রমজানের পরেই এসএসসি পরীক্ষা। ইবাদত বন্দেগী আর পড়া লিখা ধুমসে চালিয়ে যেতে হবে। কি প্লান প্রোগ্রাম করা যায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তিন বন্ধু মিলে এক বিকালে মিলিত হলাম।
ইতিমধ্যে আমাদের সাথে আরো কয়েকজন যোগ দিয়েছে। কেউ প্রস্তাব করছে, সারা রাত পড়বে, সেহরি খেয়ে তবেই ঘুম দিবে। আরেকজনের মত রাতে কিছুক্ষন পড়ে ঘুম, আবার সেহরি খেয়ে পড়া শুরু। কারো মতে নামাজের বিরতি বাদে সারাদিনই পড়া চলবে। এইমত, সেইমত, নানা মত।
কারো মতের সাথে কেউ একমত হতে পারছিল না। এমতাবস্থায় ওস্তাদ নবী এসে আমাদের সাথে যোগ দিয়ে এক যুগান্তকারী প্রস্তাব পেশ করেন। সবাই একবাক্যে রাজি। সিদ্ধান্ত হল আজ রাতেই মুরগী চুরি করে রান্না হবে।
তেল মশলা হাঁড়ি কে কি আনবে তড়িৎ দায়িত্ব বন্টিত হল। এক পরিত্যাক্ত গোয়াল ঘরকে অস্থায়ী কিচেন ঘোষণা করে রাত আটটার ভিতর সব কিছু সেখানে মজুদ করা হল।
নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাসেদা ভাবীর খোয়াড়কে কম ঝুকিপুর্ন বিবেচনা করা হল। বেচারির স্বামী প্রবাসী,গৃহে দুই বাচ্ছা আর বুড়ো শ্বশুর।
কয়েকজনকে কিচেনে রেখে রাত ১০ টা নাগাদ আমরা চার জন অপারেশন স্পটে হাজির হলাম। আজিজের ডিউটি পড়েছে বাড়ির দরজায়। কেউ বাড়ির দিকে ঢুকতে দেখলে আমাদের সতর্ক করবে। কয়েক বাড়ির মানুষ ভাবীদের বাগিচা দিয়ে হাঁটে এখানে ডিউটি পড়েছে কামালের। খোয়াড় অভিযানের দায়িত্ব আমি আর ওস্তাদ নিয়ে নিলাম।
প্রতিরোধের মুখে পড়লে 'কৌশল গত ভাবে' কোন পথ দিয়ে পিঠ টান দেয়া যায় এ সম্পর্কে সম্যক ধারনা নিতে ওস্তাদ জায়গাটি জরিপ করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
সন্তোষ জনক জরিপ শেষে সৈন্যরা যথাস্থানে অবস্থান করছে কিনা পরিদর্শন করতে গিয়ে বিরাট ঘাপলা পরিলক্ষিত হল।
ওস্তাদ ফিসফিস করে আমাকে বললেন, ঘরের পিছনে পুকুর পাড়ে দেখ। দেখলাম পুকুরের দিকে মুখ করে এক ছায়ামুর্তি বসে আছে। আমি সচরাচর ভুতের গল্প শুনলেও ভয় পাই, এতো দেখছি জলজ্যান্ত ভুত! ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে । একটু আগে খেসারী ক্ষেতের আলে কম্ম সারার পরও আমি পিসাবের বেগ অনুভব করলাম। ভয় লুকিয়ে ওস্তাদকে বললাম- মনে হয় মেছো ভুত!
ওস্তাদ আমার কথা শুনলেন বলে মনে হল না। রাগে গজরাতে গজরাতে বললেন, কামাইল্লারে বলছি বাগিচায় থাকতে, হালার পুত বাগিচা ছেড়ে ঘরের পিছে কি করে?
যুদ্ধের ময়দানে সেনাপতির আদেশ অমান্য করা বিদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে। এর একটা বিহিত কল্পে ওস্তাদ নিঃশব্দে কামালের পিছনে গিয়ে গদাম করে মারলেন লাথি। পদাঘাত সইতে না পেরে কামাল গড়িয়ে গড়িয়ে পুকুরে পড়ে গেল। এবং পুকুর থেকেই চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করে দিল।
ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা হতবুদ্ধি! ১৫ সেকেন্ড পরে আমরা উপলব্ধি করলাম, যাকে কামাল বলে ভ্রম করেছি তিনি রাসেদা ভাবীর শ্বশুর। যিনি মনের মাধুরী মিশিয়ে জল বিয়োগ করছিলেন।
ওস্তাদের সাথে খেজুর রস, ডাব জাতীয় কয়েকটা অভিযানে গিয়েছি। অনুগত সৈনিক বলে আমার বেশ সুনাম আছে । এই প্রথম সেনাপতির আদেশের অপেক্ষায় না থেকে দিলাম দৌড়!!
বিশ কদম পরেই আমার সঙ্গে দৌড় কর্মে যোগ দিল কামাল। খেসারি ক্ষেতের ভিতর দিয়ে দুজনের সেকি দৌড়। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়ায় এরকম পারফর্ম দেখাতে পারলে নির্ঘাত প্রাইজ পেতাম। ৪/৫ মিনিট পরে ৩০০ মিটারে থেকেই পিছনে ফিরে দেখি বেশ শোরগোল পড়ে গেছে, টর্চ, হারিকেন নিয়ে প্রতিবেশীরা ছোটাছুটি করছে। লক্ষ্য করে আতঙ্কিত হলাম, ক্ষীণ আলোর টর্চ হাতে একজন আমাদের সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়াচ্ছে, এবং আমাদের প্রায় ধরে ফেলছে ধরে ফেলছে অবস্থা!
স্পিড বাড়ালাম। মাত্রাতিরিক্ত স্পিডের সাথে কামাল তাল মিলাতে পারছিল না, ইতিমধ্যে তার লুঙ্গি খুলে গেছে, লুঙ্গির সাথে প্যাঁচ লেগে দুই আছাড় খেয়েও ফেলেছে। তৃতীয় আছাড় থেকে উঠে 'লুঙ্গীর মায়রে বাপ' বলে সে লুঙ্গী বিসর্জন দিল।
আধা কিলো গিয়ে আবার পেছন ফিরলাম, আমাদের ধরতে আসা ব্যাটাও খিঁচে দৌড়াচ্ছে। আশার কথা ব্যাটাকে একটু পিছনে ফেলতে পেরেছি।
কিন্তু শরিরে আর কুলাচ্ছিল না। কামাল খেসারী ক্ষেতে বসে পড়েছে। ফিসফিসিয়ে বলল - ব্যাটা একা একা আসছে, আমাদের দুইজনের সাথে পেরে উঠবেনা। আমাদের কাছাকাছি এলেই ধুস মার লাগামু।
আসলে 'দুজন' বলছে আমাকে খুশি করার জন্য। সে ভাল করেই জানে আমাকে দিয়ে মারামারি হয়না। আমাদের দলে কামাল ছিল পালোয়ান কিসিমের। তাই তার উপর ভরসা করা যায় । বুদ্ধিটি আমার মনপুত হল। আমি বসে পড়লাম।
দেখলাম ব্যাটা আমাদের দুজনের মাঝামাঝি এসে টর্চ জালিয়ে আমাদের খুঁজছে। আমরা এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। কামাল লাফ দিয়ে তার ঘাড়ে এসে পড়লো । সাথে সাথে ধরাশায়ী, সাথে বেদম মার,কিল,ঘুশি।
সে এক হুলুস্থুল কান্ড, আধা শতক খেসারী ক্ষেত লন্ডভন্ড। শিকার প্রায় নিস্তেজ। কামাল নিজের ইজ্জতের হেফাজত কল্পে শিকারের লুঙ্গী খোলায় ব্যাস্ত। এমত সময়ে চি চিঁ করে শিকার বলে উঠলো- তোরা আমাকে মারছিস কেন? আমি নবি, আমি নবি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:০৭