দৈন্দদিন যাতায়াতে যানবাহনে চলাচলের পদ্ধতিতে এক নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে প্রতিনিয়তই। এই পদ্ধতির মধ্যে একটি হলো ০১। লোকাল সার্ভিস আর অন্যটি হলো ০২। সিটিং সার্ভিস।
গত কয়েক মাস আগে একবার বিআরটিএ এবং বাস মালিক সমিতির যৌথ উদ্দেগ্যে সকল রুটের বাসকে লোকাল সার্ভিস হিসেবে ঘোষণা করা হলো। সেই ঘোষনার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছুদিন আমরা লোকাল যাত্রী হিসেবে সিটির সকল বাসেই ভ্রমণ করেছি এবং কিছুটা সস্তা ভাড়ায় নির্দিষ্ট গন্ত্যব্যে যাওয়া-আসা করতে পেরেছি। মূলত সিটির সকল বাস সার্ভিসকে লোকাল সার্ভিস ঘোষণা করার কারণ হচ্ছে সকল যায়গা থেকে সকল যাত্রী তার নিজস্ব গন্তব্যে নির্দিদ্বায় যাতে যাতায়াত করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্যই। তারপর হঠাৎ একদিন আবার তা ঘোষণা দিয়ে ১৫ দিনের জন্য বন্ধ করে পূর্বের ন্যায় সিটিং সার্ভিস চালু করা হলো। যদিও কর্তৃপক্ষের বেধে দেয়া ঘোষণা আজও সেই ১৫ দিন শেষ হয়নি!
তাতে করে কি লাভ হয়েছে কর্তৃপক্ষের জানেন কি?
মূলত সিটির সকল বাস সার্ভিসকে লোকাল ঘোষণা করে পরবর্তীতে আবার সেই লোকাল বাসগুলোকে সিটিং সার্ভিস দেখিয়ে সার্ভিস চালু রাখাতে বাস মালিক সমিতি এবং বিআরটিএ এর উভয়ের মুনাফা বেড়েছে। যেমনঃ মিরপুর ১২ থেকে বিহঙ্গ গাড়ীগুলো গুলশান পর্যন্ত সিটিং সার্ভিস চালু অবস্থায় ভাড়া আদায় করে জনপ্রতি ২০টাকা করে। আবার সেই বিহঙ্গ গাড়ী যখন লোকাল হিসেবে ঘোষনা করা হলো ভাড়া আদায় করতো ১৫টাকা করে। অথচ আবার যখন সেই লোকাল সার্ভিসকে সিটিং সার্ভিস বলে ঘোষণা করা হলো, দেখা গেলো পূর্বের ন্যায় গাড়ী লোকাল হচ্ছে কিন্তু ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২০টাকা করে। যা এখন পর্যন্ত বলবৎ আছে। আমার মনে হয় সিটির অন্যান্য রুটেও একই চিত্র দেখা যাবে।
যতদ্দুর বুঝতে পারি এর প্রতিবাদ করে কোনো লাভ কিংবা মুনাফা আশা করতে পারিনা। বরং কষ্ট করে গাড়ীতে আসা যাওয়া করবো কিন্তু ভাড়া দিবো আরামদায়ক গাড়ীর, সেটা সত্যি খুবই বিরক্তিকর বটে। আর এ নিয়ে প্রতিদিন বাদানুবাদের শেষ থাকেনা। আর এর একটি সুন্দর ও সঠিক বিহীত আশা করছি। বিশেষ করে যারা এর দায়িত্বে রয়েছেন তাদের কাছে।
এখন এই লোকাল গাড়ীকে সিটিং কিংবা সিটিং গাড়ী লোকাল বলে যাত্রীর নিকট থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করার যে রেওয়াজ শুরু হয়েছে তা বন্ধ করার জন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে ট্রাফিক ডিপার্টমেন্টের দৃষ্টি কামনা করছি। আমি জানি, এক্ষেত্রে যাত্রীর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বাসের মুনাফার সাথে জড়িত কোনো ব্যক্তি কিংবা সংগঠন এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে না। যদি ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট এই সমস্যা সমাধানে ভুমিকা রাখে তাহলেই কেবল এই সমস্যা সিটি সার্ভিস থেকে একেবারে স্বমূলে নিপাত হতে পারে।
বাংলাদেশ ট্রাফিক পুলিশের ডিআইজিকে (বিভিন্ন সিটির অধীনে) অনুরোধক্রমেঃ
০১। আপনারা সকল সিটির সকল গাড়ীর তালিকা বুঝে নিন। কোন গাড়ীটি লোকাল হিসেবে চলে আর কোনটি সিটিং।
০২। লোকাল গাড়ীর ব্যাপারে প্রতিটি ষ্টেশন নির্দিষ্ট করে দিন এবং তাকে লেন মেনে চলতে বাধ্য করুন। যাতে করে প্রতিটি নির্দিষ্ট ষ্টেশনে যাত্রী উঠানো নামানো সহজ করা যায়। এর মাধ্যমে কিছু হলেও যানযট কমে যাবে বলে মনে করি। সব সময় এসব তদারকি করুন।
০৩। সিটিং সার্ভিস এর ক্ষেত্রে গাড়ীর যাত্রা (শুরুর) অবস্থান থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি গাড়ীতে নজর রাখুন, যেনো প্রতিটি সিটের বিনিময়ে একজন যাত্রীই শুধু বহন করা হয়। যাত্রী না পেলে খালি যাবে কিন্তু অতিরিক্তি যাত্রী কোনো ভাবেই বহন করা যাবে না। সেটা গাড়ীর যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই শেষ পর্যন্তই।
০৪। কোনো ভাবেই দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন করা যাবে না। যদি সিটিং সার্ভিস গুলোতে দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন করতে দেখা যায়, তাহলে অতি দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
০৫। প্রতিজন দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিরই জরিমানা করিয়ে দিন। যদি গাড়ীটি মিরপুর-বাড্ডা পর্যন্ত যায় তবে সেক্ষেত্রে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো ভাড়ার বিপরীতে ৩গুন আদায় করুন। যেমনঃ মিরপুর-বাড্ডা পর্যন্ত ভাড়া হলো-৩০টাকা। জরিমানা করুন ৯০টাকা। এভাবে প্রতিটি রুট অনুসরণ করে তদারকি করুন।
০৬। সাথে সাথে ড্রাইবার এবং হেল্পারের পুরো দিনের মুজুরীটাও জরিমানা করে দিন।
০৭। গাড়ীরও জরিমানা করে দিন। এবং
০৮। ৭ দিনের জন্য ড্রাইভারের লাইসেন্স বন্ধ করে দিন।
আমি আশা করছি, তাহলেই কেবল যাত্রী সহ সকল গাড়ীর ড্রাইবার হেল্পার সবাই সচেতন হয়ে যাবে। আর এরকম অনিয়ম দেখলেই অভিযানের মাধ্যমে আদায়কৃত অর্থে সরকারেরও রাজস্ব বেড়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫২