somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারা সন্ত্রাসী, কাদের নিষিদ্ধ করা দরকার?

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কিছু দিন ধরে দেশে নানা সহিংসতার জন্য জামাত শিবিরকে দায়ী করে তাদের নিষিদ্ধ করারা দাবী উঠেছে। আসলেই কি তারাই সন্ত্রাসী? না তাদের সন্ত্রাসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে? পড়ুন নিন্মর কথা গুলো তারপর বলুন তাদের নিষিদ্ধ করা দরকার কিনা?
আমাদের দেশে রাজনৈতিক আন্দোলন, রাজপথে সভা-সমাবেশ বা মিছিল নতুন কিছু নয়। এসব আন্দোলন-সংগ্রামে পুরনো রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময় ছিল সক্রিয়, তাদের ভূমিকা ছিল অগ্রগামী। রাজপথে সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও-এও পিছিয়ে নয় এই ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটি। পুলিশের উপর হামলা, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়া, বঙ্গভবনের অক্সিজেন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা, প্রকাশ্য রাজপথে সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যা, লাশের উপর নর্দন কুর্দন করা কোন দিক দিয়েই পিছিয়ে নেই আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দাবি আদায়ে কোনো কিছুকেই আওয়ামী লীগ বেআইনী ও অন্যায় মনে করে না।

'৯০-এর পরবর্তী বিএনপি সরকারের সময় রাজপথে আন্দোলন চলাকালে অফিসগামী কর্মকর্তাকে দিগম্বর করা, দাড়িটুপি পরিহিত ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা, ক্লিনিকে বোমাবর্ষণ, রাজনৈতিক দলের অফিসে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি রাজনৈতিক দলের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। ক্ষমতায় এসেও এসব থেকে পিছিয়ে নেই তারা। বিশেষ করে বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্য কুপিয়ে মারা, অস্ত্র হাতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা, পুলিশের সাথে যৌথভাবে অস্ত্রের মহড়া দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর হামলা, এসিড দেয়ার মতো নৃশংসা করতে একটুও দ্বিধা করেনি রাজনৈতিক কর্মী নামধারী সন্ত্রাসীরা। আওয়ামী লীগ নিজ দল ছাড়া অন্য কোনো দলকেও কখনই বরদাশত করেনি।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী গণহত্যার শিকার ১৭০ জনের মধ্যে শুধু জামায়াত ও শিবিরেরই রয়েছে ৯১ জন। এর আগে সরকারি দলের সন্ত্রাস ও পুলিশের গুলীতে শহীদ হয়েছে আরো ২০ জন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের গায়ে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে গুলী করেছে এবং চট্টগ্রামে পুলিশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন কর্মীর দু'চোখ তুলে ফেলে তাকে হত্যা করেছে। এ সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৩৬ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু এসবের পরও জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা অস্ত্র হাতে রাজনীতি করেছে, কাউকে মেরেছে এমন বিষয় দেখা যায়নি। বরং তারা বার বার মার খেয়েছে। এই সরকারের আমলে তাদের যেমন রাজপথে নামতে দেয়া হয়নি, অফিস করতে দেয়া হয়নি, এমনকি বাসায় থাকতে দেয়া হচ্ছে না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্র হত্যাকে কেন্দ্র করে শিবিরের বিরচদ্ধে দেশব্যাপী চিরচনী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। খুনি কে তার কোন খোঁজ করা হয়নি। আর সারা দেশে ছাত্রলীগ হত্যা সন্ত্রাস আর চাপাতির তান্ডবের বিরচদ্ধে কোন অভিযান হয়নি।

মানুষ আক্রান্ত হলে তখন আত্মরক্ষার জন্য সামনে যা পায় তা নিয়েই প্রতিরোধের চেষ্টা করে। পুলিশ জনগণের সেবক। তাদের দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু তারা তা না করে নির্যাতন নিপীড়ন চালালে জনগণের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে প্রতিবাদতো করতেই পারে।

গতকাল বুধবার দৈনিক আমারদেশ পত্রিকায় বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান লিখেন, ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে লেখা এক কলামে আবারও একটা সুপরামর্শ দিয়েছিলাম সরকারকে। লিখেছিলাম, ‘জামায়াতে ইসলামকে নিষিদ্ধ করতে যাবেন না, ছাত্রশিবিরকে বেশি ঘাঁটাবেন না, তাদের প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে দূরে ঠেলে দেবেন না, তার পরিণতি ভয়াবহ হবে।’ কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিয়ে আরও লিখেছিলাম, ‘নির্যাতন দিয়ে রাজনীতিকে নিস্তব্ধ করে দেয়া যায় না।’ দেখা যাচ্ছে, এ সরকারকে সৎ পরামর্শ দেয়া উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর মতোই পন্ডশ্রম।

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বেআইনী ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করার দাবী উঠেছে। পুলিশের সাথে সংঘাতের কারণে। কিন্তু আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ যেভাবে সন্ত্রাস করে, তাহলে তো তারা বহুবার নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। অতীতের কর্মকান্ড বাদ দিলেও, গত ৪ বছরের কর্মকান্ড পর্যালোচনা করলেই তারা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা হেন কাজ নেই, যা তারা করেনি। নিষিদ্ধ করলে তাদেরই আগে করতে হবে।

সরকার দলীয় অন্তঃকোন্দলে খুন ১৫৩

সেন্টার ফর মিডিয়া অ্যান্ড ট্রেনিং (এমআরটির) জরিপ মতে, ৪ বছরে খুন হয়েছে ১৬৫৮৯ জন, রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ৭৯০ জন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ৪৪৯ জন ও গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৫৮৮ জন । বর্তমান সরকারের ৪ বছরের খুনের গড় ১১ জনেরও বেশি। দলীয় পদ, ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের অন্তঃকোন্দল সংঘর্ষ বেধেছে জায়গায় জায়গায়। শুধু আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অন্ত:কোন্দলে নিহত হয়েছেন ১৫৩ জন। এ সরকারের আমলে আইন শৃংখলা বাহিনীকে রাজনৈতিক বিরোধী শিবিরকে দমনের জন্য অপব্যবহারের অভিযোগ উঠে সবচেয়ে বেশী । আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সরকারের চার বছরে মৃত্যু হয়েছে ৪৫৯ অর্থ্যাৎ প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ১০ জন বিচার বহির্ভূত হত্যা কান্ডের স্বীকার হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই কথিত ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টারে গুলীবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

গণহত্যার শিকার জামায়াত শিবিরের ৯১ নেতাকর্মী

গত ২৮ ফেব্রচয়ারি থেকে দেশব্যাপী গণহত্যা শুরচ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ২৮ ফেব্রচয়ারি বৃহস্পতিবারই ঘটেছে ৭০ জনের মৃত্যু। পরদিন এ সংখ্যা ৭৫-এ দাঁড়ায়। এর আগে ১১ দিনে মৃত্যু ঘটেছে ১৭ জনের। ৬ দিনে ১১৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। গত ১৩ মার্চ বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের গণহত্যার শিকার হয়েছে ১৭০ জন।

এর মধ্যে শুধু জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৯১ জন নেতাকর্মী গণহত্যার শিকার হয়। দেশব্যাপী পুলিশ ও বিজিবি এ গণহত্যা চালায় বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।

জামায়াত ও শিবিরের যারা গণহত্যার শিকার হয়েছেন, তাদের তালিকা নিচে দেয়া হলো:

রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল : সাঈদ রচবেল (ঠাকুরগাঁও শিবির কর্মী), মুজাহিদ (দিনাজপুর শিবিরের সাথী), ফয়েজ উদ্দিন (দিনাজপুর জামায়াত কর্মী), আতিকুল ইসলাম (নীলফামারী জামায়াত কর্মী), ফরিদ উদ্দিন (গাইবান্ধা জামায়াত কর্মী), জুয়েল মিয়া (গাইবান্ধা জামায়াত কর্মী), মজনু মিয়া (গাইবান্ধা জামায়াত কর্মী), মশিউর রহমান (রংপুর শিবিরের সাথী), মাহমুদুল হাসান (রংপুর শিবিরের সাথী), সাদিকুর রহমান (রংপুর শিবির কর্মী), আশিকুর রহমান আপন (রংপুর শিবির কর্মী), আজমল হুসাইন (রংপুর শিবির কর্মী), শাহেদ মিয়া (রংপুর জামায়াত কর্মী), মামুন মিয়া (রংপুর জামায়াত কমী)র্, জাহাঙ্গীর আলম (রংপুর জামায়াত কর্মী), ফরমান আলী (জয়পুরহাট, জামায়াত কর্মী), হিসাব উদ্দিন (জয়পুরহাট শিবির কর্মী), মজনু রহমান (জয়পুরহাট জামায়াত কর্মী), মহিদুল ইসলাম (জয়পুরহাট জামায়াত কর্মী), নাসির উদ্দিন (জয়পুরহাট, জামায়াত কর্মী) আবদুল হাকীম (জয়পুরহাট জামায়াত কর্মী) বদিউজ্জামান (জয়পুরহাট শিবিরের সাথী),

আমিরচল ইসলাম (রাজশাহী জামায়াত কর্মী), মুজাহিদ (রাজশাহী জামায়াত কর্মী), রফিকুল ইসলাম (রাজশাহী শিবির কর্মী), নাসির উদ্দিন (চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবির কর্মী) আবদুর রহীম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ জামায়াত কর্মী), আলাউদ্দিন (জামায়াত কমী পাবনা), সিরাজুল ইসলাম (জামায়াত কমী পাবনা), রচহুল আমীন (সিরাজগঞ্জ শিবির কর্মী), ওয়ারেছ আলী (সিরাজগঞ্জ শিবির কর্মী), মোক্তার হোসাইন (সিরাজগঞ্জ শিবির কর্মী), মাহমুদুর রহমান (সিরাজগঞ্জ শিবির কর্মী), মাহফুজুল হক (সিরাজগঞ্জ শিবির কর্মী), দুলু মিয়া (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), জিয়াউর রহমান (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), বাবু মিয়া (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), আলমগীর হোসাইন (বগুড়া শিবিরের সাথী), শহীদুল ইসলাম (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), হাফিজ উদ্দিন (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), আবদুল­vহ কাফী (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), আকলিমা বেওয়া (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), মরজিনা বেগম (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), আরজিনা বেগম (বগুড়া জামায়াত সমর্থক), বাদল মিয়া (বগুড়া জামায়াত কর্মী), টিটো মিয়া (বগুড়া জামায়াত কর্মী), আবু রূহানী (বগুড়া শিবিরের সদস্য), আবদুল­vহ (বগুড়া শিবির কর্মী), মিজানুর রহমান (বগুড়া জামায়াত কর্মী), সাবেত আলী (বগুড়া জামায়াত কর্মী), মোঃ আলাল (পাবনা জামায়াত সমর্থক), সিরাজুল ইসলাম (পাবনা জামায়াত সমর্থক), মুজাহিদ হোসেন (রাজশাহী), রফিকুল ইসলাম (রাজশাহী)।

ঢাকা অঞ্চল: আবদুর রাজ্জাক (গাজীপুর শিবিরের সদস্য) ও নাসির উদ্দিন (মানিকগঞ্জ জামায়াত কর্মী)।

সিলেট অঞ্চল: আজগর আলী খান (সিলেট শিবিরের সদস্য), লোকমান (মৌলভীবাজার জামায়াত সমর্থক)।

কুমিল­v ও নোয়াখালী অঞ্চল: আলাউদ্দিন (কুমিল­v জামায়াত সমর্থক), ইব্রাহিম (জামায়াত কর্মী), কুরবান আলী (নোয়াখালী জামায়াত সমর্থক), শহিদুল­vহ (নোয়াখালী জামায়াত সমর্থক)।

খুলনা অঞ্চল: শহিদুল ইসলাম (ঝিনাইদহ জামায়াত কর্মী), ইকবাল হুসাইন তুহিন (সাতক্ষীরা শিবির কর্মী), আমান (সাতক্ষীরা জামায়াত কর্মী), রবীউল ইসলাম (সাতক্ষীরা জামায়াত কর্মী), আবুল হাসান (সাতক্ষীরা জামায়াত কর্মী), আলী মোস্তফা (সাতক্ষীরা শিবিরের সাথী), শাহীনুর রহমান (সাতক্ষীরা শিবিরের সাথী), মাহবুবুর রহমান (সাতক্ষীরা শিবিরের সাথী), আরিফ বিল­vহ (সাতক্ষীরা শিবিরের সাথী), রচহুল আমীন (সাতক্ষীরা শিবিরের সাথী), শামসুর রহমান (সাতক্ষীরা), সাইফুল­vহ (সাতক্ষীরা), মাহমুদুল হক (বাগেরহাট)।

চট্টগ্রাম অঞ্চল: ইমরান খান (চট্টগ্রাম শিবিরের সাথী) মোঃ আবিদ (চট্টগ্রাম শিবির কর্মী) মোঃ শাবিবর (চট্টগ্রাম জামায়াত কর্মী), মোঃ আজমত (চট্টগ্রাম জামায়াত কর্মী), হাফেজ হারচন (চট্টগ্রাম জামায়াত কর্মী), উসমান (চট্টগ্রাম জামায়াত সমর্থক), আবু তাহের (চট্টগ্রাম জামায়াত সমর্থক), শহীদুল­vহ (চট্টগ্রাম জামায়াত সমর্থক), মিছবাহ উদ্দিন (চট্টগ্রাম জামায়াত সমর্থক), নূরচল হক (কক্সবাজার জামায়াত কর্মী), আবু সালেহ (কক্সবাজার জামায়াত সমর্থক), আবদুর রশিদ (কক্সবাজার জামায়াত কমী)র্, তোফায়েল (কক্সবাজার জামায়াত কর্মী), সাজ্জাদুর রহমান (কক্সবাজার শিবির কর্মী)।

৪০ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতার আসামী ৫ লাখ

জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান গত ৬ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ১৪ দলীয় জোট সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আক্রোশের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। ইসলামী আন্দোলন করার কারণেই সরকারের চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। এ সরকারের ৫৩ মাসের শাসনামলে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪০ হাজার নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। তাদের বিরচদ্ধে ১৮ হাজার মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫ লাখ নেতা-কর্মীকে আসামী করেছে। ৪০০ জন নেতা-কর্মীকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। দুশ’ মহিলা ও ছাত্রীকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে ১৭৩ জন মহিলাকে রিমান্ডে নিয়ে সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলী করা হয়েছে। অনেকের পায়ে গুলী করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। এ সরকারের শাসনামলে মোট ২ শতাধিক মানুষকে গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের ইসলামবিরোধী অবস্থান, নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষকতা ও আল­vমা সাঈদীর মুক্তির দাবিতে গড়ে ওঠা জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে ২৮ ফেব্রচয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত গুলী করে হত্যা করা হয়েছে ১৪৭ জনকে। ১০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছে। অসংখ্য পরিবারকে সর্বস্বান্ত করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জে আলেমসহ নিহত ৪ : ইসলাম ধর্ম অবমাননা ও হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদে ইসলামী দলগুলোর ডাকে গত ২৪ ফেব্রচয়ারি রোববারের হরতালে পুলিশের গুলীতে মাদরাসা শিক্ষকসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। গুলীবিদ্ধ হয়েছে নারী-শিশুসহ ২০ জন। প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীরা জানান, হরতাল সমর্থনে সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসেন। তারা সিংগাইর-মানিকগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে †¯­vগান দেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এলাকাবাসীকে লক্ষ্য করে পুলিশ কয়েকশ’ রাউন্ড গুলীবর্ষণ করে। এতে চারজন নিহত হন। তারা হলেন গোবিন্দল মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ শাহ আলম (২৫), নাজিম উদ্দিন (২৬), আলমগীর (২৫) ও মাওলানা নাসির উদ্দিন (৩০)। মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলী মিয়া ওইদিন সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫০ রাউন্ড টিয়ারশেল এবং ৩০০ রাউন্ড গুলীবর্ষণ করা হয়।

টাঙ্গাইলে নিজেদের দেয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে ছাত্রলীগ কর্মী সুমন

টাঙ্গাইল শহরের ভিক্টোরিয়া সড়কে অবস্থিত জামায়াত-সমর্থক এক ব্যক্তির কম্পিউটার সেন্টারে আগুনে পুড়ে নিহত ব্যক্তি ছাত্রলীগ কর্মী বলে জানা গেছে। ইমরান নামে ওই জামায়াত-সমর্থকের দোকান পুড়িয়ে দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিজেরাই পুড়ে ছাই হয়েছে। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ছাত্রলীগের কর্মী সুমন সাহা ছাড়াও অন্তত ১০ নেতা-কর্মী অগ্নিদগ্ধ হয়। অপরদিকে এ ঘটনায় ২৪ ফেব্রচয়ারি সকালে অজ্ঞাত ৮০ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক হোসেন রাজিব।

গত ২৩ ফেব্রচয়ারি বিকালে শহরের ভিক্টোরিয়া সড়কে কসমস কম্পিউটার সেন্টারে অগ্নিকান্ডের নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় ২০ থেকে ২৫ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী জয়বাংলা †¯­vগান দিয়ে কম্পিউটার সেন্টারে ঢুকে পড়ে। কসমস কম্পিউটার সেন্টারের মালিক শওকত হোসেন ইমরান জানান, শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও ভিক্টোরিয়া সড়কে আরও দুটি কম্পিউটার সেন্টার রয়েছে। এ দুটি কম্পিউটার সেন্টারের সঙ্গে তার দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক বিরোধ চলছিল। ওই দুই সেন্টারের মালিকরা এর আগে বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডে তার বিরচদ্ধে দুবার মিথ্যা অভিযোগ জমা দিয়েছে। এ কারণে কসমস সেন্টার বর্ধিত বা স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। বিরোধপূর্ণ ওই দুই কম্পিউটার সেন্টারের মালিকের ইন্ধনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ইমরান জানান, ঘটনার সময় সেন্টারে পাঁচ শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষক ছিলেন। তাদের বের করে দিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করা হয়। তারপর আগুন ধরিয়ে দিলে নিজেদের দেয়া আগুনেই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ঝলসে যায়।

অগ্নিকান্ডে ছাত্রলীগের কর্মী সুমন সাহা ঘটনাস্থলেই পুড়ে মারা যায়। সে বাসাইল উপজেলার ভোরপাড়া গ্রামের জয় সাহার ছেলে। আহতরা হলো জেলা ছাত্রলীগের নেতা শহীদ সিদ্দিকী, শুভ, বাবু, রবিন, দ্বীপোজ্জ্বল, সবুজ ও সৌরভসহ অন্তত ১০ জন। এদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় পাঠানো হয়।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে পুলিশের সামনে পত্রিকা অফিসে হামলা

গত ১২ ফেব্রচয়ারি দৈনিক নয়াদিগন্তে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। কেউ কেউ নয়া দিগন্তের ব্যাপারে কয়েকদিন ধরে উস্কানিও দিয়ে আসছিলো। ‘জয়বাংলা' †¯­vগান দিয়ে দুপুরের দিকে মতিঝিলস্থ ইডেন কমপে­ক্সের নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে এবং বিকেলে জুরাইনের ছাপাখানায় দুর্বৃত্তরা আগুন লাগায়। এ সময় ব্যাপক ভাংচুরও করে তারা। পুলিশের উপস্থিতিতেই নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। আগুনে নয়া দিগন্তের একটি গাড়ি পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যায় এবং প্রেসের কাগজ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

এদিকে চট্টগ্রামে পুলিশের উপস্থিতিতে আমার দেশ অফিসে ব্যাপক ভাংচুর-লুটপাটের পর আসবাব ও গুরচত্বপূর্ণ কাগজপত্র জ্বালিয়ে দিয়েছে ছাত্র ও যুবলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। তাদের রোষ থেকে রেহাই পায়নি দিগন্ত টিভি ও দৈনিক সংগ্রাম অফিসও। অফিসে হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়ে আমার দেশ-এর পক্ষে দুপুর থেকে নিরাপত্তার কথা বললেও পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি; বরং হামলার শুরচতে কলাপসিবল গেট ভাঙার সময় থেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কোতোয়ালি থানার ওসি সুদ্বীপ দাশ, এসআই উৎপলসহ শতাধিক পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাওয়ার এক ঘণ্টা পর শতাধিক পুলিশ পাহারায় জামালখানের কথিত গণজাগরণ চত্বর থেকে সশস্ত্র অবস্থায় মিছিল বের করে বামদলসহ ছাত্র-যুবলীগের তিন শতাধিক ক্যাডার। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু †¯­vগান দিয়ে আমার দেশ-এ হামলা চালানো হয়। এ সময় তারা আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ সব সাংবাদিককে জবাই করে হত্যার হুমকি দেয়। সন্ত্রাসীরা ভবনের দু’জন নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর করে নিচতলার কলাপসিবল গেট ভেঙে দ্বিতীয় তলায় আমার দেশ অফিসে হামলা চালায়। তারা দুটি দরজা ভেঙে অফিসে প্রবেশ করে।

প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে অফিসে তান্ডব চালায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অফিসের ভেতরে থাকা চারটি ল্যাপটপ, চারটি ডেক্সটপ কম্পিউটার, বিজ্ঞাপন বিভাগের ক্যাশ ড্রয়ারসহ সংবাদকর্মীদের ডেক্স ভেঙে লক্ষাধিক টাকা লুট করে তারা। অফিস থেকে পত্রিকার ফাইলসহ আসবাবপত্র বাইরে বের করে সেসবে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় দু’শতাধিক পুলিশ হামলাকারীদের নিরাপত্তা দেয়। একই ভবনে অবস্থিত অন্যান্য পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের সংবাদকর্মীরা সন্ত্রাসীদের তান্ডব নিয়ন্ত্রণ করতে বারবার পুলিশের সহায়তা চেয়েও ব্যর্থ হন।

আমার দেশ অফিসে হামলার আগে বিকাল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এলাকার কথিত গণজাগরণ মঞ্চ এলাকা থেকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জঙ্গি মিছিল বের করে প্রথমেই তারা হামলা চালায় চেরাগীপাহাড় এলাকায় সংগ্রাম অফিসে। সংগ্রামে তান্ডব শেষে একই এলাকার দিগন্ত টিভি অফিসে যায়। একই কায়দায় দিগন্ত অফিস তছনছ শেষে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে সর্বশেষ হামলা চালানো হয় আমার দেশ-এ।

যাত্রাবাড়ীতে ইসলামী সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে হামলা

মহান একুশে উপলক্ষে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় আয়োজিত ইসলামী সঙ্গীত অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা অনুষ্ঠানের মঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করে। গত ২১ ফেব্রচয়ারি বিকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের তান্ডবে আয়োজকরা শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি বাতিল করতে বাধ্য হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যাত্রাবাড়ীর মীরহাজীরবাগ চৌরাস্তায় বিকাল ৪টায় একুশে ফেব্রচয়ারি উপলক্ষে কলরব নামে একটি শিল্পীগোষ্ঠী ইসলামী সঙ্গীত, ভাষা শহীদদের মাগফিরাত কামনা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।

বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে পুলিশ ও স্থানীয় ছাত্রলীগ উপস্থিত হয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। তারা অনুষ্ঠানস্থলের মঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করে। তখন সেখানে থাকা কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজকরা পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে ভাংচুরের কারণ জানতে চাইলে তারা তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পরে পুলিশ কলরবের শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজকদের গ্রেফতারের হুমকি দেয়। ছাত্রলীগ নেতারা আয়োজকদের গালিগালাজ করে এই বলে যে, জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। কোনো ইসলামী অনুষ্ঠান করতে দেয়া হবে না বলেও তারা জানিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর উপদেষ্টা রশীদ আহমেদ ফেরদৌস জানান, ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে পুলিশ ও স্থানীয় ছাত্রলীগ অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। তারা মঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল ভাংচুর চালায়।

বিভিন্ন স্থানে ইসলামী ব্যাংক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা

দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের মালিকানাধীন ও পরিচালিত প্রতিষ্ঠান এবং ইসলামী ব্যাংকে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। বগুড়া শহরে ১৪ দলের মিছিল থেকে ইসলামী ব্যাংকের বুথে হামলা, ভাংচুর এবং মিছিলের পেছনে ফাঁকা গুলীবর্ষণের পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মিছিলকারী ছাত্রলীগ কর্মীরা শহরের কয়েকটি রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে নবাববাড়ী রোডের ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথে হামলা চালায়। তারা বুথটি বন্ধ পেয়ে তার সাইনবোর্ড ইটপাটকেল ছুঁড়ে নষ্ট করে। এ সময় পুলিশ সেখানে নীরব ছিল।

সরিষাবাড়ীতে ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ তারাকান্দি সারকারখানা শাখায় শুক্রবার রাতে সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাংকের দরজা, জানালা, সাইনবোর্ড ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সিলেটের বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগ কর্মীরা জামায়াতে ইসলামীর মালিকানাধীন পাঁচটি দোকান ভাংচুর ও তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। নওগাঁয় নয়া দিগন্ত, আমার দেশ, সংগ্রাম, ইনকিলাবসহ ঢাকা ও বগুড়া থেকে আসা সব পত্রিকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একদল যুবক। শনিবার বেলা ১১টায় শহরের নওজোয়ান মাঠের সামনে পত্রিকাবাহী গাড়ি থেকে প্যাকেট নামিয়ে সড়কের ওপর নিয়ে আগুন দেয় তারা। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী শহরে যানজট সৃষ্টি হয়।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা জামায়াত অফিস ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগ। দেশব্যাপী ১৪ দলের বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৩ দলবিহীন আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে পাথরঘাটায় মিছিল বের করে। মিছিলটি ইমান আলী সড়কের মাথায় অবস্থিত জামায়াত অফিস অতিক্রমকালে শহিদুল­v, ওয়ালিদ মক্কি ও মারচফের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কিছু উচ্ছৃংখল কর্মী জামায়াত অফিস ভাঙচুর করে। এ সময় পৌরশহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াত সভাপতি নাসির সরদারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগ ব্যাপক তান্ডব চালায়। বরিশাল নগরীর বাংলাবাজারে ইবনে সিনার জোনাল ডিপোতে হামলা ও ভাঙচুর করে তিন কর্মচারীকে মারধর করা হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের হাতে নিহত ৩৬

গত চার বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের হতে নিহত ছাত্রের সংখ্যা ৩৬ জন। সকল মিডিয়া গুলোতে ছাত্রলীগের একের পর এক অপকর্মের সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার হতে থাকলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের অভিভাবকত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। তবে এর পরেও কী প্রতিকার হল। কি বিভৎসতা ! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ নিজদের ও প্রতিপক্ষের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে কমপক্ষে পাঁচশতবার। এর মধ্যে ছাত্রশিবিরের ৬ জন, ছাত্রদলের ১জন, ছাত্রমৈত্রীর ১জন নেতা কর্মী এবং অরাজনৈতিক তিনজন ছাত্র হত্যাসহ নিজদের অন্তঃকোন্দলে নিহত হয় অন্তত ৩৬ জন। দেশের সচেতন মহলের প্রশ্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারচক হত্যাকান্ডের পর সারা দেশে শিবিরের নির্দোষ নেতা-কর্মীদের বিরচদ্ধে কথিত চিরনী অভিযানে শত শত ছাত্র গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ ৩৬ ছাত্রের খুনিরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাহলে সরকার দলীয় খুনিরা কি আইনের ঊর্ধ্বে? মাত্র কয়েক দিন আগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিসি পদত্যাগের আন্দোলন শুরচ করলে ছাত্রলীগ আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর এসিড নিক্ষেপ করে। এতে দু’জন শিক্ষকসহ বেশ ক’জন ছাত্র-ছাত্রী মারাত্মকভাবে এসিড দ্বগ্ধ হন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিাষ্ঠানে শিক্ষকরা ছাত্রলীগ কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছেন।

সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন- ভর্তিবাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্বসহ নানা অপকর্মের কারণে মহাজোট সরকারের সব অর্জন ¤­vন হতে চলছে; ছাত্রলীগের আগ্রাসী কর্মকান্ডে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও অসহায়।

এছাড়া ৯ ডিসেম্বর ২০১২ সালে ১৮ দলের ডাকে হরতাল চলা কালে ছাত্র শিবিরের কর্মী সন্দেহে নির্মম ভাবে চাপাতির আঘাতে নিহত হয়েছে টেইলর কর্মী বিশ্বজিৎ।

পুলিশের হামলা মামলার শিকার শিবির

ক্ষমতার মসনদে বসার পর মধ্য নবেম্বর পর্যন্ত শুধু শিবিরের বিরচদ্ধে সরকার সাজানো মামলা দিয়েছে প্রায় ২ হাজার। বিভিন্ন মামলায় আসামী করা হয়েছে ২ লাখের অধিক নেতা-কর্মীকে। বিভিন্ন সময়ে কারাবাস করেছেন বিশ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তো এখন জেলে। এর বাইরে যারা এখন নেতৃত্বে আছেন তাদের বিরচদ্ধেও রয়েছে হুলিয়া। ৪০ জন নেতা-কর্মী নিখোঁজ রয়েছেন। হাইকোর্টের রচল জারির পরও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন মেধাবী ছাত্রনেতা ওয়ালিউল­vহ ও আল-মুকাদ্দাসকে এখনও কোর্টে হাজির করা হয়নি। তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬শ’। অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে ছাত্রশিবিরের প্রায় শতাধিক কার্যালয়ে। ৮৫ ভাগ মুসলমানের দেশে পবিত্র কুরআনে আগুন জ্বালিয়েছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা।

গ্রেফতার বাণিজ্য ও লুটপাটের মহোৎসব

গ্রেফতার ও তল­vশির নামে জামায়াত ও শিবিরের নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়ি ও মেসগুলো থেকে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীরা কম্পিউটার, আলমারি প্রভৃতি দামি জিনিস লুট করে নিয়ে যাচ্ছে অবলীলায়। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও লুটপাট চালিয়েছে সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনগুলোর উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা। বাসাবাড়ি, মেসে গ্রেফতার ও তল­vশির সময় অনেক সাধারণ ছাত্রকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ‘শিবির’ ধরার কোটা পূরণ করার জন্য। সাধারণ অভিভাবক যাদের সন্তান মেসে থেকে পড়াশোনা করে তারা এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

রাজপথে কী ঘটছে আর কী প্রচার হচ্ছে?

সকল বাধা উপেক্ষা করে আজ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বলে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে আন্দোলন করছে। গত ৫ ও ৬ নবেম্বর দেশব্যাপী পূর্ব-ঘোষিত, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সারা বিশ্বের মানুষ সেদিন বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছে প্রতিটি কর্মসূচিতে সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী আচরণ করেছে। মিছিলে হামলা, লাঠিচার্জ, ব্যাপক টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলী চালানো হয়েছে। এতে প্রায় দেড় সহস্রাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। গুলীবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। ৫ জনের চোখ চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো অনেক ভাই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে দিনাতিপাত করছেন। এই ঘটনার রেশ ধরে সারাদেশে প্রায় ৩৮০টি মামলা করা হয়েছে। এঘটনায় পুলিশ চার হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার করেছে। অথচ সরকার কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চাপ প্রয়োগ করে জামায়াত ও শিবিরকে বরং পুলিশের ওপর আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করার হীন অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। পুলিশের মধ্যে অতি উৎসাহী কিছু দলীয় ক্যাডার ও পুলিশের পোশাকধারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা কর্মসূচিগুলোতে হামলা করছে প্রতিনিয়ত। গায়ে পুলিশের পোশাক ও পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল পরিহিত অবস্থায় মিছিলের ওপর গুলীবর্ষণরত একাধিক যুবকের ছবি ইন্টারনেটে সার্চ দিলে পাওয়া যাবে। ডিউটিরত অবস্থায় কোনো পুলিশ কর্মকর্তা চামড়ার স্যান্ডেল পরতে পারেন কি?

পুলিশকে কে পেটায়?

জাতীয় দৈনিকের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সালের ২৪ ফেব্রচয়ারি বেনাপোলে ছাত্রলীগ পুলিশকে ধরে বেধড়ক পিটিয়েছে। একই বছরের ১১ নবেম্বর বগুড়ায় জামায়াত-শিবির বিরোধী মিছিল থেকে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে কোদাল দিয়ে পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দেয়। ২৫ নবেম্বর চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ পুলিশের ওপর হামলা করেছে। ২২ নবেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরচল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতিকে ধরতে পুলিশ সূত্রাপুরে অভিযান চালাতে গেলে ছাত্রলীগের হামলায় ৬ জন পুলিশ আহত হন। গত ১৭ জানুয়ারি ইবিতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব পুলিশের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে হামলা করে যা সকল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যাবে ব্যক্তিগত স্বার্থে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে পেটাচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসন নির্বিকার। অথচ শিবিরের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ রক্ষার তাগিদে প্রতিরোধ গড়ে তুললে সেটার নাম দেয়া হচ্ছে ‘জঙ্গি’ হামলা। দ্বৈতনীতিরও একটা সীমারেখা থাকা উচিত।

পুলিশের গায়ে আগুন নাটক

জয়পুরহাটে পুলিশের গুলীতে নিহত শহীদ বদিউজ্জামানের হত্যার প্রতিবাদে হরতাল চলাকালীন সময়ে পুলিশের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার মিথ্যা অভিযোগ শিবিরের ওপর দেয়া হয়েছে। অথচ এটা যে সম্পূর্ণ সাজানো ও মিথ্যা তা পরে প্রমাণিত হয়েছে। কোনো টিভি চ্যানেল বা পত্রিকায় কথিত আহত পুলিশ সদস্যের কোনো ফুটেজ বা ছবি আপনারাও দেখেননি।

ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী সংগঠন

কিছু দিন পরপরই পত্রিকার শিরোনাম হয় ছাত্রলীগ। চাপাতিলীগ খ্যাত এই ছাত্রসংগঠনের দেশজুড়ে বর্বর তান্ডব কার না অজানা। খুন, হত্যা, টেন্ডারবাজি, ভর্তি-বাণিজ্য আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নে এখন এক ত্রাসের নাম ছাত্রলীগ।

সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্র, সন্ত্রাস ও পুলিশের সহায়তায় একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে ছাত্রলীগ। একক নিয়ন্ত্রণের সুযোগে তারা যেমন ভিন্নমতের শিক্ষকদের ওপর হামলা-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে, তেমনি অবৈধ অর্থ-বিত্তের মালিক হতে টেন্ডার ও চাঁদাবাজি এবং ভর্তি-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থের ভাগাভাগি নিয়েই চলে গ্রচপের আধিপত্য বিস্তারের পালা। আর তা নিয়েই অস্ত্রের ঝনঝনানি ও গোলাগুলীর সৃষ্টি হয়। এতে কখনও জীবন হারাচ্ছে সাধারণ ছাত্র, পথচারী এমনকি শিশু। আবার কখনও নিহত হন ছাত্রসংগঠনের কর্মী।

ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ক্ষমতার প্রথম বছরে সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সংগঠনটিকে ‘ভ্রাতৃপ্রতীম’ আখ্যা দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন থেকে অন্যসব ক্ষেত্রে আগের মতোই ভূমিকা রাখছেন তিনি। তবে ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরতে আর কোনো নিয়ন্ত্রক নেই। গত চার বছরে শিক্ষাঙ্গনে নির্যাতক ও লুটেরার ভূমিকায় ছিল এ সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

সর্বশেষ গত বছরের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম খা আলমগীরের আহবানে বিরোধী দল ও মত দমনে নামে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা। পুলিশ-র‌্যাবকে সহযোগিতা করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাত্রলীগ-যুবলীগকে আহবান জানিয়েছিলেন। আর এতে ছাত্রলীগ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছরের শিশু রাববী, ৯ ডিসেম্বর পুরানো ঢাকায় বিশ্বজিৎ, সিরাজগঞ্জে হযরত আলীসহ বেশক’জন মানুষ জীবন হারান। বছরের শুরচতে ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে হামলায় নিহত হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক আবদুল মালেক জনি।

দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জেলা ও থানা শহরে প্রায় প্রতিদিনই চলছে ছাত্রলীগের তান্ডব। এসব তান্ডবে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোও অসহায় হয়ে ছাত্রলীগের মার থেকে নিজেদের রক্ষা করে চলছে। তবে ছাত্রলীগের নিপীড়নের বিরচদ্ধে রচখে দাঁড়ায় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সাধারণ গ্রামবাসী। ১০ বছরের শিশু রাববীর জীবন কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদে তারা ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের ওপর পাল্টা আঘাত হানে। প্রতিরোধের মুখে সশস্ত্র ক্যাডাররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা বিশ্ববিদ্যালয়টির দুটি আবাসিক হলে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালায়। এভাবে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশপাশ এলাকায় খুন, হত্যা, টেন্ডারবাজিসহ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসে ক্ষুব্ধ হয়ে আছে মানুষ।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত চার বছরে সারাদেশে ছাত্রলীগের হাতে ২৪ মেধাবী ছাত্র নির্মম হত্যার শিকার হন। কমপক্ষে চার শতাধিক বার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় অর্ধশতাধিকবার। শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্ধারিতভাবে বন্ধ রাখতে হয়।

বাংলাদেশ ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রচপের গোলাগুলীতে ১০ বছরের শিশু রাববী হত্যার ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তুলেছে। গত চার বছরে দুই ডজন মানুষ ছাত্রলীগের হাতে খুন হয়। গত এক বছরে তারা খুন করেছে ৯ জনকে। গত ৯ ডিসেম্বর পুরানো ঢাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে বিশ্বজিতকে হত্যার মধ্য দিয়ে ২০১২ সালকে বিদায় জানায় ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সামনে সাংবাদিক পিটিয়ে ৫ জানুয়ারি সরকারের ক্ষমতার চার বছরের শেষ দিন উদযাপন করে তারা। আর রাজধানীর তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ফেল করা ছাত্রদের পাস করানোর দাবিতে তান্ডব চালিয়ে ৬ জানুয়ারি ক্ষমতার চার বছর পূর্তি উৎসব করে এ সংগঠনটি। এরপর ১৯ জানুয়ারি বাকৃবিতে রাববী হত্যা, ১০ ও ১২ জানুয়ারি রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার শেষ বছরকে স্বাগত জানায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এখন প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে দেশজুড়ে তাদের ভয়ঙ্কর রূপ।

বাকৃবিতে ক্রসফায়ারে শিশু হত্যা : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গ্রচপের মধ্যে পরপর চারদিন সংঘর্ষ হয়। চলে বন্দুকযুদ্ধ। আর তাতে দু’পক্ষেও ক্রসফায়ারে জীবন হারান ১০ বছর বয়সী শিশু রাববী। মর্মান্তিক এ হত্যাকান্ডের জেরে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগকে প্রতিরোধ করে। তারা শহীদ জামাল হোসেন হল ও ঈশা খাঁ হলসহ চারটি হলে অগ্নিসংযোগ এবং ভাংচুর চালায়। এতে কমপক্ষে ৫০টি কক্ষ পুড়ে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়।

নিহত শিশু রাববীর বাবা টেম্পো চালক। বাকৃবির জববার মোড় এলাকায় তার দাদি গরচ চরাচ্ছিলেন। সে দাদিকে ডেকে আনতে গিয়ে ছাত্রলীগের বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। রাববী ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বয়রা এলাকার দরিদ্র দুলাল মিয়া ও মুনিরা বেগমের একমাত্র ছেলে। শিশু সন্ত্রানকে হারিয়ে বাবা-মা এখন নির্বাক। পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস : ছাত্রলীগের সন্ত্রাসে জিম্মি হয়ে পড়েছে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ছাত্রলীগই সবকিছু। সংগঠনটির নেতা-কর্মীরাই প্রশাসন, কর্তৃপক্ষ ও নির্যাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। প্রতিনিয়ত চলছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নির্যাতন। শিক্ষকদের গণপিটুনি সেখানে থেমে থেমেই চলছে। প্রতিবাদ জানানোর কেউ নেই। শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রদলের কর্মীরা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হন। সশস্ত্র ক্যাডাররা নিজেদের মজুদ অস্ত্রের পাশাপাশি পুলিশের শটগান কেড়ে নিয়ে ছাত্রদল কর্মীদের গুলী করে। এতে ইবি ছাত্রদলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কমপক্ষে ৬০ জন আহত হয়।

এর আগে গত ১২ জানুয়ারি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পুলিশের সামনেই দেশী-বিদেশী অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৪০ জন শিক্ষককে আহত করে তারা। এরআগে ১৯ নবেম্বরও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছিল তারা। ছাত্রলীগের ত্রাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। এমনকি আহত শিক্ষকরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় ক্যাম্পাস কিংবা কুষ্টিয়ায় না গিয়ে ঝিনাইদহের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ইবি ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিনের নেতৃত্বে এ হামলা হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনও শিক্ষকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিচ্ছেন না। শিক্ষক সমিতিতে ছাত্রলীগ তালা ঝুলিয়ে দেয়। রড দিয়ে শিক্ষকদের পেটানোর সময় ছাত্রলীগ ক্যাডারদের একটি মন্তব্য দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় তোলে। আর তা ছিল- ‘পেটানোর নাম যেহেতু হবেই, তাহলে একটি কষিয়ে পেটাই’, ‘যে রকম কুকুর, সে রকম মুগুর’সহ অনেক সন্ত্রাসী উক্তি করে তারা। পুলিশের সামনেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের এ হামলার সময় প্রাণ বাঁচাতে শিক্ষকদের আর্তচিৎকারে পুরো ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর থেকে ছাত্রলীগের হাতে পুরোপুরি জিম্মি হয়ে আছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর এসিড সন্ত্রাস : গত ১০ জানুয়ারি রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা নৃশংস বর্বরতাকেও হার মানায়। ভিসিবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ওপর দেশীও অস্ত্র দিয়ে হামলার পাশাপাশি এসিড সন্ত্রাস চালায় তারা। এসিড দিয়ে ঝলসে দেয় কয়েক শিক্ষকের মুখমন্ডল ও শরীর। গুরচতর আহত ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. মতিউর রহমান ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। হামলার সময় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ক্যাম্পাসে অর্ধশতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করলেও কাউকে গ্রেফতার করেনি। এমনকি হামলার সময় উপস্থিত পুলিশ কাউকে বাধাও দেয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

রংপুর মেডিকেলে মধ্যরাতে ছাত্রী নিপীড়ন : গত ৯ জানুয়ারি মধ্যরাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজানুর রহমান মিরাজ ও সাধারণ সম্পাদক সুমন প্রধানের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন ক্যাডার লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রী হোস্টেলে প্রবেশ করে। এ সময় তারা ইন্টার্নি চিকিৎসক ও ছাত্রীদের মারধর, অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং কয়েকজন ছাত্রীর শ­xলতাহানি করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হন ১০ ছাত্রী ও ইন্টার্নি চিকিৎসক।

পিসি কলেজে শিক্ষকের ওপর হামলা : ৮ জানুয়ারি বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ আলম ফরাজীর ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ ঘটনার প্রতিবাদে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন ও মৌন মিছিল করে।

মাগুরায় পুলিশের সামনে ছাত্রলীগের টেন্ডার ছিনতাই : ৭ জানুয়ারি ছাত্রলীগের একটি সশস্ত্র গ্রচপ পুলিশের উপস্থিতিতে মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের অর্ধ কোটি টাকার সিআইডি অফিস ভবন নির্মাণের দরপত্র ছিনতাই করে। টেন্ডার ছিনতাইয়ের পর আওয়ামী লীগ দলীয় দু’দল ঠিকাদার গ্রচপের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।

ফেল করা ছাত্রদের পাসের দাবিতে ঢাকা পলিটেকনিকে তান্ডব : ক্ষমতার চার বছর পূর্তির দিনে ফেল করা ছাত্রদের পাস করানোর দাবি নিয়ে তেজগাঁওয়ে অবস্থতি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ব্যাপক তান্ডব চালায় ছাত্রলীগ। হামলায় শিক্ষক-কর্মচারীসহ ১০ জন আহত হন। ছাত্রলীগের তান্ডবের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে। কলেজের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় বিভিন্ন বিভাগের ৫০৩ জন শিক্ষার্থী ফেল করে। এর মধ্যে কেউ এক বিষয়ে আবার কেউ দুই বিষয়ে রেফার্ড পায়। শিক্ষা অধিদফতরের নিয়ম অনুযায়ী ৪০ দিন পর এসব ছাত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তাদের পাস করিয়ে দেয়ার দাবি নিয়ে ছাত্রলীগ এ হামলা চালায়।

একইদিনে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রচপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে ও তাতে ৫ জন আহত হয়।

চার বছরে ছাত্রলীগের নানা সংঘর্ষ: গত চার বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৮৭টি সংঘর্ষ করেছে ছাত্রলীগ। তার মধ্যে বিভিন্ন থানা ও জেলা শাখায় হয় ৪৮টি। এতে প্রতিপক্ষের ছাত্র আহত হয়েছেন ৩ হাজার ১৪৫ জন। পুলিশ, সাংবাদিক, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ছাত্রীর অভিভাবক বাদী হয়ে ও নিজেদের এক গ্রচপ অপর গ্রচপের বিরচদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেছে ৫৪২ জনের বিরচদ্ধে, যার মধ্যে ৪৯৫ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া অন্য সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন এলাকাবাসীর ওপর হামলা করে ৫৬টি।

২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি শরিফুজ্জামান নোমানীকে হত্যার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ খুনের কার্যক্রম শুরচ করে। এই ধারাবাহিকতা এতটাই লম্বা হয়েছে যে, তারা চার বছরে ২৪ জন ছাত্রকে হত্যা করেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে তেজগাঁও পলিটেকনিক্যালে ছাত্রলীগের দু’গ্রচপের সংঘর্ষে আহত হয় ২০ জন। ১১ তারিখে রাবিতে ছাত্রদলের উপর হামলায় আহত হয় ৩০ জন। আগস্ট মাসে ইবিতে চাকরি বাণিজ্য নিয়ে ছাত্রলীগ তান্ডব চালায়। এতে আহত হয় ৪০ জন। ৬ তারিখে জমি দখলকে কেন্দ্র করে ৬ জনকে আহত করে। জুলাই মাসে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ২৭ জনকে আহত করে। ২৪ তারিখে খুলনায় ৮ কোটি টাকায় টেন্ডার জমাকে কেন্দ্র করে পুলিশ সাংবাদিকসহ ৫ জনকে আহত করে। ২৫ তারিখে কুড়িগ্রামে ফুলবাড়ীতে পুলিশের ২ এসআইকে আহত করে। ২৪ তারিখে যশোরের আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুল গফুরকে কুপিয়ে আহত করে। ১৬ তারিখে রাবিতে দু’গ্রচপের সংঘর্ষে নিজ দলের কর্মী সোহেলকে হত্যা করে। ৮ তারিখে সিলেটের ঐতিহাসিক এমসি কলেজে আগুন লাগিয়ে ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেয়। ২ তারিখে বরিশাল মেডিকেলে ছাত্রদলের ওপর হামলা চালিয়ে ১০ জনকে আহত করে। ১ তারিখে সিলেটের দক্ষিণ ডিগ্রি কলেজে ৫ জন শিবির কর্মীসহ ৩৫ জনকে আহত করে। জুন মাসের ২৮ তারিখে নেত্রকোনায় রামদা মিছিল বের করে। ২২ তারিখে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে ৩ হাজার অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন মাদারীপুরে পুলিশের উপর হামলা করে ৬ পুলিশকে আহত করে। ৯ তারিখে শাবিপ্রবিতে ফাহিম মাহফুজ নামের কর্মীকে হত্যা করে। ৪ তারিখে যশোরের এমএম কলেজে মোশাররফ নামের ছাত্রকে আহত করে। মে মাসের ২২ তারিখে ঢাবিতে মারপিট করে টাকা ও ল্যাপটপ লুট করে নিয়ে যায়। ১৬ তারিখে রাজশাহীতে সানি হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের ২ জনের মৃত্যুদন্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। ১৪ তারিখে সিলেটের সালিয়াগ্রামের জমি দখল করতে গিয়ে ৫০ জন গ্রামবাসীকে আহত করে। পুলিশ ২০ জন নেতা-কর্মীকে আটক করে। এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখে জবিতে দু’গ্রচপের সংঘর্ষে ৭ জনকে আহত করে ও ১৭ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২৮ তারিখে জাবিতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ওপর হামলা করে ৭ জনকে গুরচতর আহত করে। ২৯ তারিখে ঢাকা কলেজে দু’গ্রচপের সংঘর্ষে ২৫ জনকে আহত করে। ২৫ তারিখে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডাক্তারদের উপর হামলা করে। ১১ তারিখে চাঁদপুরের বিল­vল নামের নিজ দলীয় কর্মীকে হত্যা করে। ৮ তারিখে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনে হামলা চালায়। ২৯ মার্চ ঝালকাঠিতে ২০ লাখ টাকার টেন্ডার নিয়ে দু’গ্রচপের মাঝে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়। ২১ তারিখে ছাত্রলীগ পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষ করে ১ জন নিহত হয়। ২৮ তারিখে ফাও মদ খাওয়াকে কেন্দ্র করে তিতুমীর কলেজে হামলা চালায়। ১৩ তারিখে বিএনপির মহাসমাবেশে আগত লোকদের ওপর জায়গায় জায়গায় হামলা চালায়। ফেব্রচয়ারি মাসের ২৭ তারিখে রাজশাহীর পটিয়ায় ছাত্রী অপহরণ করে। এতে গ্রামবাসী ৩ জনকে ধরে পুলিশে দেয়। ১৪ তারিখে পিস্তলসহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-বিজ্ঞান সম্পাদক মোস্তাকিম মোরশেদ গ্রেফতার হন। ১১ তারিখে সলিমুল­vহ মেডিকেল কলেজে হামলা চালিয়ে ৩৩টি রচম ভাংচুর করে ৭ জনকে আহত করে। ১৩ তারিখে দিনাজপুরের টেক্সটাইল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৪ তারিখে পটুয়াখালী জেলা পরিষদের ২৫০ কোটি টাকার টেন্ডার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পহেলা জানুয়ারিতে রাবিতে পুলিশ ও শিবির কর্মীকে কুপিয়ে যখম করে। ৪ তারিখে খুলনার আজম খান কলেজে ছাত্রদলের সাথে সংঘর্ষ বাধিয়ে ১১০ জনকে আহত করে। ২৪ তারিখে জাবিতে ছাত্রকল্যাণ সমিতির চাঁদাবাজিতে দু’গ্রচপের সংঘর্ষে ১৫ জনকে আহত করে। ২৫ তারিখে বরিশালে বিএনপির অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে আহত করে। ১৭ তারিখে মৌলভীবাজারে ওরসের চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ৩০ জনকে আহত করে। ৯ তারিখে জাবিতে ৪ জন ছাত্রকে ৩ ও ৪ তলা থেকে নিচে ফেলে দিয়ে আহত করে। শাবিপ্রবিতে ৯ তারিখে জুবায়েরকে হত্যা ১২ তারিখে হামলা চালিয়ে ২০ জনকে আহত করে। ৪ তারিখে সাংবাদিক ও পুলিশসহ ২৫ জনকে আহত করে। ৭ তারিখে নাটোরে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে জেলা সাধারণ সম্পাদক আতিকুজ্জামান ও সরোয়ার জামান প্রিন্স গ্রেফতার হয়। ৫ তারিখে রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ওপর হামলা চালিয়ে ২৫ জনকে আহত করে। ৩ তারিখে শাবিপ্রবি, কুয়েট, ঢাবি ও বুয়েটে হামলা চালিয়ে ৭০ জনকে আহত করে। ২৮ তারিখে ঢাকা পলিটেকনিক্যালে দু’গ্রচপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়। ২৫ তারিখে মাগুরায় খাবার বিতরণকে কেন্দ্র করে নিজ দলীয় কর্মী আল আমীনকে হত্যা করে। ৩ তারিখে জবিতে ছাত্রজোটের ১৫ কর্মীকে আহত করে। ২ তারিখে কুয়েটে ৬ শিক্ষকসহ ২০জনকে আহত করে। ২ তারিখে রাবি, কুয়েট, ঢাবিতে হামলা চালিয়ে ৬০ জনকে আহত করে। ১ তারিখে রাবিতে পুলিশ ও শিবির কর্মীকে কুপিয়ে যখম করে। ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ইবিতে শিবিরের ওপর হামলা চালিয়ে ২০ জন নেতা-কর্মীকে আহত করে। ২৬ ডিসেম্বরে ছিনতাইয়ের অভিযোগে ৬ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। ২৪ তারিখে খুলনার আজম খান কলেজে হামলা চালিয়ে ১৫ জনকে আহত করে। ১৯ তারিখে সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসক নিয়োগকে কেন্দ্র করে ১০ জনকে আহত করে। ২৫ তারিখে চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে কর্নেল অলির ওপর হামলা চালিয়ে ৩০ জনকে আহত করে। ১২ তারিখে ছাত্রদল ও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ১২ জনকে আহত করে। নবেম্বরের ১৫ তারিখে বি-বাড়িয়ায় হামলা চালিয়ে ৮ পুলিশকে আহত করে। ১৪ তারিখে সিলেটের মদনমোহন কলেজে অবৈধভাবে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ভাংচুর চালায়। একই দিন বরিশালের কেশবপুরে ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালিয়ে ১৫ জনকে আহত করে। ১০ তারিখে নাজিরপুর থানায় হামলা চালায়। ২৩ অক্টোবর ছাত্রদল কর্মী আবিদকে হত্যা করে। ১১ তারিখে ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১২ গ্রচপের ২২ কোটি টাকার টেন্ডার ছিনিয়ে নেয়। ৫ তারিখে শীতলক্ষ্যায় হামলা চালিয়ে ৬ জনকে আহত করে। ২ তারিখে এমবিবিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রতারণায় জড়িত থাকার অভিযোগ ৫২ জনের বিরচদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাস্তা মেরামতের ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার টেন্ডার ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যায়। ২২ তারিখে ঢাবিতে দু’গ্রচপের সংঘর্ষে ৯ জন আহত হয়। ২১ তারিখে তেজগাঁও পলিটেকনিক্যালে ফাও খেতে গিয়ে সংঘর্ষ বাধিয়ে রাইসুল নামের কর্মীকে নিজেরাই হত্যা করে। ১২ তারিখে বগুড়ায় ছাত্রদলের ওপর হামলা চালায়। আগস্ট মাসের ২৯ তারিখে গাজীপুর পৌরসভার ৪৩টি প্রকল্পের ১৮ কোটি টাকার টেন্ডার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ২৫ তারিখে বরিশাল জেলার সেতু বিক্রি করে দেয়। ১৮ তারিখে কিশোরগঞ্জ জেলার টেন্ডার ছিনতাই করে। ১৬ তারিখে ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবি নজরচল বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’গ্রচপের সংঘর্ষে ১১ জন আহত হয়। ১৫ তারিখে সিলেটের মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে হামলা ও ভাংচুর করে ৬ জনকে আহত করে। ৯ তারিখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ শিক্ষককে আহত করে।

শিক্ষক লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত : আওয়ামী সরকারের প্রায় চার বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের হাতে অন্তত ৮০ জন শিক্ষক লাঞ্ছিত ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ছাত্রলীগের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও আবাসিক হলে অন্তত ২০ শিক্ষক লাঞ্ছিত ও হামলার শিকার হয়েছে। লাঞ্ছনার শিকার হয়ে বেশ কয়েকটি হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করতে পর্যন্ত বাধ্য হন। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও লাঞ্ছিত করে চলেছে। ২০১১ সালের ২০ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করে। ২৩ নবেম্বর ইউনিফর্ম ছাড়া এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে না দেয়ায় নোয়াখালী সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জুলফিকার হায়দারকে ছাত্রলীগ নেতা সোহরাব ইকবাল লাঞ্ছিত করে। গত বছরের ২২ জানুয়ারি মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতাদের আবাসিক মেয়াদ শেষ হওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের হাতে তিন শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষকরা হলেন প্রাধক্ষ্য আজিজুর রহমান, হলের আবাসিক শিক্ষক মাহবুব কায়সার ও অধ্যাপক আশফাক হোসেন। ২২ মার্চ রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যসহ তিনজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এর আগে ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডাররা লাঞ্ছিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষককে। একই বছরের ১০ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে হামলা চালিয়ে এক শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত ও ১০ ছাত্রীকে আহত করে। ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের দু’শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে।

শতাধিক সাংবাদিক লাঞ্ছিত : গত ৪ বছরে ঢাবি, জবি, জাবি, চবি, রাবি, কুবি, ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন জেলা ও শহরে ছাত্রলীগের হাতে দেড় শতাধিকের বেশি সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন। নির্যাতিত হয়েছেন প্রায় আরো শতাধিক।

ছাত্রী উত্ত্যক্ত ও ধর্ষণ : গত ৪ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানে শতাধিক নারী ও ছাত্রী উত্ত্যক্ত, লাঞ্ছনা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে বৈশাখী অনুষ্ঠান ও থার্টিফাস্ট নাইটের অনুষ্ঠানে অন্তত ২০ নারী ও ছাত্রী লাঞ্ছিত হন ছাত্রলীগের হাতে। জাহাঙ্গীরনগরে ঘটেছে ছাত্রী উত্ত্যক্তের ঘটনা। বরিশাল বিএম কলেজের এক ছাত্রীর নগ্ন দৃশ্য এক ছাত্রলীগ কর্মী মোবাইলে ধারণ করায় ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে। ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল দিনে-দুপুরে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এক ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ২০১০ সালের ২ অক্টোবর বরিশালের মুলাদীতে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধর্ষণ করেছে দু’বোনকে।

দেহব্যবসা : দেহ ব্যবসার সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা-নেত্রীদের জড়িত থাকার অভিযোগও ছিল গত ৪ বছরের আলোচিত ঘটনা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা এবং কয়েকটি শাখা কমিটির নেতা-নেত্রীদের বিরচদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্রী হল, ইডেন সরকারি মহিলা কলেজ, বদরচন্নেসা মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরচদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। এছাড়া সংগঠনটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও ওই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, নিজ সংগঠন এবং এর বাইরে সুন্দরী মেয়েদের জোর করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় মনোরঞ্জনের জন্য পাঠানো হতো। আবার অনেকে দলে পদ পেতে নিজ ইচ্ছায় যেত। এছাড়া সরকারের মন্ত্রী, এমপি, প্রভাবশালী নেতা, ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জনের জন্য দেহব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ।

টেন্ডার-চাঁদাবাজি : দেশের প্রায় সব বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও শহরে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। চাঁদা না দেয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান ও দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। রাজধানীর শিক্ষাভবন, গণপূর্ত ভবন, খাদ্য ভবন থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার টেন্ডার বাগিয়ে নেয় ছাত্রলীগ। নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষও হয়েছে। চাঁদা দিতে দেরি বা অপারগতা প্রকাশ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন জেলা শহরের বড় বাজেটের উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া বিভিন্ন মার্কেট ও উৎসব থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যে ৭০-৮০টি কলেজের উন্নয়ন অনিশ্চিত হয়ে যায়। ৬৫৫ কোটি ১২ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাগিয়ে নেয় ছাত্রলীগ। এসব অপকর্মে ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরচ করে পাতি নেতারাও জড়িয়ে পড়েন।

ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্য : গত ৪ বছরে বিভিন্ন মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তি এবং নিয়োগ বাণিজ্য হয় রমরমা। বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মেডিকেলে ভর্তি এবং চাকরি দেয়ার নামে শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে ছাত্রলীগ। একেকজন প্রার্থীর কাছ থেকে এজন্য ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। অনার্স ভর্তিতে বড় বড় অনার্স কলেজে প্রশাসনকে জিম্মি করে ছাত্রলীগ কোটার নামে হাজার হাজার ছাত্র ভর্তি করা হয়। ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। রাজধানীতে ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ, কবি নজরচল কলেজ, বদরচন্নেসা কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, খুলনা কমার্স কলেজ, বিএল কলেজ, রাজশাহী সিটি কলেজ, মহিলা নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী কলেজ, বরিশালের বিএম কলেজ, সিটি কলেজ, চট্টগ্রামের সিটি কলেজ ও মুহসীন কলেজে ভর্তি বাণিজ্য ছিল আলোচিত। ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন ছাত্রলীগের পাতি নেতা থেকে শুরচ করে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পর্যন্ত।

পৈশাচিক কায়দায় বিশ্বজিৎকে হত্যা

গত ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলীয় জোটের অবরোধের দিন পুরান ঢাকা ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে বিএনপির মিছিল করলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় বিএনপি সমর্থকরাসহ পথচারীরা আতঙ্কিত হয়ে প্রাণের ভয়ে দিকবিদিক দৌড়াতে থাকে। অন্যদের মতো পুরান ঢাকার বাসিন্দা দর্জি দোকানী বিশ্বজিৎ দাসও দৌড়াতে থাকে। কিন্তু ছাত্রলীগের ক্যাডাররা তাকে টার্গেট করে একটি মার্কেটের দোতলায় এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রক্ষা পেতে বিশ্বজিৎ নিচে আসলে সেখানেও তাকে এলোপাতাড়ি চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও রড দিয়ে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে। মুমূর্ষু অবস্থায় মিটফোর্ড হাসপাতালে নিলে বিনা চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়। শিবির কর্মী ভেবে সেখানে দীর্ঘক্ষণ তার কোনো চিকিৎসা হয়নি।

এই হত্যাকান্ড নিয়েও রাজনীতি করতে ছাড়েনি সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো তদন্ত ছাড়াই এর দায়-দায়িত্ব বিএনপি ও জামায়াতের ওপর ছেড়ে দেয়। কিন্তু খুনিদের ছবি দলীয় পরিচয়সহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়।

লগি-বৈঠা দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানকে হত্যা

২০১০ সালে অক্টোবর মাসে নাটোরের বনপাড়ায় বিএনপির পূর্বনির্ধারিত জনসভা উপলক্ষে শুক্রবার আয়োজিত মিছিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল­v নূর বাবু নিহত, চার সাংবাদিকসহ আহত চলি­শ। আহত সাংবাদিকদের ক্যামেরা ভাংচুর ও ছিনতাই করা হয়েছে। তারা এখন নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত।

শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে বনপাড়া পৌর বিএনপির উদ্যোগে মাসব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসাবে বিক্ষোভ মিছিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী এডভোকেট এম রচহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর আগমন উপলক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান ও বনপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি সানাউল­v নূর বাবুর নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি উপজেলা চত্বর থেকে শুরচ হয়ে বনপাড়া বাজারে আসলে আগে থেকেই প্রস্ত্তত থাকা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা অধ্যাপক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে লাঠি-সোটা ও বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অপর একটি মিছিল নিয়ে আক্রমণ করে। এ সময় বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও বনপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি সানাউল­v নূর বাবু গুরচতর আহত হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে কিছু সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হলেও পড়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

পৈশাচিক কায়দায় হাতুড়ি দিয়ে নির্যাতন

ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার সেক্রেটারি মুঈনুদ্দিন মৃধাকে হাতুড়ি দিয়ে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। নির্মম নির্যাতনের পর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় সন্ত্রাসীরা। সজ্ঞাহীন অবস্থায় মুঈনুদ্দিন এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হরতালের সমর্থনে গত ৪ ফেব্রচয়ারি যাত্রাবাড়ী থানার উদ্যোগে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড় থেকে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের হয়ে ধুলাইপাড়ের দিকে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা মিছিলের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। তাদের বর্বরোচিত হামলায় ঢাকা মহানগরী শিবির সেক্রেটারি মুঈনুদ্দিন মৃধাসহ ২ জন গুরচতর আহত হয়। গুরচতর আহত শিবির নেতা মুঈনুদ্দিন মৃধাসহ ২ জনকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

এ সময় তারা মুঈনুদ্দিনকে হাতুড়ি দিয়ে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের ফলে মুঈনুদ্দিন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে যুবলীগের কয়েকজন কর্মী তাকে কাঁধে নিয়ে যাত্রাবাড়ি থানায় নিয়ে যায়। যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছে। চিকিৎসাধীন মুঈনুদ্দিনের অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক।

পাবনায় সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলা

২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাবনায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী পদে নিয়োগ পরীক্ষা ভন্ডুল করে দেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীরা। এ সময় সন্ত্রাসী হামলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিজয় ভূষণ পাল, কয়েকজন শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীসহ ১৫ জন আহত হয়। সন্ত্রাসীরা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের ১টি গাড়িসহ জেলা প্রশাসনের ৪টি গাড়ি এবং পাবনা জেলা স্কুল ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ভাংচুর করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা পরীক্ষার খাতা ছিঁড়ে ফেলে এবং অগ্নিসংযোগ করে। জেলা প্রশাসন এই হামলা ও ভাংচুরের জন্য ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে দায়ী করেছে। এ ঘটনায় গোটা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পাবনা জেলা স্কুল ও সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে লিখিত পরীক্ষা শুরচ হয়। সকাল সোয়া ৯টার দিকে ৬০/৭০ জনের একদল যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে খাতা ও প্রশ্ন কেড়ে নেয় এবং শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের মারধর করে। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে যুবকরা পুলিশের ওপর চড়াও হয় এবং মারধর করে। এতে পাবনা সদর থানার এসআই শুকুরসহ ২ জন পুলিশ আহত হয়।

পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে কর্তব্যরত রাজশাহী বিভাগের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মোঃ মনির হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিজয় ভূষণ পাল, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হালিমসহ কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট ও ঐ স্কুলের শিক্ষকের ওপরও হামলা চালায়। এ সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তাদের রক্ষা করতে গেলে ঐসব সন্ত্রাসী যুবকদের হাতে আব্দুস শুকুর, আব্দুর মতিন, সিরাজুল ইসলামসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদসহ কয়েকজন শিক্ষক আত্মরক্ষার্থে একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে নিজেদের রক্ষা করে। অন্যরা দিগ্বিদিগ ছোটাছুটি করতে থাকে। তারা পরীক্ষা কেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষে ঢুকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র খাতা কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে এবং অনেকগুলো স্কুলের মাঠে নিয়ে এসে অগ্নিসংযোগ করে। প্রায় আধাঘণ্টা এ তান্ডব চালিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে মিছিল করে নিরাপদে বাইরে চলে যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে আসে। উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীসহ ১৫ জন আহত হয়। এ সময় তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। সন্ত্রাসীরা জেলা স্কুলে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের বের করে দেয় এবং পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়।

২৮ অক্টোবরের পৈশাচিকতা

২৮ অক্টোবর বারবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে। কিন্তু ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের সেই লোমহর্ষক দিনের কথা কেউ কোনো দিন ভুলতে পারবে না। এ দিন দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় সূচিত হয়েছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে লগি-বৈঠা দিয়ে তরতাজা যুবকদের পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় এদিন।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সেদিন জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের ওপর পৈশাচিক হামলা চালিয়েছে ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। অন্ধকার যুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে একুশ শতকের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বর্বর পাষন্ড নেতা-কর্মীরা। ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রেডিও-টিভিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। মূলত এ ভাষণ শেষ হওয়ার পরপরই দেশব্যাপী শুরচ হয় লগি-বৈঠার তান্ডব। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত অফিসসহ নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যেমন চালানো হয় পৈশাচিক হামলা, তেমনি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় অনেক অফিস, বাড়িঘর, পুরো দেশব্যাপী চলে তান্ডবতা।

২৮ অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকারের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ ছিল বিকাল ৩টায়। সকাল থেকেই সভার মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। হঠাৎ করেই বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা ও অস্ত্রধারীরা জামায়াতের সমাবেশ স্থলে হামলা চালায়। তাদের পৈশাচিক হামলায় মারাত্মক আহত হয় জামায়াত ও শিবিরের অসংখ্য নেতা-কর্মী। তাদের এই আক্রমণ ছিল সুপরিকল্পিত ও ভয়াবহ। এক পর্যায়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পল্টনের বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়ে এবং নিরীহ জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের বেধড়ক পেটাতে থাকে।

সেদিন পুরো পল্টনজুড়ে ছিল লগি-বৈঠা বাহিনীর তান্ডবলীলা। লগি-বৈঠা আর অস্ত্রধারীদের হাতে একের পর এক আহত হতে থাকে নিরস্ত্র জামায়াত ও শিবিরের নেতা-কর্মীরা। তারা শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলামকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। লগি-বৈঠা দিয়ে একের পর এক আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে জামায়াত কর্মী জসিম উদ্দিনকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা তার লাশের ওপর ওঠে নৃত্য-উল­vস করতে থাকে।

সেদিন আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা বাহিনী শুধু জামায়াতের সভা পন্ড করার জন্যই পৈশাচিক হামলা চালায়নি তারা জামায়াতকেই নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল, জামায়াতের সভামঞ্চে আগুন ধরিয়ে দিতে। প্রথম দফা হামলার পর তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে থাকে। আশপাশের ভবনের ছাদে উঠে বোমা ও বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অবস্থান নেয়। সভার শেষ দিকে মাওলানা নিজামীর বক্তব্য শুরচ হলে তারা তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পুনরায় হামলা চালায়। একদিকে ভবনের ছাদ থেকে বৃষ্টিরমতো বোমা বর্ষণ করতে থাকে। অপরদিকে পল্টন মোড় থেকে গুলী ছুঁড়তে ছুঁড়তে লগি-বৈঠাধারীরা সমাবেশের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। জামায়াত ও শিবিরের নেতা-কর্মীরা তৈরি করে মানব ঢাল। এ সময় আওয়ামী অস্ত্রধারীদের ছোঁড়া গুলী মাথায় বিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমান ও জুরাইনের জামায়াত কর্মী জসিম উদ্দিন। এ ঘটনায় জামায়াত ও শিবিরের ৬ জন নেতা-কর্মী শহীদ ও শতাধিক আহত হন।

হামলা ছিল পরিকল্পিত

জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে বিকেলে সমাবেশের জন্য সকাল থেকেই মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। এ জন্য মঞ্চ তৈরির সাথে সংশি­ষ্ট ব্যক্তিরা ছাড়াও জামায়াত ও শিবিরের কয়েকজন নেতা-কর্মী কাছাকাছি অবস্থান করছিলো। এ সময় ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান করছিলো। তাই জামায়াত ও ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি অবস্থানের কোনো সুযোগ ছিল না। বিকেলে সমাবেশ হওয়ার কারণে সকালে মঞ্চ তৈরির সংশি­ষ্ট লোক ছাড়া মিছিল করার মতো জামায়াত ও শিবিরের কোনো নেতা-কর্মী ছিলো না। হঠাৎ করেই সকাল ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিমের নেতৃত্বে লালবাগ থানা আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা হাতে বিশাল মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়ে আসে। মিছিলকারীরা ধর ধর বলে জামায়াত ও শিবিরের কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় জিপিও এলাকায় অবস্থানরত ১৪ দলের শত শত কর্মী লগি-বৈঠা নিয়ে তাদের সাথে যোগ দেয়। ১৪ দলের কর্মীরা প্রকাশ্যে গুলী করা ছাড়াও লগি-বৈঠা নিয়ে জামায়াত-শিবির কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একের পর এক আঘাত হানতে থাকে নিরীহ জামায়াত-শিবির কর্মীদের ওপর। মঞ্চ গুঁড়িয়ে দিতে এগিয়ে যেতে থাকে বায়তুল মোকাররম উত্তর সড়কের দিকে। এ হামলায় পিস্তলসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ এইচ বি এম ইকবাল ও তার বাহিনী নিয়ে যোগ দেয়।

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডাঃ ইকবালকে যখন হাত নেড়ে নির্দেশ দিতে দেখা যায় তারপরই এক যুবককে ঘেরাও করে লগি-বৈঠা বাহিনী নির্মমভাবে পিটাতে থাকে। চতুর্দিক থেকে আঘাতে আঘাতে সে পড়ে যায় রাস্তার কিনারে। সাপের মতো লগি-বৈঠা দিয়ে তাকে পিটাতে থাকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তার লাশের ওপর ওঠে নারকীয় কায়দায় উল­vস করে লগি-বৈঠা বাহিনী। বিকল্প পথে মঞ্চ দখলের জন্য বিজয়নগর, পল্টন মসজিদের গলি দিয়ে ঢুকে পড়ে লগি-বৈঠা বাহিনী। যেখানেই দাড়ি-টুপি দেখেছে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তারা। শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলামকে তারা এ সময় পেয়ে যায় পল্টন মোড়ের কাছে। ঘিরে ধরে তাকে। লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে নরপিশাচরা। আঘাতে আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মুজাহিদ। তারপর ঐ পিশাচরা লগি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিজেদের জিঘাংসা চরিতার্থ করে।

আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের মুহুর্মুহু গুলীবর্ষণ, বোমা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের পর আহতদের সারি বেড়েই চলছিল। আহতদের প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় জামায়াতের ঢাকা মহানগরী অফিসে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। গুরচতর আহতদের নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দফায় দফায় হামলা চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এ সময় বারবার পুলিশকে অনুরোধ করা হলেও তারা রাস্তার পাশে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। অনেক পুলিশকে সেদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর চত্বরের ভিতরে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

লগি-বৈঠার তান্ডবের দায় কার?

শেখ হাসিনা ১৮ সেপ্টেম্বর-২০০৬ প্রকাশ্য জনসভায় লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকায় অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপরই আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের কর্মীরা লগি-বৈঠা ও আগ্নেয়স্ত্র নিয়ে ২৭ অক্টোবর থেকেই সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ২৮ অক্টোবর তারা ব্যাপকভাবে সংগঠিত হয়ে জামায়াতের সমাবেশে হামলা চালায়। এর দায় তাহলে কার? শেখ হাসিনার এ ধরনের নির্দেশ নতুন নয়। ১৯৯৬-২০০১ কার্যকালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তিনি চট্টগ্রামে ১টি লাশের পরিবর্তে ১০টি লাশ ফেলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের মুক্তাঙ্গনের সমাবেশ থেকে বারবার ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল ‘জামায়াত-শিবিরের ওপর হামলা কর’ ওদেরকে খতম কর! ১৪ দলীয় জোট ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল, তোফায়েল আহমদ, আবদুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন বার বার উত্তেজনাকর বক্তব্য দিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনীকে উৎসাহিত করছিল।

অফিসগামী কর্মকর্তাকে দিগম্বর রেহাই পায়নি দাড়ি-টুপি পরিহিত বৃদ্ধও

১৯৯৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ৭২ ঘণ্টা হরতাল চলাকালে অফিসগামী দু’ব্যক্তিকে রাস্তায় প্রকাশ্যে দিগম্বর করে ছাত্রলীগ। ২০ সেপ্টেম্বর রাজপথে লাঞ্ছিত, বিবস্ত্র শাহজাহান ও অনিল কুমার দেবনাথ ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দী দেয়। সেনাকল্যাণ ভবনে ইন্টারগে­vবাল ট্রেডিং কর্পোরেশনের সহকারী হিসাবরক্ষক শাহজাহানকে দোয়েল চত্বর এলাকায় দিগম্বর করা হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের টাইপিস্ট অনিল কুমার দেবনাথকে জগন্নাথ হলের পিছনে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনায় ঢাবির গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ আলমকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে। আলম ১৬৪-এ দেয়া জবানবন্দিতে ঘটনার কথা স্বীকার করেন।

শাহজাহান ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি সকাল ৮টার দিকে দোয়েল চত্বর এলাকা দিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা পথ আগলে দিগম্বর করে। তিনি তাদের হাতে-পায়ে ধরে অনেক অনুনয় করেন। জোর করে কাপড় খুলে ফেললে তিনি প্রায় দেড় মিনিট দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে তার কাপড় ফেরত দেয়া হয়। জাতীয় দৈনিকগুলোতে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। ছাত্রলীগের হাত থেকে দাড়ি-টুপি পরিহিত ব্যক্তিরাও রেহাই পায়নি।

ক্লিনিকে হামলা : দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ১১ নবেম্বর হরতাল চলাকালে তৎকালীন সংসদ উপনেতা অধ্যাপক এ কিউ এম বদরচদ্দোজা চৌধুরীর মগবাজারস্থ তার মালিকানাধীন ক্লিনিক কেসি মেমোরিয়াল ক্লিনিকে বোমা হামলা হয়। ৬-৭টি বোমা নিক্ষেপের পর ১ জন আহত হয়।

বোমায় ৩ শিশুর প্রাণ গেলো : ১১ নবেম্বর বোমা বানাতে গিয়ে ছাত্রলীগের ১ কর্মী নিহত ও আহত ৪ জন। ইস্কাটনের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রিপন ছাত্রলীগ কর্মী ও মিরপুর বাংলা কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র। এদিকে রাস্তার পাশে খেলার সময় বোমা বিস্ফোরণে ৩ শিশু মারা যায়। তারা হলো তানিয়া (৭), পিতা আলমগীর, গোলাপবাগ, তানিয়া (৬), পিতা আবদুল মজিদ, গোলাপবাগ ও আহত আইনুল (৭) রাত ৯টায় হাসপাতালে মারা যায়। দৈনিক বাংলা পত্রিকায় এ সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সাহারা খাতুনের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা

১৯৯৫ সালের ১৪ নবেম্বর হরতাল চলাকালে রাজধানীর ফার্মগেট থেকে আওয়ামী লীগ নেত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনের (ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী) নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। মিছিলকারীরা পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। দৈনিক দেশজনতায় এ সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এদিন সকাল পৌনে ১১টার দিকে মগবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের একটি মিছিল থেকে পুলিশের ওপর বোমা ও ইট ছুঁড়ে মারা হয়। এ সময় ২০/২৫টি বোমা নিক্ষেপ করে। ৫৫নং ওয়ার্ড কমিশনার আওয়ামী লীগ নেত্রী আসমা জেরিনের নেতৃত্বে এ জঙ্গি মিছিল হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৫/২০টি হাত বোমার খোসা উদ্ধার করে। এ সময় রমনা থানার সাব-ইন্সপেক্টর হারচন আহত হয়।

১২ নবেম্বর হরতাল চলাকালে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির হামলায় ১০ পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়েছে। এর মধ্যে হাবিলদার সাদেক আলী, কনস্টেবল জাহাঙ্গীরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মিশনপাড়ায় বিএপির হরতালবিরোধী সমাবেশ চলাকালে ছাত্রলীগ ও জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। তাদের গুলীতে অনেক আহত হয় বলে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়।

১৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলা : ১৯৯৩ সালের ১৫ আগস্ট মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে মতিঝিলে সমাবেশ করাকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর মিছিল করে হামলা চালায় যুবলীগ। এতে পুলিশের ডিসি সাউথসহ ১৭ জন পুলিশ আহত হয়। দৈনিক ইত্তেফাক লিখে, ‘‘গতকাল রবিবার বিকালে আওয়ামী যুবলীগের সহিত পুলিশের সংঘর্ষে দু’শতাধিক লোক আহত হইয়াছে। পুলিশ জানাইয়াছে, ডিসি সাউথসহ ১৭ জন পুলিশ আহত হন।’’

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ভাংচুর : ১৯৯০ সালের ১৬ অক্টোবর বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, ব্যাপক ভাংচুর, বোমাবাজি, জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ, ৪টি রেল ইঞ্জিনসহ শতাধিক গাড়ি ভাংচুর, খুলনা ও সিলেটে সরকারি অফিস ভাংচুর, ময়মনসিংহে রেল স্টেশনে অগ্নিসংযোগ, সড়ক ও রেলপথে ব্যারিকেড, দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে চলাচলকারী ৩৫টি ট্রেন গতিরোধের মধ্যদিয়ে মঙ্গলবার সারা দেশে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়েছে। রাজশাহীতে ২৬ জন পুলিশ আহত হয়। ৮ দল, ৭ দল, ৫ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ হরতালের আহবান করে। দৈনিক বাংলার বাণীতে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।

দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ৯ জানুয়ারি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ৩১টি ট্রাক ভাংচুর, বোমা সংঘর্ষে ৬০ জন আহত হয়। তারপর দিন দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের হরতালের সময় সাড়ে ১১টায় পাথরঘাটায় হাত বোমায় উত্তম বিশ্বাস নামে এক কিশোর আহত হয়।

অসহযোগের প্রথম দিনেই হাঙ্গামা : ১৯৯৬ সালের ৯ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে বরিশালে বিএনপির সাথে তিন দলের কর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। এ সময় দু’শতাধিক হাত বোমা, শতাধিক রাউন্ড গুলী ও প্রচুর ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। দৈনিক ইত্তেফাক লিখে, ‘‘পৌরসভার চেয়ারম্যান ও শহর বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামালের ওপর শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের মিছিল হইতে হামলা ও গাড়ি ভস্মীভূত করার ঘটনার জের হিসাবে গতকালের সহিংস ঘটনা ঘটে।’’

থানায় হামলা ও ভাংচুর : ১১ মার্চ ৩য় দিনে মিরপুরে সংঘর্ষে ২জন সুবেদার এবং ১৭ জন পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। এদিন পুরো মিরপুর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় লেখা হয়, মিরপুর ১০ নং গোল চক্কর এলাকায় যাত্রী ছাউনির নিচে থাকা পুলিশের ওপর প্রথম হামলা হয়। এ সময় পুলিশের একজন এসআই ও একজন কনস্টেবল গুরচতর আহত হয়। এ সময় ২ জন এসআই ও এক কনস্টেবলকে একটি বাসায় আটকে রাখা হয়। এ সময় মিরপুর থানায় হামলা হয়। ওসি এসি লাঞ্ছিত হয়। দৈনিক বাংলা এর সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘‘মিরপুর থানায় আবার হামলা গুলী বোমা ১৭ পুলিশ আহত’’।

১০ মার্চ রংপুরের তারাগঞ্জে বিডিআর টহল বন্ধ হয়ে যায়। তারাগঞ্জের টিএনও থানায় আশ্রয় নেয়। থানা ঘিরে রেখে কাউকে বের হতে দেয়া হয় না বলে দৈনিক সংবাদে এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

পুলিশের ওপর হামলা মন্ত্রী লাঞ্ছিত : ১৩ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ৫ম দিনে রাজধানীতে ৩ জন নিহত ও আহত শতাধিক। এদিন পিকেটারদের হাতে শ্রম মন্ত্রী লেঃ জেনারেল (অবঃ) মীর শওকত আলী লাঞ্ছিত হন। দৈনিক সংবাদ এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। ১২ মার্চ ৪র্থ দিনে সংঘর্ষ, বোমাবাজি। ইত্তেফাকের রিপোর্টের শুরচটা ছিল, ‘‘বিরোধী দল আহূত লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের চতুর্থ দিনেও গতকাল (মঙ্গলবার) নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সকল হাঙ্গামায় এবং বাসে বোমা নিক্ষেপে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়।’’ রিপোর্টে বলা হয়, এ দিন সড়ক যোগাযোগ ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ফার্মগেটে বিআরটিসি বাসে আগুন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে একটি যাত্রীবাহী বাসে বোমায় চালকসহ ১৫ জন আহত। মহাখালীতে বিডিআর বহনকারী বাসে ভাংচুর হয়।

বাসে পেট্রোল বোমা ভস্মীভূত মানুষ : ১৭ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ৯ম দিনে রাজধানীতে বাসে পেট্রোল বোমায় ২ জন নিহত, চট্টগ্রাম ও সিরাজগঞ্জে আরো ২ জন নিহত হয়েছে। রাজধানীর কলেজগেট এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে বোমায় এই ২ জন মারা যায়। এদিন মহাখালী, কলেজগেট, প্রেস ক্লাব, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া ও গুলীবর্ষণের ঘটনা ঘটে। বোমার আঘাত ও গুলীতে এদিন ৬২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়।

৯টায় কলেজ গেট এলাকায় মিনিবাসে পরপর বোমা নিক্ষেপ করা হলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে হেলপার তোফাজ্জল (৪০) চাকায় পিষ্ট ও একজন যাত্রী বোমার আঘাতে মারা যায়। প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্রলীগ মিছিল করে, গাড়ি ভাংচুর করে বোমা নিক্ষেপ করে। দৈনিক ইত্তেফাকে এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। দৈনিক সংবাদ লিখে, এদিন চাঁদপুরে ডিসি অফিস ও ময়মনসিংহের জিআরপি থানায় বোমা হামলা হয়। দৈনিক সংগ্রাম লিখে, এদিন মহাখালীতে একটি ও সায়দাবাদে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। চট্টগ্রামে বোমা হামলায় ১ জন নিহত হয়।

প্রকাশ্য গুলী বোমা আগুন : ১৯ মার্চ নারায়ণগঞ্জে বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে সহস্রাধিক বোমা ও শত শত গুলী বর্ষিত হয়। এ সময় পুরো শহর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ মিছিল করে বিএনপির সমাবেশ স্থলে হামলা করে। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলী করে, সাংবাদিকদের ছবি না তোলার হুমকি দেয়। সাংবাদিকদের সামনেই শাহেদের বুকে গুলী লাগে, রানা নামে এক কিশোর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বলে দৈনিক ইত্তেফাকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এদিন পান্থপথে একটি এম্বুলেন্স, বাংলামোটরে ১টি প্রাইভেট কার ও ২টি বেবিটেক্সি পোড়ানো হয়। মতিঝিলে একটি পেট্রোল পাম্পে আগুন লাগানো হয়।

ট্রেন চলাচলে অচলাবস্থা; সেনা বহরে হামলা : ২১ মার্চ দেশের ট্রেন চলাচলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। সারা দেশে চলাচলকারী ৩ শতাধিক ট্রেনের মধ্যে মাত্র ১১টি ছাড়া হয়, তার মধ্যে সবগুলো সময় মতো পৌঁছতে পারেনি। সীতাকুন্ড স্টেশনে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকা অবস্থায়ই রাত ১০টার দিকে বারৈয়ারডালা স্টেশনের কন্ট্রোল প্যানেল, টেলিফোন সেট ও স্টেশনের দরজা জানালা ভাংচুর হয়। বিভিন্ন স্থানে ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলা হয়। নরসিংদী স্টেশনে ঢোকার মুখে ঢাকা হতে ভৈরব অভিমুখে ছেড়ে যাওয়া ঈশাখা এক্সপ্রেসে মিছিল করে প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে চালক ও সহকারী চালক আহত হয়। পরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। স্টেশনে থানা সেনা সদস্যরা তাদের উদ্ধার করেন। দৈনিক ইত্তেফাকে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এদিন কিশোরগঞ্জে ও মাদারীপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে ভাংচুর হয়। বেলা পৌনে ১১টার দিকে মিরপুরে সনি সিনেমা হলের সামনে পুলিশের জিপে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুর ১০ নং গোল চক্কর এলাকায় সেনাবাহিনীর বহর লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দৈনিক সংবাদে এ খবর প্রকাশিত হয়। এদিন রাজধানীতে ৪ ও নারায়ণগঞ্জে ৩ জন নিহত হয় বলে দৈনিক সংগ্রামে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

অব্যাহত সহিংসতার প্রেক্ষিতে ২০ মার্চ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ দিনও ঢাকায় নিহত হয় ১ জন। মিরপুরে ৫/৬ ঘণ্টা পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয় বলে দৈনিক সংগ্রামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বাসে পেট্রোল বোমা, রেল সেতুতে আগুন : ১৯৯৬ সালের ২৩ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ১৫তম দিনে ঘোড়াশালের রেল ব্রিজে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়, নরসিংদী খানাবাড়ী এলাকায় দেড়শ ফুট রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়। এছাড়া ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও পয়ারপুর-বিদ্যাখালীর মাঝেও রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়। ঝালকাঠিতে ডিসি অফিসসহ কয়েকটি সরকারি অফিস ভাংচুর করা হয়। এ সময় একজন পুলিশসহ ৭ জন আহত হয়। রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে চালক, হেলপারসহ যাত্রীরা আহত হয়। এ সময় পুলিশ বিডিআরের পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল। বরিশালেরও পৌরসভা অফিস, থানা ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে হামলা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। দৈনিক সংবাদে এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

১৪তম দিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল লাইনের সুতিয়াখালী-ফাতেমানগর স্টেশনের মধ্যবর্তী অংশের ফিশপে­ট ভেঙ্গে ফেলা হয়, ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ রেল লাইনের মাঝামাঝি অংশে এবং গাজীপুরের কাছে ধীরাশ্রমে রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়েছে। ভোর ৬টায় গোপীবাগে একটি বেবী টেক্সিকে ধাওয়া করলে একজন নিহত হয়। ৮টার দিকে আরামবাগে একটি বেকারী খোলা হলে জাতীয় পার্টির কর্মীরা বাধা দেয়, তারপরও খোলা রাখলে তারা তা তছনছ করে দেয়। মিরপুর বিআরটিসির দোতলা বাস সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছাড়া হলে বোমাবাজি করে বন্ধ করে দেয়া হয়। দৈনিক সংবাদে এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এ দিন ২০ মার্চ সায়দাবাদে বোমাবাজির সময় বাস চাপায় আহত হাবিবুর রহমান (৪০) এ দিন মারা যায়। তিনি এজিবির কর্মকর্তা।

হরতালে বোমাবাজি : ১৯৯৬ সালের ৬ মার্চ হরতালের দিন ব্যাপক হাঙ্গামা বোমাবাজি আহত হয় অর্ধ শতাধিক। দৈনিক বাংলার সামনে বিএনপির মিছিলে গুলীবর্ষণ, বোমায় কয়েকজন আহত হয়। ৭৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী ময়মুন হককে গুলীবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডেমরার এমপি সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে ৭০টি ট্রাকের মিছিল যাত্রাবাড়ী অতিক্রম করার সময় ব্যাপক বোমা বর্ষণ হয়। বহর থেমে যায়। পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে বলে দৈনিক ইত্তেফাকে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

অস্ত্রের মহড়া, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্রের অফিসে হামলা : ১৯৯৯ সালের ১১ ফেব্রচয়ারি ৬০ ঘণ্টা হরতালে ব্যাপক সংঘর্ষ, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়া, বিরোধী দলের অফিসে হামলা, ৬ জন নিহত হয়। জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ রাজধানীতে ৩০ জন গুলীবিদ্ধ হন। এদিন মগবাজারস্থ জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও দৈনিক সংগ্রাম অফিসে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ঢাকায় ছাত্রদল কর্মী নিহত সজল চৌধুরীর পিতা এডভোকেট শহিদুর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের বিরচদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনী হত্যা করেছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বিএনপির মিছিলে হাজী মকবুলের নেতৃত্বে শান্তি মিছিল থেকে গুলীতে সে মারা যায়।

এছাড়া হরতাল চলাকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিএনপির মিছিলে হরতাল বিরোধী মিছিল থেকে গুলীবর্ষণ করলে ছাত্রদল কর্মী ইউনুস (২০) গুলীবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ দিন পল্টন মোড়ে জামায়াতের মিছিলে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বোমা মারার পরপরই পুলিশ গুলীবর্ষণ করে। এতে হামিদুর রহমান আজাদসহ কয়েকজন বুলেটবিদ্ধ হন। এছাড়া ১৯৯৮ সালের ১৬ জুলাই হরতাল চলাকালে জামায়াতের তৎকালীন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবদুল কাদের মোল­vর নেতৃত্বে মগবাজারস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বের হলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়।

বন্দুকের দোকান লুট, গুলীবর্ষণ : ২৭ জানুয়ারি যশোরে হরতাল চলাকালে আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে বোমা হামলা হয়। বন্দুকের দোকান লুট, জাপা কর্মী রাজকুমার নিহত হয়। পুলিশ তার লাশ মাটি চাপা দেয়। দৈনিক জনতা এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। ১৮ ঘণ্টা হরতাল চলাকালে সারা দেশে ৩ জন নিহত ও আহত হয়েছে সহস্রাধিক। এছাড়া হরতাল চলাকালে মগবাজারে চাষী কল্যাণ সমিতির অফিসে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা। তারা এ সময় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জীপ (ঢাকা-ভ-৪৮৯)সহ ৮টি গাড়ি ভাংচুর করে। আশপাশের দোকান খোলার চাপ দেয়। না হলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।

বিরোধী দলের হরতালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস : ১৯৯৮ সালের ৯ নবেম্বর বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ ৭ বিরোধী দলের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের শুরচতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ব্যাপক সন্ত্রাস, ঢাকায় আওয়ামী লীগের বোমা ও গুলীতে ৪ জন নিহত। পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ১১টার দিকে কোতোয়ালি থানার বিএনপির মিছিল মেয়র হানিফের নাজিরা বাজার বাসা অতিক্রম করা কালে জয়বাংলা †¯­vগান দিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা ও গুলী করে। এখানে ২ জন নিহত হয়। ধোলাইপাড়ে নিহত হয় দুলাল সর্দার, নাজিরা বাজারে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলীতে নিহত হয় সালাম ও উমর ফারচক, কুড়িলে শফিক নিহত হয়। দু’দিনের হরতালে ৬ জন মারা যায়। ১৮ অক্টোবর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ৭ দলের ডাকে হরতালে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের গুলীতে ২ জন মারা যায়। এ সময় বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা ও গুলীবর্ষণ করে। এ সময় সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ শতাধিক নেতা-কর্মী গুরচতর আহত হয়।

ছাত্রলীগের জঙ্গি মিছিল : ২০০২ সালের ১৬ জুন হরতালে ছাত্রলীগ জঙ্গি মিছিল বের করে। পরদিন দৈনিক জনকণ্ঠে ছাপা হয়, সাড়ে ১০টার দিকে জিরো পয়েন্টের দিক থেকে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারচফা আক্তার পপির নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি জঙ্গিরূপ ধারণ করে দলের অফিসের দিকে এগুলো প্রথমে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় নেতাদের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হয়।’

বোমা মেরে মানুষ ঝলসে দেয়া : ২০০২ সালের ৬ এপ্রিল হরতালের সময় বোমায় ঝলসে যায় রাশেদ নামে এক ব্যক্তির শরীর। এদিন সকাল ৯টায় চকবাজার শাহী মসজিদের সামনে রিকশাযাত্রী রাশেদ (১৩) বোমায় ছিটকে পড়ে। এ সময় রিকশা চালক নজরচল ইসলাম (২৬) ও আহত হয়। ঢাকা মেডিকেলের ৩২ নং ওয়ার্ডে তার চিকিৎসা হয়। দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, তার আগের রাতে ডিবি পুলিশ গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার এলাকা ও হোটেল রমনায় অভিযান চালিয়ে ৫টি টাইম বোমা ১৪টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করে। তার আগে বিবি এভিনিউতে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে টহল পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গাড়িতে আগুন; চালক অগ্নিদগ্ধ : ২০০৫ সালের ৩০ জানুয়ারি হরতালের দ্বিতীয় দিনে ব্যাপক সহিংসতা চালায় আওয়ামী লীগ। ঢাকায় ২০টি গাড়ি ভাংচুর ও ৪টিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ধোলাইপারে হরতাল সমর্থকরা সিএনজি চালিত থ্রি হুইলারে (ঢাকা মেট্রো থ-১৬৪১) আগুন ধরিয়ে দিলে চালক সৌরভ অগ্নিদগ্ধ হয়। এ ছাড়া ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট হরতাল চলাকালে খুলনায় কেসিসির ১৬টি গাড়িসহ ২৫টি গাড়ি, ৪টি ব্যাংক ভাংচুর করা হয়। মোড়ে মোড়ে সড়ক অবরোধ করে গাড়িগুলো ভাংচুর করা হয়।

ট্রেনে আগুন; স্টেশনে হামলা : ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট হরতাল চলাকালে ভৈরবে আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগ, ১২টি বগি ভস্মীভূত, রেলস্টেশন কন্ট্রোল রচম ভাংচুর হয়। সকাল ১১-৩০ মিনিটে ভৈরব রেল সেতুর অদূরে আওয়ামী লীগ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন গতিরোধ করে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুমায়ুন কবীর ও ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান আহত হয়। পুলিশ ও বিডিআর মোতায়েন করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। এর ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটিরও বেশি বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানায়।

দোতলা বাসে আগুন; ৯ জন অগ্নিদগ্ধ : ২০০৪ সালের ৪ জুন হরতালের আগের রাতে শেরাটন হোটেলের সামনে বিআরটিসি দোতলা বাসে আগুনে ৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়। ১১ বছর বয়সী শিশুও নৃশংসতা থেকে রক্ষা পায়নি। আর ৭ দিন আগে টঙ্গীতে তৎকালীন বিরোধদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সরকার যদি সাত দিনের মধ্যে আহসান উল­vহ মাস্টারের হত্যাকারীদের বিচার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সারাদেশে আগুন জ্বলবে। পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকের শিরোনাম ছিল ‘নয় বাসযাত্রী জীবন্ত দগ্ধ’। দৈনিক সংগ্রাম লিখে, ‘আওয়ামী লীগের পিকেটারদের বোমায় ৯ বাস যাত্রী নিহত-আহত অর্ধশতাধিক’। দৈনিক আজকের কাগজের রিপোর্টে বলা হয়, ২০০৪ সালের ৫ মার্চ হরতালের আগের রাতে গুলিস্তানে বিআরটিসির দোতলা বাসে আগুন দেয়া হয়।

ঢাকা অবরোধ; দুই ওসিসহ পুলিশ আহত : ২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। তার আগে লাগাতার ৩ দিন ঢাকা অবরোধ চলে। এ দিন দৈনিক বাংলার মোড়, ইত্তেফাক মোড়, জয়কালী মন্দির, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান মোড় পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় অবরোধকারীরা হাতবোমা, ককটেল ও গুলী চালায়। এ সময় পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়।

৭ জানুয়ারি অবরোধ চলাকালে আদাবরে দু’ওসিসহ ১৫ পুলিশ আহত হয়। টঙ্গীতে পেট্রোল ঢেলে টেক্সিক্যাবে আগুন ধরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। আদাবরে দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ৫ জন পুলিশ, ৩ জন ফটো সাংবাদিকসহ ৫০ জন আহত হয়। এছাড়া চকবাজার, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ৩৪ নং ওয়ার্ড কমিশনার আবুল হাশেম হাসুর নেতৃত্বে মিছিল বের করলে সংঘর্ষ শুরচ হয়। এ দিন মগবাজারে একটি প্রাইভেট কার, ফার্মগেটে ট্যাক্সিক্যাবে অগ্নিসংযোগ করা হয়। রংপুরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ৮ পুলিশসহ ৭০ জন আহত হয়। খুলনায় ট্রেনে অগ্নিসংযোগ। সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। ২০০৬ সালের ৩ ডিসেম্বর অবরোধ চলাকালে আওয়ামী লীগ কর্মীদের গুলীতে সিলেটের বিশ্বনাথে ছাত্রদল নেতা ফয়েজ আহম অনু নিহত হয়। আহত হয় অর্ধ শতাধিক।

ট্রেনে আগুন; গাড়িরও রেহাই নাই : ১২ নবেম্বর দিনাজপুরগামী আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেসে টঙ্গীতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা অবরোধ করে ব্যাপক ভাংচুর চালায়, ২ বগিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী আবু হানিফ পিকেটারদের হামলায় নিহত হয়। এ সময় ব্যাপক ভাংচুর করা হয়।

২১ সেপ্টেম্বর তুমুল বৃষ্টিপাতের দিনেও আওয়ামী লীগের ভাংচুর, তান্ডব বন্ধ থাকেনি। এদিন মহিলা কর্মীরা গাড়ি ভাংচুর করে, পেট্রোল ঢেলে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ দিন আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন ও সুবিদ আলী ভূঁইয়ার নেতৃত্বে মহাখালীর আমতলিতে মিছিলের সময় ব্যাপক গাড়ি ভাংচুর করে।

পল­বীতে ইলিয়াস মোল­vর নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। মিরপুরে মাজার রোডে কামাল আহমদ মজুমদারের নেতৃত্বে বিআরটিসির দ্বিতলা বাসসহ অনেকগুলো গাড়ি ভাংচুর করা হয়। তার আগের দিনও ব্যাপক ভাংচুর, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

দু’পুলিশ সদস্য নিহত : ৩০ আগস্ট আওয়ামী লীগের মারমুখী পিকেটারদের ইটের আঘাতে পুলিশ নিহত। পল­বীতে নায়েক নারায়ণচন্দ্র বর্মন নিহত হয়। এ সময় বর্তমানে সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল­vহর নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। ২ জুলাই রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ চলাকালে সোনারগাঁও উপজেলার মোগড়াপাড়ায় ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই আবুল বাশার নিহত হয়। এ সময় মিছিলে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ নেতা কায়সার হাসনাত। এদিন ঢাকা ও আশপাশে ব্যাপক গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ১৪ দল।

আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ : ২০ জুন ১৪ দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, ব্যাপক ভাংচুর হয়। রাসেল স্কয়ার থেকে আবদুর রাজ্জাক, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, মোহাম্মদ নাসিম, দিলীপ বড়ুয়া, মায়ার নেতৃত্বে মিছিল করে ২৭ নম্বরের সামনে আসে। এ সময় পুলিশের ব্যারিকেডের ওপর হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। রাফা প­vজায় ভাংচুর চালায় তারা। বর্তমান সংসদ সদস্য কামাল মজুমদারের নেতৃত্বে আগারগাঁও আবহাওয়া অফিসের সামনে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। ১২টা ৫০ মিনিটে হামলা চালায় তারা। এ সময় পুলিশ পিছু হটে।

১৩ জুন ১৪ দলের হরতালে ব্যাপক ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ চালায়। ভোর ৬টায় মতিয়া চৌধুরী ও মায়ার নেতৃত্বে প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে মিছিল বের করে। জিরো পয়েন্টের কাছে গিয়ে গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। এদিন সকাল ৯টায় মহাখালীতে আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম রহমতুল­vহ ও সাহারা খাতুনের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। এ সময় মিছিল থেকে ৪-৫টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশসহ ১০-১২ জন আহত হয়। সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের বাসার সামনে থেকে অপু উকিলের নেতৃত্বে মহিলারা মিছিল করার চেষ্টা করে। তারা এ সময় পুলিশের ওপর ইট ও পাথর ছুঁড়ে মারে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়।

১১ জুন ঢাকা অবরোধের সময় অরাজকতা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর পুলিশসহ আহত ৩ শতাধিক। এদিন ঢাকার মগবাজার, বাংলামোটর, গাবতলী, মিরপুর মাজার রোড, টঙ্গী, কাচপুর, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, ধানমন্ডি, রাসেল স্কয়ার, পুরান ঢাকার চকবাজারে পুলিশ-বিডিআরের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ দিন অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাংচুর করা হয়। রূপগঞ্জে, কাচপুরে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে আর্মড পুলিশ ও বিডিআরের ওপর চড়াও হয়। এ সময় ৩০ জন পুলিশসহ ২ শতাধিক মানুষ আহত হয়। এ সময় কাচপুরে মহিউদ্দিন খান আলমগীর, মেজর জেনারেল (অবঃ) শফিউল­vহ, মেজর (অবঃ) সুবিদ আলী ভূঁইয়া অবস্থান করে। যুবলীগ কর্মীরা ইস্কাটন থেকে মিছিল করে মগবাজার মোড়ে গাড়ি ভাংচুর করে। এখানে ৫ জন পুলিশ কনস্টেবলসহ ১০ জন আহত হয়। সাভার বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এখানে ছিলেন তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, আবু সাইয়িদ, তালুকদার খালেক প্রমুখ। এদিন রাফা প­vজার কাছে শাহজাহান খান, হাজী মকবুলের নেতৃত্বে রাসেল স্কয়ারের কাছে, ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ২০ এপ্রিল ছিল ১৪ দলের হরতাল। এদিন পুলিশের ওপর মহিলাকর্মীদের চড়াও এবং গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। বিবি এভিনিউতে পুলিশের ওপর হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় সেখানে পীর ইয়ামেনী মাকেটের সামনে সমাবেশ করে। সভাপতিত্ব করেন ১৪ দলের ঢাকা মহানগর সমন্বয়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাসদের হাসানুল হক ইনু, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, মেহের আফরোজ চুমকি, নূরচন্নবী শাওন। সভা শেষে বিবি এভিনিউর কার্যালয়ে প্রবেশের সময় পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়।

মহিলা পুলিশকে গলা টিপে মারার চেষ্টা : হরতালের সময় মহিলা পুলিশকে গলাটিপে মারার ঘটনা সৃষ্টি হয় ২০০৫ সালের ২০ আগস্ট। এ দিন যুবমহিলা লীগের কর্মীরা ধানমন্ডির রাফা প­vজার সামনে পুলিশ সদস্যকে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করে। প্রথমে তারা মহিলা পুলিশ সদস্যের হেলমেট ও লাঠি কেড়ে নেয়, তারপর এলোপাথাড়ি লাথি মারে, পরে গলা টিপে ধরে। যুবলীগ নেত্রী সাবিনা আকতার তুহিনের নেতৃত্বে এ হামলা হয়। এ সময় গাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে।

সিএনজি চালকের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন : ২০০৫ সালের ২১ মে হরতালের দিন খিলগাঁও থানার তিলপাপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সিএনজি চালক আমির হোসেনের (৪০) গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার ৫ দিন পর তিনি মারা যান। অনি ও ঋতুর বাবা, ববিতার স্বামী হারানোর কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি করে তোলে। তার বেবিট্যাক্সি নং- (ঢাকা মেট্টো-থ-১৪-৩৯৪৮)। মারা যাওয়ার আগে সে বলেছিল, জীবনে কোনো দিন আওয়ামী লীগকে ভোট দিমু না। তারা আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। কী অপরাধ ছিল আমার? গাড়ি চালানো কী আমার অপরাধ? দুটি মেয়ের লেখাপড়া শেষ হয়ে যাবে এখন। আমার ঘটনার ব্যাপারে কী আওয়ামী লীগ নেতারা কোনো জবাব দিতে পারবেন?’ ১৮ ও ২১ মে এইচএসসি ও আলিম, ফাজিল ও কামিল পরীক্ষার দিন হরতাল দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এই হরতালের শেষ দিনেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে সিএনজি চালক আমির হোসেনকে।

শেরপুরে পুলিশ হত্যা : ২০০৫ সালের ৬ ফেব্রচয়ারি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার হরতাল চলাকালে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ইট ও লাঠির আঘাতে নালিতাবাড়ী থানার পুলিশ কনস্টেবল আশরাফ সিদ্দিকী মারা যায়। গুরচতর আহত হয় এসআই নূর ইসলাম, এস আই সিজানুর রহমান, কনস্টেবল মজিবুর রহমান। নালিতাবাড়ীর নকলা-নালিতাবাড়ী সড়কের যোগানিয়ার মোড়ে গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগ কর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা লাঠি ও ইট দিয়ে আশরাফ সিদ্দিকীকে পিটিয়ে মারে। অন্যদের গুরচতর আহত করে।

ব্যবসায়ীর গায়ে আগুন : একই দিনে (২০০৫ সালের ৬ ফেব্রচয়ারি) পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী হাজী বুলবুলের (৩৫) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুপুর ১২টার দিকে বংশালের মুকিম বাজার জামে মসজিদের সামনে হরতালকারীরা রিকশা আটকায়। এ সময় রিকশায় তাকেসহ কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। (daily songram) কাদের হাতে বিশ্বজিৎ খুন হলো? কারা সংসদে চেয়ার দিয়ে স্পিকার পিঠিয়ে মারে? কারা গনতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছে? কারা খুন,গুম আর নিপীড়নের রেকর্ড করলো? তাদের নিষিদ্ধ করা হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×