somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিরিয়ার যুদ্ধ মানবতার পরাজয় ৩

১৬ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশেষ করে জাতিসংঘ সিরিয়ার সমস্যাকে একবিংশ শতাব্দির সবচেয়ে ভয়া মানবিক বিপর্যয় হিসাবে উল্লেখ করেছে। তবে জাতিসঙ্ঘ নানাভাবে এই সমস্যার পক্ষপাত মুক্ত আচরণ করতে পারছে না। বরং জাতিসংঘ মার্কিন সমর্থনের বাইরে এসে নিরপেক্ষ সমাধানের পথ তৈরি করতে পারছে না। ফিলিস্তিন সমস্যার মত সিরিয়ার সমস্যা দিন দিন জটিল হচ্ছে। সিরিয়া ভেংগে গেলে ইসরাইল লাভবান হবে। এই সরল সমীকরণের বাইরেও ভেতরে আলাদা সমীকরণ আছে। আরব রাষ্ট্র সমূহের আন্তঃরাষ্ট্রিক রাজনীতি, তেল বানিজ্য। আঞ্চলিক কর্তৃত্ববাদের রাজনীতির দায় সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপন্ন হচ্ছে। বর্তমান সিরিয়ার অর্ধেকের বেশি মানুষ ঘর ছাড়া। সহায় সম্পদ হারিয়ে তারা বসবাস করছে অত্যন্ত মানবেতর জীবন। তাদের বিশাল জনসংখ্যা বর্তমানে লেবানন, জর্ডান, ইরাক, সৌদি আরব, তুরস্ক সহ ইউরোপ, উত্তর আমেরিকার কানাডা এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বাস্তু হিসাবে বসবাস করছে।

বর্তমানে জাতিসংঘ উদ্বাস্তু কমিশনের মতে সিরিয়ার যুদ্ধ আরম্ভ হবার পর থেকে ৫.৫ মিলিয়ন মানুষ দেশের বাইরে জীবন রক্ষার জন্য পালিয়ে যায়। আর দেশের ভেতর আরো ৬.৫০ মিলিয়ন মানুষ দেশের ভেতর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এই সকল মানুষের মধ্যে নারী ও শিশুদের অবস্থা আরো করুণ। মানবেতর এক জীবন। একদিকে আহত, অসহায়; অন্যদিকে খাদ্য, ঔষধ, আর পানির সংকটে জীবন যাপন করছে। অনেক নারী তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে। উভয়পক্ষ,সরকারি বাহিনী ও তার মিত্ররা আরেকদিকে সরকার বিরোধী জোট, যুদ্ধ অপরাধ করেছে। প্রতিনিয়ত যুদ্ধ অপরাধ করে চলেছে। সিরিয়ার ভেতর ও বাইরে উভয় জায়গায় রিফিউজিদের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। জাতিসংঘ উদ্বাস্তু হাই কমিশনের মতে সিরিয়ার ভেতর প্রায় ১৩.১০ মিলিয়ন মানুষের জন্য এই মুহুর্তে জরুরী সাহায্য দরকার। ফিলিপ্পো গ্রান্ডির মতে, “ Syria is the biggest humanitarian and refugee crisis of our time, a continuing cause of suffering for millions which should be garnering a groundswell of support around the world.”

তুরস্ক সিরিয়ার প্রতিবেশি দেশ। সেখানে সবচেয়ে বেশি সিরিয়ান রিফিউজি বাস করে। সেখানে তাদের সংখ্যা প্রায় ৩.৩০ মিলিয়ন নিবন্ধিত উদ্বাস্তু বাস করে। তাদের কাজ নেই ব্যবসা নেই। অনেকেই বাস করে রিফিউজি ক্যাম্পে, অস্থায়ী আবাস, নিন্মমানের ভাড়া করা গৃহে তাদের বসবাস। তুরস্কে বসবাস করা উদ্বাস্তুরা কিছুটা ভাল অবস্থানে আছে। সেখানে তাদেরকে নিরাপত্তা, খাদ্য সংস্থান ছাড়াও নিবন্ধনের পর অনেকেই সরকারি স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। কাজের অনুমতি পাচ্ছে। কেউ কেউ সেখানে নানা রকম ব্যবসা –বানিজ্য করার অনুমতি পাচ্ছে। আবার অনেকেই সেখানে থেকে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে। বিশ্ব সংস্থার নানা রকম আশ্বাস থাকা স্বত্তেও বাস্তবে সেখানে তেমন সাহায্য পৌছাচ্ছে না। তুরস্ক সরকার নিজ উদ্যোগেই তাদের ভরণপোষন, দেখভালের দায়িত্ব নিচ্ছে। নারী ও শিশুদের পাচার রোধেও তাদের কাজ করতে হচ্ছে। যুদ্ধ অনেক নারী –শিশুকে প্রথমে উদ্বাস্তু তৈরি করছে সেখানে থেকে পাচারের ঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছে। তুরস্ক তার সীমান্তে নতুন করে উদ্বাস্তু শিবির তৈরি করছে। সেখানে প্রায় ১৭০,০০০ লোকের বসবাস নিশ্চিত করবে। এই নতুন উদ্বাস্তু শিবিরের কারণ কি? উত্তর অত্যন্ত পরিস্কার। কেননা সিরিয়ার কুর্দিদের স্বাধীনতার দাবি কিংবা তাদের সংগঠন কে দমন করার জন্য তুরস্ক সেনা, বিমান প্রস্তুত। প্রতিশোধ মূলক এই দমন অভিযানে সেখানে নতুন করে সমস্যা তৈরি করবে। সাধারণ নাগরিক, নারী, শিশু যারা নিজেদের ঘর বাড়ী ছেড়ে পালাবে তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য এই নতুন উদ্বাস্তু শিবির। কে জানে সেখানে আবার কত লোকের প্রাণহানি হবে। সিরিয়ার কুর্দিদের দমন না করতে মার্কিন সরকারের অনুরোধ, উপদেশ আছে। তুরস্ক তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার স্বার্থে এই উদ্যোগ নিচ্ছে। সেখানে কুর্দিরা স্বাধীন হলে, ইরাকের কুর্দিদের সাথে মিলে তুরস্কের ভেতরে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে বলে আশংকা। তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরেই কুর্দিদের প্রতি দমনমূলক আচরণ করে আসছে। তুরস্ক, ইরাক, ইরান, কিংবা সিরিয়া কোন রাষ্ট্র কুর্দিদের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারছে না। প্রত্যেকেই তাদের প্রতি বৈরি, দমনমূলক আচরণ করে আসছে। আবার কুর্দিদের প্রতি মার্কিন নীতি বরাবরের মত পক্ষপাতমূলক।

তুরস্কের পরই বেশি উদ্বাস্তু বাস করে লেবাননে। লেবাননে তাদের কঠিন জীবন যাপন। আনুষ্ঠানিক তেমন কোন ক্যাম্প নেই। সেখানে ৮০ শতাংশের বেশি উদ্বাস্ত বাস করে ক্যাম্পের বাইরে। লেবাননের বিভিন্ন শহর, গ্রাম, পাহাড়ের পাদদেশে তাদের বসবাস। এই সকল মানুষের দৈনিক জীবন যাপনের যে চাহিদা তা মেটানোই সেখানে কষ্টকর। আর্থিক সংস্থান নেই। কিংবা যা সামান্য আছে তা দিয়ে চলা দুষ্কর। অনেকেই একসাথে ঘাদাঘাদি করে বসবাস করছে। অস্বাস্থ্যকর আবাস। চিকিৎসা নেই। সেনিটেশন নেই। পানির অভাব। মাথার উপর ভাল কোন ছাদ নেই। তাবুতে বসবাস। কিংবা সামান্য ছাইনি দিয়ে কোন মতে জীবন কে টেনে নেয়া চলছে। এখন পর্যন্ত লেবাননে নিবন্ধিত সিরিয়ার রিফিউজি সংখ্যা প্রায় ১ মিলিয়ন। এই বিশাল বাড়তি জনসংখ্যার চাপ লেবানলের নেই। বাধ্য হয়ে বাইরের সাহায্য দরকার, ইউএন এইচসি আর মতে এই অর্থের পরিমান প্রায় বছরে তিন বিলিয়ন ডলার।

এই সকল মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা দরকার। মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ করা আবশ্যক। যে যুদ্ধ তাদের কে এখান থেকে বিতাড়িত করেছে জীবন যাপন তাদের কাছে আরো কঠিন। নিজের দেশের সীমানার বাইরে এসে বসবাস করা। কাজ নেই, ব্যবসা নেই। চাকরি নেই। তারা জেলের কয়েদি নয়। কোন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অতি সাধারন নারী, পুরুষ, শিশু ঘরের বাইরে, খোলা আকাশের নীচে সামান্য তাবুতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। গনগনে সূর্যের তাপ। পানির সরবরাহ কম। সেনিটারি দুর্বল। নারিপুরুষ গাদাগাদি করে বাস করছে। যুবতি মেয়েরা তাদের আব্রু রক্ষা করতে পারছেনা। অনেক নারী যুদ্ধের কারনে দেশের ভেতর নির্যাযিত হয়েছে। আবার ক্যাম্পেও নিরাপদ নয়। অনেকেই পাচার হয়ে যাচ্ছে। অনেক নারী নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার তাগিদে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আরেক যুদ্ধ। নারী আর শিশুরা সেখানে সবচেয়ে বেশী সমস্যা জর্জরিত। সেখানে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে নানভাবে। কাজের অভাবে স্বামীরা ঘরে থাকে। আয় নেই। ভরণপোষণ করতে পারছে না। স্ত্রীদের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আবার মেয়েরা বাল্য বিবাহে বাধ্য হচ্ছে। অনেক নারী জীবন বাঁচানোর তাগিদে বেঁচে নিচ্ছে পতিতাবৃত্তি। একে তারা জীবনের জন্য যৌনতা মনে করছে। অনেক যুবতি নারী মানসিক ভারসাম্যহীন জীবন যাপন করছে। দেশের ভেতর ঘটেছে নির্যাতন। মৃত্যু হাত থেকে বেঁচে গেছে সত্যি। বয়ে বেড়াচ্ছে আতংক। আপনজন হারানোর কষ্ট আছে মনে। নিয়ে তাদের মানসিক ভারসাম্য টিকে থাকে কিভাবে? লেবাননে আগে থেকেই ফিলিস্তিনি রিফিউজি বাস করে। নতুন করে সিরিয়ার রিফিউজি তাদের উপর একটা বাড়তি চাপ তৈরি করছে। এই অমানবিক জীবন কি তাদের প্রাপ্য ছিল। ক্ষমতার লড়াই নিজদেশের ভেতর একজন আরেকজনের শত্রু। এই যুদ্ধের দায় যারই হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×