্ধে যুদ্ধ করবে তারা। ব্যাকটেরীয়ারগুলো মরতে লাগলো পটাপট । মানুষও তখন দেদারসে যে কোনও ইনফেকশানে এটাই ব্যবহার করতে থাকলো। দীর্ঘদিন ধরে মার খাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে একসময় ক্ষুদে ব্যাকটেরীয়ারগুলো শিখে ফেললো এমপিসিলিনকে প্রতিরোধের কৌশল। মানুষ তো আর হেরে যাবার পাত্র নয় সে পেনিসিলিনকে অন্যভাবে ঘুরিয়ে ১৯৬২ সালে বাজারে নিয়ে এলো-ক্লক্সাসিলিন। ১৯৭২ সালে এমপিসিলিনকে আরেকটু পাল্টে বানিয়ে ফেললো এমক্সিসিলিন। এভাবেই বাজারে আসতে থাকলে নতুন নতুন এন্টিবায়োটিক। চলতে থাকলো মানুষ আর ব্যাকটেরীয়ার মধ্যে অসম এক যুদ্ধ যে যুদ্ধ কখনও থেমে যাবার নয়, চলছে আজ অবধি। এবারে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন হাযারো এন্টিবায়োটিক কেন বাজারে?

চলবে..........................

[ ছবির জন্যে ইন্টারনেট এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ । ]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫২
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×