আগামী পরশুদিন অর্থাৎ ২২/০৮/২০১৮ইং পবিত্র ঈদুল আযহা, মহান আল্লাহতা’লার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানী দেয়ার মহিমান্বিত দিন। পারিভাষক অর্থে কুরবানী শব্দের শাব্দিক অর্থ হল উৎসর্গ বা ত্যাগ । ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় জিলহাজ্ব মাসের ১০,১১ ও ১২ তারিখে নির্দিষ্ট জন্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে জবেহ করাকে কুরবানী বলা হয় । কুরবানী মুসলমানদের জন্য আল্লাহর প্রতি অগাধ প্রেম ও অনুপম আনুগত্যের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত ।
কোরবানীর উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহতা’লার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা। কোরবানি দেয়ার প্রথম নির্দেশ এসেছিল মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম (আঃ)-এর কাছে। তিনি আল্লাহকে বেশি ভালোবাসেন ও মান্য করেন, নাকি সন্তানের গুরুত্ব তাঁর কাছে বেশি- সেটা পরীক্ষা করাই ছিল উদ্দেশ্য। এজন্য তাঁকে আদরের পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে আল্লাহতা’লার উদ্দেশে কোরবানী করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। নির্দেশ অনুযায়ী হযরত ইবরাহিম (আঃ) নিজ পুত্র সন্তানকে মহান আল্লাহ’র খুশির জন্য কোরবানী দিতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, সেই মোতাবেক হযরত ইসমাইল (আঃ)-ও মহান আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক সানন্দে তা কবুল করেছিলেন। পিতা-পুত্রের এমন কান্ড দেখে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন মহান আল্লাহ। পুত্রের গলদেশে ছুরি চালানো শুরু করার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে হযরত ইবরাহিম (আঃ)-কে এই সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বলা হয়েছিল, তিনি যেন হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর পরিবর্তে একটি পশু কোরবানি দেন। সে অনুযায়ী পশুই কোরবানী দিয়েছিলেন হযরত ইবরাহিম (আঃ)। সেই থেকে পশু কোরবানীর মধ্য দিয়ে মুসলমানরা পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করে আসছেন। বিধানটি চূড়ান্ত হয়েছে শেষ পয়গাম্বর রাসূলে পাক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে।
প্রসঙ্গক্রমে বলা দরকার, ঈদুল আযহা কেবলই পশু কোরবানী দেয়ার এবং উৎসব করার দিন নয়। দিনটির মূলত প্রধান উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানদের মধ্যে আল্লাহতা’লার প্রতি পরিপূর্ণ ভালোবাসা ও আনুগত্য তৈরি করা এবং স্বার্থচিন্তার উচ্ছেদ করে আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়া। আল্লাহতা’লার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করাই ঈদুল আযহার প্রকৃত শিক্ষা। সুতরাং কেবলই পশু কোরবানী দেয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার পরিবর্তে মুসলমানদের উচিত নিজেকে আল্লাহতা’লার কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করা এবং তাঁর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। একই কারণে পশু কেনা উচিত সৎপথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে। পশুর গোস্ত যত বেশি সম্ভব আত্মীয়-স্বজন ও গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেও কল্যাণ রয়েছে। এভাবে সব মিলিয়েই কোরবানী তথা আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয় পবিত্র ঈদুল আযহা। আমরা আশা করতে চাই, বাংলাদেশের মুসলমানরাও দিনটির মূল শিক্ষাগুলো অনুধাবন করবেন এবং চেষ্টা করবেন যাতে প্রতিবেশি ও স্বজনসহ অন্যরাও উৎসবে শরিক হতে পারেন।
সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহা মোবারক এর শুভেচ্ছা রইল। শুভ হোক সবার জন্য পবিত্র ঈদুল আযহা মোবারক ২০১৮ইং।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:২৯