মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের কসম। পবিত্র যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ; একদিনের রোযা এক বৎসরের রোযার সমান; এক রাত্রের ইবাদত ক্বদরের রাত্রির ইবাদতের সমান; ঈদের রাত্রিটিও দোয়া কবুলের রাত। তাই প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, দিনে রোযা রেখে ও রাতে ইবাদত-বন্দেগী, তওবা-ইস্তিগফার ও দোয়া-মুনাজাত করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের খাছ রেযামন্দি হাছিল করা।
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘বান্দা যত ইবাদত করে থাকে তন্মধ্যে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ইবাদত মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে বেশি প্রিয়। প্রতিদিনের রোযা- এক বৎসর রোযার সমান; প্রতি রাত্রের ইবাদত ক্বদরের রাতের ইবাদতের সমান ফযীলতপূর্ণ।” (সুবহানাল্লাহ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, বান্দা যে সকল নেক আমল করে তন্মধ্যে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক পছন্দনীয়। হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আরাফার (৯ই যিলহজ্জের) রোযা বান্দার এক বৎসর পূর্বের ও এক বৎসর পরের গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, পাঁচ রাত্রে নিশ্চিত দোয়া কবুল হয়। রজব মাসের পহেলা রাত্র, বরাতের রাত্র, ক্বদরের রাত্র, দুই ঈদের দুই রাত্র। হযরত আবু উমামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈদের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাবে; যখন সমস্ত অন্তরগুলো মৃত থাকবে তখন তার অন্তর জীবিত থাকবে। সুবহানাল্লাহ! উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আদম সন্তানগণ ইয়াওমুন নহর বা কুরবানীর দিন যা আমল করে তন্মধ্যে রক্ত প্রবাহিত করা বা কুরবানী করা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক প্রিয়। হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই কুরবানী কী? রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমাদের দ্বীনী পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলেন, এর মধ্যে আমাদের জন্য কি ফযীলত রয়েছে? রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, দুম্বা ও ভেড়া অর্থাৎ পশমওয়ালা পশু সম্পর্কে কী বলেন? নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, দুম্বার ও ভেড়ার অর্থাৎ পশমওয়ালা পশুর প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, হে হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম! আপনি কুরবানী করুন। হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি শুধু আমার জন্যই? মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, না- এটা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত জারি থাকবে। হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের জন্য কুরবানীর মধ্যে কী ফযীলত রয়েছে? মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, দুনিয়াবী হায়াতে প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে দশটি নেকী দেয়া হবে, দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। সুবহানাল্লাহ! আর পরকালে কুরবানীর পশুর মাথার প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একজন হুর দেয়া হবে। শরীরের প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে একটি করে বালাখানা দেয়া হবে। প্রতিটি গোশতের টুকরার বিনিময়ে একটি করে পাখি দেয়া হবে আর প্রতিটি হাড়ের বিনিময়ে একটি করে বোরাক দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! কাজেই প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, যিলহজ্জ মাসের হক্ব আদায় করা, রোযা রাখা, রাতে ইবাদত-বন্দেগী করা, দোয়া করা আর খাছ করে ঈদের রাতে দোয়া করা, ঈদের দিন প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা। কারণ, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, আপনার রব তায়ালা উনার উদ্দেশ্যে (ঈদের) নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন। আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, কুরবানী করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করবে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। তাই প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, যিলহজ্জ মাসের প্রথম ৯ দিন দিনে রোযা রাখা ও রাতে ইবাদত-বন্দেগী, তওবা-ইস্তিগফার ও দোয়া-মুনাজাত করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিল করা।