এন্তলজি ফিল্ম হচ্ছে, একটি নিদিষ্ট থিম/কন্সেপ্ট অথবা সুত্র এর উপর ভিত্তি করে অনেক গুলো ভিন্ন ভিন্ন ছোটগল্প কে একত্র করে সিনেমা তৈরি করা। এই ক্ষেত্রে মাঝেমাঝে একেকটা ছোটগল্পের জন্য আলাদা পরিচালকও থাকতে পারে।
আর হাইপারলিঙ্ক সিনেমাকে অনেকেই এন্তলজি ফিল্মের মতই ভেবে থাকেন তবে মুল পার্থক্য হচ্ছে, হাইপারলিঙ্ক সিনেমায় অনেক গুলো ঘটনাকে ফ্লাশব্যাক ও ফ্ল্যাশফরওয়ার্ড এর মাধ্যমে কানেক্ট করে গল্প তৈরি করে ধীরে ধীরে প্লট অথবা মুল ট্রুইস্ট রিভিল (প্রকাশ) করা হয়।
11.14 (2003) সিনেমাটিতেও হাইপারলিংক সিনেমার মেকিং ফলো করা হয়েছে। অনেকের মতে এটি এন্তলজি ফিল্মের মেকিং এর মধ্যেও পরে।
১১.১৪ (২০০৩) । ElevenFourteen (2003)
জনরাঃ থ্রিলার । ক্রাইম । ড্রামা
আইএমডিবি রেটিংঃ ৭.২/১০
রটেন টম্যাটোসঃ ৯২% ফ্রেশনেস
কাস্টঃ হেনরি থমাস, ব্ল্যাক হ্যারন, হিলারী সোয়াংক, র্যাচেল কুক, বার্বারা হার্শে, ক্লার্ক গ্রেগ প্রমুখ।
স্ক্রিনপ্লে & ডিরেক্টরঃ গ্রেগ মার্কস
সিনেমাটি একাধারে অনেক গুলো জনরার স্বাদ দেবে নিশ্চিত। একাধারে ক্রাইম, থ্রিলার, ব্ল্যাক কমেডি, ড্রামার কম্বিনেশন মিলে দারুন সিনেমার অভিজ্ঞতা অর্জন। আর এই টাইপ সিনেমা গুলোর বড় সুবিধে হচ্ছে মুল প্লটের সাথে অনেক গুলো সাব-প্লট থাকে যার কারনে মনে হয় অনেক গুলো গল্পের অভিজ্ঞতা নেয়া হচ্ছে।
সিনেমাটি মূলত রাত ১১টা ১৪ মিনিটে ঘটা একই সময়ে পাঁচটি ভিন্ন ঘটনা কে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে। যা ধীরে ধীরে ফ্ল্যাশব্যাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
রাত ১১.১৪মিনিটের পাঁচটি ভিন্ন ঘটনা গুলোকে সংক্ষিপ্ত করলে যা দাড়ায়ঃ (স্পয়লার এড়ানোর জন্য শুধু প্লট সামারির ফর্মালিটি মেন্টেইন করলাম)
(১) জ্যাক, একজন মদ্যপায়ী ড্রাইভার টাউনে এসেছে একজনের সাথে দেখা করতে। হঠাৎ করে তার গাড়ির উপরে একটি লাশ ছুড়ে পরে।
(২) তিন টিনেজার্স বন্ধু ভ্যানে করে আনন্দ উল্লাস করছিলো আর মজার ছলে ভ্যানের জানালে দিয়ে জ্বলন্ত বই,জোস ইত্যাদি ছুড়ে ফেলতেছিল। যা পরবর্তীতে তাদের জন্য অসুখকর হয়ে দাড়ায়।
(৩) মধ্যবয়সী “ফ্রাঙ্ক” তার কুকুর কে নিয়ে হাটতে বের হয় কিন্তু কিছুক্ষন পরে সে তার মেয়ের একটি সিরিয়েস ঘটনা আবিস্কার করে এবং এই ঘটনার কারনে সে একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহন করে।
(৪) ডাফি, কনভিনিইয়েন্স স্টোরে তার বান্ধবী ও কো-ওয়ার্কার এর কাছে একটি ফ্যাভার/উপকার এর জন্য যায়। স্টোরে শুরু হয় আনপ্রেডিক্টেবল ঘটনা।
(৫) “চ্যারি” একজন টিনএইজ মেয়ে যে কিনা তার প্রেগ্নেন্সির কথা বলে বয়ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার প্ল্যান করছে। তারপরেই এক দুর্ঘটনা ঘটে যার পরিপ্রেক্ষিতে সে নতুন করে প্ল্যান করতে থাকে।
ইলেভেন-ফোরটিন সিনেমার সবচেয়ে স্টং এলিমেন্ট হচ্ছে স্টোরি ও মেকিং স্টাইল। ব্যাক্তিগত ভাবে এমন ধরনার মেকিং আমার খুব পছন্দের। আর থ্রিলার জনরার সিনেমার জন্য তো এমন মেকিং স্টাইল আদর্শসরুপ।
সিনেমাটি শুরুর দিকেই দর্শকের সম্পূর্ণ মনযোগ কেড়ে নেবে কেননা শুরুটায় একপ্রকার উত্তেজনামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। তখন এই উত্তেজনা অথবা সাসপেন্স এর এক্সপ্লেনেশন খোঁজার জন্য দর্শক মরিয়া হয়ে উঠেন এবং এক সময় কখন সিনেমা শেষ হয়ে যায় দর্শক টেরও পায়না।
আর এখানেই পরিচালক সহ সিনেমার সাথে জড়িত অন্যান্য কলাকুশলীদের সার্থকতা।
পরিচালক গ্রেগ মার্কস ২৭ বছর বয়সে সিনেমাটি তৈরি করে যা সত্যি প্রশংসনীয়, তাছাড়া পরিচালনার পাশাপাশি স্ক্রিপ্টও তার নিজের লেখা। যদিও পরবর্তীতে তার কোন নোটেবল কাজ দেখিনি তাই এটা তার বেস্ট ওয়ার্কই বলা যায়।
আর সিনেমাটোগ্রাফার এর চেয়ে বেশি প্রশংসা পাবার যোগ্য এডিটররা। ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়ার ধরন, সাব-প্লটের পারফেক্ট কাট ইত্যাদি ব্যাপার গুল ভাল লেগেছে অনেক।
কাস্টিং এ তৎকালীন সময়ের জন্য প্রায় সবাই নতুন মুখ ছিল যদিও বর্তমানে তাদের মধ্যে অনেকেই স্টার (কলিন হ্যাংক, জেসন সিগল, ক্লার্ক গ্রেগ, হিলারী সোয়াংক)। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দারুন অভিনয় করে গেছেন।
সুতরাং দেখে ফেলুন সিনেমাটি, নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এই সিনেমাটি অনেক ভাল লাগবে। এক মিনিটও বোর হওয়ার সুযোগ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৯