somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টোকিও সফর – কিছু আইতল্যামি ১

০৬ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাপান উন্নত দেশ। জাপান বাংলাদেশের ভাল বন্ধু দেশ। আমাদের দেশে জাপানের নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে। সিকো, ফুজি, নিপ্পন, ইয়ামুটো,জুকি,হাসিমা, ফুকুহারা, টয়োটা, নিশান, পাজেরো, হোন্ডা,মাজদা, পেগাসাস, কানসাই, সনি, মিনিসু, মিটসুবিশি, ইয়াহামা, ইউনিগ্লো, কাওয়াসাকি ইত্যাদি। আমাদের জীবন যাত্রায় প্রতিদিনের কাজে নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করি তাদের অধিকাংশই জাপানের। শহরের রাস্তায় যত প্রাইভেট কার চলে তার ৮০% জাপানের তৈরি। জাপানে আমাদের দেশের প্রধান উন্নয়ন অংশিদার। জাপানের খবরা খবর আমাদের দেশের মানুষ আগ্রহ সহকারে পড়ে থাকে। আমাদের ছাত্র জীবনে অনেকের মুখে শোনেছি তাদের স্বপ্ন জাপান যাবে। জাপানের শিক্ষা –দীক্ষা উন্নত। কর্ম সংস্থান, আয় আর জীবন যাত্রার মানের জন্য মানুষ জাপান যেতে আগ্রহী। জাপানের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হিরোশীমা আর নাগাসাকির বোমা। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় এই দুই শহরে আণবিক বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়। হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। যুদ্ধের পর জাপান একটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। সেই জাপান আজ বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে শান্তি আর সম্বৃদ্ধির জন্য সুখ্যাতি আছে। জাপানের কথা বললেই তাদের উন্নত চিন্তা ভাবনার কথা বলে। শান্তিপ্রিয়া জাপানের ভাবমুর্তি সারাবিশ্বে প্রসংশিত।
সেই জাপানের যাবার একটা সুযোগ আসে। ফলে মানসিকভাবে প্রবল উত্তেজনাবোধ করি। ২০১১ সালে জাপানের উপর দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম। আমাদের বহনকারি বিমান ক্যাথেপ্যাসেফিক হংকং থেকে পূর্বগামী পথে আমেরিকা যায়। আমরা আমেরিকার পশ্চিম উপকূল হয়ে শিকাগো গিয়েছিলাম। ক্যাথেপ্যাসেফিক বিমানে মানচিত্রে জাপানের উপর দিয়ে চলার পথ নির্দেশ করছিল। তখন মনে ভাবছিলাম যদি জাপান ঘুরে যেতে পারতাম। বাংলাদেশের গার্মেন্টশ শিল্পের সেলাই মেশিনের বাজার প্রায় একচেটিয়াভাবে দখল করে আছে জাপানের কোম্পানিগুলো। আমাদের গার্মেন্টশ কারখানাতেই তাই। তাছাড়া জাপানের ফুকুহারা নিটিং মেশিন বাংলাদেশের কাপড় উৎপাদনের কারখানা সমূহ ব্যবহার করে। এবার জাপানের যাবার আগে অনেক মেশিন কোম্পানী তাদের কারখান পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু সময়ের অভাবে কোথাও যেতে পারেনি। অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে যাওয়া আসা করা। প্রকৃতপক্ষে টোকিও বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। টোকিও অনেক বড় শহর।
জাপান সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া বোকামী। কেউ আমাকে পাগল ভাবতে পারে। বাংলাদেশে জাপান পরিচিত নাম।পরিচিত দেশ। উন্নত সম্বৃদ্ধ দেশ। জ্ঞান বিজ্ঞান,শিক্ষা প্রযুক্তিতে তাদের জুড়ি মেলা কঠিন। জাপানে আসার আগে জাপান সম্পর্কে যত সামান্য জানতাম। এখানে আসার পর এদেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ আরো অনেক বেড়েছে। জাপানের পতাকা রঙ সাদা আর লাল। সাদা শান্তির প্রতিক। তার সাথে লাল রঙ কেমন একটু ভিন্ন মাত্রা দেয় বৈকি। তা জানার জন্য বেশ কয়েকজন জাপানীকে জিজ্ঞেস করেছি। কেউ বলতে পারেনা। হতে পারে আমি যাদের কাছে জিজ্ঞেস করেছি তাদের হয়ত জানা নেই। কিংবা আমার ভাষা তাদের কাছে বোধগম্য হয়নি। আমাদের দেশের বই পুস্তকে জাপানের পতাকার লাল বৃত্তকে ভোরের সূর্যলাল কে বুঝায়। আসলেও ব্যাপারটি তাই। জাপানের পতাকাকে বলা হয় হিনোমারু। এর মানে হল সার্কেল অব দি রাইজিং সান। সংক্ষিপ্ত অর্থে রাইজিং সান। আবার জাপান শব্দটিকে জানানিজ ভাষায় নিপ্পন বা নিহন বলা হয়। যার অর্থও হল সূর্যোদয়। সেজন্য জাপান কে মানুষ সূর্যোদয়ের দেশ হিসাবেই জানে। জাপানের চারিপাশে প্রশান্ত মহাসাগরের জলরাশি ঘিরে আছে। সেই কারনে জাপান দ্বীপদেশ বলা হয়ে থাকে। একটা দুইটা দ্বীপ নয়। কয়েক হাজার দ্বীপ আছে জাপানে। জাপানে মোট দ্বীপের সংখ্যা ৬৮৫২টি। তবে সব দ্বীপে মানুষ বসবাস করে না। আর সব দ্বীপ মিলে জাপানের আয়াতন ৩৭৭৯৭২ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ১২কোটি ৭০ লাখ (২০১৭)। জন সংখ্যার ঘনত্ব ৩৬৬ / প্রতি বর্গকিলোমিটার।
জীবনের প্রথম জাপান আসা। জাপানে এসে এখানকার প্রকৃতি, পরিবেশ, নান্দনিকতা, শহরের সাজসজ্জ্বা। এক কথায় শহরের সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ। বিমোহিত। তরণ বয়সে কোন যৌবন উদ্ভিগ্না নারীর প্রেমে পড়ার মত। টোকিওর রূপ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মানুষ যতই আমি বাস্তববাদি হোক না কেন প্রকৃতির রূপ সে বিমোহিত হবে। আর টোকিও প্রকৃতি রূপের সাথে আধুনিক প্রযুক্তি, নির্মান কৌশল, নান্দনিক চেতনা একে মায়াবী করে তোলেছে। একটা শহর একজন মানুষের মগজে কি প্রেমের স্পন্দন দিতে পারে? টোকিও পারে। যদিও আমি এখানে প্রথম, তবু যেন অনেক কিছু চেনা জানা। আমার কল্পনার এক সাজানো শহরে যদি আমি একদিন হারিয়ে যাই কেমন হবে। তেমনি টোকিওতে যেন হারিয়ে গেছি। কল্পনার সাজানো শহরে। এখানে বার বার আসার জন্য আমাকে তাড়িত করবে। আমার জানা নেই আর কোনদিন আসা হবে কিনা। যদি নাও আসি তবু আমি কোনদিন ভুলব না। জাপান সম্পর্কে আমার জ্ঞান, বিদ্যার বহর অত্যন্ত নাজুক। জাপান কে বিস্তারিত জানার জন্য যে সময় দেয়া দরকার, দেখা দরকার, পড়াশোনা দরকার তা প্রকৃত অর্থেই আমার ছিলনা। আজও নেই। এখানে এসে আমার সামান্য যে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে মনে বিশ্বের যে কোন নগরের তুলনায় টোকিও সুন্দর। জাপানীরা টোকিও নিয়ে গর্ব করতেই পারে। শহরের রাস্তাঘাট অনেক সুন্দর।পথচারি বান্ধব ফুটপাত। অনেক বড় রাস্তার পাশে গাছপালা আছে। এমনকি কিছু রাস্তার পাশে বাঁশের ঝাড় দেখেছি। চিকন চিকন গুচ্ছ বাঁশঝাড়। আমাদের হোটেল ছিল শহরের শিম্বাশি এলাকায়। নারিতা বিমান বন্দর থেকে ৭৫ কিলোমিটার। টেক্সিতে ১ ঘন্টার পথ। এই দীর্ঘ পথে আমাদের গাড়ি তেমন কোথাও দাঁড়াতে হয়নি। লাল বাতির জ্বলার কোন নিশানা খুঁজে পাইনি। কেননা আমাদের গাড়ি শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌছালেও রাস্তায় চার রাস্তার সংযোগ স্থলে দাঁড়াতে হয়নি। তবে শহরের ভেতর কিছু যানজট দেখা যায়। সেখানে লাল হলুদ নীল বাতির সুনিয়ন্ত্রণে শহর চলে। পাবলিক যানবাহন বেশি। ফুটপাতে অনেক মানুষ দল বেঁধে হাটে। আবার কোথাও যেন হারিয়ে যায়। তার মানে মেট্রোরেলের পাতালপুরীতে হারিয়ে যায়। আবার দেখা যায় দল বিশাল মানুষের বহর একসাথে ঝাঁক বেধে বের হচ্ছে। কারো সাথে তেমন কোন কথা বার্তা নেই। মনে হয় যেন নীরবচারি মানুষজন চলছে তাদের গন্তব্যে। কথা না বলার প্রতিজ্ঞা করেছে। আমাদের দেশ হলে কথার জ্বালায় হাটা যেত না।
আর একটা বিষয় আমাকে অত্যন্ত বিমোহিত করেছে। উন্নত দেশ। রাস্তায় গাড়ী বেশী চলবে তাইত স্বাভাবিক। তবে আমার কাছে মনে প্রাইভেট গাড়ীর চেয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বেশী। আর রাস্তায় গাড়ি চলাচল করার সময় কোন হর্ণের আওয়াজ কানে আসেনি। আমি একবারও কোন গাড়ির হর্ণ শোনেনি। অথচ আমাদের দেশে গাড়ির হর্ণের যন্ত্রনায় মানুষের কানে তালা লেগে যায়। অন্যদিকে টোকিও নগরীর বেশির মানুষের প্রধানতম যাতায়ত মাধ্যম মেট্রোরেল, মনোরেল, বুলেট ট্রেন। আধুনিক শহর কিংবা দেশের যাতায়তের জন্য ট্রেন অন্যতম মাধ্যম। আর আমাদের দেশের ট্রেনের চলাচল করা কত কঠিন তা ভুক্তভোগিরা জানে। আয়াতনের দিক দিয়ে টোকিও শহর বিশ্বে দ্বিতীয় হলেও চলাচল আর শহরের অন্যান্য অবকাঠামো বিবেচনায় বিশ্বে এক নম্বর হবে তার নিশ্চয়তা দেয়া যেতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×