somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনে প্রশ্ন জাগে- "কেন তিনি একবার অবাধ্য হলেন না"??

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতিহাস আর রাজনীতি নিয়ে জ্ঞান খুব কম ।
প্রতিনিয়ত জানার চেষ্টায় আছি, শেখার চেষ্টায় আছি ।
কম জানার পেছনের কারণ আমরা এমন এক সময়ে বেড়ে উঠেছি যখন বাংলাদেশের ইতিহাস "পুঁজি" হয়ে গেছে কোন কোন দলের ।
বিকৃতির শেষসীমায় গিয়ে পৌঁছেছে ।
তাও যা জানি তার থেকেই অল্প কিছু লেখার চেষ্টা করলাম-
বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পরেই যার নাম উঠে আসে তিনি তাজউদ্দীন আহমেদ ।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ।
তাজউদ্দীন আহমেদের জন্মদিন আজ ।
১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তাজউদ্দীন আহমেদ ।
মূলত পাঠ্যবইয়ে যা জানতাম তা নিয়েই ধারণা ছিল এরকম-
তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানার মধ্যে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে । তার একজন তাজউদ্দিন আহমেদ । এর মধ্যেই ধারণা আবদ্ধ ছিল । এর বাইরে জানার আগ্রহ বাড়ে পরে এসে । এরপর যতই জানতে পারলাম ততই বিনম্র শ্রদ্ধায় আপনাআপনি মাথা নত হয়ে আসে । শেখ মুজিব যখন জেলে ছিলেন তার অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন তিনি । খুব বেশি জানিনা তবে যা জানি তাতেই মনে হয় বাংলাদেশে আরেকটা তাজউদ্দিন আসার সম্ভাবনা শুন্য । বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বিচক্ষণ রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম । বাংলাদেশ সম্পর্কে তার করা প্রতিটা ভবিষ্যতবাণী ই অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছিল । এমনকি বঙ্গুবন্ধু আর তার নিজেকে নিয়ে করা ভবিষ্যতবানীও অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছিল । বাকশালের বিরোধিতা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন- "কিন্তু মুজিব ভাই, সবচাইতে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা কি ঘটবে জানেন, আপনাকে এত নিষেধের পরেও আপনার সাথে ওই বন্দুকের গুলিতে আমরাও মারা যাব। আপনি তো শুধু মারা যাবেন না, দেশটারও ভয়ানক ক্ষতি হয়ে যাবে । তার রাজনৈতিক বিচক্ষনতার ব্যাপারে গোলক মজুমদার এর মন্তব্য ছিল ‘He was not a politician. He was a statesman ।
তিনি এতটাই বিচক্ষণ ছিলেন যে জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের বলেছিলেন, "শেখ মুজিবকে ইমোশন দিয়ে কাবু করা কোন সমস্যা না, কিন্তু তার পিছনে যে খাটো মত লোকটা ফাইল বগলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, হি ইজ ভেরি ডেঞ্জারাস.
আই টেল ইউ এগেইন, হি ইজ আওয়ার অনলি প্রবলেম"
তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন যে ‘দেশ যেদিকে যাচ্ছে তাতে দেখা যাবে রাজাকাররা সব দখল করে নিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের কোন নাম নেই’ – বর্তমানের বাংলাদেশের দিকে চোখ বুলালেই সত্যতা প্রমাণিত হবে । যুদ্ধপরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমেদ এর মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি না হলে হয়তো অন্যরকম বাংলাদেশ দেখতে পেতাম আমরা এখন । ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল কিন্তু তাজউদ্দীন বঙ্গবন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যাকান্ডের পর তাঁকে আত্মগোপন করার জন্য পরামর্শ দেয়া হলেও তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানান। ১৫ আগস্ট প্রথমে গৃহবন্দী ও পরে ২২ আগস্ট গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। ৩ নভেম্বর জেলখানায় নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় ।
প্রচারবিমুখ থেকে সবখানেই বঙ্গবন্ধুকে সামনে এগিয়ে রেখেছিলেন তিনি । এ কারণেই বলা হয়ে থাকে-
"বঙ্গবন্ধুর বাইরের আবরণের মানুষটি তাজউদ্দীন আহমেদ"
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তার সহকর্মীদের বলতেন – "আসুন আমরা দেশের জন্য এমনভাবে কাজ করি যেন ভবিষ্যতে যখন ঐতিহাসিকেরা বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করবে তখন যেন আমাদের খুঁজে পেতে কষ্ট হয়"
আসলেই কষ্ট হয় মনে হয় ।
যুদ্ধপরবর্তী দেশ গঠনে তাজউদ্দীন আহমেদ এর আলাদা পরিকল্পনা ছিল । বাস্তবায়ন করতে পারেননি । পারলে হয়তো এমন বাংলাদেশ দেখতে হত না আমাদের । সামুতে পড়া একটা লেখার অংশবিশেষ তুলে দিচ্ছি- "মুছে যাক আমার নাম, কিন্তু বেঁচে থাক বাংলাদেশ’..........না তার কথাই আমরা রেখেছি, একে বারেই ভুলে গিয়েছি তাকে। ভুলে গেছি এক নির্ভীক দেশপ্রেমিক বাঙ্গালীকে। ঠিক কত গুলো নয় মাস লাগতো তিনি না থাকলে এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেতে তা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ ।"
ডিজুস যুগে তাকে মনে রাখেনা কেউ ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম স্বপ্নের কারিগর ।
স্বাধীন বাংলাদেশের ধাত্রী ।
অনেক কিছুই শেখার আছে আমাদের তার জীবনী থেকে ।
বাঙালি জাতি শেখ পরিবারের কাছে যতটা ঋণী তার চেয়ে কম ঋণী নয় তাজউদ্দিন পরিবারের কাছে। অথচ এই পরিবারকে কোন দিনই আমার প্রতিদান দিতে পারিনি । পারবো ও না । আমরা এমন ই ।
শেখ মুজিব তাজউদ্দীনকে ভুল বুঝে বাদ দিলেন মন্ত্রিত্ব থেকে। তাজউদ্দীন রুখে দাঁড়াতে পারতেন, সে শক্তি তাঁর ছিল। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন, চাইলেন না কোন বিশৃঙ্খলা । নেতার অনুগত হয়েই থাকলেন । কিন্তু পরিশেষে নিয়তি আমাদের ছাড়লোনা । মনে প্রশ্ন জাগে- "কেন তিনি একবার অবাধ্য হলেন না"??
সেই স্বপ্নের বাংলাদেশটা দেখার অনেক ইচ্ছা যার জন্যে তিরিশ লক্ষ শহীদ রক্ত দিয়েছিল ।
স্বপ্নভুখাই হয়ে থাকবো আজীবন ।
শুভ জন্মদিন তাজউদ্দীন আহমেদ
আপনি মুছে যাননি ।
বাংলাদেশ নামের সাথেই মিশে আছেন আপনি ।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×