somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টোকিও সফর – কিছু আইতল্যামি ২

১৮ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টোকিও ফ্যাশন ফেয়ার – এপ্রিল ০৪ থেকে এপ্রিল ০৬,২০১৮
----------------------------------------------------------------
যে কারণে টোকিও এসেছি তা নিয়ে কিছু কথা বলা আবশ্যক। এক সপ্তাহের জন্য টোকিও আসা। সকাল বেল ঘুম থেকে উঠে নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে যাওয়া। সন্ধা পর্যন্ত সেখানে কাজ করা। আবার সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে আসা। যেখানে সন্ধ্যা নামে বিকেল ৫.৩০টায়। আমাদের জাপান যাবার উদ্দেশ্যে ছিল বিশ্ব ফ্যাশন শো ২০১৮তে অংশগ্রহন। বাংলাদেশ থেকে যারা অংশ গ্রহন করে তাদের তত্ত্বাবধানে ছিল বিকেএমইএ আর রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো। নিট পোশাকের প্রস্তুত কারক, চামড়াজাত পণ্যের উৎপাদক(ব্যাগ, জুতা, বেল্ট) তাদের পণ্যের বাজারকে সম্প্রসারণের জন্য এই মেলায় অংশ নেয়। জাপানের ক্রয় ক্ষমতা, রুচি, চিন্তাভাবনা কে সামনে নিয়ে পণ্য উৎপাদকরা প্রতিবছর যায়। মেলায় অংশ নেয়। সেখানে আদতে আমদানি কারক, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা, সরবরাহকারি, প্রস্তুত কারক,নকশা কারকরা আসে। নিজেদের পছন্দমত পণ্য তৈরি করতে পারবে কিনা তা যাছাই বাছাই করে। উৎপাদকরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পণ্য সম্ভার সাজিয়ে রেখেছে। আমার কাছে এই মেলার প্রয়োজন আছে মনে হয়। তবে আমাদের দেশের প্যাভিলিয়নের জায়গা ছিল একটা কর্ণারের দিকে। সামনে প্রধান ফটকের কাছেই ছিল তাইওয়ান আর চীনের উৎপাদকরা। যারা এই মেলায় আসছে তারা প্রথমেই যাচ্ছে তাইওয়ান আর চীনাদের স্টলে। অন্যান্য আয়োজন, ইপিবি’র তৎপরতা ভালই মনে হয়েছে। মেলার শেষের দিনে বাংলাদেশ দূতাবাস আর ইপিবি মিলে ডিনারের আয়োজন করে। সেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন। তিনি জাপানীদের ব্যবসা সংক্রান্ত ও বাংলাদেশ নিয়ে তাদের কৌতুহল, সাহায্য সহযোগিতার দিক নিয়ে কথা বলেন। জাপানে ব্যবসা করার জন্য আমাদেরকে অত্যন্ত গুণগতমান সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে হবে। এতে কোন ধরনের গাফিলতি করা যাবে না। পরিবেশের প্রতি জাপানীরা অনেক সচেতন। আমাদের উৎপাদন হতে হবে পরিবেশ কে বাঁচিয়ে রেখে। পরিবেশ কে কিভাবে নিরাপদ রাখা যায় তা নিয়ে কাজ করতে হবে। পরিচ্ছন্নতা ঠিক রাখতে হবে। আমাদের পোশাকে শিল্পের পরিবেশ কে আরো পরিচ্ছন্ন, গুণগত মান উন্নত করা গেলে জাপানে আমাদের বাজার সম্প্রসারিত হবে বলেই আবার বিশ্বাস। আমাদের কাছে জাপানীদের সাদা কাল পোশাকের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়। স্কুল কিংবা অফিসগামি লোকজন কে দেখা যায়, সাদা সার্ট আর কাল ব্লেজার পরিধান করতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই দেখেছি। সাদা সার্ট আর কাল ব্লেজার গায়ে দেয়া লোকজন কে একসাথে হাটতে দেখলে যেন পেঙ্গুইনের ঝাঁকের মত মনে হয়। জাপানের ব্যবসা সম্প্রসারনের জন্য এই উদ্যোগ কতটা কাজে আসবে টা হুট করে বলা যাবে। বাংলাদেশে ব্যাপারে তাদের আগ্রহ তৈরি করা। জাপানের ক্রেতাদের মনোভাব কে জানার জন্য এই ফেয়ার কাজে আসবে।
বিগ সাইট, টোকিও ( টোকিও ইন্টারনেশনাল এক্সিভিশন সেন্টার)
জাপানে ফ্যাশন ট্রেড ফেয়ার যেখানে অনুষ্ঠিত হল সে জায়গার আলাদা একটা পরিচিতি আছে। বিগ সাইট নামে খ্যাত। বিগ সাইট আসলে কি? এখানে বিশাল আকৃতির কিছু হল রুম আছে। স্টীলের কাঠামো দিয়ে তৈরি। এই সাইটের কনভেনশন হল গুলো দুই দিকে বিভক্ত। মাঝখানে একটা রাস্তা আছে। রাস্তার দুইদিকে হবার কারণে রাস্তার উপর ফুট ওভার ব্রীজ আছে। আন্তর্জাতিক এক্সিভিশন হল হিসাবে ১৯৯৬ সাল থেকে চালু হয় হল। এর নান্দনিক কাঠামো, প্রদর্শনের জন্য অবকাঠামো, ব্যবস্থাপনা, সবকিছু মিলিয়ে মুগ্ধ হবার মত একটা জায়গা। আমাদের মেলা ছিল এই কনভেনসন সেন্টারের পশ্চিম দিকের একটা হলে। এই বিশাল উচ্চতার হল রুমে বিভিন্ন দেশের ভ্যানু সাজানো ছিল। বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন নামে আলাদা একটা কর্ণার ছিল। বিগ সাইটের পশ্চিম দিকের অংশে আছে চারটি হল। দুইদিকে সাজানো হল গুলোর মাঝখানে প্রবেশ পথ। উপরের কাঠামোতে আছে খাবারের ব্যসস্থা। দুইতলা থেকে পায়ে হাঁটে ব্রীজের উপর দিয়ে রাস্তার অপর প্রান্তে গেলে পূর্বদিকের অংশ। এই অংশে আছে রেল সংযোগ, টেক্সি, বাস স্টেশন। আর এখানে আসলে নজরে আসবে এই স্থাপত্যের নির্মান শৈলী।
টোকিও উপসাগরের কাছে রিংকাই ফুকেতুতিন এর আরিয়াক মিনামি জেলায় অবস্থিত এই কনভেন সেন্টার ও প্রদর্শনী কেন্দ্র। আনুষ্ঠানিকভাবে একে টোকিও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র বা টোকিও কোকাসাই দশজিয়া নামে পরিচিত। এই প্রধান আকর্ষণ হল স্বতন্ত্র কনফারেন্স টাওয়ার। জাপানে টোকিও বিগ সাইট এই নামটি অবশেষে অফিসিয়াল নাম হয়ে যায়। আসন্ন ২০২০ সালে সামার অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে জাপানে। এখানে কয়েকটি ইভেন্ট, যেমন কুস্তি, টেইকোন্ডো, ফেন্সিং ইত্যাদি আয়োজন করা হবে। টোকিও রেল স্টেশন থেকে ৩০ মিনিটে এখানে যাওয়া যায়। এই সম্মেলন কেন্দ্রের স্বতন্ত্র টাওয়ারের উচ্চতা হল ৫৮ মিটার। কংক্রিটের সাথে ইস্পাতের ফ্রেম ব্যবহার করে সর্বমোট ২৩০৮৭৩ বর্গমিটারে সমান আয়াতনের ফ্লোর আছে এই কনফারেন্স কেন্দ্রে। কেনভেনশন কেন্দ্রটি মোট তিনটি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত। প্রত্যেকটিতে আলাদা আলাদা রেস্টুরেন্ট এবং অন্যান্য সহায়তা সুবিধা আছে। টোকিও বিগ সাইট নির্মানে নানা উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। কাচ, ইস্পাত, টাইটানিইয়াম প্যানেলযুক্ত আছে টাওয়ারে। এই টাওয়ারে চারিটি পিরামিড সংযোগ করা হয়েছে বিপরীত আকৃতিতে। এই চারটি মিরামিড আসলে একটি সেট। দৃষ্টি নন্দন এই টাওয়ার। অনেক দূর থেকে দৃশ্যমান। এর প্রথম তলায় আছে ১১০০ আসনের অভ্যর্থনা হল। বিভিন্ন আকারের চারটি কনফারেন্স রুম। দ্বিতীয় তলায় আছে প্রবেশ প্লাজা, যা মূল প্রবেশ পথ এলাকা। পূর্ব আর পশ্চিমের উভয় দিক মিলে সর্বমোট দশটি এক্সিভিশন হল আছে এখানে। জাপানের বৃহত্তম কনফারেন্স হল এই বিগ সাইট। এই কনফারেন্স সেন্টারের পাশের পরিবেশ কে সুন্দর ছিমছাম করে সাজানো আছে। এখানে প্রতিদিন নানা মেলার আয়োজন হয়। সারা বছর ধরে চলতে নানা প্রদর্শনী। জাপানের নিজস্ব পণ্য সহ নানা দেশের পণ্যের মেলা চলে এখানে। আসলের এই কনভেনশন সেন্টারকে ঘিরে মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে এলাকাটি। নানা বয়সের মানুষের মিলন মেলা হয় এখানে। চিন্তা চেতনা, প্রযুক্তি, উদ্ভাবিত পণ্য, আগামী দিনের তরুণ উদ্যোক্তা, ছাত্র গবেষক, বিক্রয় কর্মী, উৎপাদক, সাধারণ ক্রেতা, স্থানীয় আর আন্তর্জাতিক সকল প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে চলে এই মেলা, অনুষ্ঠানাদি। এখানে ব্যবস্থাপনা থেকে আরম্ভ করে মেলার পরিসর দেখে অনেক কিছু জানার আছে; শেখার আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১৯
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×