কবুতরের কাছে নির্ভয় হতে কত না চেষ্টা করেছি
সেই ছোটবেলা থেকে, যখন পাখীদের জন্য
আমার সময় বরাদ্দ ছিল আর সকল কাজের চে’ বেশী।
কবুতরের জন্য ভাল মানুষটি হ’তে সহজ-সরল বনে যেতুম
যেন ওরা আমার খুব কাছাকাছি আসে, ঘোরাঘুরি করে।
উঠানে ধান খেতে বসলে মনে মনে বলতাম:
’খা যতটা পারিস খা - তবু ভয় পাসনে, উড়ে যাসনে;
আমার যে খু-উ-ব ভালো লাগে তোদের এই বাকবাকুম শব্দে
গলা ফুলিয়ে দুলে দুলে চলতে আর অহিংস দেখতে।’
ওরা যাতে আমার বাড়িতেই থাকে, তার জন্যে
ঘরের চালের নীচে ঝুলন্ত খাঁচা করে দিয়েছিলাম,
ওমের জন্য খড় পেতে দিয়েছিলাম যতন করে।
উতালা হতাম- কখন পড়বে;
যেন ধন্যি হই একটুখানি বসতে দেখে।
বড় লাজুক, হুশিয়ার আর ভীরু স্বভাবের।
যাতে চেখে চোখ না পড়ে সে জন্যে
আড়ালে গিয়ে টিনের বেড়ার ছিদ্রে চোখ রাখতাম:
কখন আমার আতিথ্য গ্রহণ করে।
কিন্তু ওদের দৃষ্টি এতটাই সূক্ষ্ম যে, ওতেই
টের পেয়ে পাখা ঝাপটানিতে উড়াল দিত। আর
মনটা আমার মুষড়ে যেত: হা পরাণ পাখি আমার,
এতটুকুন করুণাও বুঝি হয় না।
পাখির কাছে মানুষের প্রার্থনা!
সেই স্মৃতি নিয়ে এবার যখন দেখি
আমার শহুরে এক চিলতে বারন্দায়
কবুতরের সেই আনাগোনা আর বাকবাকুম ডাক;
ভীষণ খুশী হই পুরােনো দিনের কথা ভেবে।
অলক্ষ্যে হাটতে গিয়ে চোখে চোখ পড়তেই স্ট্যাচু বনে যাই
যেন পাখিটা আমার না উড়ে যায়।
বড্ড মায়া হয়।
এখন আর কবুতরের জোড়া বাচ্চা কিনি না,
ওর কচি মাংসের স্বাদ পেতে।
অপরাধী মনে হয়, যতটুকুন নিয়েছি তাতে।
তবু যেন ওর মন পাই না, ভালবাসা পাই না -
এতটুকুন বুঝতে চায় না মোটে।
তরুণ বয়সে এর সামান্য চেষ্টাও করিনি
কোনো তরুণীর ভালোবাসা পেতে।
যতটা করেছি, এই শান্তির কপোতের জন্যে।
এখনো বিকেল রোদে অপলক চোখে চেয়ে দেখি
ওদের দলবেঁধে পতপত করে ওড়া,
দিক বদলে বদলে - সুনীল আকাশে।
২৮-০৭-২০১৬, স্বামীবাগ, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৩৩