রাজনৈতিক সংকট এদেশে নতুন কিছু নয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ও পরে ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখতে পাই সংকটের সচিত্র পরিসংখ্যান যার সূচনা ১৯৪৮ সালের রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণের সংকট দিয়ে শুরু হলেও স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর পর আজও তা অব্যাহত রয়েছে। দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট জাতীয় সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে। কারণ চলমান আন্দোলন(হরতাল ও অবরোধ) শুধু দুই বা ততোধিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে হলেও ভোগান্তিতে পড়েছে দেশের ষোল কোটি জনগণ। এঁদের কথা কেউ ভাবছে না, ভাবেনি, ভাববেও না। এখানে শুধুই নিজের স্বার্থসিদ্ধি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। তাইতো এখানে প্রতিদিন মানুষ মরছে পেট্রোল বোমায়, পুলিশ ও RAB এর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে। প্রতিনিয়ত মানুষ গুম হচ্ছে কিন্তু খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না লাশের শেষ চিহ্নাদি। বাতাসে সাধারণ মানুষের আর্তনাদ, আতঙ্ক ও হাহাকারধ্বনি ছাড়া অন্যকিছুই শোনা যায় না।
মূল কথায় আসা যাক। দেশে প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক সংকটের জন্য আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দোষারোপ করি। আর করেই ক্ষান্ত হই না বরং কার জন্ম বৃত্তান্ত কোথায় তা টেনে তুলতেও ভুল করি না। নীচ মানসিকতার পরিচয় দিতেই যেন আমরা সবচে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এমনকি বলে গর্ববোধও করি। দিন দিন যেন আমাদের মানসিকতা বস্তির সবচে নোংরা শব্দটির চেয়েও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যা সত্যি অবাক না করে পারে না! আমি এ সংকটের জন্য কোনো দলকে দোষারোপ করি না এবং করবোও না। তবে কি ভাবছেন জনগণের দোষ? অবশ্যই.... তবে সবশ্রেণির মানুষকে দোষ দেয়া নির্বুদ্ধিতার সমান। এর জন্য প্রধানত দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করবো বিভিন্ন পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে। পেশাজীবী বলতে শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কবি-সাহিত্যিক, ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য পেশাজীবী সম্প্রদায়। এসব বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় 'চাপ সৃষ্টিকারী' ব্যক্তি ও সংগঠন হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ তাঁদের কাজ সরকারের বিভিন্ন ভুলত্রুটিগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া এবং সেগুলো শুধরিয়ে জনকল্যাণমুখী কাজে সরকারকে বাধ্য করা। অতপর দেশে জনকল্যাণমুখী শাসনে আর্থ-সামাজিকসহ অন্যান্য উন্নয়ন সাধিত হবে। এমন জনকল্যাণকর বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী সম্প্রদায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দেখা গেলেও আমাদের দেশে কালে ভদ্রেও দৃষ্টিগোচর হয় না। কারণ আমাদের দেশের এসব বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় আজ তিন বা ততোধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কোনো একটি জাতীয় সমস্যায় তাঁরা এক হতে পারেন না আবার নিজস্ব জায়গায় থেকে ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়ে যান।
যদি এসব বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী সংগঠন এক হয়ে দেশের অকল্যাণকর সবকিছুর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতো তবে দেশে অরাজকতা অশান্তি আতঙ্ক থাকতো না। এঁদের একাংশ যখন সরকারের সকল অপকর্মকে সমর্থন করে তখন সরকার সেই অপকর্মকে আরো বেশি করে আত্মস্থ করে সামনে এগিয়ে যায় ফলে জনকল্যাণ রহিত হয়ে পড়ে। যা এ পর্যন্ত সব সরকারের সময় হয়ে এসেছে। যদি কোনো সরকার(পূর্ব ও পর) একজনও বুদ্ধিজীবীর সমর্থন না পায় তবে সে কাজ কখনই করবে না। আর এসব বুদ্ধিজীবী নামের কুলাঙ্গার গুলোর জন্য দেশের কোনো উন্নয়ন হয় না, হয়নি এবং হবেও না। সরকার প্রকৃতপক্ষে জনকল্যাণকর কাজ করতে চাইলেও এসব জ্ঞানপাপীদের জন্য কিছুই করতে পারেন না। কারণ নিজেদের স্বার্থসাধন করতে গিয়ে এঁরা সরকারকে পুতুল নাচন নাচায় ফলে সরকার অন্যের ক্রীড়নকে পরিণত হয়। ক্ষমতা না থাকলে এঁদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমানে পক্ষপাতহীন একজন বুদ্ধিজীবীকেও খুঁজে পাওয়া যায় না। যেদিন স্বার্থহীন বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীরা এই বাঙলায় জন্ম নিবে সেদিন-ই দেশের কল্যাণ হবে, মানুষ ভেদাভেদ ছাড়া আপন ভূমিতে শান্তি খুঁজে নিতে সক্ষম হবে। এর আগে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭