শার্লক হোমসকে কে না চিনে। দুনিয়া কাঁপানো কন্স্যালন্টেন্ট ডিটেক্টিভ।কাল্পনিক চরিত্র হয়েও যিনি বাস্তবের চেয়েও বাস্তব হয়ে আছেন নানানভাবে।
সারা দুনিয়ায় শার্লক ভক্তদের ৯৫০ এরও বেশি ক্লাব আছে।যেখানে প্রতিনিয়ত শার্লককে নিয়ে আলাচনা,আড্ডা,গবেষণা করছে শার্লকের অগনিত পাগল ভক্ত।এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাবটির নাম 'বেকার স্ট্রীট ইরেগুলারস'। ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবের নামের পিছনের কাহিনি জানা যাক।শার্লকের অনেক গল্পে দেখা যায় ইনফরমেশনের জন্য শার্লক লন্ডনের কিছু ছোকরাদের কাজে লাগাতেন।যাদের পক্ষে শহরের অনেক খবর খুব সহজে জানা সম্ভব ছিল।কারন ওরা সব জায়গায় সহজে ভীড়ে যেতে পারতো।আর এদেরকে শার্লক ডাকতো 'ইরেগুলারস' বলে।সেখান থেকেই 'বেকার স্ট্রীট ইরেগুলারস' নামের উৎপত্তি।অন্যান্য ক্লাবগুলোর নামও ইউনিক টাইপ।যারা গ্রাহাম মুরের 'দ্য শার্লোকিয়ান" উপন্যাস পড়েছেন তারা জানবেন যে শার্লকভক্তদের কাছে এসব ক্লাবের মূল্য কতোখানি!আফগানিস্তান,জাপান,চেক প্রজাতন্ত্র,ভারতসহ অনেক দেশেই শার্লক ভক্তদের ক্লাব আছে।বাংলাদেশে এখনো নেই।তবে আজকে ছোট্ট একটা গ্রুপের মাধ্যমে তার সূচনা করা হলো।যার নাম 'দি বেঙ্গল ইরেগুলারস'।
বাঙ্গালী ইরেগুলারসরা অবশ্য ফেলুদা,ব্যোমকেশদের নিয়েও আলোচনা চালাতে পারে।তো সেই হিসেবে শার্লক নিয়ে একটু আলোচনা করি একজন বেঙ্গল ইরেগুলারস হিসেবে।
তবে ঠিক শার্লক হোমস নয়, বরং বাস্তবের রক্তেমাংসে গড়া এক লোকের কথা বলবো আজ।শার্লোকিয়ানদের অনেককেই যদি প্রশ্ন করি,শার্লক হোমস তো বাস্তবে নেই(যদিও রয়্যাল কেমেস্ট্রি সোসাইটির সদস্যপদ তার আছে!!),তবে কাকে কাছাকাছি শার্লক বলা যায়??নিশ্চয়ই স্যার আর্থার কোনান ডয়েল।ফেলুদার ক্ষেত্রে যেমন ফেলুদার স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়।তবে মজার ব্যাপার হলো,আর্থার কোনানকে না; শার্লক চরিত্রের মডেল হিসেবে যাকে মনে করা হয় তিনি হলেন ডাঃ জোসেফ বেল।
১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহন করা জোসেফ বেল ছিলেন একজন ফরেনসিক সার্জন এবং এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার।তার পর্যবেক্ষণ শক্তি ছিলো উল্লেখ করার মতো।নাবিকদের গায়ের উল্কি দেখে বলে দিতে পারতেন তারা কোথায় নৌঅভিযানে যাচ্ছে বা যাবে।মুখ দেখে কেউ ড্রিংক করে কিনা তাও বলে দিতেন।চেম্বারে আসা রোগীরা নিজেদের সম্পর্কে কিছু বলার আগেই তিনি তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তি গুনে তাদের ব্যাপারে অনেক কিছু জেনে যেতেন।কেউ মিথ্যে বললেও ধরে ফেলতে পারতেন বিভিন্ন সাইন দেখে।এবার অনেক মজার একটা কাহিনি দিয়ে শেষ করবো।
ভার্সিটিতে লেকচার দেয়ার সময় ডাঃ বেল নিজস্ব অভিনব পন্থা অবলম্বন করতেন।একদিন ক্লাসে একটা দুর্গন্ধময় পদার্থযুক্ত জার এনে সবার সামনে রাখলেন।এরপর এক আঙ্গুল ওই জারে ঢুকিয়ে মুখে পুরলেন।সাথে সাথে মুখ কুঁচকে উঠলেন।তারপর ছাত্রছাত্রীদেরও একই কাজ করতে বললেন।সবাই তা করলো এবং যথারীতি মুখ কুঁচকালো।
তিনি তখন হেসে সবাইকে বললেন,'তোমরা কেউই লক্ষ্য করোনি যে আমি জারে এক আঙ্গুল ঢুকিয়ে অন্য আঙ্গুল মুখে পুরেছিলাম'। এভাবেই তিনি ছাত্রদের অমনোযোগিতার পরীক্ষা নিয়েছেন।আর সেই সাথে মনোযোগ বাড়ানোর উপকারিতাটাও শিখিয়ে দিলেন।
১৯৭৭ সালে স্যার ডয়েল উনার অধীনে ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেছিলেন।ধারনা করা হয়,তার থেকে অনুপ্রানিত হয়েই ডাঃ কোনান তার কালজয়ী চরিত্র শার্লকের সৃষ্টি করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৫৭