somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিরিয়ার যুদ্ধ মানবতার পরাজয় ৪

১৯ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জর্ডান সিরিয়ার প্রতিবেশি দেশ। তুলনামূলক অনেক ছোট দেশ। আয়াতন মাত্র ৮৯৩৪২ বর্গকিলোমিটার। বলতে গেলে প্রায় একটা ভূমিবেষ্টিত দেশ। মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে এগারতম জনবহুল দেশ। জনসংখ্যা ১০ মিলিয়ন। সুন্নি আরব দেশ। সামান্য কিছু খ্রীস্টান সেখানে বসবাস করে। আরবের নানা সংঘাত সংকটে আপাতত নিরাপদ দেশ জর্ডান। ১৯৪৮ সাল থেকেই এই দেশ পাশের দেশ দেশের নাগরিক যখনই বিপদে পড়েছে তাদের কে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছে। জর্ডানের বর্তমান জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের একভাগ প্রায় ফিলিস্তিনি রিফিউজি। এই সংখ্যা ২.১০ মিলিয়ন। এমনি এক পরিস্থিতিতে ২০১১ সাল থেকে সেখানে যোগ হচ্ছে সিরিয়ার শরণার্থী। জর্ডানে আর্মেনিয়না, চেচেনিয়ান, ফিলিস্তিনি, ইরাকি, সোমালিয়ান, ইথিওপিয়ান রিফিউজি বাস করে। জর্ডান কে বলা হয় রিফিউজিদের নিরাপদ স্বর্গ। যেখানে আগে থেকেই বিশাল শরণার্থী বাস সেখানে নতুন করে সিরিয়ার রিফিউজি জর্ডানের অর্থনীতি, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও অবকাঠামোর ( স্কুল, হাসপাতাল সহ অন্যান্য) উপর ব্যাপক চাপ তৈরি করে। অন্যদিকে সিরিয়ার শরণার্থীদের মানবিক চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। এই পরিস্থিতিতে বিগত ছয় বছর যাবৎ জর্ডান রিফিউজি সংকট মোকাবেলা করে আসছে। সিরিয়ার মানুষ জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নেয়। জর্ডানে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীর সংখ্যা একেবারে কম নয়। সরকারি হিসাবে জর্ডানে ১.২৫ মিলিয়ন।কিন্তু সেখানে ইউএনএইচসিআর এর মতে সেখানে নিবন্ধিত রিফিউজির সংখ্যা হচ্ছে ৬ লাখ ৬০ হাজারের কাছাকাছি। বর্তমানে জর্ডানে রিফিউজির সংখ্যা কত তা বিবেচনা করা।
ইরাকে আইএসআইএলের অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা থেকে বাঁচার জন্য অনেক খ্রীস্টান ইরাকিও জর্ডানে বাস করছে। বর্তমানে সিরিয়ান রিফিউজিরা জর্ডানে জীবন বাঁচাতে গেলেও তাদের নানামূখী সংকট তাড়া করছে। গৃহ হারা মানুষের ঘর দরকার। চিকিৎসা দরকার। খাদ্য দরকার। সরকারি হিসাবে জর্ডান সিরিয়ান জনগণকে বাঁচাতে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। সিরিয়ার সাথে ৩৭০ কিলোমিটার সীমানা আছে। সরকার সরকারের তথ্য অনুসারে ২০১৭ সালে তাদের আরো ব্যয় হবে ১.৭ বিলিয়ন ডলার। এই বিপুল অর্থের সংস্থান করা জর্ডানের জন্য প্রায় অসম্ভব। দাতা সংস্থার সহযোগীতা দরকার। ইউএনএইচসিআর এই অর্থসংস্থানের জন্য কাজ করছে। কিন্তু সমস্যা আরো ব্যাপকতর।

নিবন্ধিত শরণার্থীর অর্ধেক হচ্ছে শিশু। ৩,৩৮,৬৪৫ জন নিবন্ধিত শরণার্থীর বয়স ১৭ বছরের নীচ। এই সংখ্যা মোট নিবন্ধিত রিফিউজির ৫১.৫%। বাকি নিবন্ধিত রিফিউজির মধ্যে, ২৯৪৫৪৮ জনের বয়স ১৮-৫৯। ২৩৮৫৫ জন ৬০ বছরের বেশি। ৫১৫৭৮১ জন শহরে বাস করে। ৩৩২৯৬৪ নারী ( সব বয়সের নারী)। তার মানে হল শিশুদের শিক্ষা, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা, বাড়ন্ত বয়সের সমস্যা মোকাবেলা করা এক কঠিন। অনেক শিশু আছে যাদের সাথে কোন পিতা মাতা কিংবা কোন নিকট আত্মীয় নেই। পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন এই সকল শিশুদের সমস্যা অন্যরকম। মানসিক ট্রমা এদেরকে তাড়া করছে। বেঁচে থাকা এদের জন্য আরেক যুদ্ধ। এই রকম পরিস্থিতিতে জর্ডান তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।নতুন শরণার্থী যাতে সেখানে আর না যায় তার জন্যই এই উদ্যোগ। অধিকন্তু অন্যান্যদেশের শরণার্থী সমস্যার মত এখানেও নানা সমস্যা বিরাজমান। ২০১২ সালে খোলা হয় জাতারি শরণার্থী শিবির। এখানে বর্তমানে বাস করে ৮০ হাজার শরণার্থী।
প্রাথমিক দিকে মাত্র ৬০০০০ মানুষ বাস করতে পারবে এমন কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। এখানে ২৪০০০ তৈরিকৃত ক্যারাভান, ২৭টি কমিউনিটি সেন্টার, ১১টা স্কুল, ৩০০০ দোকান আছে । অন্যদিকে আজরাগ ক্যাম্পে বাস করে ৩৫০০০ সিরিয়ান। বাকি অধিকাংশই সিরিয়ান বাস করে জর্ডানের বিভিন্ন শহর এলাকায়। সমস্য হচ্ছে জর্ডানে শহরাঞ্চলে পর্যাপ্ত বাড়ীঘর নেই। সামান্য ঘর পাওয়া এক দুষ্কর কাজ। বাড়ী ভাড়া অনেক চরম। বাড়ী ভাড়ার জন্য তাদের কে মৌখিক চুক্তির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এই ধরনের মৌখিক চুক্তি তাদের কে উচ্ছেদ, হয়রাণী সহ নানা সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। ২০১৭ সালে কেয়ারের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ১০% বেশি পরিবার ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কেননা বাড়ীর মালিক তাদের কে ঘর ছাড়তে বাধ্য করেছে। প্রায় অর্ধেক শরণার্থী জানে না তারা কতদিন ভাড়া বাড়ীতে বাস করতে পারবে। রিফিউজিদের মধ্যে নারী ও শিশু সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের শিকার। যৌন নির্যাতনের শিকার নারীরা তাদের নির্যাতনের সামাজিক বাধার কারণে রিপোর্ট করতে চায়না। নারীদের পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরা পর্যন্ত যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শরণার্থী প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ কিংবা স্থানীয় অধিবাসী দ্বারা এই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যের দ্বারাও নির্যাতিত হচ্ছে। রিফিউজি ক্যাম্পে বসবাসরত শিশুদের শারিরীক মানসিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত স্কুল, খেলার মাঠ, বিনোদন সহ অন্যান্য সহায়ক কার্যক্রম নেই। অধিকন্তু নারী-শিশুদের নিরাপত্ত এক বিশাল হুমকি।
সিরিয়ার যুদ্ধ তাদের আত্মীয় পরিজন হারাই করেনি; কেড়ে নিয়েছে তাদের বাড়ি ঘর। সহায় সম্বলহীন মানুষ এক অসহায়, অমানবিক সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে। কেউ জানেনে আদৌ নিজেদের বাড়ি ঘরে ফিরতে পারবে কিনা। আর যদি পারে তবে কখন সেখানে ফিরতে পারবে তাও জানা নেই। অনিশ্চিত এক অপেক্ষা। অনেক শিশুর জন্ম হচ্ছে ক্যাম্পে। তাদের ভবিষৎ কি কারো জানা আছে? অনেক শরণার্থী আবার জর্ডান ছেড়ে অন্যত্র যাত্রা করার জন্য তৈরি হচ্ছে। সেখানে কাজ না থাকা একটা বড় কারণ। অন্যদিকে নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া অত্যন্ত দূরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য সহযোগিতাও বড় সমস্যা। শরণার্থীদের জন্য দাতা সংস্থার সাহায্য অপ্রতুল। জীবন বাজি রেখে অনেকেই নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ইউরোপের দিকে পাড়ি দিতে চাচ্ছে। কিন্তু ইউরোপের পথে যাত্রা করতে গিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে হচ্চে অনিপরাপদ নৌযানে করে। অনেকের জীবনের সলীল সমাধি হয়েছে ভূমধ্যসাগরে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×