- আব্বু , মামা বানান করতে পারি।
- কর ?
- ক আকার মা , চ আকার মা = মামা ।
শুনে আমি মূর্ছিত ।
অভিনব বানান রীতির প্রচলন কারী এই জ্ঞান তাপস আমার পুত্র , বয়স ৫ এর আসে পাশে । সবে প্লেতে ভর্তি হয়েছে । সারাদিন জ্ঞানের চর্চার মধ্যে আছে ।
প্রতিদিন ২/১ টা অক্ষর শিখছে ,পৃথিবীর জ্ঞানের দরজা তার জন্যে একটু একটু করে ফাঁক হচ্ছে । এই আনন্দটা সে ধরার চেষ্টা করছে । এই আনন্দ আমার মাঝেও সংক্রামিত হচ্ছে ।
জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি তার দিনের একটা বৃহৎ অংশ কাটে , ব্যবহারিক বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের নেশায় ।
সেদিন বাসায় গিয়ে দেখি মন খারাপ করে খাটে বসে আছে । ব্যাপার কি জিজ্ঞেস করায় বলল , আম্মু বকেছে ।
আরো বিশদে গিয়ে জানা গেল---
খাটের উপর থেকে ফুটবল নিক্ষেপ করে কিভাবে টিভির সুইচ অন অফ করা যায় এই আবিস্কারে প্রায় সফল হয়ে গিয়েছিল, মাঝখান থেকে গ্লাসটা ভেঙ্গে সবকিছু বরবাদ হয়ে গেল । তার আম্মু শব্দ শুনে কিচেন থেকে এসে দেখে এই কাণ্ড । তার পর-------
সান্ত্বনা দিয়ে বললাম , বাবারে , সব আবিস্কারকদের আবিষ্কারই সমসাময়িক জনগণ ভাল ভাবে নেয় নি । তাদেরকে প্রায়ই বকা ঝকা আর মাইর ধরের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে , আমিও জনগনের বাইরে নই , তাই রিমোট থাকার পরও ফুটবল নিক্ষেপ করে টিভি সুইচ অন অফ করতে হবে কেন, তা আমারও মাথায় ঢুকছেনা ।
পুত্রের চেহারা দেখে বুঝলাম আমার মূর্খতার প্রমান পেয়ে সে বড়ই নিরানন্দ বোধ করছে । (অনেক আগের একটি পোস্টের অংশ বিশেষ)
আমার পুত্র এখন অনেক বড়। এক’এ পাশ করে এবার ফাইভে উঠেছে।জ্ঞান তৃষা আর অজানাকে জানার আগ্রহ তার আরো বেড়েছে। একসময় পিতার মুর্খতা তার নিরানন্দের কারণ হলেও এখন পিতার কর্মে সে বড়ই প্রসন্ন বোধ করছে।
কারণ পিতা তার হাতে তুলে দিয়েছে ‘বিজ্ঞান বাক্স’।এ এক যাদুর বাক্স। অবসর পেলেই বসে পড়ছে এটা নিয়ে।নিজে নিজে ম্যানুয়েল পড়ছে আর নিজেই কি সব পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে হেঁসে কুটি কুটি হচ্ছে।
সকালে বেশ কুয়াশা,বাহিরে অনেকটা অন্ধকার।নাস্তা সেরে গিন্নি সহ কম্বল মুড়ি দিয়ে পড়ে আছি। পাশের রুম থেকে উচ্চস্বরে হাসির শব্দে দুজনেই ছুটে গেলাম।দেখি পুত্র তখনো হাঁসছে আর সামনে কি একটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে।আমাদের দেখে বলল, আব্বু মোটর বানাইছি—
সুইচ অফ করে আমাদের দেখালো। আমি তাজ্জব! সামান্য কিছু তামার তার, একটা চুম্বক এর সাথে ব্যাটারী কানেকশন দেয়া।এটা কিভাবে ঘুরছে আমার নিজেরই মাথায় ধরছে না।
পুত্র বলল- আব্বু আরো অনেক মজার জিনিস আছে। দেখ আমি কি ভাবে ব্যাটারি ছাড়া এই মোটর দিয়ে লাইট জ্বালাই।
সে আরেক বিস্ময় ! মোটরের দুই তারে বাল্বের কানেকশান দিয়ে মোটরটা হাত দিয়ে ঘুরালেই লাইট জ্বলছে !!!
পাশে বসলাম। বিজ্ঞান বক্সটি আমার দেখার সুযোগ হয়নি। এখন দেখলাম, শিক্ষার সাথে আনন্দ জুড়ে দিয়ে শিশুদের জন্য এ এক অসাধারণ শিক্ষা উপকরন। যা শিশুদের চিন্তার জগতকে প্রসারিত করবে।
আমাকে পাশে পেয়ে পুত্র খলবল করে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির বর্ননা দেয়া শুরু করলো। কোনটা দিয়ে কি করা যায়। দেখলাম সেখানে ২০ টা এক্সপেরিমেন্টের যন্ত্রপাতি দেয়া আছে।অনেক গুলির পরিক্ষা পুত্র চালিয়ে ফেলেছে। অনেক গুলি সম্পর্কে আমারও ধারনা ছিল, বইএ পড়েছি। কিন্তু নিজে করে দেখার সুযোগ হয়নি।
এই ভেবে ভাল লাগলো – মোবাইল গেম,ট্যাব,কার্টুন ফেলে আমার পুত্র এখন বিজ্ঞানের নানা এক্সপেরিমেন্ট হাতে কলমে করে দেখার আনন্দটা পাচ্ছে।আর আমি পাচ্ছি আমার পুত্রের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখার আনন্দ।
ধন্যবাদ ‘বিজ্ঞান বাক্স’।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:০০