somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাজহাব মানা ও না মানা বিতর্কের চির অবসান (৩য় পর্ব)

২৪ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সার্বিক দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায় যে নবী সাঃ ও সাহাবী রাঃ দের যুগ হতেই ইজতিহাদ শুরু হলেও তাবে-তাবেঈনদের যুগে ইজতিহাদের প্রবলতা বৃদ্ধি পায় কারন তখন চলছিল ইসলামের স্বর্ণযুগের ৪র্থ পর্ব এবং নবী সাঃ গত হয়েছেন প্রায় একশত বছররের বেশী সময় হল, আর তখনকার যুগের পরিবেশ পরিস্থিতিও অনেক পরিবর্তন এসেছিল তাই নিত্য নতুন বিষয়ের দ্বীনি নিয়ম জানতে বেশি বেশি ইজতিহাদ জরূরী হয়ে পরে। ইসলামের স্বর্ণযুগের ১ম পর্ব ছিল নবী সাঃ জীবদ্দশায় আর ২য় পর্ব সাহাবী রাঃ এর যুগ বা চার খলিফার যুগ আর ৩য় পর্ব ছিল তাবেঈনগনের যুগ যা খলিফা ২য় উমর পর্যন্ত ছিল এর পরেও অনেক তাবেঈন জীবিত থাকলেও আসলে তা ছিল তাবে-তাবেঈনগনের যুগ বা ইসলামের উত্তম যুগের শেষ পর্ব এবং নবী সাঃ এর ভবিষ্যতবানী হতে এবং বাস্তবতা হতে আমরা জানতে পারি যে ইসলামের স্বর্ণযুগের ৪র্থ বা শেষ পর্বের পরই মিথ্যার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে এর পূর্বে মুসলিমদের মাঝে মিথ্যা বলতে কোন কিছু ছিল না বরং নবী সাঃ এর ওফাতের পর মুনাফিকরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ি জাল হাদিস বানিয়ে বলত নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাই ১ম দুই খলিফার আমল পর্যন্ত যত্র তত্র হাদিস বলা নিষিদ্ধ করা হয় এর পরে আলী রাঃ এর মৃত্যুর পর আহলে বায়াতদের অন্ধভক্তির কারনে অনেক শীয়ারাও জাল হাদিস বর্ননা শুরু করে এছারাও উমাইদের খিলাফত টিকিয়ে রাখতে তাদের সুবিধা হয় এমন হাদিস কেউ বর্ননা করলে তাদেরকে সরকারিভাবে পূরস্কার দেওয়া হত যেহেতু এখানে দুনিয়াবী স্বার্থ নিহিত ছিল তাই এসব হাদিস বর্ননাতেও বাড়াবাড়ি থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়। সুতারাং মিথ্যার শুরু অনেক পূর্ব হতেই শুরু হলেও তাবে-তাবেঈনগনের যুগের পর যে মিথ্যার প্রাদুর্ভাব এর কথা বলা হয়েছে তা হল অনেকটা এরকম যে- সাহাবী হতে তাবে-তাবেঈনরাই মুসলিমদের প্রধান ভুমিকায় থাকত আর উনাদের মাঝে কখনও মিথ্যা ছিল না কিন্তু তাবে-তাবেঈনদের যুগ শেষ হয়ে গেলে মুসলিমদের প্রধান ভুমিকায় যারা থাকত তাদের মাঝেও মিথ্যা ঢুকে পরে আর আম মুসলিমদের মাঝে তো পুর্ব হতেই মিথ্যার অস্তিত্ব ছিল। পূর্বেই বলা হয়েছে যে খলিফা ২য় উমরের সময় হতেই অফিসিয়ালী হাদিস সংকলন শুরু হয় কিন্তু হাদিস সংকলন শুরু হলেও হাদিসের মান নির্ধারন করা কিন্তু তখন থেকে শুরু হয়নি কারন তখনও মানুষ এত বেশী হাদিস জাল শুরু করেনি যদিও অনেক হাদিস জাল শুরু হয়েছিল আরও অনেক পুর্ব হতে।
যাইহোক তাবে-তাবেঈনদের যুগে ইজতিহাদ করার প্রবনতা যে বৃদ্ধি পেয়েছিল তা খুব সহযেই বুঝা যায় । তাবে-তাবেঈনদের যুগে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে, যার কাছে যতটুকু হাদিস পৌছাত তা দিয়েই নিত্য নতুন বিষয়ে কুরান অনুযায়ি ইজতিহাদ করে চলার চেষ্টা করত । তখনকার যুগেও কিছু তাবেঈন জীবিত ছিলেন যারা ইজিতিহাদের ক্ষেত্রে বেশ পান্ডিত্ব্যের পরিচয় দিয়েছিলেন এবং সুনামও কুরিয়েছিলেন । ইতিহাস থেকে যতদুর তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় যে ইসলামের স্বর্ণযুগের ৪র্থ পর্বে কুফার দিকে ইমাম আবু হানিফা রহঃ এবং মদীনার দিকে ইমাম মালেক রহঃ নামে এই দুইজন তাবেঈন ইজতিহাদের ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেন যদিও ইমাম হানিফা রহঃ এর জন্মই আগে হয়েছিল এবং তিনিই মুজতিহাদ হিসেবে বেশী আলোচিত হয়েছিলেন এজন্য ফিকহ শাস্ত্রের ক্ষেত্রে তাকেই বর্তমানে ইমামে আজম বলা হয় । আহলে সুন্নাহ আল জামাতের মুসলিমদের মাঝে তিনিই প্রথম দ্ব্বীনি বিষয়ে কুরান-সুন্নাহ অনুযায়ি ব্যাপক ফতোয়া দেয়া শুরু করেন কেননা ইসলামে ফতোয়ার প্রশ্ন তখনই আসে যখন কোন কাজ করতেই হচ্ছে অথচ ঐ কাজ হালাল না হারাম তা নির্ধারন করার জন্য সরাসরি কোন দলিল উপস্থিত না থাকে কিন্তু পূর্ব থেকেই যদি কুরানের আদেশ নিষেধসহ মৌলিক হাদিসগুলো ঠিকই জানা থাকে তবে উক্ত জরূরী কাজটি কতটুকু দ্বীন স্বিকৃত তা নির্দিষ্ট করতে কোন একটি সম্ভাব্য অভিমতে পৌছাতেই হয় ।
এখন প্রশ্ন হল তারই কেন অন্নান্যদের তুলনায় এত বেশী ফতোয়া দিতে হয়েছে যে তাকে ফিকহ শাস্ত্রের ইমামে আজম বলা হয়? এখন কিন্তু বর্তমান হানাফী ফিকহের আলেমরা শুধু একটি উত্তর দিয়েই ইতি টানবে যে- তিনি আসলে খুবই জ্ঞান-বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন । হানাফীদের উক্তিটি যদিও ভুল নয়, সত্যিই তিনি তাই ছিলেন কিন্তু এখানে সঠিক উত্তরের আরও অংশ আছে যেমনঃ- নবী সাঃ ওফাতের পর সাহাবীদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় কুরানসহ হাদিসগুলো প্রচার হতে থাকে কিন্তু মৌলিক হাদিস ছারা বেশীরভাগ হাদিসই সকল সাহাবীদের সম্মুখেই বলা হয় নাই আর তাই সব হাদিসই সকল সাহাবী রাঃ মুখস্ত করতে পারেন নাই তাই একেক সাহাবীর কাছে একেক ধরনের হাদিস মজুদ ছিল যদিও ইসলামের মৌলিক হাদিসগুলো সকল সাহাবীরই মুখস্তসহ আমলেও ছিল। কিন্তু সাহাবীগন তাবলীগের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিকে গমনের কারনে বিশেষ করে ঊসমান রাঃ এর সময়ে ফিতনার কারনে সাহাবীদের মাঝেই বিভিন্ন দল সৃষ্টি হয় আর সেই দলকে মোটামুটিভাবে চার ভাগে ভাগ করা যায় যেমন- ১ম দলে ছিলেন আলী রাঃ এবং ইবনে মাসঊদ রাঃ সহ আরো অনেক সাহাবী যাদের মুল কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল কুফা নগরী আর ২য় দলে ছিলেন মা আয়েশা রাঃ, তালহা রাঃ এবং যুবায়ের রাঃ সহ আরো অনেকে যাদের মুল কেন্দ্র রুপ নিয়েছিল মদীনাতে। আলী রাঃ রাজধানী মদীনা হতে কুফায় স্থানান্তরিত করেন নিজেদের মাঝেই ফিতনার ভয়ে আর ৩য় দলে ছিল মুয়াবিয়া রাঃ এর দল শাম বা সিরিয়াতে আর ৪র্থ দলে যেসব সাহাবীরা ছিলেন তাদের কেউ কেউ হিজাজ নগরী আবার কেউ কেউ ইসলামিক রাষ্ট্রের বিভিন্নদিকে এমনকি এর বাইরেও ছিলেন তাবলীগের উদ্দেশ্যে, এই ৪র্থ দলের সাহাবীগনেরা উসমান রাঃ এর শহীদের পর যেসব রক্তক্ষয়ী ফিতনা শুরু হয়েছিল সেসব থেকে দূরে থাকেন ফিতনা মনে করে কিন্তু ১ম দল আর ২য় দলের মাঝে জামালের যুদ্ধে অনেকেই নিহত হয় আবার ফিতনা দূর করতে ১ম দল ৩য় দলের সাথে সীফফিনের যুদ্ধে অবতীর্ন হয় ফলে সাহাবীদের মাঝে ৪টি দল তৈরী হয় আর সবচেয়ে আশ্চর্য্যের ব্যাপার হল এই চার দলের অবস্থানও চার জায়গায় আর এক দল আরেক দলের এলাকায় তেমন প্রাধান্য বিস্তার করতে পারত না বিধায় তিনারা খুব বেশী প্রয়োজন ছারা অন্য দলের এলাকায় যেত না যেমনঃ- কুফার সাহাবীগন হিজাজ এবং সিরিয়াতে যাতায়াত কমিয়ে দেন ঠিক একইভাবে হিজাজের সাহাবীগনও কুফা এবং সিরিয়াতেও যোগাযোগ সীমিত করে ফেলেন মুয়াবিয়া রাঃ ক্ষমতায় যাবার পর অর্থাৎ সাহাবীদের ২য় দলের সাথে মুয়াবিয়া রাঃ ক্ষমতায় যাবার পূর্বে ৩য় দলের সম্পর্ক কিন্তু ভালই ছিল। যাইহোক ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে অনেক সাহাবীরাই প্রধান কয়েকটি এলাকায় ফিক্সড থাকতে বাধ্য হন তাই সেখান থেকেই তিনারা দ্বীনের খেদমত করতে থাকেন এবং সেসব সাহাবীগনের অনুসারি তাবেঈনগনও সেসব এলাকাবেজডই হন বেশী, তাই এক এক এলাকায় এক এক ধরনের হাদিসের প্রচলন শুরু হয় যার কিছু হাদিস আবার এমন ছিল যে অন্য এলাকাতে তা একেবারেই অজানা, এমনকি ইসলামের মৌলিক জিনিস যেমন- নামাজের ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে কুফার দিকের মুসলিমরা যে তরিকায় নামাজ পড়ছে হিজাজের দিকের মুসলিমরা হুবহু সেই তরিকায় পড়ছে না যদিও উভয় তরিকাই নবী সাঃ হতে সাহাবীরা বর্ননা করেছেন। সুতারাং কুফা,সিরিয়া এবং হিজাজ এলাকায় উপরোক্ত কারনে আলাদা আলাদা হাদীস প্রচলিত থাকলেও হিজাজ নগরী যেহেতু সমস্ত মুসলিমদের জন্য ছিল উন্মুক্ত মিলন মেলা বিশেষ করে হজ্বের কারনে, তাই হিজাজ নগরীতে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক হাদিসের প্রচলন ছিল। এমনকি যেসব হাদিস শুধুমাত্র কুফা বা সিরিয়াতেই বেশী প্রচলিত সেসব হাদিসও হিজাজ নগরীতে ছিল অথচ হিজাজ নগরীতে প্রচলিত এমন কিছু হাদিসও ছিল যা কুফা বা সিরিয়াতে পাওয়া যেত না। অতএব আল-কুরানের একমাত্র সহী ব্যাখ্যা এই হাদীসভান্ডারের দিক দিয়ে হিজাজ নগরীর তুলনায় কুফা বা সিরিয়া বেজড মুসলিমরা ছিল ভালই দরিদ্র তাই উক্ত বিভিন্ন কারনে কুফা নগরীতে অনেক হাদিসেরই অনুপস্থিতি ছিল আর তাই সমর্থনুযায়ি বেশী হাদিস না পাওয়ায় কোন নতুন বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌছাতে কুরান এবং পূর্বে জানা হাদিস সমূহের উপর ভিত্তি করে বেশী বেশী ফতোয়া দিতে বাধ্য হতেন আবু হানিফা রহঃ ।
আবু হানিফা রহঃ এর বেশি বেশি ইজতিহাদের বড় কারন হিজাজের তুলনায় কুফায় হাদিসের সংখ্যা কম থাকা হলেও আরেকটি কারন ছিল, আর তা হল হিজাজ নগরীর পরিবেশ পরিস্থিতির তুলনায় কুফা নগরীর পরিবেশ পরিস্থিতি এমন ছিল যে সেখানে আবু হানিফা রহঃ খুব বেশী নিত্য নতুন বিষয় ও পরিবেশ পরিস্থিতির সম্মুখিন হচ্ছিলেন অথচ এসবের সমাধান বের করতে যে পরিমান হাদিস প্রয়োজন ছিল তা তিনি কুফায় বসে পাচ্ছিলেন না তাই তিনি বেশী বেশী ইজতিহাদ করতেন(শুনা যায় আবু হানিফা রহঃ কোন নতুন ফতোয়া দেয়ার পূর্বে সমস্ত কুরান কয়েকবার পড়ে নিতেন) পক্ষান্তরে মদীনার ইমাম মালেহ রহঃ অনেক ইজতিহাদ করলেও কিন্তু তা ছিল ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর তুলনায় কম কারন সেখানে কুফার তুলনায় হাদিসের ভান্ডার অনেক বেশী ছিল যার কারন উপরে উল্লেখ করা হয়েছে ফলে মালেক রহঃ অনেক সমাধান সরাসরি হাদিসেই পেতেন আবার মদীনায় তিনি কুফার মত এত বেশী নিত্য নতুন বিষয় বা পরিবেশ পরিস্থিতির সম্মুখিন হচ্ছিলেন না। আবার তিনি কুফা বা সিরিয়াতে না গিয়ে শুধুমাত্র মদীনায় বসেই কুফা- সিরিয়ার প্রচারিত হাদিসগুলোও সহজেই পেতেন কারন সবার হজ্ব উপলক্ষে হলেও হিজাজ নগরীতে অবশ্যই যোগাযোগ রক্ষা করতে হত। তবে ইমাম আবু হানিফা রহঃও হজ্বের জন্য এবং জ্ঞানার্জনে হিজাজ নগরীতে গমন করেন এবং অনেক দিন সেখানে সফরেও থেকেছেন তবুও স্থানীয়ভাবে থাকা আর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকার মাঝে অনেক তফাৎ রয়েছে তাই ইমাম মালেক রহঃ ই বেশী হাদিস পেতেন। তাই দেখা যায় ইমাম মালেক রহঃ বড় ধরনের মুজতিহাদ হলেও বিশুদ্ধ একখানা হাদিসগ্রন্থ "মুয়াত্তা ইমাম মালেক"ও রচনা করতে পেরেছেন, ইমাম আবু হানিফা রহঃও বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থ রচনা করেছেন তবে তা মুয়াত্তা মালেকের মতন নয় কিন্তু তাই বলে ইমাম আবু হানিফা রহঃ যে হাদিস শ্বাস্ত্রে দূর্বল ছিলেন এমন ভাবাটা বোকামী কারন বিশিষ্ট মুজতিহাদ হতে হলে অবশ্যই হাদিস শ্বাস্ত্রের উপরও বিশেষ জ্ঞানার্জন করতে হয় । আর ১মত কুরান ২য়ত হাদিস এর নির্ভর করেই প্রধানত মুজতিহাদগন ইজতিহাদ করে থাকেন মোটকথা এই দুই বিশিষ্ট তাবেঈন নিজ নিজ এলাকায় পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ি ও সমর্থ অনুযায়ি ঠিক কাজটাই করতেন কিন্তু একজন বাধ্য হয়ে বেশী বেশী ইজতিহাদ করে ফিকহ শাস্ত্রে ইমামে আজম পরিগনিত হলেও অন্যজনের যে ফিকহ শাস্ত্রে জ্ঞান কম ছিল এমনটাও ভাবা যাবে না বরং এই দুইজন তাবেঈনই নিজেদের সাধ্যমত ইসলামের খেদমত করে গেছেন। সুতারাং বুঝা গেল যে বর্তমান হানাফী মাজাবের লোকজন যে বলে থাকে ইমাম আবু হানিফা রহঃ বেশী বেশী ইজতিহাদ করে ইমামে আজমে পরিনিত হয়েছেন কারন তার জ্ঞান বুদ্ধি ছিল বেশী এই কথাটির সাথে আরো একটি কথা যুক্ত করতে হচ্ছে আর তা হল তিনি কুফায় বসে সহী হাদিসের সংখ্যা পেতেন কম এবং সেখানে ছিল নিত্য নতুন পরিবেশ পরিস্থি্তি, এই দুটি প্রধান কারনেই তিনি একটু বেশীই ইজতিহাদ করতে বাধ্য হতেন সুতারাং সেসময়ে জীবিত সকল তাবেঈনদের মাঝে একমাত্র তার জ্ঞান গরীমাই ছিল আকাশ পাতাল আর তাই তিনি ইমামে আজম এমন ভাবা অবশ্যই সীমা অতিক্রমের সামিল।
ইমাম আবু হানিফা রহঃ কোন নতুন বিষয়ে চুরান্ত ফতোয়ায় পৌছাতে ১মে সরাসরি কুরানে দলীল খুজতেন আর সেখানে না পেলে হাদিসের সরানপন্ন হতেন যেমন- যেসব মূলনীতির উপর ভিত্তি করে তিনি ইজতিহাদ করেছেন তা হল-"রাসুল (সাঃ)এরপক্ষ থেকে যা এসেছে তা মাথা ও চোখের উপর রাখি, যা সাহাবীদের থেকে এসেছে তা থেকে আমরা নির্বাচন করব। আর যা অন্যদের থেকে এসেছে তাতে তারাও মানুষ আমরাও মানুষ (আলামিন নুবালাঃ ৬/৪০১)"এছারা আখবারু আবি হানিফা ও আসহাবিহি" গ্রন্থে বলা হয়েছে- আর যদি আল্লাহর কিতাব কিংবা রাসুল (সাঃ) এর হাদীসের মধ্যেও সেটা না পাই তাহলে, সাহাবীদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তার বক্তব্য থেকে গ্রহণ করি এবং যার বক্তব্য ইচ্ছা পরিহার করি। তাদের বক্তব্য থেকে অন্য কোথাও যাই না। আর যখন বিষয়টি ইবরাহীম, শা'বী, হাসান, ইবনে সিরীন, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যেব (এভাবে আরও কয়েকজনের নাম গণনা করে বললেন) প্রমুখ ব্যক্তিদের কাছ থেকে আসে, তারা ইজতিহাদ করে আমিও তাদের মত ইজতিহাদ করি। (আখবারু আবি হানিফা- ১/২৪) আর তিনি হাদিসের মর্মার্থের দিকে নজর দিতেন বেশী আর তিনি ফতোয়া বের করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু আলেমের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করেছিলেন যাতে করে আলোচনা পর্যালোচনা করে মাসয়ালা বের করা যায় কারন ইসলামের নিয়ম হল পরস্পর আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌছানো, আর তা যদি কুরান হাদিসের বিরুদ্ধেও যায় কিন্তু সিদ্ধান্ত যদি নিজেদের পূর্বলব্ধ এলেমে থাকা কুরান হাদিস নির্ভর হয় তবেও আল্লাহ সুবঃ ক্ষমা করে দিবেন এমন দলীলও পাওয়া যায় নবী সাঃ এর মাদানী জীবনে, এমনকি আল্লাহর গজব এসেই পরেছিল প্রায়, বদরের যুদ্ধের পরে তবু শুধুমাত্র পূর্বের বিধান অনুযায়ি আলোচনা করে ফয়াসালা দেওয়ায় তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়।

তাবেঈনদের যুগে খিলাফতের সীমানা এতদূর পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল যে রাষ্ট্রের এক প্রান্তের কোন মুসলিম বড় কোন সমস্যার সমাধান বিশেষ করে যেসব সমস্যার সমাধান সংগে সংগেই জরুরী ছিল সেসব সমস্যার সমাধান নিতে খলিফার কাছে অল্প সময়েই পৌছানো দুরহ ব্যাপার ছিল তাই রাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় খলিফার নিয়োগকৃত যেসব গভর্নর-কেন্দ্রীয় ইমাম, কাজী বা বিচারক ছিল তাদের কাছ থেকে মুসলিমরা প্রাথমিক সমাধান নেয়ার চেষ্টা করত আর যদি সমস্যাটি হত শুধুই আধ্যাত্বিক ব্যাপার সম্বলিত অর্থাৎ আর্থ-সামাজিক বহির্ভুত তবে মুসলিমরা সাধারনত স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা ভাল দ্বীনি জ্ঞান সম্পন্ন কোন ব্যাক্তির সরানপন্ন হত। কিন্তু উমাইয়া খলিফাদের স্বৈরাচারির কারনে এবং উমাইয়া খলিফাদের নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় ইমাম, কাজী বা বিচারকরা মাত্রারিক্ত সরকারি মদদপুষ্ট হবার কারনে সত্যান্বেষি মুসলিমরা বেশিরভাগই নিরপেক্ষ জ্ঞানী আলেমদের কাছ থেকে দ্বীনি মতামত গ্রহন করত। এদিকে আবার আলী রাঃ এর অনুসারিদের সাথে উমাইয়া খলিফাদের দ্বন্দ্বের কারনে আলী রাঃ এর অনুসারির কাউকেই সরকারিভাবে মসজিদে ইমাম নিয়োগ দেয়া হত না আর শীয়ারাও উমাইয়াদের নিয়ন্ত্রিত ইমামদের ফলো করত না বরং তারা নিজেরা নিজেরাই ইমাম বানাত এবং তাদের কথাই মেনে চলত এমনকি কুফায় শীয়াদের প্রাধান্য বেশী থাকায় সেখানকার অনেক মসজিদও শীয়ারাই নিয়ন্ত্রন করত বিশেষ করে হোসেন রাঃ এর বংশদ্ভুত ইমামগনই শীয়াদের নেতৃত্ব দিত আর সেসব ইমামগনের শীষ্য অনেক সুন্নিরাও হত । আর সবচেয়ে বড় কথা হল তাবে-তাবেঈনগনের যুগ পর্যন্ত শীয়া-সুন্নীর মাঝে বড় ধরনের কোন আক্বিদাগত পার্থক্য ছিল না।

যাইহোক ইসলামের স্বর্ণযুগের ৪র্থ পর্বে এসে বেশীরভাগ মুসলিমরাই সরকারি মুফতির চাইতে নিরপেক্ষ জ্ঞানী আলেমদের কাছ থেকে দ্বীনি মতামত গ্রহন করতে বেশী আগ্রহী ছিল আর কুফার দিকে ইমাম আবু হানিফা রহঃ এবং হিজাজের দিকে ইমাম মালেক রহঃ ছিলেন তখনকার সময়ে ঠিক সেধরনেরই বিশিষ্ট আলেম এবং তাবেঈন। উনাদের সময়ে বেশীরভাগ তাবেঈনগনই গত হয়ে গিয়েছিলেন আর তাদের মত অল্প কিছু তাবেঈন জীবিত ছিল বলেই তাদের কাছে দ্বীনি বিষয়াদি জানতে মানুষ বেশী ভীর করত আর তিনারা সাধ্যমত চেষ্টা করতেন মানুষদের নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপারে কুরান সুন্নাহ অনুযায়ি ফতোয়া দিতে। এসব ফতোয়া নিত সাধারনত দুই শ্রেনীর মুসলিম ১ম শ্রেনীর মুসলিমরা ছিল সচেতন, আল্লাহভীরু এবং জ্ঞানী আর সাধারনত এই শ্রেনীর মুসলিমরাই ছিলেন তিনাদের শীষ্য বা তাবে-তাবেঈনগন, আর তাবে-তাবেঈনগন সেসব তাবেঈনগনের অন্ধ অনুসরন না করে বরং নিজেরাও বিভিন্ন বিষয়ে ফতোয়া দিতেন। ২য় শ্রেনীর মুসলিমরা ছিল আম মুসলিম আর এরা ইমামগনের ছিল অন্ধ অনুসারি। উক্ত দুই শ্রেনীর মুসলিম বাদেও তখনকার সমাজে আরও এক শ্রেনীর মুসলিম ছিল যাদের সংখ্যা তখনও তুলনামূলকভাবে নগন্যই ছিল যাদের সম্পর্কে পূর্বে বেশ ভালভাবে আলোচনা করা হয়েছে যে এরা ছিল তখনকার সময়ের পুরোহিত শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত । যাইহোক মুসলিমদের মাঝে কিভাবে হানাফী ফিকহের অনুসারির সংখ্যা বেশী হল এবং অন্নান্য ফিকহ থাকার পরও কিভাবে শুধুমাত্র লা-মাজহাবীসহ প্রধান ৫টি মাজহাব সুন্নীদের মাঝে জনপ্রিয়তা পেল তা ঐতিহাসিক দলীলসহ পরে আলোচনা করা হবে ইনশাহ আল্লাহ । আর এখন আলোচনা করা হবে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় মাজহাব আসলে মানা যাবে কিনা ?

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১২:৩১
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×