ইঁদুরের সাথে একটা বিশেষ ভাব-সাব আছে রমিজ মিয়ার। সে জন্য রমিজ মিয়াকে সবাই আহ্লাদ করে উপাধি দিয়েছে ইঁদুর বিশেষজ্ঞ রমিজ মিয়া। উনার ফ্ল্যাটের প্রতিটা পরিবার যখন ঈঁদুরের যন্ত্রণায় রাতের ঘুম হারাম করে ফেলেছে উনি তখন ইঁদুরের উন্নতি নিয়ে মহা পরিকল্পনায় ব্যস্ত। উনি সিদ্ধান্ত নিলেন উনার ব্যক্তিগত রুমে ইঁদুরের ফার্ম করবেন। এতে ফ্ল্যাটের অন্যান্যরা ক্ষেপে উঠলেন। এমনিতেই ইঁদুরের যন্ত্রণায় ঘরে টিকা যাচ্ছে না তার উপরে আবার ইঁদুর চাষ?? প্রতিটা পরিবার রমিজ মিয়াকে নিষেধ জানালো যে তিনি এটা না করতে।
কিন্তু রমিজ মিয়া সেটা না মানলে তারা সবাই দলে-বলে বাড়িওয়ালার কাছে নালিশ নিয়ে যায়। কিন্তু বাড়িওয়ালা এই অভিনব প্রক্রিয়া শুনে রমিজ মিয়ার ক্রিয়েটিভি কাজের জন্য উদ্যোগী হলেন। বাড়িওয়ালা ভাবলেন এতে সব ইঁদুর এক জায়গায় থাকবে কোন ছুটাছুটি করবে না। এক পর্যায়ে সবাই আবার রমিজ মিয়ার কাছে শেষবারের জন্য অনুরোধ করতে গেল। রমিজ মিয়া ওদের সুন্দর করে ইঁদুর চাষের উপকারিতা বুঝিয়ে দিলেন। তার মতে ইঁদুর কে ঠিক মতো খাবারদাবার দেয়া হয় তাহলে ইঁদুর আর কারো কিছু নষ্ট করবে না।
তিনি আর ও বললেন যে, বোমা উদ্ধার করার জন্য যদি কুকুরকে ব্যবহার করা হয় তাহলে ইঁদুর কেন নয়?? ইঁদুর রা পিছিয়ে যাবে কেন?? তিনি সবার কাছ থেকে দুই মাসের টাইম নিলেন। তিনি চেলেঞ্জ দিয়ে বললেন, এই দুই মাসের ভিতরে ইঁদুরদের সব কাজে বিশেষজ্ঞ করে তুলবেন।
সবাই উনার কথা মেনে নিলেন এবং দুই মাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।
রমিজ মিয়া প্রথমে সবার রুম থেকে ইঁদুর কে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করে উনার নিজ রুমে নিলেন। ইঁদুরকে প্রতিবেলায় উনি সময় করে খাবার দেন। এভাবে চলতে চলতে একটা সময় দেখলেন ইঁদুর রা তার কথা শুনছে। খাবারের সময় হলে ওরা নিজে থেকে সারিবদ্ধ হয়ে লাইনে বসে খাবার খেতে। আবার খাবার শেষে ময়লা অন্যত্র নিয়ে ফেলে আসে। রমিজ মিয়ার কথায় উঠে আর বসে। উনি আসতে বললে আসে আর যেতে বললে যায়। রমিজ মিয়ার কথায় ইঁদুর রা আর কারো ঘরে চুরি করে খাবার খেতে যায় না। কিংবা কারো আলমারিতে ঢুকে কাপরও কাটে না। দুই মাসের ভিতরে ইঁদুরগুলো পাকাপাকিভাবে রমিজ মিয়ার বশ হয়ে গিয়েছে।
দুইমাস পর রমিজ মিয়া একটা বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উনার ইঁদুরের বিশেষত্ব দেখানোর জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ করলেন। ফ্ল্যাটের সবাই ইঁদুরের সেই বিশেষত্ব দেখার জন্য অনুষ্ঠানে আসলেন। রমিজ মিয়া সব ইঁদুরের মধ্যে থেকে একটা ভাল বশ্য ইঁদুর বেঁচে আনলেন। ইঁদুর যেহেতু উনার বশ সে জন্য ইঁদুরকে আর খাঁচায় করে না এনে উনার প্যান্টের পকেটে করে আনলেন।
রমিজ মিয়া প্রথমে এক লম্বা ভাষণে উনার ইঁদুরের বিশেষ বিশেষ ক্ষমতা গুলোর বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন উনার ইঁদুর গুলো আগের চাইতে অনেক বলবান, স্বাস্থ্যকর, আর ভাল হয়েছে। সে সব সময় নিজের জায়গাতেই থাকে। কারো ঘরে যাওয়ার জন্য ছটফট করে না। যখন তিনি বলেন উঠ তখন উঠে আর যখন তিনি বলেন বস্ তখন বসে।
সবাই ইঁদুরের সেই বিশেষত্ব দেখতে ব্যকুল হয়ে উঠেছে। উনিও তা দেখানোর জন্য খুব আগ্রহী।
তিনি সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং সবার উদ্দেশ্যে বললেন, আমি আমার সবকয়টি ইঁদুর থেকে সবচেয়ে প্রশিক্ষিত ইঁদুর টি এনেছি। আপনাদের আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না।
তারপর রমিজ মিয়া ইঁদুরটিকে বের করার জন্য প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকালেন কিন্তু পকেটে হাত দিয়ে দেখলেন ইঁদুরটি নেই। ইঁদুরটি দাত দিয়ে পকেট কেটে উনার জাঙ্গিয়ার ভিতর চলে গিয়েছে।
সবাই তখন জোরেশোরে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেন, কোথায় আপনার সেই প্রশিক্ষিত ইঁদুরটি কোথায়??
রমিজ মিয়া বললো, আসলে ইঁদুরটি হলো আমার জাঙ্গিয়ার ভিতর। একটু দাঁড়ান। আমি আপনাদের এক্ষণি আমার জাঙ্গিয়ার ভিতর থেকে ইঁদুরটি বের করে দেখাচ্ছি।
হঠাৎ সবাই চুপ। সবাই হা করে রমিজ মিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর সবাই একটা উচ্চারণ "ছি" বলে অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে গেলেন। ইঁদুর বিশেষজ্ঞ রমিজ মিয়া আর তার ইঁদুর একাই পড়ে রইলেন মঞ্চে। এখনো তিনি বুঝতে পারছেন না কেন উনার ইঁদুরকে সবাই না দেখেই চলে গেলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৫