লোকটার নাম সামছু। তার সাথে আমার পরিচয় জেলখানায়। প্রচুর কোরান তেলোয়াত করে। এক ওয়াক্ত নামাজও ছাড়ে না। শিক্ষাগত যোগ্যতা ক্লাস থ্রি। আওয়ামীলীগের নাম শুনলেই চিল্লাইয়া কয়, ফেরাউনের দল।
সে বিশ হাজার পিস ইয়াবা নিয়া আকবরশাহ থানা পুলিশের কাছে ধরা খায়। তারপর থেকে জেলখানায় আছে দেড় বছর।
খুবই দরিদ্র পরিবারে জন্ম সামছু'র। বাপ মারা যাওয়ার সময় তিন লাখ টান দেনা রেখে যান। তার দুইটা সন্তান আছে। একজন মেয়ে একজন ছেলে। মেয়েটি ক্লাস নাইনে পড়ে। ছেলেটি সিক্সে।
সামছু গ্রামে হাল চাষ করতো। কোন রকমে জীবন চলতো তার। অর্থনৈতিক সংকট ছিলো প্রচুর। একবেলা খাইলে দুইবেলা না খাই থাকতে হতো পরিবারের সদস্যদের।
অর্থনৈতিক সংকট ঘুচানোর জন্য ধানি জমি বিক্রি ১৫ হাজার টাকায়। টাকা নিয়ে ঘরে ফেরার সময় চিন্তা করে এই টাকা দিয়ে কি করা যায়!
পথিমধ্যে দেখা হয় তার এক পরিচিত মামার সাথে। মামারে কইলো, মামু দিনকালতো ভালা যাইতাছে না। একবেলা খাইলে দুই বেলা বউ পোলা মাইয়া লই না খাই থাকতে হয়। কিছু একটা উপায় বাতলাই দাও যেনো চারটা ডাল ভাত তিন বেলা খাইতে পারি।
মামু তারে একটা প্যাকেট দিয়া কইলো, এইটা আজ বিকালের গাড়িতে কইরা কুমিল্লায় এই নাম্বারের মানুষকে ফোন করে হাতে হাতে বুঝাই দিবে। আর তারে এইজন্য দশ হাজার টাকা দেওয়া হয়। নগদ ক্যাশ।
সামছু রাজি হয়ে যায়। দশ হাজার টাকা মশকারি না!
সামছু যাওয়ার সময় চিন্তা করতেছে, ইয়াবায় এতো পয়সা! একটা প্যাকেট ক্যারি করলেই দশ হাজার টাকা তাইলে এই প্যাকেটের দাম নিশ্চয় কয়েক লাখ!
তখনই সামছু সিদ্ধান্ত নেয় তার কাছে থাকা পনেরো হাজার টাকা আর প্যাকেট ক্যারি করা বাবত দশহাজার টাকা টোটাল পঁচিশ হাজার দিয়ে আল্লাহর নামে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করবে।
চালান পৌঁছাই দেওয়ার পর মামুর সাথে দেখা করে ইয়াবা ব্যবসার ইচ্ছা প্রকাশ করে সামছু। মামু কয়, ইয়াবা ব্যবসা দুই ধরনের করা যায়। এক। ইয়াবা ক্যারি করা। দুই। ইয়াবার পাইকারি ব্যবসা।
সামছু বলে, সে পাইকারি করবে না। সে নিজে ইয়াবা কিনে নিজেই সাপ্লাই দিবে।
মামু তারে এক লাখ ইয়াবা দে। বড় আর ছোট মিলাইয়া। যার দাম বিশ হাজার টাকা। মামু কয়, ভাগিনা টাকা নগদ দিতে হবে না জিনিস বেইছা টাকা দিলেই হবে।
সামছু এই এক চালানে আয় করে অবিশ্বাস্য রকম। এক লাখ ইয়াবার মধ্য বড় পঞ্চাশ হাজার। যার ক্রয় মূল্য প্রতি পিছ ৬৫ টাকা। আর বিক্রয় মূল্য ১৫০ টাকা। ৫০ হাজার ইয়াবা প্রতি পিস ৬৫ টাকা করে কিনে ১৫০ টাকা করে বিক্রি।
আর বাকি ছোট পঞ্চাশ হাজার প্রতি পিছ ৩০ টাকা ক্রয় মূল্য আর বিক্রয় মূল্য ৭০ টাকা।
এইবার ক্যালকুলেটর মাইরা দেখেন সামছুর আয় কত?
সামছু দুই মাসের মধ্যে বাপের সব দেনা পরিশোধ করে দেয়। জায়গা কিনে। টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে এসে বাড়ি করে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়া তিন তলা। এবং বিয়া করে আরো একটা। আগের বউ পোলা মাইয়া নিয়া গ্রামে থাকে নয়া বউ নিয়া সামছু কক্সবাজার থাকে। প্রতি বিশুধবারে টেকনাফ যায় শুক্রবার থাইকা শনিবারে কক্সবাজার চলে আসে।
তার মাইয়ারে প্রতি ঈদে বিমানে করে কক্সবাজার থেকে ঢাকা নিয়ে আসে শপিং করাইতে।
সামছু আমারে কইলো, ইয়াবা ব্যবসা কইরা তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে রাতারাতি। ইয়াবা ব্যবসা-ই সবচাইতে শর্টকাট ব্যবসা যে ব্যবসায় ঝুঁকি কম লাভ অবিশ্বাস্য রকমের বেশি।
আমারে সামছু মিয়া প্রত্যেক ওয়াক্তে নামাজের দাওয়াত দিতো। আমি তারে কইতাম, একজন বাবা ব্যবসায়ি যদি ইসলামের দাওয়াত দে তাইলে মাইনসেতো ইসলাম ধর্মের সমালোচনা করবে।
সামছু একবার কোরান পড়া শুরু করলে থামতোই না। এক নাগাড়ে পড়তে থাকতো। সে বলতো, একমাত্র কোরানই থাকে শান্তি দিতে পারে জেলখানায়।
আমি তারে কইতাম, চোর, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, মাদকব্যবসায়ী, ধর্ষক এবং ভন্ডরা সবচাইতে বেশি ধর্মপালন করে।
সামছু আমারে ক্ষুব্ধ হইয়া কইতো, চুরি করো, ঘুষ খাও, দুর্নীতি করো, মাদক বেঁচো, মাদক খাও, ধর্ষণ করো কোন সমস্যা নাই। যদি ধর্মপালন না করো, আল্লাহরে না ডাকো, ধর্ম প্রচার না করো তাইলে বিরাট সমস্যা।