আজ মুমুর বাসর রাত , পারিবারিকভাবেই ওর বিয়ে হয়েছে । ও গুটিশুটি মেরে খাঁটের মাঝখানে বসে আছে , এইমাত্র ওর বর রিয়াদ রুমে প্রবেশ করলো . .
রিয়াদ : কেমন আছ মুমু ?
মুমু : দেখুন আমি আপনাকে বিয়ের আগেই সব কিছু বলতে চেয়েছি , কিন্তু আপনি আমাকে বলার কোন সুযোগ দেননি ।
রিয়াদ : ঠিক , কিন্তু আমি বলেছিলাম বাসর রাতে সব শুনবো । এখন বল তোমার কি সেই জমে থাকা কথা ।
মুমু : আমি জানিনা আমার সব কথা শোনার পর আপনি আমার দিকে তাকাতে পারবেন কিনা ।
রিয়াদ : আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পার . .
মুমু ফিরে গেল এক বছর আগে . .
মুমু মফস্বলের এক কলেজ থেকে HSC দিয়ে ঢাকায় এসেছে কোচিং করতে , উঠেছে এক দুসর্ম্পের আত্মীয়ের বাসায় । সেখান থেকে ও কোচিং করতো নিয়মিত , আস্তে আস্তে ঐ কোচিং সেন্টারের এক বড় ভাইয়ের সাথে ওর কিছুটা ঘনিষ্টতা হয় , যে কিনা ওকে বিভিন্ন বিষয়ে হেল্প করতো , ছেলেটির নাম ছিল রতন । আস্তে আস্তে ওদের সম্পর্ক আরও গভীর হল , আপনি থেকে তুমিতে গড়াল । যেদিন কোচিং শেষ হল সেদিন রতন মুমুকে বলেছিল কালকে আমরা একটা ছোটখাট অনুষ্ঠান করবো , তোমাকেও আসতে হবে । পরের দিন মুমু গিয়ে দেখে কেউ নেই , রতন তাকে বলেছিল সবাই এখনি চলে আসবে তুমি ভিতরে গিয়ে বস , টেবিলের উপর জুস রাখা আছে ইচ্ছে করলে খেতে পার । মুমু এক গ্লাস জুস পান করলো , কেমন যেন খারাপ লাগছে ওর মাথাটা ঝিমঝিম করছে , এরপর আর ওর কিছুই মনে নেই . .
হুশ ফিরে পাওয়ার পর ও বুঝতে পারলো কি হয়েছে ওর সাথে । তারপর রতনকে সে অনেক খুঁজেছে , কোন ভাবেই আর রতনের দেখা পেলনা ।
এই ঘটনার পর মুমু খুব ভেংগে পড়ে , ভার্সিটি পরিক্ষা না দিয়েই বাড়িতে ফিরে আসে । মা বাবাকে সে বলেছিল তাদের চেড়ে ওর পক্ষে ঢাকায় থাকা সম্ভব না , তারপর সেই মফস্বল কলেজেই অনার্সে ভর্তি হয় ও ।
মুমুর নিজেকে খুব হালকা মনে হচ্ছে এখন , রিয়াদকে সে কথাগুলো বলতে পেরেছে । আবার পরক্ষনেই ওর মনটা ভারী হয়ে গেল , কারন এসব কথা শুনার পর রিয়াদের রিএ্যাকশন ভালো হবার কথা না ।
রিয়াদ : তোমার কথা শেষ ?
মুমু : হুম ।
রিয়াদ : তুমি এতক্ষন যা যা বললে সবই আমি জানি ।
মুমু : মানে ?
রিয়াদ : মানে রতন আমার আপন বড় ভাই ! !
(মুমুর মনে হচ্ছে , ও হাজার ভোল্টের একটা বৈদ্যুতিক শক খেল) ! !
মুমু : আপনি এসব কি বলছেন ? ?
রিয়াদ : আমি তখন লন্ডনে , বিবিএ শেষ হয়নি তখনো । জানতে পারলাম ভাইয়্যা রোড এক্সিডেন্ট করেছে , এর তিনদিন পর আবার খবর এল ভাইয়্যা মারা গেছে । এর কয়েক মাস পর আমার বিবিএ শেষ হয়ে যায় এবং আমি দেশে ফিরি । ভাইয়্যা মারা যাবার আগে মা বাবার কাছে তোমার ছবি এবং ঠিকানা দিয়ে যায় আর তোমার সাথে সে যা যা করেছে সব মা বাবার কাছে স্বীকার করে ।
মারা যাওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে সে বলছিল মুমুর সাথে আমি যে অপরাধ করেছি তার জন্য আল্লাহ আমাকে এই শাস্তি দিয়েছে , তোমরা পারলে ওর জন্য কিছু করো ।
মুমু : আপনি এসব কথা আগে বলেননি কেন ?
রিয়াদ : আমার ভয় ছিল যদি তুমি সব কিছু শুনে বিয়েতে রাজি না হও ।
মুমু : একটা প্রশ্ন করতে পারি ?
রিয়াদ : অবশ্যই ।
মুমু : দুনিয়াতে এত মেয়ে থাকতে আপনি আমাকে কেন বিয়ে করলেন ?
রিয়াদ : প্রায়শ্চিত্ত করতে , আর মা বাবাও চায় তোমার সাথে আমার বিয়ে হোক ।
মুমু : অপরাধ করেছে আপনার ভাই আপনি কেন প্রায়শ্চিত্ত করবেন ?
রিয়াদ : বিশ্বাস কর মুমু সব ঘটনা শুনার পর আমার মনে হতে লাগলো যেন আমি নিজেই এর জন্য দায়ী , আমি নিজেই অপরাধটি করেছি ! আমি মানতে পারছিলাম না কি করে আমার ভাই এমন একটি কাজ করতে পারলো ! ভাই হারানোর শোকও তখন তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে ।
রিয়াদ আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে , সে মুমুর হাত ধরে বলল " আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি আমার ভাইয়ের পক্ষ থেকে " আমি জানি তোমার সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে তার কোন ক্ষমা নেই , প্রায়শ্চিত্ত নেই ।
মুমু অবাক হয়ে ভাবছে , কি বৈপরীত্য দুটি মানুষের মাঝে একজন তার সাথে কি নির্মম ব্যাবহার করেছে , আর একজন এসেছে সেই নির্মমতার দায়ভার নিজের কাঁদে তুলে নিতে , তার পাশে থাকতে , তার সুখ দুঃখের অংশীদার হতে ।
একদিন একজনকে বিশ্বাস করে সে প্রতারিত হয়েছে , কিন্তু আজ আরেকজন তাকে বিশ্বাস করে তার দিকেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ।
" মুমুর পক্ষে এই বিশ্বাসের হাতকে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না , কখনোই না "