somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন ভালো লাগার দিন.....

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সময়ের অনেক আগেই পৌঁছে গেছি। রোববার বলেই সম্ভবত রাস্তাটা ফাঁকা। সকাল সাড়ে ন’টায় জামাত শুরু হবার কথা। লোক আসতে শুরু করেছে। মেয়েকে বললুম, মসযিদের কোথায় তোরা নামাজ পড়বি? মেয়েদের আলাদা জায়গা আছে? মেয়ের উত্তর, কেন? পুরষ মহিলা এক জায়গাতেই দাঁড়ায়, কেবল মেয়েরা আলাদা লাইনে, ছেলেরা আলাদা লাইনে। দেশের কথা মনে পড়লো, মসযিদে নারী-পুরুষ একসাথে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছে, ধর্মীয় কুপমন্ডুকতার কারনে এমনটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়না। যেসব মসযিদে নারী-পুরুষেরা নামাজ আদায় করেন সেখানেও নারীদের আলাদা পর্দা বা পার্টিশান দিয়ে আলাদা করে রাখতে দেখেছি। আমেরিকা উন্নত বলেই কি এমনটা ? মনে হয় না। মনে হলো, এখানে ধর্মকে হেজাব পড়িয়ে রেখে জ্ঞানের আলোর পথ রূদ্ধ করে রাখা হয়নি যেমনটা রাখা হয়েছে আমার নিজের দেশে, ধর্মের মূল চেতনাকে যেখানে অন্ধকারে রাখতে হাযারো ভুয়া হাদিস, মনগড়া হাদিস আর “মছলা” হাজির করা হয় যা ইসলামের শান্তির চরিত্রটিকে কর্দমাক্ত করেই রাখে শুধু।


ছবি ২ – শুরুর দিকে মেয়েদের জমায়েত।

ঢোকার সময় খেয়াল করেছি, এখানকার একটা এয়ারপোর্টের সারি সারি হ্যাঙ্গারের দিকে যাচ্ছে গাড়ী। বললুম, মসযিদ তো দেখছিনে কোথাও, হ্যাঙ্গারের দিকেই বা যাচ্ছি কেন ! যা জানলুম, তার জন্যে প্রস্তুত ছিলুম না। এখানে স্যাকরামেন্টোতে (ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের রাজধানী) বেশ কয়েকটি মসযিদ থাকলেও এতো বড় মসযিদ সেখানে নেই যেখানে কয়েক হাযার মানুষ ঈদের নামাজের জন্যে একত্রিত হতে পারেন। তাই স্যাকরামেন্টো সিটি কর্তৃপক্ষ মিউনিসিপাল এয়ারপোর্টের বিশাল হ্যাঙ্গারের একটিতে ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। দেখলুম, দু’দুটো শেরিফের গাড়ীও দাঁড়ানো সামনে। আশ্চর্য্য...... এয়ারপোর্ট হ্যাঙ্গারের মতো সর্বোচ্য নিরাপত্তায় ঘেরা জায়গাতেও মানুষের ধর্মীয় জমায়েতে দ্বিধা করেননি কর্তৃপক্ষ।


ছবি ৩ – শুরুর দিকে পুরুষ জমায়েৎ।

লোকজন আসছেন, বিভিন্ন দেশ বা জাতীর লোক। হরেক রকমের সাধারন পোষাকে। মনে হচ্ছে, খেলার মাঠে খেলা দেখতে যেমন আসে তেমন । ইরাক, সিরিয়া, মিশর, সুদান ইত্যাদি দেশের পুরুষেরা খুব কম সংখ্যকই পা পর্যন্ত জোব্বা পড়ে এসেছেন। ভারতীয়, পাকিস্তানী পুরুষেরাও তাই। কেউই টুপি-পাগড়ী, পাঞ্জাবী পড়ে জবরদস্ত মুসলিম সাজেন না। দেশের কথা মনে হলো, পাঞ্জাবী না পড়লে যেন ঈদের দিনগুলিতে মুসলমানই হওয়া গেলনা। ঈদের সময় এলেই তাই বাজারে পাঞ্জাবী কেনার ধুম লেগে যায়। পাঞ্জাবী যে পাঞ্জাব দেশের পোষাক এটা শিক্ষিতরাও অনেকেই কেন বোঝেন না, জানিনে। আবার টুপি নেই তো নামাজই হবেনা। এমন সংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় চেতনা কোত্থেকে এলো ? যুগযুগ ধরে যে অজ্ঞতা আর অন্ধকারে আমরা পড়ে আছি তাতে একটুও আলোর ছোঁয়া লাগাতে পারিনি এতোদিনে? নাকি লাগতেই দেইনি ?


ছবি ৪ – সকল শ্রেনী-বর্ণ-জাতপাত সরিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ .........

মেয়েরাও এসেছেন স্বাভাবিক পোষাকে। আরবী ভাষাভাষী যারা স্বভাবতই হেজাব পড়ে থাকেন তারা হেজাব পড়েই আছেন কিন্তু বেশীর ভাগই এসেছেন টাইট জিন্স আর টপসের উপরে শুধু সামনে থেকে সম্পূর্ণ ফাঁড়া রঙিন একটা কাফতান টাইপের বাড়তি কিছু পড়ে। বাঙালী আর প্রতিবেশী দুটো দেশের কাউকেই দেখলুম না ঈদের মতো এমন ধর্মীয় একটা অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমার দেশের মেয়েদের মতো বোরকা আর হেজাবে নিজেদের জবরজং করে রেখেছেন । নামাজ শেষে নারী পুরুষদের হ্যান্ডসেক করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেও দেখলুম। খুব কম লোককেই দেখেছি কোলা কুলি করতে। আমেরিকায় থাকছে বলেই কি তারা এরকমের? আমেরিকাতে ইসলামের রঙ কি আলাদা ? সবেমাত্র বাংলাদেশ থেকে এসেছি বেড়াতে, নেহাৎ বাংলাদেশী, মনেপ্রানেই বাংলাদেশী একজন । সেই বাঙালী চরিত্রের কারনেই কি এখানে এসে এমনতরো একটা মিলনমেলা, ভ্রাতৃত্বের এমন সুন্দরতর কিছু দেখে, এমন আলাদা আলাদা রঙ খুঁজতে বসেছি , সে রঙে ত্রুটি ধরতে লেগেছি ? চোখে লেগে থাকা আজন্ম সংস্কারের যে রূপ, তা থেকে অন্যরকম কিছু দেখছি বলেই কি!


ছবি ৫ – ছোট ছোট বাচ্চারাও শরিক হচ্ছে আল্লাহতায়ালার গুনকীর্তনে।

নামাজ শুরুর আগে মঞ্চে যিনি আল্লাহতায়ালার নাম নিয়ে বারবার – “আল্লাহু আকবর..... আল্লাহু আকবর... ওয়ালিল্লাহিল হামদ....” বলছিলেন তার পরনেও জিন্সের প্যান্ট উপরে গলাবদ্ধ কামিজের মতো তার দেশীয় পোষাক। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা মঞ্চে উঠে নিজেরাও মাইকে একই বানী শুনিয়ে যাচ্ছিলো। যে বাচ্চারাই আসছিলো তাদের কে সাদরে ডেকে নেয়া হচ্ছিলো মঞ্চে। হায়রে..... এমনটা বাংলাদেশে কখনও চোখে পড়েনি কেন ! বরং উল্টোটাই দেখেছি- বাচ্চাকাচ্চাদের ধমক দিয়ে কথা বলা থামিয়ে দেয়া হচ্ছে- চুপচাপ করে বসে থাকার আদেশ জারী করা হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে অভিভাবকদের আক্কেল-জ্ঞান নিয়ে টানাটানি করাও হচ্ছে।
তরুন এক ইমামের পেছনে নামাজ পড়া হলো। নামাজ শেষে খুৎবা। আমাদের দেশের মতো ‌আদ্যিকালের পুরোনো আরবী খুৎবার বই দেখে দেখে অর্থবিহীন আরবী বলে যাওয়া নয়- আমেরিকান ইংরেজীতেই খুৎবা পড়লেন মূল ইমাম যাতে বিশ্বের সমসাময়িক কিছু বিষয় সম্পর্কেও বক্তব্য ছিলো। এটাই তো হওয়া উচিৎ নিজ ভাষায় খুৎবা পড়া যাতে উপস্থিত লোকজন পরিষ্কার বুঝতে পারেন কি বলা হলো। শেষে মোনাজাত, সংক্ষিপ্ত । ফালতু কথার বালাই নেই কোনও। শুধু ত্যাগের কথাই বলা হলো, বলা হলো বিশ্বভ্রাতৃত্বের কথাও।


ছবি ৬ – প্রবেশমুখে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের রিসেপশান কাউন্টার।

সমস্ত কিছুর ব্যবস্থাপনায় ছিলো “ তারবিয়াহ ইন্সষ্টিটিউট” নামের একটি ইসলামিক প্রতিষ্ঠান। এরা এখানে ইসলামের দিকদর্শন তুলে ধরার কাজে নিয়োজিত। প্রতিবছর ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আযহার জমায়েতের আয়োজনও তাদের। সদস্যদের অনেককেই দেখলুম বয়সে তরুণ। প্রবেশ পথে তারা একটি সুদৃশ্য রিসেপশান কাউন্টার বানিয়ে তাদের কর্মসূচিও প্রচার করছেন দেখলুম।
দেশে এরকমের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কবরের মতো নিস্তব্দ পরিবেশের অভিজ্ঞতা থেকে আলাদা একটি স্বতঃফূর্ত অনুষ্ঠান আমার সকালটাকে অন্য এক রঙে রাঙিয়ে দিয়ে গেলো যেন!
ধর্মকে যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন বিধিনিষেধ আর আচারের চাদরে ঢেকে রাখা হয় তখন তার আলো ছড়ায় না কোথাও বরং সেই অন্ধকার আতঙ্ক-ভয়-অশ্রদ্ধারই জন্ম দেয়।

এমন একটি সকাল যেন আরেক চোখ খুলে দিয়ে আবারও বলে গেলো- ধর্ম কোনও পাষাণভার নয়, সূর্যের আলোর মতো নরম-হালকা কিন্তু দীপ্যমান। বড্ড ইচ্ছে হলো, তেমন আলোয় যেন আমাদের উত্তরন ঘটে, অন্ধকার থেকে আলোর পথে শুরু হয় নতুন এক যাত্রা.........................


ছবি সূত্রঃ নিজের মোবাইলে আনাড়ী অভিজ্ঞতায় তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:১৯
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×