somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসি এক বাংলাদেশী বোনের অসাধারণ লিখা সৌদি আরব থেকে-

২৪ শে জুন, ২০১২ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কপি করা পোস্ট।
সৌদি আরবে প্রবাসী এক বাংলাদেশী বোনের লেখা এটি, যেটি প্রকাশিত হয়েছিল কুরআনের আলো ডট কম নামক ওয়েবসাইটে। সামু ব্লগের সবাই কে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি লিখাটি পড়ার জন্য।
সৌদি আরব নিয়ে জনসাধারণের ধারণা একটু অদ্ভুত। কেউ ভাবেন এখানে লোকে হাইওয়েতে চলাচল করে উটের পিঠে চড়ে।

কেউ ভাবেন এখানকার লোকগুলো সব বেদুইন। দেশ থেকে হজ্জ বা উমরা করতে এসে এখানকার দোকানপাট দেখে যখন সবার মাথা ঘুরে যায়, খুব অবাক লাগে আমার--- এদেশটাকে মনেহয় লোকে under developed বলে ধরেই এখানে আসে। একবার দাহরান এর King Fahad University তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একজন ভারতীয় হিন্দু প্রফেসর এলেন ট্রেনিং দিতে। ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস এর ঢুকে উনি বিশ্বাস এ করতে পারছিলেন না যে এটা সৌদি আরব--- সম্ভবত তিনি আশা করছিলেন উন্নত বিল্ডিং এ না, তাঁবুতে থাকে সকলে। আবার একদল মানুষ আছেন যারা সৌদি আরব এর সচ্ছলতার কথা বড় বেশী ভালভাবে জানেন। তাঁরা এখানে আসেন সেই উদ্দেশ্য নিয়েই--- দিনের পর দিন এখানকার সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে দেশে ফিরে আবার এদেশেরই বদনাম করেন। খুব কম মানুষই এই মরুভূমির দেশটির অসাধারণ সুন্দর দিকটি দেখতে পান অথবা দেখতে চান।

প্রথমবার এদেশে এসে যে শহরে চার বছর ছিলাম, সেখানে আমাদের উপমহাদেশের মানুষই বেশী। শহরের নাম দাহরান। সেখানে থাকা অবস্থায় আমি নিজেও আরব দের জীবনধারা, তাদের ধর্মীও দিকটি কেমন তা জানতাম না। তবে আমার মনে ওদের প্রতি কোন বিদ্বেষ ছিল না। কারন এদেশেই এমন মানুষের জন্ম যারা ইসলামের প্রচারের জন্য নিজের সবকিছু ত্যাগ করে দিতে প্রস্তুত ছিলেন। আরবদের সাথে তেমন পরিচয় না হলেও বিভিন্ন সময় তাদের অযাচিত সাহায্য পেয়েছি। অবাক লাগত। অবাক লাগত যখন আমাদের গাড়ি নষ্ট দেখে কোন আরব নিজের গন্তব্যে না যেয়ে আমাদের জন্য মেকানিক ডেকে এনেছেন। অবাক লাগত যখন হজ্জের সময় রাস্তায় পরিশ্রান্ত হাজীদের ওরা পানি, জুস, খাবার দিয়ে যেত। আমি নিজেও কতবার নিয়েছি সেসব--- যারা হজ্জ করেছেন, তাঁরা জেনে থাকবেন যে একেক সময় রাস্তায় যখন পিপাসা পায় বা খিদা লাগে আর সাথে কিছু থাকে না, কেমন অসহায় লাগে। সবচেয়ে মজার কথা হোল এসব খাবার কে দিচ্ছেন তাঁর নাম কিন্তু কেউ জানতেও পারে না। এখানে মানুষের সাথে কোন সম্পর্কই নেই--- কোন ভোট চাওয়া না, কোন সভা করে খাবার বিলানো না—শুধু মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর মেহমানদের উপকার করা। সবার হয়ত অত সামর্থ্য নেই যে লোক খাওয়াবে। তিনি হয়ত তাঁর সন্তান কে রাস্তায়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন হাতে এক বাক্স টিস্যু দিয়ে। হেঁটে পার হওয়া ঘর্মাক্ত হাজীদের হাতে ছেলেটি সেই টিস্যু তুলে দিবে। আর হজ্জ কেন। রমজান মাসে দাহরান এ ইফতারের সময় সিগনালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন অনেকে—কারুর হাতে পানি, কারুর হাতে খেজুর--- যার যতটুকু সামর্থ্য তাই নিয়ে। যখন রেড লাইটে গাড়ি থামে, তাঁরা মিনতি করতে থাকেন তাঁদের এই সামান্য উপহার নিয়ে তাঁদেরকে সম্মানিত করার জন্য। এই সামান্য উপহারের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে কী অসামান্য পুরস্কার পাবেন তাঁরা তা কল্পনা করতেও চোখ ভিজে ওঠে। মদীনার মাসজিদ উন নববীতে কোন বাবা তাঁর ছেলেকে নিয়ে আসেন ইফতারের সময়, খেজুর, পানি, চা , রুটি যা আনতে পারেন সব নিয়ে। কেউ জানেও না তাঁদের পরিচয়, আর না তাঁরা কারুর ধন্যবাদ শোনার জন্য অপেক্ষা করেন। আর তাঁদের সন্তানগুলো বড় হয় মানুষের থেকে কিছু আশা না করে কিভাবে মানুষকে সাহায্য করতে হয় তার বাস্তব শিক্ষা পেয়ে। "We feed you seeking Allah's Countenance only. We wish for no reward, nor thanks from you.” --- সূরা ইনসানের এই আয়াতের জীবন্ত দৃষ্টান্ত এই মানুষগুলো। অনেকে আমাকে বলেছেন যে এসব করতে টাকা লাগে, ওদের আছে তাই ওরা করে। এক প্যাকেট টিস্যু কিনতে বড়লোক হওয়ার প্রয়োজন নেই কিন্তু। প্রয়োজন পরিষ্কার অন্তরের, আর কোন ভালো কাজকেই তুচ্ছ করে না দেখার মত বড় মনের। আর দোকানে রাস্তায় যারা ঝাড়ুদারের হাতে চুপি চুপি রিয়াল গুঁজে দেন, কখনো ১০, কখনো ১০০—এমন ভাবে যে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো মানুষটিও জানবে না এই দানের কথা---- তাঁদের কথা নাই বা বললাম। অনেক সময় ধরে খেয়াল করে দেখলে বুঝা যায় যে ঝাড়ুদারদের পাশ দিয়ে যারা যাচ্ছে ওরা চিপ্সের প্যাকেট বা টিস্যু ফেলতে অদিক দিয়ে যাচ্ছে না, যাচ্ছে ওদের হাতে টাকা তুলে দিতে।

এতো গেল এখানকার মানুষের এমন কিছু practice এর কথা যা অন্ধ না হলে যে কেউ দেখতে পাবে। এবার যখন বুরাইদা শহরে এলাম, আমার মনে হোল আমি নতুন কোন জগতে এসে পড়েছি। এখানে অনারব খুব কম। যারা আছেন তাঁরা যথারীতি আরবদের সাথে মেশেন না। আমার এদের সাথে পরিচয় হয়েছে জুম্মা পড়তে যেয়ে। আর আরবি ভাষায় মোটামুটি কথা চালিয়ে নিতে পারি বলে। তাছাড়া আমার মেয়েও পড়ে আরবি মাধ্যমে। বড় ভালো লাগে দেখতে ছোটবেলা থেকে ওরা কিভাবে বাচ্চাদের আকীদার শিক্ষা দেয়। আমার সাড়ে তিন বছরের মেয়ে যখন এসে আমাকে প্রশ্ন করে “মান রব্বুনা?” (আমাদের রব কে?) --- তখন বুঝি কেন এই দেশে প্রকাশ্যে শিরক এবং বিদাত চোখে পড়ে না। সাধারণ মানুষ বড় হয় অন্তরে আল্লাহর পরিচয় নিয়ে। এখানে যখন কেউ ভ্রান্ত পথে চলে, তখন সত্যিই তার অনেক ঝামেলা করে ভুল পথে চলতে হয়। মসজিদে মসজিদে আলিমরা ক্লাস নেন, যে কেউ এসে বসতে পারে, শুনতে পারে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রায়ই আয়োজন করে দারস এর--- খাবারের ব্যবস্থা ওরা করবে, অনেকসময় পুরস্কারের ব্যবস্থাও থাকে--- শুধু সবাই যেন কষ্ট করে এসে শুনে যায়। মহিলারা একেকজন চার পাঁচ সন্তান নিয়ে এসে বসে শুনেন, শিখেন। মা হওয়াটা উন্নতির পথে বাঁধা--- এই চরম ভুল ধারণা এঁরা ভেঙ্গে দেখিয়েছেন। নিজেরা কুরআন মুখস্থ করছেন, সন্তানদের শেখাচ্ছেন। আবার ঘরের যাবতীয় কাজও করছেন। আমার প্রতিবেশিকেই তো দেখি...ঘরের কাজও করেন আমার চেয়ে বেশী, ইসলামের পড়ালেখাও আমার চেয়ে অনেক অনেক বেশী। ইসলাম এর সাথে সম্পর্কহীন জীবন যেমন এদের না, তেমনি জীবনের সাথে সম্পর্কহীন ইসলাম ও তাঁদের না। একদিন পার্কে দেখলাম এক বুড়ি কুরআন পড়ছেন আর তার মধ্যবয়স্ক ছেলে তা শুধরে দিচ্ছেন। হয়ত অল্প বয়সে সময় পাননি সংসার সামলানটাকেই বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন। তাই আজকে হাফিয ছেলের কাছে বসে শিখে নিচ্ছেন। এখানে সাধারণ মানুষগুলোর জীবন ইসলাম কেন্দ্রিক। বাসা ভাড়া নেয়ার সময় contract এ লেখা থাকে যে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের মসজিদে সালাহ আদায় করতে হবে। কারন তাঁরা চান তাঁদের মহল্লার মানুষগুলো যেন ইসলামের ওপর থাকে। এক ঘরে আগুন জ্বলতে দিলে নিজের ঘরেও যে তার আঁচ এসে পড়বে এটা তাঁরা বোঝেন। এখানে এক বাঙ্গালী ভাই থাকেন তাঁর নিজের দোকানের পাশে--- তাঁর প্রতিবেশী সকলেই সৌদি। সকালে প্রায়ই ঘুম ভেঙ্গে দরজা খুলে দেখেন গেটের সামনে বাক্স ভরতি ফল রাখা। কখনো উৎকৃষ্ট খেজুর, কখনো কমলা, ওদের বাগানের। তাঁরা তাঁদের লোকদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন যেন প্রতিবেশীকে সবসময় একটা অংশ দেয়া হয়। যখন যেটার উৎপাদন হয়, তখন সেটা এনে ওরা গেটের সামনে রেখে যায়। এই ভাই জানেন ও না কোন প্রতিবেশীর পক্ষ থেকে কোনটা এলো। আমি বাংলাদেশী। কিন্তু যতবার ওদের কেউ এটা শুনেছে, একবারও অন্য চোখে তাকাতে দেখিনি। শিক্ষিত বা ধার্মিক মানুষগুলো কখনো কে কোন দেশের তা বিচার করতে বসেন না। তাঁরা শুধু দেখতে চান তাঁদের দেশে এসে যারা থাকছে, তারা যেন ইসলাম মেনে চলে।

বলতে চাইলে এদেশের খারাপ দিকগুলো ও তুলে ধরা যায়। কিন্তু আমার এই লেখার উদ্দেশ্য এখানকার ধর্মীয় মূল্যবোধের সামান্য একটু অংশ তুলে ধরা। মানুষ জানে না যে এদেশটা এখনো কিভাবে ইসলাম ধরে রেখেছে। সরকারের ভূমিকা, বা কিছু মানুষের অন্যায়ের কারনে, অথবা কম ধার্মিক কিছু মানুষের ভুল আচরনের দরুন এদেশের খারাপ দিকটাই সবাই জানেন। আসম্ভব ভালো মানুষগুলোর কথা তাই কারুর মনেই আসে না। যেমন বললাম, অনেকেই বলবেন এদেশের খারাপ দিকগুলোর কথা। পৃথিবীতে এমন কোনও দেশ নেই যেখানে সবাই ভালো। খারাপ মানুষ সব জায়গাতেই থাকে। যা কিছু এখানে খারাপ, তার চেয়েও শতগুণে খারাপ জিনিস যেসব দেশে আছে, সেখানেও দিনের পর দিন আমাদের অনেকেই থাকেন এবং থাকতে গর্ব বোধ করেন। কিন্তু দেশটি সৌদি আরব বলে, মক্কা মদীনার দেশ বলে, ইসলাম এর জন্ম এখানে বলেই হয়ত শয়তান আমাদেরকে এখানকার খারাপ দিকটি এতো বড় করে দেখায়। এতো বেশী আমরা এদেশের বদনাম করি যে এর মাঝে যে প্রচুর ভালো লুকিয়ে নেই, বরং প্রকাশ্যেই আছে—তা আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। আমাদের দেখতে না পাওয়াটা কোনকিছুর অনুপস্থিতি প্রমান করে না। বরং দেখতে অস্বীকার করে আমরা যে শুধু এই জায়গাটার প্রতি অবিচার করি তাই না, এখান থেকে benefit নিতেও ব্যর্থ হই। দিনের পর দিন এখানে থেকেও অনেক মানুষেরই ধর্মীও কোন পরিবর্তন আসে না। মনেহয় তাঁরা বুঝি নিজেদের চারিদিকে প্রাচীর তুলে দিয়েছেন---- কিছু দেখবেন না, শুনবেন না, বুঝবেন না। সে যাই হোক, বলছিলাম খারাপ মানুষ আর ভালো মানুষের কথা। খারাপ মানুষ এদেশেও আছে যেমন থাকে আর অন্য সব দেশে। আমার বাবা ছিলেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। আল্লাহ আমাকে পৃথিবীর বহু দেশে যাওয়ার তৌফিক দিয়েছেন। আর বড় হয়েছি বাংলাদেশে। আমি কোন প্রকার দ্বিধা ছাড়া জোর গলায় বলতে পারি---- একসাথে এতো বেশী খাঁটি চরিত্রের মানুষ আমি আর কোথাও দেখিনি। আর সেই সাথে এও বলতে পারি, সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা এবং মূল্যবোধ আমরা যদি আমাদের সন্তানদের দেই একেবারে ছোটবেলা থেকে—একদিন ইনশাআল্লাহ আমাদের দেশেও এমন খাঁটি মানুষ ঘরে ঘরে দেখা যাবে।

সৌদি আরবে সাধারণ মানুষদের জীবনযাত্রা নিয়ে যখন প্রথমবার লিখতে বসি, আমার উদ্দেশ্য ছিল ওদের নিয়ে মানুষের মনে যে ভুল ধারণা আছে তা যেন একটু হলেও বদলায় তার চেষ্টা করা। সেই সাথে এই ভয়ও ছিল যে অনেকেই হয়ত লেখাটি সহজভাবে নিতে পারবেন না - স্বাভাবিক ভাবেই আমরা যদি আজীবন ভুল তথ্য জেনে বড় হই, হঠাৎ কেউ সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বললে মেনে নেয়া তো সহজ নয়। তাই আমি কিছুটা ভীত ছিলাম লেখার সময়। আবার এমনও ভয় ছিল যে কেউ ভাবতে পারেন এসব লেখার আড়ালে হয়ত কোন ব্যক্তিগত ফায়দা রয়েছে। হয়ত বা সেকারনেই আরও অনেক মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা লেখা হয়নি। তাই আমার দেখা এদেশের আরও কিছু ‘অজানা’ দিক তুলে ধরছি এখানে।

আমার মেয়ের জন্মের পর যখন প্রথমবারের মত ওকে নিয়ে এদেশে আসি, ওর বয়স তখন আড়াই মাস। বেজায় চেঁচাতে পারত, গলার আওয়াজও ছিল বড় বেশী তীক্ষ্ণ। ইমিগ্রেশন এ দাঁড়িয়ে আছি, শুরু হোল non stop কান্না। আমি তো অস্থির। যদিও এরা মহিলাদের অসম্ভব রকম বেশী সম্মান করে বলে মহিলাদের লাইন-এর সামনে দাঁড়াতে বলে, তারপরও আমার সামনে ছিলেন আর না হলেও আরও ৪-৫ টা পরিবার। সবাই আরব, সাথে তাঁদেরও একাধিক সন্তান। আমি অবাক হয়ে দেখলাম মুখে হাসি নিয়ে সবাই মিলে আমাকে সামনে পাঠিয়ে দিলেন। সামান্য একটু সাহায্য—কিন্তু অন্যকে নিজের ওপর প্রাধান্য দেয়ার ব্যাপারটি আমাকে এতো নাড়া দিয়েছিল যে ঘটনাটি আজও আমি ভুলিনি। এই সুন্দর অভিজ্ঞতার জের কাটার আগেই মুগ্ধ হতে হোল আরেক সৌদির ব্যবহারে। যারা এয়ারপোর্টের কাছাকাছি চাকরি করেন, তাঁরা শহরে ফেরার পথে অনেক সময় যাত্রী নিয়ে ফেরেন। এর বিনিময়ে ট্যাক্সির যা ভাড়া, তাই তাঁরা নেন। আমরা ওরকম একজনের গাড়িতেই উঠেছিলাম। পথে মাগরিবের সালাতের সময় হয়ে যাওয়াতে গাড়ির চালক খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি চাইছিলেন আমাদের সালাতের আগেই নামিয়ে দিতে। অগত্যা যখন সালাতের জন্য থামতেই হোল, আমি আর আমার মেয়ে গাড়িতে বসে থাকব শুনে তিনি তাঁর গাড়ির চাবিটা আমার হাসবেন্ডের হাতে তুলে দিলেন। খুব সামান্য একটা কাজ। কিন্তু চিন্তা করলেই মনে হয় কী অসাধারণ শিক্ষা পেয়ে বড় হয়েছেন যে একটা অপরিচিত লোকের হাতে নিজের গাড়ির চাবি তুলে দিলেন যেন আমরা ভয় না পাই একা থাকতে অপরিচিত ভিনদেশী এক মানুষের গাড়িতে!

সবাই যে খুব ধার্মিক একথাটা সবসময় ঠিক না। কিন্তু কতগুলো মূল্যবোধ তাঁদের রক্তে মিশে গিয়েছে। আমারা নিজেদের দিকে তাকালে হয়ত ব্যাপারটা বুঝবো। আমরা যারা অন্য রকম জীবনধারা থেকে ইসলাম এর পথে আসার তৌফিক পেয়েছি - আমরা কিন্তু আজও অনেক কিছুতেই ইসলাম বিরোধী চিন্তাধারা ছাড়তে পারিনা। ঠিক তেমনি, ওদের কম ধার্মিক মানুষগুলোকে দেখলে বুঝা যায় ওরা কত বেশী ইসলামী পরিবেশে বড় হয়েছে যে ইসলাম শুধু এদেশের দ্বীন না, কিন্তু জীবনযাত্রায় মিশে গিয়েছে। রাস্তায় কখনো সালাতের সময় হয়ে গেলে যাদের রাস্তায় ঘুরতে দেখেছি তাদের মাঝে আরব খুব কম, অথবা নেই বললেই চলে —হয় অমুসলিম নয়ত আমাদের উপমহাদেশীয় বে-নামাজি মুসলিম। ছোট ছোট বাচ্চাগুলোও মসজিদ এ গিয়ে সালাত আদায় করে। এখনো দাওয়াতে যাওয়া বা মার্কেটে যাওয়ার সময় ঠিক করা হয় সালাত কে কেন্দ্র করে - এশার পর, অথবা আসরের পরে। সালাতের ওয়াক্ত দিয়েই সময় মাপা হয়। হিজরি ক্যালেন্ডার ব্যবহার হয় অনেক এখানে - হ্যাঁ, ওরা আরব, তা তো করারই কথা। সে বললে তো আমরাও বাঙ্গালী - আজকের বাংলা তারিখটা না দেখে কয়জন বলতে পারব? হিজরি তারিখ তো কেবল একটা মামুলি হিসাব না, এ যে আমাদের মুসলিমদের অনেক বড় সম্পদ!

সৌদি আরবের গরমের ‘সুনাম’ নিশ্চয়ই অনেকেই শুনেছেন। এখানে মূলত বৃষ্টি পড়ে শীতে! অনাবৃষ্টির সময় এখানে ঘোষণা দিয়ে কখনো পুরো দেশে, কখনো বা বিভিন্ন শহরে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থণা করে সালাত আদায় করা হয় - এই সালাতের নাম সালাতুল ইস্তিসকা। আমরা ইসলামের ইতিহাসে পড়েছি যে আল্লাহর রাসুল (সা) এর সময়, সাহাবাদের সময় এমন সালাত আদায় করা হত এবং বৃষ্টি নেমে আসতো। এখানে আমি অন্তত যতবার শুনেছি যে এই সালাত হয়েছে, প্রতিবারই বৃষ্টি পড়তে দেখেছি অথবা আকাশে কালো মেঘ জমতে দেখেছি! এসমস্ত ইসলামের চর্চা ওরা আজও ধরে রেখেছে। তেমনি ধরে রেখেছে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ এর সালাত।

এতক্ষণ যা লিখলাম এসব বুরাইদা তে আসার আগে যা দেখেছি সেসব। এখানে আসার পর আরব সমাজকে আরও কাছে থেকে দেখেছি। বুরাইদা বলতে গেলে সৌদি সংস্কৃতির শহর। এখানে এখনো অমুসলিম মহিলারা নিকাব দিতে বাধ্য হন। কেউ বাধ্য করে না। কিন্তু সবাই যেখানে মুখ ঢাকা সেখানে নিজে মুখ খুলে ঘুরার মত মানসিকতাই এখানে কারুর হবে না। অর্থাৎ এই সমাজটা এখনো ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাব মুক্ত। তাই প্রায় প্রতিদিনই ওদের নিজস্বতার পরিচয় পাই।

এখানের আলিমদের নিয়ে অনেকের বিস্তর অভিযোগ। দ্বীন থেকে তাঁরা মানুষকে দূরে রাখছেন, ইত্যাদি। আমাদের নামে কেউ যখন অসত্য কিছু বলে, আমরা তো মুখ লাল করে প্রতিবাদ করে বসি। যখন ইসলামী সমাজের সর্বোত্তম মানুষ—অর্থাৎ আলিমদের নিয়ে অসত্য কথা শুনি, আমাদের অন্তর কেন তার প্রতিবাদ করে না? আলিমদের একটি বড় কাজ মানুষকে শেখানো। আর তাঁরা সেটা কী পরিমাণে করেন সেটা যে বাঙ্গালী এদেশে থেকেও কোনদিন মসজিদে যায় না, বা গেলেও শুদ্ধ আরবি ভাষায় দেয়া বক্তব্যের কিছুই বুঝে না, তার মুখে শুনে বিচার করতে বসলে তো চলবে না! প্রতিটি জুম্মার খুতবার বিষয়বস্তু থাকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার দায়িত্ব, সঠিক কাজের পথ দেখানোর দায়িত্ব, সদাকার গুরুত্ব, ইস্রাফ (অপচয়) না করার আহ্বান, মুসলিম ভাইদের সাহায্য করার দায়িত্ব, আকীদা, জিহাদ এসবের ওপর। আর বিভিন্ন মসজিদে যেসব দারস দিনের পর দিন চলতেই থাকে, তার কথা নাই বা বললাম।

সিরিয়ার জন্য জুম্মায়, ফজর বা অন্য ওয়াক্তের সালাতে ইমামরা কুনুত করেই চলেছেন, আলিমরা বলেই চলেছেন “আরব নেতারা তোমরা কোথায়?” - কেউ কেউ প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ করছেন শাসকদের এই চুপ থাকা নিয়ে - সাধারণ মানুষের মধ্যেও সিরিয়ার জন্য সচেতনতা আছে - আর আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ জানেই না সিরিয়াতে কী চলছে! আর এখানে সাধারণ মানুষ অথবা আলিম - কেউ এ নিয়ে শান্তিতে নেই। যদি কারুর জানার আগ্রহ থাকে, তাহলে ইন্টারনেটে সিরিয়া নিয়ে বা সৌদি আলিমদের নাম দিয়ে খুঁজলেই তাঁদের খুতবা, বক্তৃতা দেখতে পাবেন। আমি আজ পর্যন্ত বাংলাদেশী যতজনকে সিরিয়ার কথা বলেছি, তাদের অনেকে তো স্মৃতির পাতা ঘেঁটে মনে করেন যে সিরিয়া দেশ না শহর, না কী! আর বাকিরা যারা তা জানেন, মনে করেন ওখানে রাজনৈতিক দাঙ্গা চলছে। সে যাই হোক, এদেশের একটা বড় সম্পদ হলেন এদেশের আলিমরা এবং তাঁদের থেকে যারা শিখছেন এবং সেই অনুযায়ী জীবন গড়ছেন তাঁরা।

এখানকার সাধারণ মানুষ আলিমদের অসম্ভব সম্মান করেন। তাঁদের এ বোধ আছে যে আলিমরা সমাজের অপরিহার্য অঙ্গ - কেউ মারা গেলে কুরআন খতম দেয়ার মেশিন নন! অনেক, অনেক ছাত্র নিজের উৎসাহে শরিয়াহ পড়তে যায়। এইতো কদিন আগেই শুনলাম এক ছাত্রের কথা। তার বাবা Qassim University এর College of Computer এর ডিন। অসম্ভব মেধাবী ছাত্র, এখানের যেকোনো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার মত যোগ্যতা তার আছে। আমাদের চোখে লোভনীয় subject ছেড়ে সে বেছে নিয়েছে শরিয়াহ। এমন বহু ছেলে মেয়ে আছে এখানে। আর অন্য বিষয়ে পড়লেও অনেকেই দ্বীন এর দিকটা ছেড়ে দেয় না, দেয়ার উপায়ও নেই। মসজিদে মসজিদে দারস হতেই থাকে, বিভিন্ন সালাতের পর পরই শুরু হয়ে যায়। নিজে যেতে না চাইলেও যখন দেখে বন্ধুরা যাচ্ছে, নিজেও যেয়ে বসে শুনে তখন।

প্রতি মহল্লায় মহিলা এবং শিশুদের জন্য কুরআন এর হিফয আর তাজউইদ শেখার স্কুল আছে। বাচ্চারা শুনে শুনে হিফয করছে সেখানে, যারা পড়তে পারে তারা পড়ছে। পার্কে যখন যাই মেয়েকে নিয়ে, আর সালাত এর সময় মাইকে তিলাওয়াত শুনতে পাই - সাথে শুনি আশে পাশে যারা খেলছে সেই বাচ্চাগুলো ইমাম এর সাথে তাল মিলিয়ে সেই সূরা পড়ছে! মায়েদের সাথে যারা বিভিন্ন দারস এ যায়, তাদের ওপর এর প্রভাব অসাধারণ। অনেকেই মায়ের পাশে বসে দারস এর নোট নেয়ার ভান করে কাগজের ওপর কলম চালায়। মা মসজিদে বসে কুরআন পড়লে ওরা নিজেরাও এক কপি নিয়ে বসে পড়ার ভান করে! খুতবা শোনা, দারস শোনাটাকে ওরা জীবনের এক অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ হিসেবেই দেখে। মজার ব্যাপার হোল এখানে কিন্তু অনারবদের যেতে কোনও মানা নেই। কিন্তু কেউ যায় না। নাহয় আরবি বোঝেন না দেখে অনেকে যান না। তাহলে যা জানেন না তা নিয়ে দেশে ফিরে সমালোচনা কেন করেন তাঁরা?

এখানে গাড়ি পার্ক করার নিয়ম বড় অদ্ভুত। নিজের প্রাইভেট বাড়িতে গাড়ির গ্যারাজ আছে অনেকের। ভাড়া ফ্ল্যাট বাড়িতে সেসব কিছু নেই। লোকে তাদের brand new গাড়ি বাড়ির সামনে খোলা রাস্তায় পার্ক করে, চুরির ভয় নেই! আর এই শহরে অন্তত চুরি করাটাও মহা যন্ত্রণার হবে বলে আমি মনে করি। মসজিদ ভিত্তিক মহল্লা হওয়ায় সবাই সবাইকে চেনে, কার বাড়িতে কে থাকে তাও জানে। চুরির মত এমন একটা কাজ সেরে পালানোটা সহজ নয়। তার ওপর আছে শরিয়ত এর শাস্তি। অল্প বয়সে হাত খোয়ানোর সাহস কয়জনের হবে? এখানে অপরাধ যদি করতে চায়, তার অত্যন্ত সাহস নিয়ে করতে হবে। জেল খাটার সাহস মানুষের থাকে, সেই সাথে জামিনে মুক্তি পাওয়ার আশাও থাকে। মাথাই হোক আর হাতই হোক, অপরাধ ভেদে এর কোনটাই কেউ হারাতে চাইবে না, আর এও জানা আছে যে এসব একবার হারালে কোনও জামিনেই ফেরত পাওয়া যাবে না। অপরাধ না করাটাই তাই বেশীরভাগের কাছে যুক্তিসঙ্গত!

আরবদের মেহমানদারি আমাদের থেকে কিছুটা ভিন্ন ধরনের! একদিন মসজিদ থেকে আমার মেয়ে সমেত তার বাবাকে জোর করেই মহল্লার মুরুব্বী একজন বয়স্ক লোক নিয়ে গেলেন তাঁদের আসরে। অল্প বয়সী ছেলেরা আরবি কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, যতবার মেহমান খেতে চায় ততবার ঢেলে দিতেই থাকবে, বসবে না। খাওয়ার আয়োজনও অদ্ভুত, বড় থালায় আস্ত দুম্বার রোস্ট আর পোলাও রাখা আছে। সেই একই থালা থেকেই সবাই খেয়ে নিবে। প্লেটের ঝামেলা নেই। অল্প বয়সীরা কিন্তু মুরুব্বীদের সাথে বসবে না। বড়দের খাওয়া শেষ হলে তারপর তারা ওই একই প্লেটেই খেতে বসবে। আর আমি যাদের অল্প বয়সী বলছি তারা ২০/২২ বছরের যুবক, বেশীরভাগই বিবাহিত। কেউ হয়ত চাকুরি করে, কেউ ভেড়া চরায়, কেউ ব্যবসা দেখে। তাঁদের খাওয়া দাওয়ার এই আয়োজন যারা এড়িয়ে যেতে চান, তাঁদের এশার সালাত আদায় করেই মসজিদ থেকে পলায়ন করা জরুরী, নয়ত ওখানে না যেয়ে উপায় নেই! বয়স্ক একজন যখন নিজের মানুষ মনে করে বার বার মিনতি করবেন তাঁর আসরে গিয়ে একটু বসার জন্য, সেই মিনতি উপেক্ষা করা কারুর পক্ষে সহজ নয়। আর এর বিনময়ে তাঁরা একবারও আশা করেন না যে পাল্টা দাওয়াত দেয়া হবে তাঁদের। মেহমানদারী করতে পেরেই তাঁরা ধন্য।

আর মহিলারাও খুব আন্তরিক। এবার মসজিদে ৫ দিন ব্যপি দারস এর আয়জন করা হয়েছিল। চা নাস্তা মসজিদের তরফ থেকেই দেয়া হয়। অনেক মহিলা নিজের বাসা থেকে এখানকার বিশেষ কফি বানিয়ে নিয়ে আসেন, খেজুর সহ। এই কফিতে কোনও চিনি দেয়া হয় না, খেজুর দিয়ে খেতে হয়। প্রায় প্রতিদিন খেয়াল করলাম যে কফি ওই মহিলা আনলেও সেটা পড়ে আছে আমাদের কয়জনের কাছে। যিনি এনেছেন তাঁর নিজের খেয়াল নেই কিছু, আর যারা সেটা উপভোগ করছেন তাঁদেরও এটা কোনও ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে না। কেবল খালি ফ্লাস্কটা ওই মহিলার কাছে ফেরত যাচ্ছে! ওদের মাঝে একধরনের আপন করে নেয়ার আচরণ প্রকাশ পায়। সবার ব্যাগেই মনে হয় চকলেট বা বিস্কুট কিছু না কিছু অনেক পরিমাণে থাকে! হয়ত মসজিদে কোনও বাচ্চার কান্নায় তার মা কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না, পাশের মহিলা এসে বাচ্চাটিকে কোনও একটা খাবার দিয়ে থামিয়ে দিবেন। একটা-কে যখন দিলেন, তখন মসজিদের সবকটি শিশুকেই দিবেন!

আগেও বলেছি যে এমন নয় যে কেউ অন্যায় করে না অথবা ধর্ম পালনে ঘাটতি নেই। কিন্তু যেখানে সারাক্ষণ ভালো কিছু দেখছে, শুনছে, সেখানকার মানুষের upbringing এর ধরনটাই আলাদা। এইতো আজকে আর-রাজহি মসজিদে জুম্মার খুতবাহ দিলেন মসজিদুল হারামের একজন খতীব। এই মসজিদের খতীব যিনি, তিনিও অসাধারণ সুন্দর খুতবা দেন। কিন্তু মসজিদুল হারামের খতীব এসেছেন শুনে আজকে অনেকেই এই মসজিদে জুম্মার সালাত আদায় করতে এসেছিলেন। সালাতের কথা আর নাই বললাম, অসম্ভব সুন্দর! খুতবার বিষয়বস্তু ছিল বিচার দিবস। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম আমার আশে পাশের মহিলারা কেঁদে কেঁদে উঠছেন। আর এতো প্রাঞ্জল বর্ণনা শুনে আমার মনে হচ্ছিল আমি যদি এখনই নিজের সমস্ত গুনাহ সমেত মাটিতে মিশে যেতে পারতাম! এসব শুনে যারা বড় হয়েছে, হচ্ছে—তাদের অন্তরে তাকওয়া তো মজবুত হতে বাধ্য।

অনেক আগে সৌদি আরব এ বড় হওয়া এক বাংলাদেশী মহিলা বলেছিলেন ৮৮ এর বন্যায় আমরা যখন দেশের জন্য সদাকার টাকা তুলেছি, সৌদি মহিলারা হাত থেকে সোনার চুড়ি পর্যন্ত খুলে দিয়েছেন, কিন্তু বাংলাদেশিরা ১০০টা টাকা দিতেও একশো বার ভেবেছে। তখন আমার মনে হয়েছিল যে সৌদিদের অভাব নেই তাই অমন করে দিতে পেরেছে। কিন্তু এখন যখন দানের ক্ষেত্রে নিজের অন্তর দেখি, তখন বুঝি যে প্রশ্নটা থাকা বা না থাকার না। প্রশ্ন দিয়ে দিতে পারার মত অন্তরের। যা আমাদের একটু কম, আর ওদের একটু বেশিই। আগে যেমন বলেছি, ওরা আল্লাহর খুশির জন্য দিতে জানে। বাংলাদেশে বর্তমানে আইডিবির (Islamic Development Bank) তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন বহুসংখ্যক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের অর্থের যোগানদাতা নাম না জানা একজন সৌদি নাগরিক! আল্লাহর পথে সামান্য সদাকা! নিজের নাম জানানোর প্রশ্নই আসেনা এখানে! ওরাও জানে ওদের কত বদনাম, তবু বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশে ত্রান দিয়েই চলেছে, আমরাও নিয়েই চলেছি আর বদনাম করেই চলেছি।

এই দেশ ইসলামের ইতিহাসের সাথে যেমন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে, তেমনি জড়িয়ে আছে মুসলিম হিসেবে আমাদের ধর্মীও কর্তব্যের সাথেও। এই দেশের বদনাম করে আমাদের কোনও উপকার কোনদিন হবে না। এটা আমাদের আল্লাহর রাসুল (সা) এর দেশ। এটা সেই ভূখণ্ড যেখানে আল্লাহর কাছ থেকে আল্লাহর কালাম নিয়ে এসেছেন জিব্রিল (আ) আল্লাহর রাসুল এর কাছে। এই সেই জায়গা যেখানে সেরকম মানুষ জন্মেছেন যারা শত অত্যাচারেও না আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করেছেন আর না আল্লাহর রাসুল(সা) কে তুলে দিয়েছেন শত্রুর হাতে। আর এই দেশের সেই ভাষা, যে ভাষায় নাযিল হয়েছে কুরআন। আর এই সেই ভাষা যা পৃথিবীর সব মুসলিমকে সালাত এর মাধ্যমে এক করে রাখে - যেই দেশেরই মানুষ হোক না কেন, আল্লাহু আকবর বলে যখন সালাত শুরু হয়, ভিন দেশী ইমাম কে অনুসরন করতে কারুর সমস্যা হয় না। এই দেশ শুধু সৌদিদের না। এই দেশ সব মুসলিমের চোখের মণি। তাই কিছু মানুষের অন্যায় যেন আমাদেরকে এতো অন্ধ করে না দেয় যে আমরা আমাদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গাটির ভুল মূল্যায়ন করে বসি।


সৌদি আরব এবং বাংলাদেশ নিয়ে আমার এই লিখাটা দেখবেন প্লীজ।


এখান থেকে কপি করা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১২ দুপুর ২:৩৭
১৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×