somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

হতচ্ছাড়া বালক
ব্লগিং করাটা আমার শখ, শখের মধ্য দিয়ে আমি অনেক কিছু জানতে চাই, জানাতে চাই, নিজে উপকৃত হবো এবং অন্যকেও আমার দ্বারা উপকৃত করার চেষ্টা করবো। অহেতুক ঝুট ঝামেলা আমার পছন্দ নয়, আমার লেখায় কোন অসংগতি দেখা গেলে ব্যাক্তিগত আক্রমণ না করে সুন্দরমার্জিত

তালকে তিল তিলকে তাল বানানো রটনার শিকার মেয়েটি অপবাদের কষ্ট ভুলবে কেমন করে?

২৩ শে মে, ২০১৫ সকাল ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার চাচাতো বোন,বয়সে আমারা দুজন প্রায় সমান। তার বিয়ে হয়েছে ৪ বছর আগে। দুটি ছেলে সন্তান আছে। স্বামী সন্তান নিয়ে বেশ ভালভাবেই দিনাতিপাত করছে। তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা অনেক দিন ধরেই ভাবছি লিখব, আজ লিখলাম এবং শেয়ার করলাম, উদ্দেশ্য গুজব সম্পর্কে সবাইকে একটি সতর্ক বার্তা দেওয়া। আল্লাহ্‌ তায়ালার নিকট তাওফীক কামনা করছি।

সাত আট বছর আগে একদিন তার মায়ের সাথে কোনো নিয়ে বাদানুবাদ হয়,মা মেয়ে দুজনের মেজাজ প্রচন্ড গরম, কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তার মা হাতের ঝারু দিয়ে তার গায়ে আঘাত করে, এতে সে ক্ষিপ্ত হয় এবং ঘর থেকে বের হয়ে যায়,কিন্তু কখন কিভাবে ঘর থেকে বের হয় কেউ বলতে পারে না!

চাচি ভেবেছে,বরাবরের মতই রাগ করে হয়ত ঘরে শুয়ে আছে,সন্ধার পরেও যখন ঘরের ভেতর তাকে পাওয়া গেলো না, এমন কি বাড়িতে কারও ঘরেও খোঁজ মেলে না, তখন অজানা শঙ্কায় চাচীর বুকে মোচড় দিয়ে উঠে, ‘মেয়েটা তবে কোথায় গেলো?’ সারা গ্রাম,আত্মীয় স্বজন, সবার বাড়ীতে খোঁজ লাগিয়েও কোনো হদিস পাওয়া গেলো না। চাচীর দুশ্চিন্তা ক্রমশঃ বাড়তির দিকে,ভয়ে মুখ পাংশু বর্ণ ধারণ করলো,কারণ আগেই বলেছি চাচাতো মেজাজ বেতালা খারাপ, এইসব কখন কি দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে তা আগাম বলা যায় না, মেয়েটা কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসলনাতো!

মুহূর্তের মধ্যে খবরটি রাষ্ট্র হয়ে যায়,মানুষের মুখ দিয়ে খৈ ফুটতে শুরু করে,তালকে তিল তিলকে তাল করার মতো একটি ইস্যু পাওয়া গেলো। কেও বলল,’এতো বড় মেয়ে কোথায় যাবে,আরে দূর তোরা যতো কথাই বলিস, পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে,গ্রামের মান সম্মান সব গেলো’, কেও বলল, ‘কেও তুলে নিয়ে গেছে, তারপর মেরে ফেলেছে’, কেও বলল, ‘সন্ধ্যা বেলায় রাস্তায় একা পেয়ে জিনেরা নিয়ে গেছে, বিয়ে করার জন্য’। এই ভাবে চলতে থাকে তাদের মুখরোচক ধারণাপ্রসুত গাল গল্প।

কোথাও না পেয়ে ধরনা সবশেষে ধরনা দেয় দরবেশ,কবিরাজের কাছে। কবিরাজরা চাচাতো সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে যেভাবে বর্ণনা দিলোঃ

এক কবিরাজ বলল, “সে আর এখন মাটিতে নেই,পরীরা তাকে নিয়ে আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে,আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি,মেয়েটির শরীর ক্লান্ত,মুখ দিয়ে লালা পড়ছে,ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। মেয়েটিকে ফিরে পাবার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ, তবে মেয়েটির পরিবার যদি চায়,আমি আমার অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে মাটিতে নামিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারি”।

অন্য এক কবিরাজ,”একটি পুরুষ জিন তাকে বিয়ে করতে চায়,সন্ধায় রাস্তায় একা পেয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায়, এবং আমাদের বলেছে মেয়েটিকে সে বিয়ে করবে। বেশি দূরে নয়,বাড়ির আশে পাশেই তাকে নিয়ে জ্বিনেরা ঘুরা ঘুরি করছে”।

আরেক কবিরাজ বলল,”প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে,তারা বিয়ে করে অনেক দূরে অবস্থান করছে, আপাতত বাড়ি আসছে না, যখন অভাবে পড়বে, তখন মা বাবার পায়ের উপর এসে পড়বে”।

চাচি আমায় ডেকে নিয়ে বলল,বাবা,জীবনে কখনও কবিরাজের কাছে যাইনি,বিপদে পড়লে মানুষের ইমান হালকা হয়ে যায়,তুমিও একটু কোনো কবিরাজের কাছে গিয়ে দেখনা,সন্ধান পাওয়া যায় কিনা।

পরের সন্ধায় আমার ঘরের পিছনে জ্যাঠাত ভাই দেখতে পেলেন,চাচাতো বোনের মতো কেও বসে কাঁদছে, কাছে যেতেই কুকুর হয়ে পালিয়ে যায়। অদ্ভুত ব্যপার! মানুষ কুকুর হয়ে যাওয়া।শুনে সবাই কান্না কাটি শুরু করল।

এরই মাঝে বাড়ীতে এসে উপস্থিত হল এক ভাগ্নি,সে এমন এক খবর জানায়, শুনে সবাই সবাই থ হয়ে যায়, মুহুর্তেই সবার মুখে লাগাম পড়ে যায়,কুকুর হয়ে যাওয়া,আকাশে পরীর সাথে ঘুরে বেড়ানো,জ্বিনের সাথে বিয়ে,পালিয়ে বিয়ে সম্পন্ন,সকল গুজবের ডাল পালা লজ্জায় সংকুচিত হয়ে আসে লজ্জাবতী লতার মতো!

আসল ঘটনা হল,রাগ করে সোজা পাশের গ্রামে তার বান্ধবীর বাসায় চলে যায়। ভাগ্নি তাকে দেখেছে,কথাও বলেছে। ভাগ্নি তখন জানতোনা,তার খালাম্মা বাড়ি থেকে না বলে এসেছে।

মানুষের একটা প্রবণতা আছে, কোন কিছু শুনেই মন্তব্য করে বসা,ঘটনার সত্যতা যাচাই করার কোনো রকম চেষ্টা না করে শুধু শুধু গীবত পরনিন্দায় মেতে ওঠা,যা কখনো উচিৎ নয়। শুধুমাত্র ধারণার উপর ভিত্তি করে কারও বিরুদ্ধে দোষ বলে কয়ে বেড়ানো নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ। এইসব থেকে থাকা প্রতিটি মানুষের জন্য একান্তই জরুরী।

চাচাতো বোনটি বাড়ি ফিরে আসে,স্বাভাবিক জীবন যাপন করে বটে,আরোপিত অপবাদগুলো মন থেকে সহজে মুছে ফেলতে পারেনা,ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে যায়,চাপা কষ্ট বয়ে বেড়ায়, মাথায় ঘুরে ফিরে একটি প্রশ্ন কেন কিছু না করেও এতোগুলো অপবাদ বয়ে বেড়াচ্ছি?
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×