somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ খ্যাংরার গায়ে হলুদ ; একটি ভৌতিক রম্য ! =p~

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাত দশটা হবে । পাঠ্য বইয়ের ভিতরে ঢুকিয়ে , রোমেনা আফাজের দস্যু বনহুর পড়ছি । একটু আগে আব্বা ঘরে ফিরেছেন ।
আমার পড়ার রুমে এসে মিহি স্বরে বললেন , আব্বা একটু এদিকে আসেন ।
আমি আতঙ্কিত । আব্বার তুই তোকারি ছেড়ে আপনিতে নেমে যাওয়া অতি ভয়াবহ ব্যাপার । অতিত অভিজ্ঞতায় দেখেছি শাস্তির মাত্রা যত তীব্র হবে আব্বার সাম্ভোধোনিক আচার ব্যবহার আর ভোকাল কর্ডের আউট ফুট হবে তত অমায়িক ।বুঝতে পারলাম তিন বিষয়ে ফেল করার বিষয়টি আব্বার নলেজে চলে এসেছে ।
এটা প্রভাত স্যারের কাজ । কিছু মানুষ আছে একজনের গোপন কথা আরেকজনের কাছে নিষ্ঠার সাথে চালাচালি করে । কথিত আছে এদের ''পেটে তিতা পাতাও হজম হয় না ।''
তিতা পাতা অনেক দূর ,আমার ধারণা প্রভাত স্যারের পেটে হজমীর ট্যাবলেটও হজম হয়না ।

ফেল বিষয়ে আজ স্কুলেও ধোলাই খেয়েছি । তিন বিষয়ে ফেল এটা যত গুরুতর ছিল , তার চেয়েও গুরুতর রূপে দেখা দিয়েছিল একটা ট্র্যান্সলেশন ।
গত পরীক্ষায় ''আমরা চা পান করি'' এর অনুবাদ লিখেছিলাম We drink tea. এটা নাকি শুদ্ধ হয়নি । শুদ্ধ We take tea.
পান করা ইংরেজি আজীবন শুনলাম ড্রিংক, এখন সেটা টেক হয় কেমনে ?
ট্র্যান্সলেশনটায় প্রভাত স্যার এমন ভাবে লাল কলমে ক্রস দিয়েছিলেন যে , কলমের খোঁচায় পরীক্ষার খাতার দুইটা পাতাই চিরে গেছিল ।

এবারে একটা পেসেজ ছিল , যার একটি বাক্য ''বৃষ্টি পড়ে'' । ''বৃষ্টি পড়ে''র ট্র্যান্সলেট করেছিলাম ,''Bristi is reading." তেনার পছন্দ হয়নি । পছন্দ হয়নি ভাল কথা আগের মত কেটে দিতি , এবার নাহয় পাতা তিনটা যাইতো ! তা না তেনারা তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন ।
বৃষ্টির ইংরেজি Rain না এসে তোর মাথায় person বৃষ্টি বেগম কেন এল ?
তুই নাকি বিকালে বৃষ্টিদের বাড়ির সামনে ঘুর ঘুর করিস ?
ইটের আধলা দিয়ে স্কুলের সারা দেয়ালে L+B কে লিখেছে ?
আরে বাবা করসতো পণ্ডিতি ,তোর এত গোয়েন্দাগিরির দরকার কি ? গোয়েন্দাগিরির শখ হলে কেজিবি সিআই'এ যা ! সেটা না , তেনারা খেজুরের ডাণ্ডা নিয়া দৌড়াদৌড়ি করে । যত্ত সব----!

আব্বা আমাকে ডেকে সামনের রুমে চলে গেছেন । অতিতে আমার বড় ভাইয়েরা আব্বার ডাক উপেক্ষা করেছেন এমন নজীর নাই । আমিও উনাদের পদাংক অনুসরণ করে সামনের রুমে এসে দাঁড়ালাম ।
- স্কুলে যান নি গো আব্বা ?
- জী যাই ।
- উমেশ বাবুর অসুখ শুনলাম , আজ স্কুলে এসেছেন ?
কথার ঘূর্ণি শুরু হয়েছে , এখান থেকে শুরু হবে ঘূর্ণিঝড় । ঘূর্ণিঝড় কোন দিকে মোড় নিবে , এই রুমে দাদীর লাঠির উপস্থিতি দেখে অনুমান করা যায় । মনে মনে , ''আপনার খাজুরিয়া আলাপের গুল্লি মারি'' বলেই , দিলাম দৌড় ।

হাফাতে হাফাতে পূর্ব বাড়ির পুকুর পাড়ে এসে থিতু হলাম । কিছুক্ষন পর একটা শিয়াল এসে আমাকে রেকি করে গেল । একটু পরে তিনটা । কিছুদিন আগে আমাদের এলাকার একজন শিয়ালের সম্মিলিত আক্রমণের শিকার হয়েছিল । কিন্তু এরা আমাকে কিছু না বলে চলে গেল কেন বুঝে আসছেনা । পাশের জঙ্গলে তাদের কাঁই কুঁই শুনছি । সম্ভবত তারা জরুরি মিটিং কল করেছে ,আজকের এজেনডা - ''এই মিয়ারে ধরাশায়ী করতে কি রূপ শিয়াবল দরকার'' ( শিয়াবল = জনবলের শিয়ালিয় রূপ)। এরকম ভাবনা মনে উদয় হওয়ায় আবার দৌড় । এবার উত্তর বাড়ির খালি গোয়াল ঘর ।
ঘন ঘন হাপাচ্ছি , সামনে দেখি আবারও একটা শেয়াল । আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে ।
ভাব খানা এমন , '' কাগা এইখানে ? আপনেরে পুরা গেরাম বিছড়াইতেছি ।'' শেয়ালটা স্বজাতিদের খবর দিতে গেলে হুলিয়া আসামীর মত আবার স্থান পরিবর্তন করলাম ।

এবার ছনখোলা বন । দিনেও যেখানে অন্ধকার । সচরাচর এখানে কেউ আসেনা দেখে পাড়ার কিছু দুষ্টলোক এখানে তাশ খেলে । এদের অনুপস্থিতিতে কেউ কেউ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ডাকে সাড়াও দেয় , তাই চার দিক থেকে মনুষ্য বিষ্ঠার তিব্র গন্ধ আসছে ।
তাশাড়ূরা এখানে বেশ আরামদায়ক একটা খড়ের বিছানা পেতে রেখেছে । বিছানায় বসলাম । রাত প্রায় আড়াইটা হবে , সম্ভবত মশাদের ডিনার টাইম । সবাই একযোগে হামলে পড়েছে । এত মশা দেখে আমার ধারণা তারা পাশের পাড়া থেকেও দাওয়াত দিয়ে মশা এনেছে । হয়তো মাইকিংও করেছে ,'' ভাই সব , ভাই সব ছনখোলা বনে এক বিশাল কাঙালি ভোজের আয়োজন করা হইয়াছে , ভাই সব--''

ঘুমে চোখ ঢুলু , মনে হয় ঘুমিয়েও পড়েছিলাম । কারা যেন সুরে সুরে কথা বলছে ।
''পালাবি কোথা মা কালী
আরতো তুই পালাতে পারলিনারে
আমি তোর গায়ের গন্ধ পাইয়াই তোরে
ছিইনা ফালাইছিরে খ্যাঙরা ! '' এর পরই চীৎকার !! পাইছিরে ! পাইছি !!! খ্যাঙরারে পাইছিরে-------

চোখ মেলে যা দেখলাম ,এর জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না । সামনে দাঁড়ানো এক বিকট দর্শন কঙ্কাল ! চোখ থেকে সার্চ লাইটের মত আলো বেরুচ্ছে । অদুরে দেখি আরও একটা কঙ্কাল এদিকে আসছে , তার আবার একটা চোখ নাই । দুজন সামনে এসে আমাকে বলল , উঠ দোস্ত উঠ , এটা বিরাট অকল্যাণ , এভাবে কেউ পালিয়ে আসে ?
আমি বললাম , দোস্ত ? আপনারা কারা ? আপনারাতো মনে হয় ভূত ! আমি মানুষ , মানুষ ভূতের দোস্ত হয় কীভাবে ?
তুই মানুষ ? বলেই দুজন বিশ্রী ভাবে হেসে উঠলো , বলল এসব ঢং করিস না দোস্ত , আজ শ্যাওড়া গাছের পেত্নীর লগে তোর বিয়ে ।
আর তুই কিনা ''গায়ে গু'' অনুষ্ঠান থেকে পালিয়ে এলি ?
আতঙ্কিত আমি জানতে চাইলাম , ''গায়ে গু'' কি ?
একজন বলল , ফাজলামি করিস না , আচ্ছা যা , তুই যখন বলছিস তুই মানুষ তাহলে শোন , মানুষদের যেমন গায়ে হলুদ , আমাদের তেমনি ''গায়ে গু'' ।
এবার উঠ বলে এক চোখা খেঁকীয়ে উঠলো । উঠ কইলাম , নইলে গায়ে হাত দিমু , লাত্থিও দিবার পারি ।

একবার বৃষ্টিকে বিয়ে করবো বলেছিলাম । জবাবে সে বলেছিল ,তুই তো একটা ভুত ,তোকে কে বিয়ে করবে ?
বলেছিলাম , আমাকে তুই পেত্নী বিয়ে করবি । আমার চেহারা একটু খারাপ , তাই বলে ভূতেরা আমাকে একেবারে তাদের দোস্ত খ্যাঙরা ভেবে বসে আছে ? এখন দেখছি সত্যি সত্যিই পেত্নীকে বিয়ে করতে হবে !
তারা রেগে যাচ্ছে , চোখ থেকে বেরুনো আলো তীব্র হয়ে আমার চোখের উপর পড়ছে । শেষ চেষ্টা হিসাবে কেঁদে উঠলাম , ভাই আমাকে মাফ করেন ভুত ভাই ও ভূত ভাই , আপনাদের পায়ে পড়ি আমি বিয়ে করবোনা ।
জলদি উঠ বলে আবার ধমক !

অগত্যা উঠে দাঁড়ালাম , তীব্র আলোয় চোখ জ্বালা করছে । আলোর উৎসর দিকে তাকিয়ে দেখি , সেটা একটা টর্চ , ধরে আছেন আব্বা ।
পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে আমাদের কাজের ছেলে হামজা মিয়া ।
(রিপোস্ট)

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৭
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×