আওয়ামীলীগ তার রাজনৈতিক পথচলায় কোন কোন ক্ষেত্রে কয়টি বড় ভুল করেছে, আজকে তা নিয়ে লিখবো এবং জানার চেষ্টা করবো। তবে এটি পরিপূর্ণ ভাবে আমার চিন্তা-ভাবনা থেকে লিখা, অন্যদের দ্বিমত থাকতেই পারে; তা গ্রহণীয়।
আমি বলবো সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো দু’টি এবং নতুন করে যোগ করেছে আরো একটি ভুল!
প্রথম ভুলটিঃ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আগে পলিসিগত ভুল, যার খেসারত দিতে হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর জীবন দিয়ে!
দ্বিতীয় ভুলটিঃ ২০০৯ সালে এসে রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তে ৫৭ জন সেনা অফিসারের জীবনাবসান!!
এবং
তৃতীয় ভুলটিঃ ‘কোটা সংস্কারের পক্ষে থাকা সাধারণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর গণপিটুনী-আক্রমণ-গ্রেফতারের মাধ্যমে দমন নীতি অবলম্বন!!!
মতামত এবং পূর্বাপর আওয়ামী রাজনীতির পথপরিক্রমা নিয়ে বলছিঃ-
প্রথম ভুলে নেতা বঙ্গবন্ধুর জীবন দিয়েছে ঠিকই তবে সেক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু’র এবং দলীয় যেসব ভুল ছিলো সেটা জনগণ কখনোই ভুলবে না। যার শেষ পরিণতি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিয়েই সমাধি টানা হয়েছিলো! যদি ও আওয়ামীলীগ সেই অবস্থা থেকে রিফর্ম করে জনগণের সামনে আসতে সময় লেগেছিলো দীর্ঘ ২১ বছর!
অতঃপর দ্বিতীয় ভুলটি ও করলো আওয়ামীলীগ! আর এই ভুলটি ছিলো এমন এক ভুল, যার কারণে আওয়ামীলীগ তার রাজনৈতিক জীবনে অনেক বড় একটি ধাক্কা খেয়েছিলো বলে মনে করি। যদিও এর একটি হিসেব কিংবা জবাব ভবিষ্যতে আওয়ামীলীগ পাবে বলেও ধারণা করি। সেই যাই হোক, তবুও এই জাতি পিছনের কথা ভুলে গিয়ে আওয়ামী সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছিল। বিধিবাম, রক্তে যাদের রক্তচোষা স্বভাব, তাদেরকে শুধাই কিভাবে?! অতঃপর-
তৃতীয় ভুলটিঃ সাধারণ শিক্ষার্থীরা আপনার সরকারের কাছে, কোটা সংস্কার -ই তো চেয়েছিলো, নৌকার সংস্কার তো আর চায় নাই! আপনিও কথা দিয়েছিলেন এবং তাৎক্ষণিক সংসদে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবীটি যৌক্তিক বলে মেনে নিয়ে তা বাতিল করবেন বলে ও কথা দিয়েছিলেন। অতঃপর দীর্ঘদিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার পর আপনারা একের পর এক তারিখ দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবীকে একটি অযৌক্তিক দাবী বলে প্রচার করতে লাগলেন! এমনকি আপনার পেটোয়াবাহিনী দিয়ে সাধারণ শির্ক্ষীদেরকে লাঞ্চিত সহ নারী ছাত্রীদের শ্লিলতাহানী ও করিয়েছেন! দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ১৯৯৯ সালে বাঁধনের বস্ত্র যারা হরণ করেছিলো আজ আবার তারাই সাধারণ ছাত্রীদের গায়ের বস্ত্র নিয়ে টানাটানি করছে!!!
এখন আপনারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের মত একটি গণমানুষের আন্দোলনকে বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিতে গিয়ে গণমানুষকেই বিএনপি-জামায়াত তথা বিরোধী দল বানিয়ে ফেলেছেন!!! যেই কারণে আপনাদের রাজনৈতিক দলটাকে যেসব মানুষ এতদিন মনে প্রাণে আগলে রাখার চেষ্টা করতো, ভালোবাসতো প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে ঘৃণা করার মাধ্যমে; এখন তারাই আওয়ামীলীগকে কোটা সংস্কারের মতো একটি বিষয় নিয়ে ততটুকুই ঘৃণা করতে শুরু করেছে।
এ ঘটনার পর খোদ সাধারণ আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের অনেকে দলটির প্রতি নৈতিক সমর্থন ও হারিয়ে ফেলেছে। হতে পারে আওয়ামীলীগ গায়ের জোরে হয়ত আর কিছুদিন ক্ষমতায় থাকবে, ব্যস এতটুকুই। কিন্তু সেটা বেশিদিন কখনোই হতে পারে না! কারণ মানুষের নৈতিক সমর্থন হারিয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না। আর এই বার যদি আওয়ামীলীগের পতন হয় তাহলে বুঝে নিবেন আগামী ২১০ বছরেও ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করা লাগবেনা। এই জাতি আপনাদেরকে অনেক দিয়েছে বিনিময়ে তেমন কিছু নেয় নি। আশা করছি এরপর আপনার আওয়ামীলীগ নামক রাজনৈতিক দলটার যায়গা হবে ইতিহাসের যাদুঘরে! এর বাইরে তার ও তার সদস্য কিংবা সমর্থকদের কোন অস্তিত্ব থাকবে বলেও মনে করি না।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৩২