somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ছানাউল্লাহ
জাগো যুব সমাজ

বাংলাদেশে মহাজোট সরকারের ইসলাম নিধন অভিযান

১০ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বর্তমান মহাজোট সরকারের চার বছরে দেশে চরমভাবে বিদ্বেষের শিকার হয় ইসলাম, ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান। ক্ষমতায় গেলে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন করা হবে না মর্মে নির্বাচনী ওয়াদা দেয়ার পর তা ভঙ্গ করে সরকার একের পর ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এতে হতবাক হয়ে যায় মানুষ। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা বাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপন, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন, ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালু, বোরকাবিরোধী রায় ও পরিপত্র জারি, সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য, আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন মহলের কটূক্তি, আলেমদের নির্যাতন, দাড়ি-টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড, জেহাদি বইয়ের নামে অপপ্রচার, ইসলামী রাজনীতি দমন,হেফাজতে ইসলামকে দমন ও গণহত্যা এবং মাদরাসাবিরোধী ষড়যন্ত্রসহ সরকারের ব্যাপক ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ। বর্তমান সরকার ইসলাম ধ্বংসের এজেন্ডা নিয়ে ক্ষমতায় এসে পরিকল্পিতভাবে ইসলামবিরোধী এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে ইসলামী দলের নেতারা মন্তব্য করেছেন।
হেফাজতের আলেম ওলামা গণহত্যা
এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নাস্তিক মুরতাদদের আস্ফালন ভয়ানকভাবে বেড়ে গেছে। কারণ আওয়ামী লীগ হচ্ছে নাস্তিক মুরতাদদের পৃষ্টপোষক। তারা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন অনলাইন,পত্র-পত্রিকাতে ইসলাম,আল্লাহ,রাসুল এবং ইসলামের বিভিন্ন বিধি বিধান নিয়ে ভয়ানকভাবে কটুক্তিতে নেমেছে নাস্তিকরা। এ ব্যাপারে ২০০১২ সালে মহামান্য হাইকোট এসব ব্লগ ও ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে নিদেষ দিয়েছিল। কিন্তু সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় লালন-পালন করতে লাগলেন। আর এরকম কিছু ব্লগারের উদ্যোগে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেখান থেকে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী এবং ইসলামী ব্যাংক বন্ধের ঘোষনা দেয়া হয়। তাদের ইসলাম বিদ্বেষী কাজের কারণে এসব ইসলাম বিরোধী কাজের প্রতিরোধের জন্য হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে নামের একটি সংগঠনের আবিভাব ঘটে। যাদের আন্দোলনে গণ মানুষের গণ সমথন মেলে। এরই প্রেক্ষাপটে তারা ৬এপ্রিল রাজধানীর শাপলা চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সব মহাসমাবেশ আয়োজন তাক লাগিয়ে দেয়। সেই মহাসমাবেশ থেকে ১৩ দফা দাবী ঘোষনা করে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ৩০ এপ্রিল পযন্ত সময় দেয়। এবং পরবতী কমসূচী হিসাবে বিভিন্ন মহানগন ও জেলায় তারা শানে রাসুল (সা:) সম্মেলনের মাধ্যমে তারা তাদের দাবীর যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। কিন্তু সরকার তাদের দাবী গুলো সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেই ক্ষান্ত হন নাই, তাদের দাবীর বিরুদ্ধে সরকার সমথক সকল গোষ্ঠিকে মাঠে নামানো হয় হেফাজতকে দমনের জন্য। আর হেফাজতে ইসলামও তাদের দাবী বাস্তবায়নে অনড় অবস্থানে এরই প্রেক্ষাপটে তাদের পূব ঘোষিত কমসূচির অংশ হিসাবে গত ৫ই মে রাজধানী ঢাকা অবরোধের শান্তিপূণ কমসূচি তারা পালন করে। সেই কমসূচিতে সরকারী পুলিশ,আওয়ামী লীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের গোন্ডা বাহিনী সকাল থেকেই তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে নিবিচারে গুলি টিয়ারশেল গ্রেনেড দিয়ে হামলা করে তাদের কমসূচিকে ভন্ডুল করতে চেষ্ঠা করে। এর পরও তাদের কমসূচি অব্যাহত থাকে। তাদের কমসূচিকে বিতকিত করার জন্য যুবলীগের নেতৃত্বে পল্টনে বইয়ের দোকানে হামলা করে পবিত্র কোরআন শরীফ পোড়োনো হয়, স্বণের দোকানে লুটপাট করা হয়। এর পরও তারা ধৈয ধারণ করে রাজধানীর শাপলা চত্বরে অবস্থান গ্রহণ করে। এবং তাদের প্রতি সরকার ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসের কারণে তাদের দাবী গ্রহণের আল্টিমেটাম দিয়ে তারা শাপলা চত্বরে দাবী আদায় না হওয়া পযন্ত অবস্থানের ঘোষনা দেয়।আর এতেই সরকারের হাটবিট বেড়ে যায়। তাদের এ অবস্থানের কারণে মুসাফির হিসাবে তাদের প্রতি সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্যই ঢাকা বাসী ও ১৮ দলীয় নেতাকমীদের প্রতি আহবান জানান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আর এতেই সরকারের হাটবিট আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়। খালেদা জিয়ার আহবানের আগে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সন্ধার আগে ঢাকা ছাড়ার জন্য হেফাজতকে হুক্কার দেন। এরপরও হেফাজত নেতাকমীরা শাপলা চত্বরে অবস্থান গ্রহন করে। তারা সেখানে যিকির,দোয়া,তেলাওয়াত, বক্তব্য ইত্যাদীর মাধ্যমে রাত যাপনের সিদ্ধান্ত নেন। এরই প্রেক্ষাপটে সরকার নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ভারতের সহযোগিতায় গভীর রাতে হেফাজতে ইসলাম কে সরানোর জন্য ভয়ংকর যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঘুমন্ত নিরীহ তৌহিদী জনতার উপর ঝাপিয়ে পড়ে।রোববার মাঝ রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জিকিররত আলেমদের বুকে একযোগে গুলি চালিয়েছে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও সরকারি দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা। চারদিক থেকে আসতে থাকে ঝাঁকে ঝাঁকে হাজার হাজার রাউন্ড গুলি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলি এসে বিঁধতে থাকে আলেমদের বুকে। গুলিবিদ্ধ পাখির মতো রক্তাক্ত অসংখ্য আলেমকে পড়ে থাকতে দেখা যায় রাস্তায়। আলেমদের সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি আর তসবিহ রক্তে ভিজে চুবচুব করছিল। মতিঝিলের পিচঢালা কালো রাস্তা আলেম-ওলামাদের রক্তে লালে লাল হয়ে যায়। এত রক্ত ধুয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে হিমশিম খেতে হয় সরকারি কর্মচারীদের। আল্লাহ-রাসুল (সা.)-এর ইজ্জত রক্ষার দাবি নিয়ে এসে এসব আলেমকে জীবন দিতে হলো।
রাত আড়াইটার দিকে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন পড়ে আছে অনেকের নিথর দেহ। আবার অনেকে বেঁচে থাকার আকুতি জানাচ্ছিলেন সরকারি বাহিনীর কাছে। বাধার কারণে ছবি তুলতে পারেনি ফটোসাংবাদিকরা। দিগন্ত টিভি কিছু কিছু ফুটেজ সরাসরি দেখাচ্ছিল বলে চ্যালেনটি তাত্ক্ষণিক বন্ধ করে দেয়া হয়। একই কারণে বন্ধ করে দেয়া হয় ইসলামিক টিভির সম্প্রচার। চতুদিক থেকে তাদের উপর বৃষ্টির মতো গুলি বোম ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। তাদের বেপরোয়া হামলায় হাজার হাজার হেফাজতের নিরীহ নেতাকমী শাহাদাত বরণ করেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের সবাই একমত যে, মহাজোট সরকারের এ গণহত্যা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যাকেও হার মানিয়েছে। দেশী ও বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ অভিযানকে স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে গণহত্যা হিসাবে অভিহিত করেছে। তাদের উপর ইতিহাসের ভয়ংকর গণহত্যা চালানোর পর তাদের লাশ গুলো গোপনে গুম করে ফেলা হয় তাদের নিষ্ঠুরতা লুকানোর জনÏ। বিরোধী দলসহ দেশের সচেতন সকল মহল একে গণহত্যা আখ্যায়িত করে এর কঠোর নিন্দা জানান। দেশী বিদেশী মিডিয়ায় এ গণহত্যা নিয়ে তোলপাড় চললেও আমাদের দালাল মিডিয়াগুলো নিশ্চুপ। আর এ গণহত্যা ফাস হওয়ার ভয়ে ইতিমধ্যে দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দেয়া হয়। আওয়ামীলীগের এ নিষ্ঠুরতায় সারা দেশবাসী শোকাহত। কিন্তু এর মাধ্যমে তারা নিজেদেরই পায়ে নিজেরা কুড়াল মেরেছে। আর এর মাধ্যমে তারা তাদের সেই চির চিনা ইসলাম বিদ্বেষী মুখোশ জনসাধারণের সামণে আবারো উন্মোচন করল। এভাবে গণহত্যা চালিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে কেউ পার পায় নাই। আমরা ২৫শে মাচের কালো রাত্রি দেখি নাই,কিন্তু শেখ হাসিনার কল্যাণে সেই কালো রাত্রির ভয়াবহতা আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি। আর এসব গণহত্যা চালিয়ে তিনি প্রমাণ করলেন তিনি আসলে গণতন্ত্রের মানস কণ্যা নন, দেশরত্না নন, তিনি গণহত্যার নেত্রি! ইতিহাসে হয়ত তিনি এ নামেই খ্যাতী লাভ করবেন?
জামাত-শিবির নিধন অভিযান
আওয়ামী মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গত চার বছরে জামাত-শিবিরকে নিধন করার জন্য রাষ্ট্রীয় সকল শক্তি ব্যয় করে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। ‍যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে জামাতের শীষÐ নেতাদের রাসুল (সা:) কে অবমাননার একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে আরো অসংখ্যা মামলায় জড়ানো হলো। যারা তাদের পুরো জীবনটাই রাসুল (সা:) এর আদশÐ বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিত প্রাণ তাদেরকেই জড়ানো হলো রাসুল (সা:) এর অবমাননার মামলায়।এর পর থেকে শুরু হলো সারা দেশে জামাত-শিবির নিধন অভিযান। হামলা,মামলা আর দমন নিপীড়নের মাধ্যমে জামাত-শিবিরের উপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় ববরতা। কিভাবে ট্রাইবুনালকে ব্যবহার করে জামাতের শীষÐ নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলানোর চক্রান্ত করা হচ্ছে তার উল্লেখ পাওয়া যায় স্কাইফি কেলেংকারীতে। যার দায় স্বীকার করে ইতিমধ্যে ট্রাইবুনাল চেয়ারম্যান নিজামুল হক পদত্যাগ করেছেন। ইতিমধ্যে ৩ জনের রায় দেয়া হয়েছে। জামাতের সাবেক নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদের ফাঁসির রায়, জামাত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা কে যাবতজীবন কারাদন্ড, আর জামাতের নায়েবে আমীর আন্তÐজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসীরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে। এ রায়ের প্রতিক্ষিয়ায় ক্ষুব্ধ জনসাধারণকে দমনের জন্য পাখির মতো গুলি করে কয়েকদিনে প্রায় ১৭০ জনের মতো নিরীহ লোককে হত্যা করা হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনসাধারণের রোষানলে পড়ে ৭ জন পুলিশও নিহত হয়। শুধু আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির রায়ের দিন বিক্ষুব্ধ জনসাধারণকে দমনের জন্য গুলি করে ৫৬ জনকে হত্যা করা হলো। যা স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে এতো বড় গণহত্যার ঘটনা আর ঘটে নাই। যা নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ফাঁসির রায়ের অপেক্ষায় আছেন জামাতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম,জামাতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রোটারী জেনারেল আলী আহসান মো: মুজাহিদ, জামাত নেতা কামারুজ্জমান সহ আরো কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। জামাত শিবিরের নিধনের অভিযান হিসাবে জামাতের সকল কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে জেলা পযায়ের বড় বড় সব নেতাদের গ্রেফতার করে জড়ানো হয়েছে শত শত মামলায়। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে রিমান্ডের নামে ইতিমধ্যে তাকে ৩২ দিনের নিমÐম নিযাÐতন করনা হয়েছে। আরো রিমান্ডের নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে তাকে সারা দেশের প্রায় ৩শ মামলায় জড়ানো হয়েছে। এভাবে গণহত্যা,ফাঁসির রায়,মামলা হামলা ইত্যাদীর মাধ্যমে জামাত শিবিরকে নিধনের ভয়াবহ তৎপতায় মেতেছে সরকার। এভাবে কি একটি আদÐশিক দলকে নিধন করা সম্ভব হবে?
ইসলামবিরোধী আইন ও নীতি প্রণয়ন :

শুধু ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডই নয়, গত চার বছরে সরকার একের পর এক কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বেশকিছু আইন ও নীতি প্রণয়ন করেছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও গত চার বছরে সরকার কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন, ইসলামবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর,
বোরকাবিরোধী তত্পরতা ও পরিপত্র জারি, সংশোধনীর নামে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজনসহ বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংসে সরকার পরিকল্পিতভাবে এসব আইন করছে বলে মন্তব্য করেছেন সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ নেতা ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী।
সরকার ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মাথায় মরহুম অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল, শুরু থেকেই তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন সংগঠন। পরবর্তীতে ওই কমিটির ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির যে রিপোর্ট দেয়—তা প্রত্যাখ্যান করে সেটি সংশোধন বা বাতিলের জোর দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এসব দাবি ও আলেম-ওলামাদের মতামত উপেক্ষা করেই সরকার শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করে এবং ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর তা সংসদে পাস হয়। এতে সংশ্লিষ্ট মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ওই বছর ২৬ ডিসেম্বর সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ হরতালের ডাক দিলে সরকার দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে তা স্থগিত করা হয়। কিন্তু সে দাবি আর বাস্তবায়ন করেনি সরকার।
‘নাটোরের সরকারি রানী ভবানী মহিলা কলেজে বোরকা পরে আসতে মানা’ শিরোনামে ২২ আগস্ট একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে এবং এ সম্পর্কে কোর্টের তত্পরতার পর সরকারও উদ্যোগী হয়। বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও একটি পরিপত্র জারি করা হয়।
নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে ধর্মীয় দলগুলোর প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সরকার গত বছরের ৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতির খসড়া অনুমোদন করে। এটি বাতিল বা সংশোধনের জন্য ব্যাপক আন্দোলন, এমনকি হরতাল পালিত হলেও এখনও পর্যন্ত সরকার অনড় অবস্থানে রয়েছে। এদিকে গত বছরের ৩০ জুন সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী গ্রহণ করে সংবিধানের মূলনীতি থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপন করা হয়। শুধু তাই নয়, এতে বিসমিল্লাহর বিকৃত অনুবাদ সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া সংবিধান থেকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন সংক্রান্ত ধারা বাদ দেয়া হয়েছে।

কর্তাব্যক্তিদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য :

গত চার বছরে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের লাগামহীন ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত বক্তব্যে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। গত বছর অক্টোবরে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন—‘এবার গজে চড়ে মা দুর্গা আসায় ফসল ভালো হয়েছে।’ একই বছর ১৩ জুলাই এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন—‘আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই।’ আর সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন—‘সংবিধান থেকে ধর্মের কালো ছায়া মুছে ফেলা হবে।’ ২০০৯ সালে পৃথক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, ‘সব ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা হবে।’

২০০৯ সালের ১ এপ্রিল একটি অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছিলেন, ‘কওমী মাদরাসাগুলো এখন জঙ্গিদের প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কওমী মাদরাসাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছে। এসব কওমী মাদরাসায় যে শিক্ষা দেয়া হয়, তা কূপমণ্ডূকতার সৃষ্টি করছে। ’৭৫-পরবর্তী সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সংশোধনী এনে ’৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে নস্যাত্ করার ফলেই এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে।’ একই বছর পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘ধর্ম তামাক ও মদের মতো একটি নেশা।’ রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘ব্যাঙের ছাতার মতো কওমী মাদরাসাগুলো গজিয়ে উঠেছে।’ গত ১০ ডিসেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা হিন্দুদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন।’
মন্ত্রীদের পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি শামীম মোহাম্মদ আফজালের বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যও ছিল আলোচনার বিষয়। ২০০৯ সালের ২৮ মার্চ এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রয়েছে, তার সবই ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে (!)। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয়।’ গত বছর ১০ ডিসেম্বর ইমামদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা ইহুদিদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন।’ এর ক’দিন আগে তিনি বলেছিলেন, ‘জিহাদ বিদায় করতে হবে।’ ২০১০ সালের এপ্রিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা আল্লাহর ক্ষমতা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। এছাড়া মার্চের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করা হয়।

আল্লাহ, রাসুল ও ইসলাম নিয়ে কটূক্তি :

এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে ইসলাম নিয়ে কটুক্তির মহোৎসবে মেতেছে এক শ্রেণীর মানুষ। গত চার বছর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মহল থেকে আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম নিয়ে অসংখ্য কটূক্তি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবিতে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সত্ত্বেও সরকার তাদের শাস্তির পরিবর্তে অনেককে পুরস্কৃত করেছে। ২০১০ সালের ১ আগস্ট বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্ট দেবনারায়ণ মহেশ্বর পবিত্র কোরআন শরিফের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। রিট আবেদনে তিনি দাবি করেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর বড় ছেলে ইসমাইলকে (আ.) কোরবানির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন বলে যে আয়াত পবিত্র কোরআন শরিফে রয়েছে, তা সঠিক নয়। তিনি দাবি করেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর ছোট ছেলে হজরত ইসহাককে (আ.) কোরবানি করতে নিয়ে যান। এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা ও কোরআনের আয়াত শুদ্ধ করার জন্য দেবনারায়ণ মহেশ্বর আদালতের কাছে প্রার্থনা করেন। আদালত রিট খারিজ করে দেয়ার পর দেবনারায়ণের এ চরম হঠকারি ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে দেবনারায়ণকে পুলিশের পাহারায় এজলাস থেকে বের করে তাদের ভ্যানে প্রটেকশন দিয়ে আদালত এলাকার বাইরে নিরাপদ অবস্থানে নিয়ে যায়।
গত বছর ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পিতৃভূমি টুঙ্গিপাড়ার জিটি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শঙ্কর বিশ্বাস দশম শ্রেণীর ক্লাসে দাড়ি রাখা নিয়ে সমালোচনাকালে হজরত মোহাম্মদকে (সা.) ছাগলের সঙ্গে তুলনা করেন। এতে ওই ক্লাসের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে শঙ্কর বিশ্বাস টুঙ্গিপাড়া থেকে পালিয়ে যায়। একই বছর ২৬ জুলাই ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মদন মোহন দাস মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এবং পবিত্র হজ নিয়ে কটূক্তি করেন। সহকর্মী শিক্ষকদের সঙ্গে এক সভায় তিনি মন্তব্য করেন, ‘এক লোক সুন্দরী মহিলা দেখলেই বিয়ে করে। এভাবে বিয়ে করতে করতে ১৫-১৬টি বিয়ে করে। মুহাম্মদও ১৫-১৬টি বিয়ে করেছে। তাহলে মুসলমানদের মুহাম্মদের হজ করা স্থান মক্কায় গিয়ে হজ না করে ওই ১৫-১৬টি বিয়ে করা লোকের বাড়িতে গিয়ে হজ করলেই তো হয়।’ এ ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে সরকার তাকে অন্যত্র বদলি করে শাস্তির আড়ালে পদোন্নতি দেয়।
একইভাবে মানিকগঞ্জে বিশ্বজিত মজুমদার কর্তৃক রাসুল (সা.) এর জন্ম এবং পবিত্র কোরআন নিয়ে কটূক্তি, বাগেরহাটের এক হিন্দু কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদকে শিব লিঙ্গের সঙ্গে তুলনা, খুলনার পাইকগাছায় আরেক হিন্দু মহান আল্লাহ সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, নেত্রকোনার চন্দ্রনাথ হাইস্কুল গেটের কোরআনের আয়াত সংবলিত সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলা, বাগেরহাটের কচুয়ায় এক হিন্দু কর্তৃক মহান আল্লাহর ছবি ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্কন করা, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে রাসুল (সা.) সম্পর্কে হিন্দু কর্তৃক চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন এবং ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক হিন্দুর রাসুল (সা.) এর প্রতি কটূক্তিসহ বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের ইসলামবিরোধী বক্তব্য স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড :

দেশের সর্ববৃহত্ সরকারি ইসলামী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনে গত তিন বছরে ব্যাপক দুর্নীতি, ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সর্ব মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও জজ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হিসেবে শামীম মোহাম্মদ আফজাল নিয়োগ পাওয়ার পরপরই শীর্ষ আলেমরা তাকে একজন প্রতিষ্ঠিত মাজারপন্থি ও কবর পূজারি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। নিয়োগ পাওয়ার পর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি অবশ্য একথার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের একাধিক পীরের ঘনিষ্ঠ মুরিদ দাবিদার শামীম মোহাম্মদ আফজাল তার ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এরই মধ্যে মাজার-খানকাপন্থিদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন। এসব জায়গায় হাক্কানি আলেম-ওলামাদের দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ইসলাম ও ইসলামী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতেই ইসলামী চিন্তা-চেতনা বিরোধী এই ডিজিকে আওয়ামী লীগ সরকার নিয়োগ দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী।
২০১০ সালে রমজানে সম্পূর্ণ মনগড়াভাবে ইফার উদ্যোগে তাদের পছন্দের আলেমদের নিয়ে ১০০ টাকা ফিতরা নির্ধারণ করা হলে সারাদেশে বিতর্কের ঝড় ওঠে। একপর্যায়ে ফিতরার সর্বনিম্ন ১০০ টাকার স্থলে ৪৫ টাকা নির্ধারণে বাধ্য হয় তারা। দীর্ঘদিন ধরে হামদ, নাত ও ইসলামী সঙ্গীত তথা ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশেষ ভূমিকা থাকলেও বর্তমানে সেই ঐতিহ্য ম্লান হতে চলেছে। এখন এসব সংস্কৃতির বদলে অশ্লীল নাচ-গানের আসরের আয়োজন করা হয়। ২০১০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। অনুষ্ঠানে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে করমর্দনও করেন ডিজি শামীম মোহাম্মদ আফজাল। কাঙ্গালিনী সুফিয়ার একতারা এবং শরীর দুলিয়ে নাচ-গানে বিব্রত অবস্থায় পড়েন উপস্থিত ইমামরা। এছাড়া ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে জাতীয় শিশু-কিশোরদের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে হামদ ও নাতের বিচারক হিসেবে এমন শিল্পীদের আনা হয় যাদের অনেকেই ইসলামি সঙ্গীতের ধারার সঙ্গে পরিচিত নয়। এ নিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
একইবছর ২৭ নভেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ঘটে সবচেয়ে বড় ঘটনা। ওইদিন আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল। এই প্রতিনিধিদলের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে ডিজির অনুরোধে ইমামদের সামনে মার্কিন তরুণ-তরুণীরা পরিবেশন করে অশ্লীল ব্যালে নৃত্য। অবশ্য এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানায় ব্যালে ড্যান্স নয় ৩৫ সেকেন্ডের ‘সুয়িং ড্যান্স’ পরিবেশন করা হয়। গত বছর ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে ফাউন্ডেশনের পরিচালক হালিম হোসেন খান অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে জনতার হাতে আটকের ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় ও তাকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে। আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ তেমন কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
২০১০ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের বিতর্কিত খতিব অধ্যাপক মাওলানা সালাহউদ্দিন কর্তৃক জাতীয় ঈদগায় ঈদুল ফিতরের নামাজে ভুল করা নিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।


জঙ্গিবাদী জিহাদি বই নিয়ে অপপ্রচার ও নির্যাতন :

বর্তমান সরকারের চার বছরে আলেম-ওলামা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দমনে ব্যাপকভাবে ‘জঙ্গি ও জিহাদি বই’ বিরোধী প্রচারণা চালানো হয়। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী, বিরোধী মতকে দমন বা ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের অন্যতম হাতিয়ার ছিল এটি। পুলিশ যখন যাকে ইচ্ছা জিহাদি বই পাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে। এ সময় বিভিন্ন ইসলামী দলের অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়। পুলিশ জিহাদি বই উদ্বারের নামে যেসব পুস্তক আটক করে এর কোনোটিই সরকারিভাবে নিষিদ্ধ নয়।

২০০৯ সালের ১৯ জুন রাজশাহীতে জঙ্গি সন্দেহে ১৫ নারী ও শিশুকে গ্রেফতার করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওইদিন বিকালেই মুচলেকা দিয়ে তাদের মুক্ত ঘোষণার পর আবার ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে ব্যাপক তদন্ত করেও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য পায়নি। শেষপর্যন্ত আদালত তাদের বেকসুর খালাস দিলে জুলাই মাসের ১ তারিখে ১১ দিন কারাবাস শেষে ১৫ জন নিরপরাধ নাগরিক মুক্তি পান। এরপরও পুলিশ সারাদেশে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী বইপত্রকে জিহাদি বই আখ্যায়িত এবং বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে ধর্মীয় বই সংরক্ষণকারীদের জঙ্গি অভিযোগে গ্রেফতার নির্যাতন চালায়।

আলেমদের গ্রেফতার নির্যাতন :

গত চার বছরে দেশকে অনৈসলামিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকার আলেম-উলামাদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের মাধ্যমে নিষ্ক্রীয় এবং ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখার চেষ্টা চালায় বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী। সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আলেমরা যাতে মাঠে নামতে না পারেন সে জন্যই নানা উদ্যোগ নেয়া হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ২০০৯ সালের মে মাসে মিথ্যা একটি মামলায় ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আন্দোলনের মুখে তাকে ছেড়ে দেয় সরকার। এরপরও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়নসহ সরকারের বিভিন্ন অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে গত বছরের ৪ এপ্রিল মুফতি আমিনীর ডাকে সারাদেশে হরতাল পালনের পর ষড়যন্ত্রের মাত্রা বেড়ে যায়। কিছুদিনের মাথায় তার ছেলে অপহরণ, তাকে গৃহবন্দি এবং ভিত্তিহীন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে রাখা হয়েছে।
২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কথিত অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আটক করা হয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে। ওই মামলায় জামিন পেলেও পরে তাদের অন্য মামলায় আটক ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। গত বছরের ৪ এপ্রিলের হরতাল উপলক্ষে আগের দিন যশোরে আলেমদের একটি মিছিল বের হলে পুলিশ তাতে হামলা ও গুলি চালায়। এতে এক মাদরাসা ছাত্র ও হাফেজ নিহত হয়।

দাড়ি, টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি :

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দাড়ি, টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি বেড়ে যায়। তার প্রমাণ আবারও পাওয়া গেছে গত চার বছরে।
২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল বরিশালের নিউ সার্কুলার রোডের এক বাড়িতে র্যাব হানা দিয়ে বোরকা পরে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য জড়ো হওয়ার অপরাধে ২১ নারীকে গ্রেফতার করে। র্যাব সাংবাদিকদের কাছে তাদের অভিযানের সংবাদ জানালে তা ফলাও করে ছাপা হয়। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য না পেয়ে ২১ পরহেজগার নারীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়। ঘটনার দীর্ঘ ২ মাস পর ২৩ জুন আদালত তাদের বেকসুর খালাস দেন। একইভাবে বোরকা পরার অপরাধে ২০০৯ সালের ৩ জুলাই পিরোজপুর জেলার জিয়ানগরে ছাত্রলীগের বখাটে কর্মীদের প্ররোচনায় পুলিশ জঙ্গি সন্দেহে তিন তরুণীকে গ্রেফতার করে। তারপর পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তিন তরুণীকে ঢাকায় টিএফআই সেলে নিয়ে আসা হয়। ৫৪ ধারায় গ্রেফতারকৃত তরুণীদের বিরুদ্ধে মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন অমর সিংহ। এ সময় তাদের বোরকা খুলতে বাধ্য করে মহাজোট সরকারের দিনবদলের পুলিশ। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদেও কোনো জঙ্গি সংযোগের কাহিনী বানাতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফাইনাল রিপোর্ট দিতে বাধ্য হয়। দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি থেকে অবশেষে তিন অসহায়, নিরপরাধ তরুণী মুক্তি পায়।
২০১০ সালের ৩ এপ্রিল সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয় যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. একেএম শফিউল ইসলাম তার ক্লাসে ছাত্রীদের বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি ক্লাসে ‘মধ্যযুগীয় পোশাক বোরকা’ পরা যাবে না এবং এটি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোনো পোশাক হতে পারে না বলে ফতোয়া জারি করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি বিভাগীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়, তবে আমার ক্লাসে কোনো ছাত্রীকে আমি বোরকা পরতে দেব না।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর ইডেন ও বদরুন্নেছা কলেজে বোরকাধারী ছাত্রীদের হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ইডেন কলেজে বোরকা পরা ছাত্রীদের ধরে বোরকা খুলে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলেও তল্লাশির নামে পর্দানশীন ও নামাজি ছাত্রীদের হয়রানির ঘটনা ঘটে। এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের রুম থেকে ইসলামী বই পুস্তককে জিহাদী বই বলে তা জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রশাসনের সহায়তায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সারাদেশে বোরকাধারী ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পায়জামা-পাঞ্জাবি ও বোরকা পরে আসতে নিষেধ করেন এক শিক্ষক। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাইখুল ইসলাম জিয়াদ নামের এক শিক্ষক বোরকা পরায় তিন ছাত্রীকে ক্লাস থেকে বের করে দেন। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বর্তমান সরকারকে ইসলামবিরোধী হিসেবেও আখ্যায়িত করেন সংশ্লিষ্টরা।

ইসলামী রাজনীতি দমন :

মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেই ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্র শুরু করে। সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে এই নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ার শুরুতে অনেক মন্ত্রী-এমপি ঘোষণা দেন। সরকারের এই মনোভাবে আতঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠে ইসলামী সংগঠনগুলো। এক পর্যায়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী হলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে আসে সরকার। কিন্তু কৌশলে ধর্মীয় দলগুলোকে দমনের পথ বেছে নেয় তারা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, যে সরকারের আল্লাহর ওপর আস্থা নেই, দুর্গার ওপর আস্থা থাকে তাদের আর কিছু বাকি থাকে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনকে খতম করার জন্য প্রতিবেশী দেশের ইঙ্গিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ৪০ বছরের মীমাংসিত ইস্যু এনে গায়ের জোরে রায় দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, বৃহত্ ইসলামী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংসের উদ্যোগ নেয় সরকার। গত তিন বছরে দলের আমির মাওলানা নিজামী ও শীর্ষ অনেক নেতাসহ ৩ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। পাইকারিভাবে হামলা-মামলা ও জামায়াতের রাজপথের কর্মসূচি দমন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে দলের ১ শহস্রাধিক নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন।
অপর দিকে গত তিন বছরে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫ জন নিহত, বহু সংখ্যক আহত হয়। আটক হন ১০ হাজারের মতো নেতাকর্মী। এদের মধ্যে এখনও ২৮৫ জন কারাগারে রয়েছেন।
গত বছরের ৪ এপ্রিল মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ডাকে সারাদেশে হরতাল পালিত হওয়ার সময় থেকেই ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির কর্মকাণ্ডের ওপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজে ছাত্রীদের হিজাব পরে ক্লাস এবং ওয়ার্ডে ডিউটি নিষিদ্ধ করেছে কলেজ প্রশাসন। এছাড়া কলেজের নামাজ ঘরেও ঝুলিয়ে দিয়েছে তালা। এ কেমন নির্যাতন??

মাদরাসাবিরোধী ষড়যন্ত্র :

গত তিন বছর ধরে মাদরাসা ও এর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে চলেছে নানা ষড়যন্ত্র। সংশ্লিষ্টদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত নতুন ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় ও ইসলামী শিক্ষাকে সংকুচিত করা হয়েছে। আধুনিকায়নের নামে মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে করা হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত প্রথা বাদ দিয়ে অযৌক্তিক শর্তারোপের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ সংকুচিত করা হয়েছে।
গণজাগরণ মঞ্চ ও ব্লগের কেলেংকারী
মহাজোট সরকারের ইসলাম বিদ্বেষের সবÐশেষ প্রমাণ পাওয়া যায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ও ব্লগে ইসলাম বিদ্বেষী নানা কেলেংকারীর মাধ্যমে। ফেব্রুয়ারীর ৫ তারিখে জামাত নেতা কাদের মোল্লার যাবতজীবন কারাদন্ডের পর থেকেই শাহবাগ নামক স্থানে ভারতের অথাÐয়ন আর সরকারের সাবিÐক পৃষ্টপোষকতায় যুদ্ধ্পরাধীদের ফাঁসি আর জামাত শিবিরের রাজনীতিসহ সকল ধমীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীতে কিছু ব্লগারদের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চ গঠন করা হয়।যা থেকে ৬ দফা দাবী তোলা হয়। এরই প্রেক্ষাপটে সারা দেশে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করা হয়। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাড়িয়ে গণজাগরণ মঞ্চের এসব দাবীর প্রতি পূণÐ সমথÐন ব্যক্ত করে তা বাস্তবায়নের ঘোষনা দেয়া হয়। এর পরই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের আইন সংশোধন করে রাষ্ট্র পক্ষের আপিলের বিধান যুক্ত করা হয় যা আগে ছিল না। আন্দোলনরত এসব ব্লগার যে ইসলামের চরম বিদ্বেষী ছিলো তা কয়েক দিনের মধ্যে নানা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত থাকে। এতে ফুঁসে উঠে সারা দেশের ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনতা। এরই একজন রাজিব হায়দার নামে একজন ব্লগারের মৃত্য হয় যার ব্লগের নানা ইসলাম বিদ্বেষী কথা নানা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজিবের বাসায় গিয়ে তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ আখ্যা দেন। এরই প্রেক্ষিতে হেফাজতে ইসলাম নামে একটি অরাজরনৈতিক সংগঠন নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তাদের এ আন্দোলনে সারা দেশের সকল ইসলামী দল ও সংগঠনসমূহ সমথÐন ব্যক্ত করে । যার ফলে এ আন্দোলন সারা দেশে ব্যাপক জনসমথÐন লাভ করে। এ দাবিতে তারা রাজধানীর শাপলা চত্বরে ঐতিহাসিক লংমাচ ও মহাসমাবেশ পালন করে। যা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও ব্যাপক প্রভাবিত করে।এতে তারা ১৩ দফা দাবী পেশ করে। এসব কারণে গণজাগরণ ও হেফাজতে ইসলাম পরস্পর মুখোমুখি দাড়ায়। এরই প্রেক্ষাপটে সরকার হেফাজতের বিপক্ষে গিয়ে সরাসরি গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ নেয়। ফলে হেফাজতের পক্ষ থেকে এ সরকারকে নাস্তিক ও মুনাফিক সরকার আখ্যা দেয়া হয়। সরকার এখন হেফাজতের এসব ঈমানী দাবীকে মধ্যযুগীয় আখ্যা দিয়ে হেফাজতকে দমনের কৌশল অবলম্বন করেছে। যাতে প্রকাশিত হয়েছে সরকার আসলেই নাস্তিকদের পৃষ্টপোষক। যদিও হেফাজতের লংমাচÐকে সরকার অনেক বাধা দান করেও দমতে পারে নাই। তাই এখন হেফাজতের ‍বিরুদ্ধে সরকার পন্থী নারীবাদী সহ সকল সংগঠনকে নামানো হয়েছে। আগামী ৫ই মে ঢাকা অবরোধ কমÐসূচিকে বানচাল করার জন্য সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। ভারতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানের ঈমান আকিদার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নাস্তিকদের পক্ষ অবলম্বন করে হেফাজত ইসলামের মহাজাগরণকে দমন এবং নাস্তিক ব্লগারদের লালনের কৌশল নিয়ে ভূল পথে পা বাড়িয়েছে।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে বলেছিলেন, এ সরকার ইসলাম ধ্বংসে যত কাজ করার দরকার তার সবই অবলম্বন করছে। শেখ হাসিনার সরকার বাদশাহ আকবরের মতো দ্বীনে এলাহী প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। তার কাছে মুসলামানদের কোনো দাম নেই, রবীন্দ্রনাথ ও নাস্তিক-মুরতাদদের দাম রয়েছে। আসলে এ সরকার ইসলাম ধ্বংসের এজেন্ডা নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে এবং সেই কাজ করছে। তাই এ সরকারের পতন ছাড়া এ দেশে ইসলাম রক্ষার আর কোনো পথ খোলা নেই। খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে। গোড়া থেকেই তারা ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি বৈরী মনোভাব প্রকাশ করে আসছে। ইসলামের কথা শুনলেই তাদের মাথাব্যথা হয়। তাদের সময় দেব নারায়ণদের মতো ইসলাম বিদ্বেষীরা উত্সাহিত হয়। এভাবে ইসলাম বিরোধী কাজের মাধ্যমে বাক্ষ্রণ্যবাদী ভারতের পরিকল্পনা মাফিক দেশ থেকে ইসলাম নিধনের অভিযানে নেমেছে আওয়ামী মহাজোট সরকার। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ইসলাম নিধন করতে গিয়ে মুসলিম নামদারী শাসকরাই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ইতিপূবে ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেও আওয়ামীলীগ সরকার তাদের ইসলাম বিদ্বেষী কাজের কারণে জনগণ কৃতক প্রত্যাখাত হয়েছে। তাই জরুরী সরকার ও ভারতের বস্তাভতি টাকার বিনিময়ে ক্ষমতায় আসতে হয়েছে। তাইতো ২০২১ সাল পযন্ত ক্ষমতায় থাকতে তারা দেশের ইসলাম পন্থীদের নিধনের মাধ্যমে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চায়। কিন্তু ৯০ ভাগ মসুলমানদের এ দেশে, পীর মাশায়েখদের এ পূণভূমিতে এটি কখনো সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে দেশে জনসাধারণের যে গণজাগরণ শুরু হয়েছে তার স্রোতে বাংলাদেশে সকল ইসলাম নিধনের সকল অভিযান জন স্রোতে ভেসে যাবে ইনশাল্লাহ।(তথ্যসূত্র-আমারদেশঅনলাইন)


৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×