somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কতটা সুন্দর বা অসুন্দর ছিল অনিমেষ আইচের “ভয়ংকর সুন্দর”?

০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সিনেমা ভাল লাগা বা মন্দ লাগার ব্যাপারটি আপেক্ষিক হলেও স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে কমার্শিয়াল ও আর্ট, এই দুটো ফর্মে সিনেমাকে বিভক্ত করা যায়। কমার্শিয়াল সিনেমাতে বিনোদনকে প্রাধান্য দিয়ে সিনেমার গল্প সাজানো হয়, আর আর্ট সিনেমায় ইন্টেলেকচুয়াল প্লট তথা গল্পের গভীরতাকে প্রাধান্য দিয়ে শৈল্পিকভাবে সিনেমার গল্প উপস্থাপন করা হয়। ভয়ংকর সুন্দর সিনেমাতে ঠিক এই জায়গাতেই পরিচালক ব্যর্থ হয়েছেন, না তিনি কমার্শিয়াল সিনেমা বানাতে পেরেছেন, না আর্ট। প্রথমার্ধ দারুণভাবে নির্মাণ করে সম্ভাবনা দেখিয়েও দ্বিতীয়ার্ধে এসে তরী ডুবিয়েছেন।

এই সিনেমায় “আমি অমুক শ্রেণীর জন্য সিনেমা বানাই না” বা “রুচিশীল দর্শকদের জন্য আমার সিনেমা” বলে পার পাওয়া যাবেনা। তথাকথিত দু ধরনের অডিয়েন্সদের হতাশ করেছেন ভয়ংকর সুন্দর। অন্ততপক্ষে, সিনেমাহল থেকে বের হওয়া সাধারন দর্শকদের অভিব্যাক্তি তাই বলে। কেও নিজেদের মূল্যবান অর্থ ও সময় খরচ করে অসন্তুষ্টি পেতে সিনেমাহলে যায়না।

ভয়ংকর সুন্দর (২০১৭)
কাস্টিংঃ পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়,আশনা হাবিব ভাবনা, ফারুক আহমেদ, অ্যালেন শুভ্র প্রমুখ।
সংগীতঃ ইমন সাহা।
গল্পঃ মতি নন্দী (জলের ঘুর্ণী ও বকবক শব্দ)
পরিচালক, প্রযোজক, সংলাপ ও চিত্রনাট্যকারঃ অনিমেষ আইচ


এইতো গেলো আমার সংক্ষিপ্ত মতামত। আসুন সম্পূর্ণ সিনেমাটির পজিটিভ ও নেগেটিভ দিক গুলো স্পয়লারবিহীন বিশ্লেষণ করা যাকঃ

প্রথমেই হতাশার কথা গুলো জানান দেয়া প্রয়োজন। পরিচালকের সিনেমার গল্প বলার সময়ে প্রথমেই পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন যে তিনি আসলে দর্শকদের কি বুঝাতে চাচ্ছেন। সিনেমাটি দেখার সময়ে এই বিষয়টি মাথায় কাজ করছিলো যে তিনি আসলে পর্দার এই দৃশ্য গুলো দ্বারা আমাদের কি বুঝাতে চাচ্ছেন, কি জানান দিতে চাচ্ছেন? অথবা একটি বার্তা পৌঁছানোর পেছনে এক ঘণ্টার লম্বা স্টোরিলাইন নামের বিরক্তি উপহার দিচ্ছেন কেনো। বিনোদন দেয়া ছিল মূল লক্ষ্য? তাহলে বিনোদন কোথায়? কোন গভীর বা শিক্ষণীয় মেসেজ দিতে চাচ্ছেন? তাহলে আমার কাছে এই বার্তা পৌঁছচ্ছেনা কেন?

শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র, এই একটি সেক্টরের(গল্প) কারনে সিনেমাটি সমালোচক ও দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। জালালের গল্প, আইস্ক্রিম, আয়নাবাজি কিংবা অজ্ঞাতনামার মতো সন্তুষ্টি আশা করেছিলাম। ইচ্ছে ছিল এই সিনেমাগুলোর মতো প্রশংসা করে যাবো কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।



আবহ সংগীত খুব বাজে ছিল বা বড় ধরনের অসামঞ্জস্য ছিল তা বলবো না, তবে অনেকটাই টিপিকাল ছিল। তাছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দিয়ে অনেক দৃশ্যে রহস্য তৈরি করার চেষ্টা করলেও দর্শক উল্টো হেসেছে। একজন মৌলিক সিনেমার পরিচালক ও প্রশংসনীয় ট্রেইলার দেখে প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল।

আর ব্যাক্তিগতভাবে গল্পের পরে সবচেয়ে হতাশ হয়েছি (পড়ুন খারাপ লেগেছে) প্রিয় অভিনেতা পরমব্রত ও অ্যালেন শুভ্রের অপব্যাবহার দেখে। পরমব্রতের মতো বাঘা অভিনেতাকে সাইডে বসিয়ে ভাবনাকে লীডে রেখে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার নামে একটি খোঁড়া গল্প নির্মাণ দেখতে পাওয়া খুবই হতাশাজনক। অথচ এই পরমব্রতকে লীড রোলে রেখে ভাল কোন সাইকোলজিক্যাল গল্পে সিনেমা নির্মাণ করলে হয়তো আরেকটি আয়নাবাজি পাওয়া যেত। ভুলে গেলে চলবেনা এই পরমব্রত অভিনয় করেছেন “হ্যামলক সোসাইটি”, “কাহানী”, “বাইশে শ্রাবণ”, “প্রলয়”, “অপুর প্যাঁচালী” এবং “চতুষ্কোণ” এর মতো অসাধারন সিনেমাগুলোতে। আর পরমব্রতই বা এই সিনেমা সাইন করলেন কি মনে করে? উনি ভাল জানেন!

আরো কিছু বিষয় নিয়ে হতাশামূলক আলোচনা করা যেত কিন্তু গল্প রিভিল/প্রকাশ হওয়ার স্বার্থে ও পরিচালকের কষ্টের নির্মানের প্রতি সম্মান রেখে এড়িয়ে গেলাম। সিনেমার প্রাণ “গল্প” যেখানে হতাশ করেছে সেখানে অন্যান্য দিক নিয়ে আলোচনা করাটাও অধিক সখ্যতা।



এবার আসি সিনেমার প্রশংসনীয় দিক গুলো নিয়ে। সিনেমার সবচেয়ে পজিটিভ দিক হচ্ছে কাস্টিং। অভিনয়ে যাকে যে ধরনের চরিত্র দেয়া হয়েছে তা সফলতার সহিত পালন করেছেন। শুধু মেজর ক্যারেক্টারগুলো নয়, ছোট মাইনর চরিত্রেও বেশ ভাল অভিনয় করেছে সবাই। ভাবনা, পরমব্রত, ফারুক আহমেহ, অ্যালেন শুভ্র, বিটিভি যুগের জনপ্রিয় খাইরুল ইসলাম সবুজ থেকে শুরু করে আয়নাবাজির লুৎফুল রহমান জর্জ, সবাই দারুণ পার্ফরমেন্স দিয়েছেন। অভিনয়ের দিক থেকে কোনকিছু দৃষ্টিকটু লাগেনি। সিনেমার প্রথম হাফ এঞ্জয় করার পেছনেও এদের অনেক অবদান আছে বলা যায়।
লোকেশন তথা সিনেমাটোগ্রাফিও বেশ ভাল ছিল, চোখের আরাম দিয়েছে এক কথায়। তাছাড়া সিনেমার গান গুলোও ছিল শ্রুতিমধুর।

অনিমেষ আইচের প্রথম সিনেমা “জিরো ডিগ্রী” এখনো দেখার সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য হয়নি তবে বিশ্বস্ত সিনেমা সমালোচকদের কাছে নেগেটিভ মতামত শোনেছি আর ভয়ংকর সুন্দর তো নিজেই অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। সিনেমার অন্যান্য দিক গুলোতে দক্ষতার পরিচয় দিলেও অনিমেষ আইচের উচিত পরবর্তীতে সিনেমাগুলো নির্মাণে গল্পের প্রতি আরো সচেতন হওয়া। সিনেমা নির্মাণে কারিগরি ডিপার্টমেন্টে উনার যথেষ্ট জ্ঞ্যান রয়েছে তবে গল্প নির্বাচনে বা পর্দায় গল্প উপস্থাপনে অনেক বিজ্ঞতার প্রয়োজন।



সিনেমাটি নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত মতামত প্রকাশ করলাম, একজন দর্শক হিসেবে গঠনমূলক আলোচনা করার অধিকার আমার আছেই। আর যায় হোক, নিজের দেশের সিনেমার দোঁহাই দিয়ে অথবা মন্দের ভালো বলে সৎ সমালোচনা এড়িয়ে “কবর” নাটকের হাফিজের মতো চটুকদারি করতে পারবোনা। তো এখন সিনেমাহলে গিয়ে সিনেমাটি দেখা বা না দেখার সিদ্ধান্ত আপনার। আর আমার সমালোচনার “সমালোচনা” করতে চাইলে কিংবা কোয়িন ব্রাদার্স-ইংমার বার্গম্যানকে (yeah right! :D ) রেফারেন্স টেনে আমার সিনেমা জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করতে চাইলেও আপনাকে কমেন্ট সেকশনে স্বাগতম। ধন্যবাদ সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৬
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: সম্পত্তি

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৪



গল্প:
সম্পত্তি

সাইয়িদ রফিকুল হক

আব্দুল জব্বার সাহেব মারা যাচ্ছেন। মানে, তিনি আজ-কাল-পরশু-তরশু’র মধ্যে মারা যাবেন। যেকোনো সময়ে তার মৃত্যু হতে পারে। এজন্য অবশ্য চূড়ান্তভাবে কোনো দিন-তারিখ ঠিক করা নেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

“রোজা” নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ‘ইউসোনরি ওসুমি’।

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৫০




‘রোজা’ ফারসি শব্দ, আরবিতে ‘সওম’। ভারতের রাজনীতিতে ‘অনশন’। ইংরেজিতে ‘ফাস্ট’। কিন্তু মেডিকেলের পরিভাষায় রোজার কোনও নাম ছিল না ও মেডিকেল বই গুলোতে রোজা’র বিশেষ কিছু গুণাগুণও উল্লেখ ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×