বিকাল ৫টায় ঘুম থেকে উঠে আছর নামাজ পড়ে উত্তরা ৪ নং সেক্টরের পাশ দিয়ে রেল লাইন ধরে হাটা শুরু করলাম। একটু হেটেঁই টং দোকানে দাড়িঁয়ে এক কাপ চা খেলাম এ সময়ে চা খেলে মাথায় খুব ভাল অনুভব হয়। তারপর আবার হাটা শুরু কিছুদূর হেটে যেতেই দেখলাম মায়ের বয়সী তুড়তুড়ে বৃদ্ধা রেল লাইনের ধারে অবস্হিত বস্তির পাশে বসে আছে। সামনে ফিরে দেখতেই ঊনী আমাকে বলল বাবা তুমি, এখানে বস।তিনি আমার প্রায় ৩ বছর ধরে পরিচিত একদিন বস্তি visit এ ঊনাকে দেখেছিলাম বাজারে মুরগী পরিস্কারের পর ফেলে দেওয়া মুরগীর পালকের ভিতর থেকে কি যেন খুঁজছে পরে জিজ্ঞাসা করতেই বলল বাবা চামড়া খুঁজি। ঐ থেকে আমার বাসায় ২/৩ মাস দুবেলা খাওয়েছিলাম এখন ঊনী হেটে আসতে পারে না রাস্তার ধারে মসজিদের সামনে বসে ভিক্ষা করে। মাঝে মাঝে কিছুটা help করি মা এর মত জানি বলে আমার কাছে কিছু চাইতে লজ্জা বোধ করে এবং মসজিদের সামনে দেখলে কথা না বলে ঘোমটা দিয়ে থাকে। তালাক প্রাপ্ত মেয়ের কাছে থাকে, ছেলে থাকলেও তারা নাকি দেখে না। ৪০ উধ্বঅ মেয়েটি তার ছেলেমেয়েসহ এই বস্তিতে থাকে সেক্টরের বাসায় ছুটা কাজ করে চলে। ঊনার সাথে ৫/৬ মিনিট কূশল বিনিময়ের পর আবারও হাটা শুরু রেললাইন ধরে target বিমান বন্দর রেল ষ্টেষন ৫ মিনিট হাটার পর দেখলাম অবাক করা এক দৃশ্য দুইজন handsome বিদেশী তরুন তরুণী ক্যামেরা নিয়ে দাড়িঁয়ে আছে আশেপাশে বস্তির কিছু শিশু তাদের চারপাশে দাড়িয়ে ও বসে আছে কাছে গিয়ে Good afternoon বলার সাথে সাথে সুন্দর খুশি মনে তারাও বলল Good afternoon. অতঃপর দাডিঁয়ে অনেকক্ষন কথা হল। ক্যামেরা নিয়ে তাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য হল ট্রেনের ছাদে করে যে মানুষ যায় সে রকম ছাদে ভরপুর যাত্রী পূরনঅ একটি ট্রনের ছবি তুলা যারজন্য ১ ঘন্টা ধরে দুজনে বসে আছে ১ টি ছবি তুলেছে কিন্তু মনঃপুত হয়নি আর একটি ঐ রকম ট্রেনের আসায় বসে আছে। তারা এসেছে নেদারল্যান্ড থেকে তাদের Embassy তে ইন্টারনশীপ করার জন্য ছেলেটি International Relationship এবং মেয়েটি Political Science এর মাষ্টারস্ শেষ করার পরযায়ে আছে। গুলশান ২ নং থেকে এসেছে কোন এক বাংলাদেশী বন্ধুর সাথে ট্রেনে করে রংপুর যাওয়ার সময় তারা এ জায়গায় এসে ছবি তুলার ধারনা স্হির করেছিল। তাদের সাথে দাড়িঁয়ে কিছুক্ষন কথা বলার পর তাঁরাসহ বিমান বনদর ষ্টেশনের দিকে যেতে থাকলাম তাদের কাংখিত সেই রকম ট্রেন আর আসল না। কসাই বাড়ী রেল গেইটে তারা হাত মিলিয়ে সিএনজি চালিত টেক্সী করে চলে গেল গুলশানের দিকে আমিও আমার গন্তব্য বিমান বনদর ষ্টেশনে পৌছে গেলাম। পৌছেই দেখলাম কাধে এক বোঝা নিয়ে ষ্টেশনের উত্তর দিক দিয়ে বের হয়ে রাস্তার ধারে ভাঙ্গারী কিনার দোকানে ভাঙ্গারী বিক্রী করতে বস্তা থেকে বের করে মাপার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন দোকানদার ও তারা বুঝতে পারল কারন আমি ছবি নিচ্ছিলাম দোকানদার প্রথমে বাধা দিলেও পরে আমার মনোভাব বুঝতে পেরে আর বাধা দিল না। ১৫ টাকার দেড় কেজি এবং ২৫ টাকার ২ কেজি এ হল সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পরযন্ত ২ জনের আয় সারাদিন তেমন কিছু খায়নি আদর দিয়ে কি খাবে জিজ্ঞাস করলেই বলল স্যার ভাত খাব। তাদের নিয়ে পাশেই ভাতের হোটেলে যেতে দেখে মূহুরতেই আরও তিন শিশু এসে বলল স্যার আমরাও খাব। ভালমত হাত দুয়ে ভাত খেতে বসাইয়ে দিলাম হোটেল মালিককে বললাম যা যা খেতে চায় তাইই দেওয়ার জন্য গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ার জন্য সবারই খুব ইচ্ছা এ জায়গায় আমার সাথে খুব মিল। গরুর মাংস পেলে আর কিছুই তখন ভাল লাগে না। গরুর মাংস গরম করতে করতে ড়িম ও সব্জী দিতে বললাম তারপর গরুর মাংস একজন বলল সে শুধু গরুর মাংস দিয়েই খাবে। গরুর মাংস আনার সাথে সাথে খুশীর সীমা বেড়ে গেল বসে বসে দেখছি এই বয়সী আমার দুছেলেকে কতকিছু দিয়ে খাওয়ানোর জন্য ওদের মা এর কত অনুরোধ কত আদর কত বিরক্ত আর সেই তাদের বয়সী ছেলেরা কিভাবে যে খাচ্ছে বাস্তবে না দেখলে বুঝানো মুশকিল। সুযোগে এদের আদর দিয়ে খাওয়ান, তাহলে বুঝবেন মজা কাকে বলে! কি খুশী তারা! কি আনন্দ তাদের! এদের এ রকম আনন্দ নিরবে দেখা আমার নেশা তাই সুযোগ পেলেই তাদের কাছে ছুটে যায়। তাদের পেতে কোন অসুবিধা হয় না হাজার হজার এ রকম শিশু। কারো মা নেই, কারো মা বাপ কেউই নাই, কারো সৎ মা,কারো মা অন্য জায়গায় বিয়ে করে চলে গেছে, কারো বাবা জেলে ইত্যাদি অনেক করুন ইতিহাস। শুনলে চোখে ছল্ ছল্ পানি আসে। শুধুমাত্র ঔরষজাত পারথক্কের কারনে আমরা তাদের দিকে সঠিক চোখ দিয়ে দেখি না। এ সকল Innocent শিশু আমাদের চোখের সামনে এ রকম অভূক্ত অবস্হায় পথে ঘাটে না খেয়ে ঘুমালে চিকিৎসার জন্য আল্লাহ আল্লাহ্ করলে আমাদের নামাজ রোজা কতটুকু আল্লাহ্ কবুল করবেন তা আমাকে সন্দিহান রাখে সব সময়।আল্লাহ্ ভাল জানেন। তাদের খাওয়া শেষে ঐ দোকানের বিল দিয়ে ও ফোন নং রেখে তাদের নিয়ে ষ্টেশনের ভিতরে প্রবেশ করতেই ৩ জন স্যার যাই বলে হারিয়ে গেল। দুজন আমাকে রেল লাইনের মধ্যে নিয়ে গিয়ে বলল স্যার ওরা বোতল দিয়ে জুয়া খেলছে প্রত্যেকেরই ছটের ব্যাগে বোতল আমি অভয় দেওয়াতে তারা খেলেই চলল । অনেকটা পয়সার কয়েন দিয়ে টস্ করার মত এক্ষেত্রে কয়েন নয় দুপৃষ্টা অংকিত ছোট কাগজ। একজন হাত চেপে ধরে অন্যজন বলে মিললে কুড়ানো প্লাষ্টিক বোতল( ফেলে দেয়া পানি ও জুসের) একজন থেকে আর একজন পায়। এ হল তাদের জুয়া খেলা। এর মধ্যে ঐ দুজন বলেই ফেলল আমি যে তাদের ভাত খাওয়াইছি বলতেই আরও ৪/৫ জন বলেই ফেলল তারা টাকা চায় না তাদের ভাত খাওয়ালে হবে। বড় ২ জনকে ১০ টাকা করে দিয়ে ছোট ৩ জনকে নিয়ে আবারও ষ্টেশনের উত্তর দিকে অবস্হিত সেই ভাতের হোটেলে যাওয়ার সময় একজন আমাকে রেল লাইনের ঝোপের দিকে যে দৃশ্য দেখাল তা আর অবতারনা করলাম না। তারা সব দেখে, সব বুঝে অনেকে সিগরেট ও ড়েন্ড়ি খায় আমার সামনে একজন আরেকজন কে দোষারুপ করছে বলছে না স্যার আমি খায় না ও খায়। ইতিমধ্যে পূরবের দুজনের বিদায় হয়ে গেছে। এ ৩ জনকে হোটেলে নিয়ে ঢুকতেই হোটেল মালিক বলল স্যার ওদের খাওয়ালে আমি টাকা কম রাখব, সব সময় আসার জন্য অনুরোধ করল। এবার গরুর মাংস নেই ড়িম ও সব্জি দিয়েই খাওয়ালাম। বিদায়ের সময় বললাম তোমরা প্রতি শুক্রবার আমার বাসায় আসবে এখানে আমার ফোন নং আছে দোকান মালিককে বললাম ওরা আসলে আমাকে miss call দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার জন্য। (এ রকম কিছু শিশু আগে প্রতি শুক্রবার আসত যাদের নিয়ে আমার গাড়ীতে করে ঘুরে বেডাতাম। সে অনেক কাহিনী।) বাসা আমার কাছেই উত্তরা ৪ নং সেক্টরে আমি নেয়ার ব্যবস্হা করব এই বলে উত্তরা ৪ নং সেক্টরের দিকে পা বাড়ালাম প্রিয় শিল্পী ভূপেনের গান শুনতে শুনতে…..। এ শিল্পীর গান আমার প্রানের স্পন্দন! খুব শুনি শুনে শুনে ৪ নং সেক্টরের সুন্দর মাঠে মৃদু আলোতে মাঝে মাঝে হাসনা হেনা ফুলের ঘ্রানে অনেক সহেব সাহেবানদের সাথে ৩০ মিনিট হাটলাম। বাসায় গিয়ে প্রিয় বউকে বললাম আমার ঘুরে বেড়ানো শেষ( রাত ৯.৩০ মি) এই দেখ এদের সাথেই বিকাল –সন্ধ্যা কাটিয়েছি, আপনাদের জন্যও সব ছবি দিলাম। মাদার তেরেসা ও শিশু সদনের প্রতিষ্টাতা আপনাদের জানাই স্বশ্রদ্ধ সালাম!!
খোদা হাফেজ, দোয়া করবেন।
গাজী ইলিয়াছ।