somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম যবন দর্শনের বিরল অভিজ্ঞতা

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ নামে চমৎকার একটি গ্রন্থ পড়ছি।বইটির অংশ বিশেষ পাঠকদের সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না-
(বখতিয়ার খলজির বাংলায় আগমনের পুর্বের ঘটনা।বাংলার ক্ষমতায় রাজা লক্ষন সেন।‘ম্লেচ্ছ যবন’ মুসলিমরা কদাচ ব্যবসায় উপলক্ষে এদেশে আসছে।আলোচিত ঘটনা ছিল কেউ যবন দেখেছে কিনা? দেখলে তাদের কর্মকান্ড কিরূপ তা জানতে সকলে উৎসুক ছিল। সেকালের যবন সংশ্লিষ্ট এরকমই একটি আলোচনা-)

- দীনদাস তুমি কি পশ্চিম দেশাগত যবনদের দেখনি? হঠাত সুকদেব শ্যালককে প্রশ্ন করেন।
হ্যাঁ,দেখেছি, অত্যান্ত নিকট থেকে দেখেছি- সে বড় আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। আপনি দেখেছেন ধর্ম প্রচারকদের, কিন্তু আমি দেখেছি বণিকদের।আচ্ছা আপনি কি ওদের উপাসনা করতে দেখেছেন? দীনদাস জানতে চান।
না তো? শুকদেব কৌতূহলী হলেন। বললেন, তুমি কোথায় দেখলে বলনি তো?

গোকুল হাটেই দেখেছি, - সে এক বিরল অভিজ্ঞতা এবং অভিনব দৃশ্য।গোকুল হাটে তারা সেদিন তিনটি অশ্ব নিয়ে আসে, অশ্বারোহণেই তারা এসেছিল।তাদের অশ্ব গুলি দেখার মত। আহা! যেমন তাদের উচ্চতা, তেমনি তাদের দেহ শোষঠব। মুগ্ধ হয়ে যেতে হয় একেবারে!
বণিক দলটি ছিল ক্ষুদ্র, সংখ্যায় তারা মাত্র চারিজন। দ্বিপ্রহরের পরেই তারা হাটে উপনীত হয়।বলাই বাহুল্য তাদের অশ্ব ক্রয় করার মত লোক গোকুল হাটে ছিল না।সম্ভবত ক্ষুদার্ত হয়ে উঠছিল তারা। তাই অপরাহ্ণের শেষে তারা বিশ্রাম এবং আহারের আয়োজন করে।

একজন প্রথমে এক খানি বস্ত্র বিস্তৃত করে।তার মধ্যস্থলে রাখা হয় খাদ্যবস্তু গুলি, খন্ড মিষ্টান্ন এবং কদলী। অতঃপর একে একে তারা হস্ত মুখ প্রক্ষালন করে।ওই প্রক্ষালন ক্রিয়াও সম্ভবত তাদের উপাসনার অঙ্গ। কারন হস্ত মুখ প্রক্ষালনের সময় তারা মন্ত্র পাঠ করছিল, নিঃশব্দে। হস্ত পদ প্রক্ষালন শেষে তারা খাদ্যবস্তু গুলির চারিধারে বৃত্তাকারে উপবেশন করলো।
দিবাবসানের মুহুর্তটিতে একজন দাঁড়িয়ে দুই কর্ণে অঙ্গুলি স্থাপন করে উচ্চ স্বরে আরম্ভ করলো মন্ত্রপাঠ-ভাষা বড় দুর্বোধ, তবে মনে হচ্ছিল, কাউকে যেন আহ্বান করা হচ্ছে।
মন্ত্র পাঠ শেষ হলে তারা একত্রে বসে আহার্য গ্রহন করলো। এ এক অদ্ভুত জাতি প্রভু ভৃত্য একত্রে বসে এবং একত্রে বসেই আহার্যও গ্রহন করে।
আহার শেষ হলে তারা সারিবদ্ধভাবে দাড়ালো। অগ্রভাগে দাড়ালো যে লোকটি সে প্রায় বৃদ্ধ এবং দীর্ঘ শ্মশ্রুমণ্ডিত, সে-ই ওদের পুরোহিত। এবং এ-ও এক অদ্ভুত কান্ড, ওরা সমবেত ভাবে উপাসনা করে, পুরোহিত নেতৃত্বে থাকে, আর সকলে তাকে অনুসরণ করে। দেখলাম বৃদ্ধটি প্রথমে কর্নমুলে দুই হাত অগ্র স্পর্শ করে ্মন্ত্র পাঠ আরম্ভ করলো, অতঃপর নাভিমূলে দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আবার কিছুক্ষন চলল মন্ত্র পাঠ।

ওদের মন্ত্রোচ্চারণ সুললিত ও সঙ্গীতময়। মন্ত্রোচ্চারণ শেষ হলে দুই হাত হাঁটুতে রেখে শরীরের উর্ধাংশ বিনত করে রাখলো কয়েকমুহূর্ত। অতপর দেহ ঋজু করে মুহূর্তেক দাঁড়িয়েই নতজানু হয়ে ভূমিষ্ঠ প্রনাম করলো। একই ভাবে দুবার প্রণাম করে পুনর্বার উঠে দাঁড়ালো। প্রণাম যে কাকে করলো বলা কঠিন।পশ্চাতবতীরা না হয় পুরোহিতকে করলো, কিন্তু পুরোহিত কাকে করলো? কোন দেবমুর্তি সম্মুখে ছিল না।

দীনদাশ বর্ননার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাখ্যাও দিচ্ছিলেন, এতে বর্ননাটি দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই।
বল্লেন,ভেবে দেখুন উপাসনার স্থল উন্মুক্ত প্রান্তর,কোন দেবালয় নয়, সামনে কোন বিগ্রহ নেই, পুজার নৈবদ্য নেই, উৎসর্গ নেই- অথচ উপাসনা হয়ে যাচ্ছে।এভাবে কয়েকবার উত্থান, মন্ত্রপাঠ, এবং ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করার পর সর্বশেষ একবার দক্ষিণে একবার বামে দুটি শ্লোক উচ্চারণ করে তারা উপাসনা শেষ করলো।
শ্যামাঙ্গ হতবাক হয়ে শুনছিল। কার উপাসক এরা? বিষ্ণুর,নাকি শিবের? নাকি ভিন্ন কোন দেবতার? -----

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:০১
৫৩টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×