somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

হতচ্ছাড়া বালক
ব্লগিং করাটা আমার শখ, শখের মধ্য দিয়ে আমি অনেক কিছু জানতে চাই, জানাতে চাই, নিজে উপকৃত হবো এবং অন্যকেও আমার দ্বারা উপকৃত করার চেষ্টা করবো। অহেতুক ঝুট ঝামেলা আমার পছন্দ নয়, আমার লেখায় কোন অসংগতি দেখা গেলে ব্যাক্তিগত আক্রমণ না করে সুন্দরমার্জিত

বিনা বিচারে বন্দীদশা অপরাধ প্রবণতা বাড়ায়

২১ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


'রাখিব নিরাপদ,দেখাব আলোর পথ'

বাংলাদেশের কারাগারের স্লোগান। এই সম্পর্কে কয়েকটি কথা---------

আমার বন্দী জীবনের স্বল্প সময়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করার তারনা থেকেই এই লেখা।

কাজের কথায় আসি। কারাগার ভালো মানুষদের জন্য নয়,যারা সন্ত্রাসী,দাগী আসামী,সিরিয়াল কিলার, মদখোর, গাজাখোর প্রমুখ মানুষদের জন্যlতাদের জন্য। রাখিব নিরাপদ,দেখাব আলোর পথ কথাটিও তাদের জন্য প্রযোজ্য।

আমাদের রুমের তত্বাবধানের দায়িত্বে যে ছিল তার নাম ‘গোলাপ ভাই’,তার হাসি গোলাপের মতোই। লোক হিসেবে মন্দ না,কিন্তু আমাদের কমান্ড করতে গিয়ে যখন রেগে মেগে অগ্নিশর্মা হয়ে মুখ দিয়ে কাঁচা কাঁচা বাংলা ঝারতে থাকে তখন তাকে ভালো মানুষ বললে ভালো মানুষগুলোকে বেইজ্জত করা হবে! তোদের মা বোন, চৌদ্দ গোষ্ঠিরে......... করি।
একদিন সন্ধায় কিছু সময়ের জন্য কারাগারে বিদ্যুৎ চলে যায়, তখন কে বা কারা টয়লেট করতে গিয়ে অন্ধকারে কমোডের উল্টো দিক ফিরে বসে কাম সেরে চলে আসে, মল ভেতরে না পড়ে উপরে সামনের অংশে থেকে যায়। বিদ্যুৎ আসলে গোলাপ টয়লেটে গিয়ে এই নাজুক অবস্থা দেখে বাঘের ন্যায় হুংকার ছাড়তে শুরু করে, “কই তুই দেখি, বাপের বেটা হলে সামনে আয়, তোরে আজকে শিখাবো কেমন করে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। তোর মা কি তোরে জীবনে শিখায় নাই কেমন করতে টয়লেট করতে হয়? ফকিন্নির পুত, সামনে আয়”। দোষী যদি শনাক্ত না তখন খিস্তি খেউর শুনতে সবার সমান খারাপ লাগে, কেননা কখন কার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ হয়ে যায় বলা মুশকিল। আরো অনেক নিকৃষ্ট, রুচিবিবর্জিত গালাগালি করে যা লেখার অযোগ্য।
একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “ভাই আপনি কথা বলার সময় এতো খারাপ শব্দ ব্যবহার করেন কেন?” সে বলল-

ভাইরে আমি গত ২০বছর ধরে কারাগারে আছি,পরিবার পরিজন আমার কি অবস্থায় আছে কিছুই জানিনা,আমি আদৌ জানি না তারা বেঁচে আছি কি মরে গেছে! বাবা মা, বউ সন্তানের জন্য কখনো কখনো রাতের অন্ধকারে কষ্টে কলিজা ফেটে চৌচির হয়ে যায়, আমিওতো আপনাদের মানুষ! আমারও তো মন বলে একটা কিছু আছে! আমারও তো তাদের দেখতে ইচ্ছে করে, একটু সুখে দুঃখের কথা কলিজা ঠান্ডা করার স্বাদ জাগে, কিন্তু তাদের সাক্ষাত তো আমার জন্য এক দূর্লব সোনার হরিণ! তাহলে বলেন কেমন করে মেজাজ ঠিক রাখি? ভালো কথা কেমন করে মুখ দিয়ে আসে। এখন আমার মনে কারও জন্য ভালোবাসা নেই,মায়া দয়া নেই,হৃদয়টা পাষাণ হয়ে গেছে। তবুও আমি মানুষ, আমার পাষাণ হৃদয়ও মাঝে মাঝে কেঁদে উঠে, তাইতো আপনাদের পেছনে কলুর বলদ হয়ে খাটনি দেই, নিজের কষ্ট চেপে রেখে আপনাদের মুখে দুটো অন্ন তুলে দেই।

জানতে চাইলাম তার অপরাধ কি ছিল?
উত্তরে জানালেন,”বিনা বাতাসে তো আর নদীর পানি নড়ে না! অপরাধ একটা করেছি,তার জন্য শাস্তি আছে, শাস্তি দিয়ে দিক,মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন অথবা অন্য কোন সাজা। তা না করে বছরের পর বছর বিনা বিচারে আটকে রেখেছে,আর কতো বছর জেল খাটতে হবে কে জানে। জেলে আসার পর ভেবেছিলাম যদি ছেড়ে দেয় ভালো হয়ে যাবো,নিজেকে সংসোধন করে নেব,কিন্তু আমায় সে সুযোগ দেয়া হয়নি,যার কারণে ভিতরে থেকেই ক্ষোভ, প্রতিশোধ স্পৃহা,অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকে যার ফল স্বরূপ দেখতে পাচ্ছেন কখনো কখনো আপনাদের প্রতি খুব ক্ষীপ্ত হয়ে উঠি, কারও গায়ে হাত তুলে বসি ”। তার বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
আরো একজন ছিলেন আমাদের ম্যাট/পাহাড়াদার, নামটা এখন মনে পড়ছে না। মানুষ হিসেবে খুবই ভালো। কিন্তু গোলাপের মতই হঠাৎ হঠাৎ প্রচণ্ড খারাপ আচরণ করে বসেন। তবে গোলাপের মত এতো হতভাগা তিনি নন। তার সম্পর্কেও কৌতূহল হলে তিনি আমাকে তার গ্রেপ্তার হওয়ার সময়ের বর্ণনা দেন এইভাবেঃ “একটা মার্ডার কেসের আসামী হিসেবে পুলিশ আমাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে, এখানে ওখানে পালিয়ে পুলিশের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করি, ঠিক তখন আমার গর্ভবতী স্ত্রী ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়, বিপদ যখন আসে, চতুর্দিক থেকে আসে, আমার বেলায় হয়েছে তাই! গভীর রাতে ধান ক্ষেত দিয়ে লুঙ্গী হাঁটুর উপর তুলে সন্তানের মুখখানি একবার দেখে আবার আসবো বলে বিদায় নেই, এটাই ছিল শেষ দেখা। পরে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে। বিয়ের সময় আমার বয়স ছিল বাইশ, এখন মোট বয়স ৪২বছর, অর্থাৎ গত বিশ বছর ধরে কারাভোগ করছি। বাংলাদেশের গড় আয়ু সাধারণত ৬০বছর, অথচ আমাকে সাজা দিয়েছে ৭০বছর। যেখানে গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই আমার জীবন থেকে বিশ বছর চলে গেছে, বাকী থাকে ৪০ বছর, সেখানে সাজা ৬০বছর, আমি হাসবো নাকি কাঁদবো? ছেলেটা বিয়ে করেছে, বউ আর তার মাকে নিয়ে এক রকম বেঁচে আছে, নাহ! বাবা, আর বলতে পারছি না!”।

আমার উপলব্দিঃ মানুষকে দিনের পর দিন কারাগারে আটকে রেখে,সে যে কোন ধরণের অপরাধী হোক,কোন সংসোধন আশা করা যায়না,আমাদের পার্শবর্তী দেশে হত্যাকান্ড মামলাতেও সাজা দেয়া হয় পাঁচ বছর, ছয়বছর অথবা তার চেয়ে কিছু কম বা বেশি। এইটুকু শাস্তিকে তারা যথেষ্ট মনে করে, সাজা শেষে জীবন কে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েও নেয়। কিন্তু আমাদের দেশে যাবজ্জীবন, মৃত্যুদন্ড অনেক দেয়া হয়ে থাকে। এইতো গেলো বিচারে রায় পাওয়া ব্যক্তিদের কথা, কিন্তু আমি দেখেছি, উল্লেখযোগ্য কয়েদী বিনা বিচারে বছরের পর বছর কারাভোগ করছে, তাদের সংশোধন হওয়ার কোনো সুযোগই দেয়া হচ্ছে না। যদিও কারাগারের উদ্দেশ্যই হলো কিছু শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে অথবা আটক রেখে অপরাধীকে সংশোধনের সুযোগ দেয়া। সংশোধন না হলে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।

আমার মতে কিছু শাস্তি প্রয়োগ করে তারপর তাকে ছেড়ে দিয়ে সংসোধনের সুযোগ দেয়া উচিৎ,যদি তাই করা হয় তাহলে কারাভ্যন্তরে সাধারণ আসামীরা তাদের মানুষিক শারীরিক হয়রানির শিকার হবেনা,আলোর পথ প্রশস্ত হবে,কারাগার এবং বাংলাদেশ তাদের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। কেননা যারা বিনা বিচারে আটক থাকে, তারা ভাবে, আমাদের এখানেই পচে মরতে হবে, তখন ফকীরের ইয়াতিমের হালতে নয়, রাজার হালতেই বসবাস করবো, ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি, নতুন বন্দীদের উপর প্রভাব খাটিয়ে, ভয় ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা আদায় করে বিন্দাস চলাফেরা করবো।

বাস্তবেও তাই হচ্ছে, যারা ঢাকা কারাগারে একবার গিয়েছেন, তারা বুঝবেন, নতুন বন্দীদের সাথে পুরনো কয়েদীরা কি জঘন্য জমিদারী আচরণ করে! অবশ্য যাদের ছেড়ে দিলে পরিবেশ অনিরাপদ হওয়ার শংকাই বেশি, তাদের কথা ভিন্ন, তাদের জেলেই ভরে রাখা ন্যায়সঙ্গত। তবেই কেবল 'রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ' স্লোগানটি স্বার্থকতা খুঁজে পাবে।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×