ছেলেটি ছাত্রলীগ করতো । একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে । ছাত্রলীগে তার একটা পদও ছিলো । দলবাজির চাইতে চেতনা আর আদর্শবাজির উপর জোরটা বেশি ছিলো । দলকে ব্যবহার করে ফায়দা নেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে লেখালেখিও করতো । ছেলেটা ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা কায়েমে নিজের মেধা মনন বোধশক্তি দিয়ে রাজনীতি করতো ।
একদিন তার দলের এক প্রভাবশালী নেতার ইশারায় তাকে তার রুমে খুন করে রশিতে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয় । পুলিশকে দিয়ে বলিয়ে নেওয়া হয় , ছেলেটা আত্মহত্যা করেছে । কিন্তু ছেলেটার মা পুলিশের এই বক্তব্য তাৎক্ষনিক প্রত্যাখ্যান করে অভিযোগ করে, তার আদরের ছেলে চেতনা এবং আদর্শের রাজনীতি করে বলে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাকে হত্যা করেছে ।
লাশ ময়না তদন্তের পর ডাক্তার রিপোর্ট দেয়, ছেলেটা আত্মহত্যা করেছে । কিন্তু ছেলেটার মা ডাক্তারের এই ময়না তদন্তকে ময়লা তদন্ত বলে তাৎক্ষনিক প্রত্যাখ্যান করে আদালতের আশ্রয় নিয়ে পুনঃ ময়না তদন্ত দাবী করে ।
পুনঃতদন্তে বলা হয় , ছেলেটাকে হত্যা করা হয়েছে ।
যার ইশারায় ছেলেটাকে খুন করা হয়েছিলো সেই নেতা এতো বড় নেতা যে তার কথায় গোটা একটা শহর চলে ! তাই পুলিশ তার কথায় উঠে আর বসে । সেই নেতা পুলিশ কমিশনারকে বলে দিলো , ছেলেটার খুনিদেরকে যেনো গ্রেফতার করা না হয় ।
এদিকে ছেলেটার সহযোদ্ধারা বারবার পুলিশের কাছে দাবী জানাচ্ছে খুনিদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবার । মিছিল মিটিংয়ে রাজপথ উত্তাল করে ফেললেও পুলিশ ছেলেটার একটা খুনিকেও ধরে না । আন্দোলন চলতেই থাকে । আন্দোলন জোরদার হয় । কিন্তু প্রশাসন নিরব । নির্বাক । .
অপরদিকে ছেলেটার মা বোন সংবাদ সম্মেলন করে খুনিদের বিচার দাবী করে । তারা বলে, বিচার না হওয়া পর্যন্ত সরকারের কাছে বিচার চেয়েই যাবে । তারা চায়না বাঙলার আর কোন মা বোনের বুক খালি হোক ক্ষমতালোভীদের জন্য ।
দিন যায় মাস ঘুরে বছরও যায় বাট ছেলেটার খুনের কোন আসামী গ্রেফতার হয় না । মামলার কোন অগ্রগতিও নাই ।
ছেলেটার মা থানা পুলিশ এমপি মন্ত্রী মিডিয়া টেলিভিশন চ্যানেল সব জায়গায় দৌড়ায় ! রাস্তার ধারে প্ল্যা কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ! মা তার ছেলে হত্যার বিচার চায় । জানতে চায় কি অপরাধে তার ছেলেকে হত্যা করা হলো ।
কেউ কথা শুনে না । কেউ দেখে না ছেলে হারা মায়ের করুণ আর্তনাদ । পুলিশ বধির ! পুলিশ কানা ! পুলিশ পঙ্গু সেই ক্ষমতাধর নেতার কাছে । নেতার হুকুম না তাই পুলিশ কিছুই করতে পারছে না !
ছেলেটার মা স্থির করলেন , ছেলে হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তিনি অনশন করবেন । মা ছেলে হত্যার বিচার পাবে না এইটা মেনে নেওয়া যায় না স্বাধীন বাঙলাদেশে । তার ছেলে রাজনীতি করতো । বড় হয়ে হয়ত একদিন দেশটাকেই বদলে দিতে পারতো সততা চেতনা এবং আদর্শ দিয়ে । কিন্তু আশ্চর্য্যের ব্যাপার তার ছেলে হত্যার বিচার হচ্ছে না ! খুনিরা ধরা পড়ছে না !
মা আমরন অনশন শুরু করলো । শুধুমাত্র পানি খায় । আর অন্য কিছুই খায় না । বয়স্ক মা অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়ে । ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে । অসুস্থ অবস্থায়ও অনশন চলতে থাকে । দিনকেদিন বয়স্ক মা অনশনের কারণে মৃত্যু আর জীবনের মাঝামাঝিতে এসে যায় !
এই খবর সোশাল মিড়িয়া ছড়িয়ে পড়লে মন কেঁদে উঠে , পুলিশ প্রশাসনের এসপি'র । এসপি হাসপাতালে ছুটে গিয়ে ছেলে হারা মা'কে প্রতিশ্রুতি দেয় আর কালক্ষেপণ নয় । খুব শিগ্রই খুনিদের গ্রেফতার করা হবে । এসপি অনুরোধ করে মা'কে অনশন যেনো ভাঙ্গে ।
মা পুলিশ প্রশাসনের এসপির কথায় আশ্বস্ত হয়ে অনশন ভাঙ্গে এসপির হাতে জুস খেয়ে ।
(গল্পটি অসমাপ্ত কারণ এখনো হয়তো আশঙ্কা আছে "এমন অনেক কিছুই হবে যা কেউ ভাবে নাই আগে" )
ছেলে হত্যার বিচার জীবন দিয়ে চাইতে হচ্ছে তার মা'কে !
এমন বাঙলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম ?
আপনারা জানেন ছেলেটি কে ?