somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেয়ার স্টাইল- 'পকেটমার কাটিং' (রম্য) =p~ =p~

৩০ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথমে একটা কুইজ।
এক শহরে মাত্র দুই জন নাপিত। আপনার চুল কাটানোর প্রয়োজন। আপনি দেখে নিতে চাইলেন কে ভাল চুল কাটে। প্রথমে গেলেন শহরের পুর্ব পাশের সেলুনে। দেখলেন দোকানটি বেশ নোংরা, এদিক সেদিক স্তুপ স্তুপ চুল পড়ে আছে। নাপিত বেটার চুলের স্টাইলও বেশ জঘন্য।

এবার গেলেন পশ্চিমের সেলুনে; সেখানে গিয়ে দেখলেন দোকানটি বেশ পরিচ্ছন্ন। নাপিতের মাথার দিকে তাকিয়ে দেখলেন তার চুলের কাটও চমৎকার!
প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কোন সেলুনে চুল কাটাবেন?

আপনি উত্তরটি ভাবতে থাকুন এই ফাঁকে আমি করে যাই ঈদের আগে নিজের চুল কাটানোর এক নিরস বয়ান।
‘নাপিত ছোঁড়া, কবিরাজ বুড়া’ বলে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে। অর্থাৎ নাপিত কম বয়সি হলে ভাল, কবিরাজ বেশি বয়সি হলে ভাল।

অপ্রাসঙ্গিক হলেও কবিরাজ বিষয়ে আরেকটি উর্দু প্রবাদ মনে এলো-‘ নিম হাকিম খাতরায়ে জান,নিম মোল্লা খাতরায়ে ঈমান।‘ কম জানা কবিরাজ জানের জন্য হুমকি,কম জানা মোল্লা ঈমানের জন্য হুমকি।‘ তবে কম জানা নাপিত কিসের জন্য হুমকি এবিষয়ে প্রবাদে কিছু বলা নাই। বলা নাই বলে আফসোসেরও কিছু নাই। বলা নাই বলা হবে। আমিই নাহয় বলছি।

প্রবাদে অনেক ভাল ভাল কথা বলা আছে তবে সে সব আমরা সব সময় মানি না। আমিও ‘নাপিত কম বয়সি হলে ভাল’ এই প্রবাদ না মেনে বেশি বয়সি রমনীর কাছে চুল কাটাই। রমনী শুনে কেউ আবার ভেবে বসতে পারেন আমি বোধ হয় পার্লারের কোন ষোড়শীর কাছে চুল কাটাই। তাদের জ্ঞাতার্থে- এই রমনী সেই রমনী নয়,এ হচ্ছে রমনী মোহন শীল।

সকালে তার দোকানে গিয়ে দেখি অনেক লোক ওয়েটিংএ। রমনী আমার দিকে পত্রিকা বাড়িয়ে দিয়ে তেলতেলে এক হাসি দিল, বলল – বিশ মিনিট অপেক্ষা করেন। বিশ মিনিট পেরিয়ে যখন এক ঘন্টা পেরুলো তখন বাধলো এক বিপত্তি। চুল কাটা, শেভ শেষ হওয়ার পর ওপারেশন চেয়ারে বসা এক কাস্টমার দুই হাত উপরে তুলে উঁ উঁ করছে। আমি ভাবলাম বেটার কাছে মনে হয় টাকা নাই তাই স্যারেন্ডার করছে।

রমনীর রাডারে কিন্তু সংকেতটি ঠিক মতই হিট করেছে, সে বলল- ঈদের সিজনে এসব কামাই না।
কি কামায় না দেখার জন্য আমি উঁকি দিলাম! দেখলাম বেটার বগল তলে ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার দিশা’ অবস্থা!! অনায়াসে ছনের চালের গোয়াল ঘরের এক চাল হয়ে যাওয়ার কথা! চুদুর পুতের মনে হয় বছরে একবার মানে রমজান ঈদের আগেই ওগুলা কাটার কথা মনে হয়। যাক নাজুক তবীয়তের পাঠকের ঘেন্না লাগতে পারে তাই সেদিকে আর গেলাম না।

‘হালার পুত কেন কাটবিনা বলে স্যারেন্ডারকারির তেলেবেগুনে জ্বলে উঠা, বাদানুবাদ, হাতা হাতিতে আরো ২০ মিনিট কেটে গেল। রমনীর পাশের চেয়ারের কম বয়সি ছোড়াটার (নাপিত) চেয়ার খালি হলেই আমাকে ডাকছিল। দাদা আসেন দাদা আসেন। যেন তার কাছে চুল কাটতে আমি মুখিয়ে আছি।

এই বেটার কাছে আমি এখন আর ভুলেও চুলকাটা বা শেভ করিনা। কিছুদিন আগে বেটার চেয়ারে শেভ করতে বসেছি। সে হাত ভিজিয়ে আমার নাকের নিচের অংশে পানি লাগাতে গিয়ে অসতর্কতায় তার একটা আঙ্গুল আমার মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছে।
পরে খেয়াল করে দেখি তার ওই আঙ্গুল থেকে সদ্য ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে, এখনো ঘা শুকায় নি। ওয়াক!! এখন বেটাকে দেখলেই আমার গা রি রি করে উঠে। সুতরাং তার ডাকে সাড়া দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। আমি অপেক্ষা করছি রমনীর জন্য। মোট ঘন্টা দুয়েক পরে অপেক্ষার অবসান হয়। আমার ডাক আসে।

মাথার সামনের কিছু চুল কাটার পরেই দরজায় দাঁড়িয়ে কে যেন হুঙ্কার দিল- ‘রমইন্না, তুই বলে সেয়ানা হইছস?’ তাকিয়ে দেখি – রুদ্রমুর্তিটি এলাকার ত্রাস কিরিচ মিলন।
ভয়ে কুঁকড়ানো রমনী শুধু দাদা দাদা করে গেল।

-তুই না সকালে বাসায় গিয়ে আমার পোলার চুল কাটার কথা?
-দাদা এক্ষুনি যাচ্ছি বলেই সে ক্ষুর কাঁচি গোছাতে লাগলো।
- যাচ্ছি বলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বলেই লাথি দিতে উদ্যত হল এমন সময় কিরিচের নজর পড়লো পাশের চেয়ারে কাস্টমারের উপর।

অনেক দিন পর তোরে বাগে পাইছি বলেই সে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার উপর। ধস্তাধস্তি, কাস্টমারদের হুড়োহুড়িতে শিকার ফসকে গেল। মুহূর্তে সেলুন ফাঁকা। রমনীও দিল দৌড়। যাওয়ার আমাকে আঙ্গুল চোষানো ছেলেটাকে বলে গেল- বিশু তুই দাদার চুলগুলি কেটে দে।

এতক্ষণ রণক্ষেত্রের মধ্যেও সাহস করে বসে ছিলাম। এই ক্ষণে বিশুর আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে খিঁচে দৌড় দিতে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না। কারন আয়নায় তাকিয়ে দেখি চেয়ারে আমি বসে নেই। সেখানে বসে আছে সদ্য ধৃত এক পকেটমার, উত্তেজিত জনতা যার চুল গুলি এবড়োথেবড়ো করে কেটে দিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:০৯
৩৬টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×