somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেমকারান যুদ্ধঃ জাতীয়তাবোধের প্রথম চুম্বন

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খেমকারান যুদ্ধঃ যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব



১৯৬৫ সালের আগষ্ট মাসে ভা পাকিস্তান উভয়েই বুজতে পারল একটা যুদ্ধ অনিবার্য। যুদ্ধ কৌশল হিসাবে পাকিস্তান কাশ্মীরের শ্রীনগর অভিমুখে তার সেনাবাহিনী পাঠাতে থাকে। সেনাবাহিনীর কনভয়ের প্রথমে থাকে পাকিস্তানের তৎকালীন দুর্ধর্ষ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট, তারপর বালুচ রেজিমেন্ট, ফ্রন্টিয়ার ফোর্স এবং সবশেষে সব থাকে দূর্বল তৎকালীন বেঙ্গল রেজিমেন্ট যা মুলতঃ পুর্ব বাংলার জওয়ান দ্ধারা গঠিত।


ওদিকে ভারত তার বাহিনী শ্রীনগরে না পাঠিয়ে শিয়ালকোটের অরক্ষিত খেমকারান দিয়ে পাকিস্তানের লাহোর অভিমুখে মার্চ করায়। ওই মুহুর্তে শিয়ালকোট ছিল পুরাই অরক্ষিত। ঘঠনার আকস্মিকতায় পাকিস্তান হতচকিত হয়ে যায়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব নিজ হাতে সেনাবাহিনীর কমান্ড নেন। শ্রীনগর অভিমুখে মার্চ করা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মুখ ঘুরিয়ে তিনি খেমকারান অভিমুখে পাঠান।
শ্রীনগর অভিমুখে যে দল ছিল সব থেকে পেছনে সেই দলই হয়ে যায় এখন অগ্রবর্তী দল। মানে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন সবার আগে তার পেছনে যথাক্রমে ফ্রন্টিয়ার ফোর্স, বালুচ রেজিমেন্ট আর সর্বশেষে পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর মুখোমুখী হয় সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে অবহেলিত ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট। ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানী খেমকারান সেক্টরে মুখোমুখি হয় সপ্তদশ রাজপুত উনবিংশ মারাঠা লাইট ইনফ্যান্ট্রি, ষোড়শ পাঞ্জাব এবং সপ্তম লাইট ক্যাভালরির।


ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমান নামে বাংলাদেশের এক সূর্য সন্তান ইষ্টবেঙ্গল আলফা কোম্পানীর নেতৃত্বে ছিল। ক্যাপ্টেন জিয়ার ওপর নির্দেশ ছিল যতক্ষন না মুল বাহিনী মানে পাঞ্জাব রেজিমেন্ট আর বালুচ রেজিমেন্ট খেমকারান সেক্টরে না আসে তৎক্ষন যেন রক্ষনাত্মক ভুমিকা নেয়। কিন্তু যে মানুষ টা জন্ম নিয়েছে ইতিহাস তৈরী করার জন্য সে কিভাবে রক্ষনাত্মক ভুমিকা নেয়? প্রচন্ড আক্রমনাত্মক ভুমিকা নেয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর।


পদ্মা, মেঘনা, যমুনা পাড়ের দামাল ছেলেরা ঘুর্নিঝড়ের মত খেমকারান সেক্টরে ভারতীয় বাহিনীকে ঝড়া পাতার মত উড়িয়ে দিল। হতভম্ভ হয়ে গেল ভারতীয় বাহিনী। ব্রিটিশ দের দেয়া নন মার্শাল রেস থেকে এক নিমেষে হয়ে বাংলাদেশীরা বিশ্ব মানচিত্রে দামাল যোদ্ধা হিসাবে পরিচিত পেয়ে গেল। পাকিস্তানী পত্রিকা গুলো মেতে উঠল বাংলাদেশীদের বন্দনায়। ওই সময় যদি ক্যাপ্টেন জিয়ার নেতৃত্বে দ্বিতীয় ইষ্ট বেঙ্গল ভারতীয়দের গুড়িয়ে না দিত তবে পাকিস্তানের রাজধানী লাহোর সেই রাতেই ভারতের পদানত হয়ে যায়।


যুদ্ধে দুর্ধর্ষ সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য যেসব কোম্পানি পুরস্কৃত হয়, তার ভিতরে তার কোম্পানিটিও ছিল। পাকিস্তান সরকার তাঁকে 'হিলাল-ই-জুরাত' খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়াও তাঁর সেনাদল বীরত্বের জন্য দুটি 'সিতারা-ই-জুরাত' এবং নয়টি 'তামঘা-ই-জুরাত' পুরস্কার লাভ করে। যুদ্ধের এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয় ইষ্টবেঙ্গল থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সপ্তম ইষ্টবেঙ্গল পর্যন্ত ব্যাটেলিয়ান তৈরী হয়। যুদ্ধের পর পরই জাতীয় কবি নজরুলের “চল চল চল উর্ধ্বে গগনে” রনসঙ্গীতটি তাদের মার্চ পাষ্ট সঙ্গীত হিসাব স্বীকৃত পায়।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা মাওলানা ভাষানী, শেখ মুজিবুর রহমান সহ অন্যান্য নেতাদের পশ্চিম পাকিস্তানে আমন্ত্রন জানানো হয় সেনাবাহিনীর মার্চপাষ্টে সালাম গ্রহনের জন্য। আর মাওলানা ভাষানী তখন পশ্চিম পাকিস্তান কে “অলাইকুম আস সালাম” বলে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।


যুদ্ধ যে কখনো কখনো কখনো কোন জাতি গোষ্ঠী বা আঞ্চলিক মহাজাগরনের কারন হয় তার উদাহরন বিরল নয়। ১৯০৭ সালে জাপানীরা এক যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করলে ইউরোপিয়ানরা হতবাক হয়ে যায়, সৃষ্টি হয় প্রাচ্যের জাগরন তেমন ৬৫ র পাক ভারত যুদ্ধ ইষ্ট বেঙ্গলের বিজয় গাথা বাংলাদেশীদের সুপ্ত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য এক জাদুর কাঠি হিসাবে কাজ করে।


৬৫ র পাক ভারত যুদ্ধের আগে কোন রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে বাংলাদেশ যে আলাদা জাতিসত্ত্বা সে সন্মন্ধ্যে কোন ধারনাই ছিল না বা প্রমান পাওয়া যায় না। ৪৮ এর পর বিভিন্ন কর্মকান্ডে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ঘাত প্রতিঘাতে যে সব কর্মকান্ড দেখা যায় তাতে সব চিন্তা আর বাক্যে কিন্তু আলাদা জাতিসত্ত্বার ভাবনার কোন নজির নাই সব ই ছিল অখন্ড পাকিস্তান কে কেন্দ্র করে স্বায়ত্বশাষন পাওয়া। ৬৫ যুদ্ধের পরই বাংলাদেশীরা তাদের পৃথক ভুমির জন্য কল্পনা শুরু করে।

খেমকারান সেক্টরে ক্যাপ্টেন জিয়ার সাহসিকতা প্রদর্শনের আগে কি বামদল বা ডানদল বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ঘামায় নি। এ সময়ে যারা বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা করত তাদের কে এমন কি আওয়ামীলীগ ও পাকিস্তানের অন্যান্য দলের মত ভারত রাশিয়ার চর হিসাবে আখ্যায়িত করত। প্রচলিত ধারনা অনুযায়ী তাদের নেহেরু এইডেড পার্টি বলত।

৬৫ র যুদ্ধে বাংলাদেশীদের মধ্যে আলাদা জাতিসত্ত্বা জাতীয়তাবোধ তৈরী হয়। সেখান থেকেই মুলতঃ বাংলাদেশী হিসাবে নিজেদের অস্তিত্ত্ব কল্পনা করে বাংলাদেশী জাতিয়তাবোধের উদ্ভব। সেনাবাহিনীর এক অখ্যাত ক্যাপ্টেনের কর্মফল তৎকালীন জন নেতারা নিজেদের নামে জাহির করে জনগনকে স্বাধীনতায় উদ্ভুদ্ধ করে। মুলতঃ এই যুদ্ধই ভবিষ্যত বাংলাদেশের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করে।




(ক্যাপ্টেন নিমোর কাছ থেকে লিখে নেওয়া পোষ্ট)

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৩৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×