(বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের জনক, সামরিক আগ্রাসন, অস্ত্র বাণিজ্য, ইসলাম নিমূলে ক্রুসেড, মুসলিম গণহত্যা, দস্যুবৃত্তি, লুন্ঠনতন্ত্র, মানবতাধ্বংস, মানবাধিকার লংঘন, বিশ্ব শান্তির হুমকি এবং সকল অশান্তির মূল অনুঘটক)
ভূমিকা
কিছু কথা
‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ একহাতে বাইবেল আর আরেক হাতে মারনাস্ত্র নিয়ে পৃথিবীর বুক থেকে ইসলাম নির্মূল করে খ্রিস্টবাদ কায়েম করতে চায়। কমিউনিজমের পতনের পর তারা ইসলামকে তাদের প্রধান শক্র আখ্যা দিয়ে নেমে পড়েছে ইসলাম নির্মূলের ক্রুসেডে।১৯৯০ সালের বসন্তকালে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ইহুদী গুরু হেনরী কিসিঞ্জার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এক বার্ষিক অধিবেশনে বক্তৃতা করতে গিয়ে বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি হচ্ছে, বর্তমানে পাশ্চাত্যের সামনে নতুন দুশমন হলো ইসলাম, যা ইসলামী বিশ্ব ও আরব বিশ্বের বিশাল এলাকা জুড়ে পরিব্যাপ্ত।’ ১৯৯২ সালের এপ্রিলে ইকোনোমিস্ট পত্রিকা তার প্রথম পাতায় ইসলামকে টার্গেট বানিয়ে একটি কাটুঁন ছেপেছে, যাতে এক আরব ব্যক্তি বন্দুক নিয়ে একটি মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একই দিনে সাপ্তাহিক টাইমস একটি রির্পোট করে। যাতে বলা হয়েছে, ‘গোটা বিশ্বকে ইসলামের বিপদ থেকে সতর্ক থাক উচিত।’ পত্রিকাটি তার কভার পৃষ্টায় মসজিদের মিনারের ছবি ছেপেছে, যার পাশে এক ব্যক্তি মেশিনগান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে ফরাসী পত্রিকা মোল্ড ডিপ্লোমেট একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে, যাতে পত্রিকাটি লেখেছে, ‘ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধু সামরিক ময়দানেই হবে না; বরং সভ্যতা সংষ্কৃতির ময়দানেও লড়াই হবে। আর এটাই হবে চূড়ান্ত লড়াই।’ ২০০১ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর কিসিঞ্জার দ্বিতীয় বক্তৃতায় বলেন, ‘ইসলামী সন্ত্রাস ও চরম পন্থার বিরুদ্ধে আগামীকালের পরিবর্তে আজই যুদ্ধ ঘোষনা করা উচিত।’ একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত সানডে টাইমস তার সম্পাদকীয়তে পাশ্চাত্যের মনোযোগ আকর্ষণ করে বলেছে, ‘উত্তর আফ্রিকা থেকে মধ্য এশিয়ার চীন পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ইসলামী ফান্ডামেন্টালিজম তথা ইসলামী মৌলবাদ ফণা তুলেছে। অতি দ্রুত এই বিষাক্ত সর্পের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেয়া উচিত।’ সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরীক হওয়ার জন্য বিশ্ববাসীকে যে দাওয়াত দিয়েছেন, তাতে তিনি ইসলামকে শেকড় থেকে উপড়ে ফেলার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। এই লড়াইয়ে তিনি মুসলিম বিশ্বের নেতৃবর্গকেও শরীক হওয়ার আহবান জানান। আমরা আর একটু অগ্রসর হয়ে যদি ষড়যন্ত্রের গভীরে যাই, তাহলে দেখতে পাবো, হলিউড চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ইহুদীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক এই যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে অনেক আগেই।নিঃসন্দেহে হলিউড ইহুদীদের দুর্গ ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে হলিউড বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও ক্রুসেড যুদ্ধ ছড়ানোর কাজে লিপ্ত। এভাবে আধুনিক প্রযুক্তি ও মিডিয়াকে ব্যবহার করে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ক্রুসেডের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়। এ ক্রুসেডকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজে লাগানোর জন্য ২০০১ সালে বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষেত্রে বিমান হামলার নাটক সাজানো হয়। যদিও নাটকের কথা পরবর্তীতে ফাঁস হয়ে যায়। এ বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে বিমান হামলার নাটককে কেন্দ্র করে মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক নব্য ক্রুসেডের ঘোষনা দিয়ে সামরিক আগ্রাসনে নেমে পড়ে ইহুদী পরিচালিত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, এর নেতৃত্বে ছিলেন জর্জ বুশ জুনিয়র। যদিও বুশ সাহেবরা পৃথিবীবাসীকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য বার বার বলেছিল, তাদের এ যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে নয়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। তাদের এ নব্য ক্রুসেডের প্রথম আগ্রাসনের শিকার ইসলামীক রাষ্ট্র আফগানিস্তান। এরপর ইরাক, লিবিয়া এবং বর্তমানে তাদের আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে সিরিয়া, পরবর্তী টার্গেট ইরান। যদিও সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তাদের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ আগ্রাসন বিরামহীনভাবে চলছে।মধ্য যুগে ক্রুসেড ঘোষনা করত পোপরা আর এখন ইহুদীদের নির্দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অতীত আর বর্তমানের এটাই পার্থক্য।সেই কঠিন দুঃসময়ে মুসলিম বিশ্বের কি অবস্থা তা কবির ভাষায়, ‘হিকমাত রেহে হামারে উল্লুবনে রেহে হাম,জিয়াফত চলে হামারে ভোখে মর রেহে হাম।’ অর্থাৎ সূত্র, কৌশল, উপাদান সব আমাদের আছে কিন্তু আমরা পেঁচা বনে গেছি, আমাদের বাড়ীতে জিয়াফত চলছে আর আমরা খাদ্যের অভাবে উপোস থাকছি।
প্রখ্যাত মুসলিম ভূগোলবীদ আবু রাইহান আল বেরুনী আমেরিকা যাবার পথ চিহিৃত করার পর ব্যবসা ও ধর্ম প্রচারের লক্ষে দলে দলে ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরা আমেরিকা যাতায়াত শুরু করে দেয়। তবে তাদের মূল কাজ ছিল দস্যুতা। আমেরিকার আদিবাসী যারা রেড ইন্ডিয়ান বলে চিহিৃত, তাদের সহায় সম্পত্তি শক্তিবলে দখল করে, তাদের উপর গণহত্যা চালিয়ে, তাদেরকে নিশ্চিহৃ করে দিয়ে আদি সন্ত্রাসবাদের সূচনা শুরু করলেন আজকের মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। তার মানেই আমেরিকা জন্ম সূত্রেই সন্ত্রাসী। আজ থেকে পাচঁশত বছর আগে আমেরিকা আবিস্কার হওয়ার পরেই আমেরিকান আদি অধিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের নির্মূলের মাধ্যমে যে, গণহত্যা, লুন্ঠন আর মানবতা ধ্বংসের ইতিহাস রচনা করলেন গত পাচঁশত বছরে তারই আধিক্যের ভেতরে বসবাস ছিল তার। সন্ত্রাসবাদ, দেশে দেশে সামরিক আগ্রাসন, মুসলিম গণহত্যা, ইসলাম নির্মূলে ক্রুসেড, বিশ্বব্যাপী অস্ত্রবাণিজ্য, দেশে দেশে যুদ্ধ সহিংসতা ছড়ানো, গুপ্তহত্যা, নিষ্ঠুরতা, লুন্ঠনবৃত্তি আর মানবতা ধ্বংসের একেকটি ঘৃণ্য রেকর্ডে পরিপূর্ণ করেন তাদের ইতিহাস।বিশ্বব্যাপী সিআইএ আর মোসাদের মুসলিম নেতা-নেত্রী, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ও বিজ্ঞানী হত্যার নারকীয় তান্ডব, মুসলিম উম্মাহকে নেতৃত্ব শ্ণ্যূ করার ভয়াল চক্রান্ত এক ঘৃণ্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।এ ইতিহাসের প্রতিটি পরতে পরতে খুজেঁ পাওয়া যাবে লক্ষ-কোটি মানুষের কান্না, রক্ত, লাশ, আর নির্মমতার চিহৃ। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘৃণ্য নিষ্ঠুরতার রেকর্ড আর কারো নেই। পৃথিবীতে মানবতা, মানবাধিকার আর মনুষত্যের এমন শক্রু আর একটিও নেই। পৃথিবী প্রলংকারী সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি করে গোটা শান্তির পৃথিবীটাকে তারা করেছে নরকের কুন্ডে। আজ পৃথিবীর চতুদির্কে শুধু চাপা কান্না, বোমা, বারুদ আর ধ্বংস যজ্ঞের চিহৃ ছাড়া আর কিছুই খুজেঁ পাওয়া যাবে না। যেখানেই ধ্বংস যজ্ঞ সেখানেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সংশ্লিষ্টতা। সবচেয়ে আতংকের বিষয় হলো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পিঠে সওয়ার হয়েছে মানবতার সবচেয়ে ঘৃণ্য দুশমন ইহুদীবাদ। ইহুদীবাদ পরিচালনায় এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের যৌথ প্রযোজনায় টুইন টাওয়ার হামলার নাটক সাজিয়ে বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিধনের নব্য মহড়ায় নেমেছে তারা।যা তাদের পরিচালিত মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। দেশ, মানচিত্র ও প্রান কেড়ে দেওয়ার পরও মুসলমানদের থেকে তাদের প্রানের চেয়ে প্রিয় পবিত্র কোরআনকে কেড়ে নেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে সেই ভন্ডের দল। সে সম্পর্কে ইসলামের দুশমন কুখ্যাত কুলাঙ্গার মার্কিন জয়েন্ট চীফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান অ্যাডমিরাল মাইক মুলেন বলেছেন, ‘মুসলমানরা যেভাবে কুরআন শরীফ শিখছে তা প্রতিহত করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন করে প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে। মুলেন দাবি করে, সা¤প্রতিক সময়ে অশিক্ষিত মোল্লা ও তাদের অনুসারীরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। ইসলাম মোকাবেলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ২১ শতকে যে নীতি গ্রহণ করেছে তা নতুন করে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান।’ মাইক মুলেন আরো বলেন, ‘সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, তাই মুসলিম বিশ্ব নিয়ে ওয়াশিংটনকে নতুন করে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের কুরআন শরীফ শিক্ষা প্রতিহত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে মুসলিম বিশ্বের অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের পদক্ষেপসহ নতুন কৌশল নিতে হবে।’ জাতিসংঘসহ সকল আর্ন্তজাতিক সংগঠন ও সংস্থা সমূহকে নিজেদের গোলাম বানিয়ে পৃথিবীর বুক থেকে ইসলাম নির্মূলের অভিযানে নেমেছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ।মুসলিম বিশ্বের দেশে দেশে দালাল শাসকদের মাধ্যমে ইসলাম পন্থীদের কঠোরভাবে নির্মূল করে ইসলামের আওয়াজকে বন্ধ করার ভয়াল ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে তাদের আগ্রাসনের শিকার হয়ে মুসলিম সভ্যতার ঐতিহ্যবাদী দেশ আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া ধ্বংসের স্তুপে পরিণত হয়েছে।বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের নামে সরাসরি ইসলাম ও মুসলিম নির্মূলের নব্য ক্রুসেড অভিযানে নেমেছে তারা। আর এদের একান্ত সহযোগী হয়েছে বিশ্বের অন্যান্য অমুসলিম দেশ এবং আরব বিশ্বের তাদের দালাল খ্যাত রাষ্ট্রগুলো। মুসলিম রাষ্ট্রের অনৈক্যের সুযোগে একের পর এক মুসলিম রাষ্ট্র তাদের আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। একদিকে সামরিক আগ্রাসন আর অন্যদিকে কুটিল সাংস্কৃতিক হামলা আর মিডিয়া সন্ত্রাস। এ দুইয়ের মোকাবেলায় মুসলিম বিশ্ব অস্তিত্ব সংকটে ভূগছে। তাইতো বাধাহীনভাবে একটির পর একটি করে মুসলিম বিশ্বের সম্ভবনাময়ী রাষ্ট্রগুলো ধ্বংসের স্তুপে পরিণত হচ্ছে। এতে ক্ষান্ত নয় তারা, সারা পৃথিবীব্যাপী একক আধিপত্যের মোড়লগিরী করার জন্য বিশ্বব্যাপী ৭০০টি সামরিক ঘাটি স্থাপন করেছেন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। আর এগুলোর মাধ্যমে তার অবৈধ মোড়লগিরী অব্যাহত রেখেছে মার্কিনীরা।এ মোড়লগিরী করার জন্য হেন কোন অপরাধ নেই যা তারা করছে না। তাইতো এদের অপকর্ম ফাঁস করে দিয়ে এখন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যসেঞ্জকে আর সাবেক সিআইএ কর্মকতা এডওয়ার্ড স্নোডেন বিশ্বজুড়ে ফেরারী হয়ে গেছেন। উইকিলিকসের আর স্নোডেনের তথ্য পুরো দুনিয়া নাড়িয়ে দিয়েছে বলা যায়। কারণ দেশে দেশে শাসন, শোষণ, লুণ্ঠন অব্যাহত রাখতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যে কত ভয়ঙ্কর ও পৈশাচিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে, ফাঁস হওয়া তথ্যগুলো সে ব্যাপারে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আর এ কাজ করতে গিয়ে মাকির্নীরা দেশে দেশে তাদের দূতাবাসগুলোকে রীতিমত গোয়েন্দা গিরির দফতর বানিয়ে ফেলেছে। আজকের এক মেরু বিশ্বে মার্র্কিনীরা কোনো রকমের আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা করেন না বলেই মনে হয়। এখন রেগে মেগে তারা জুলিয়ান অ্যসেঞ্জকে বিচারের আওতায় আনার কথা ঘোষণা দান করেছেন আর স্নোডেনের পাসপোর্ট বাতিল করা হচ্ছে। জুলিয়ানের আর স্নোডেনের অপরাধ হচেছ, তারা কেন এসব তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। আমেরিকার প্রবল প্রতাপান্বিত মিডিয়া ঝড় তুলেছে, জুলিয়ানের আর স্নোডেনের কেন এখনো ফাঁসি দেয়া হচ্ছে না, তথ্য প্রকাশ করা যদি অপরাধ হয় তাহলে দেশ দেশে নাশকতা, ষড়যন্ত্র, ইচ্ছামত ক্ষমতার পালাবদল, অস্ত্র ব্যবসা, প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন এবং সামরিক আগ্রাসন কি ভয়ানক অপরাধের মধ্যে পড়ে না? যে দেশটি নাকি দেশে দেশে তথ্য আর গণতন্ত্রের স্বাধীনতা ফেরী করতে ক্লান্ত, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার স্লোগান দিতে দিতে রীতিমত প্রাণান্ত, সে-ই কি না উইকিলিকসের আর স্নোডেনের ব্যাপারে প্রাচীনপন্থী। কথায় বলে, সত্যের ঢোল আপনি বাজে। আমেরিকার দুষ্কর্মের কথা প্রকাশ করে দিয়ে উইকিলিকস আর স্নোডেন নতুন কিছু বলেননি। যা করেছেন, সত্যকে তারা নতুন করে মানুষের সামনে হাজির করেছেন। এতেই আমেরিকার গোসসা। ফ্রিডম ও ডেমোক্র্যাসির একালের নিশানবরদার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা সত্য প্রকাশে এতখানি বিচলিত হয়ে পড়েছে যে, তারা এখন সামন্তবাদী শাসকের মতো আচরণ করতেও দ্বিধা করছে না।সুযোগ পেলে তাদের দুজনকে গায়েব করে দিতে দ্বিধা করবেন না।আলোচ্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নামক এ বইতে আমরা বিশ্বব্যাপী তাদের অপকর্মের কিছু তথ্য শান্তিপ্রিয় পৃথিবী বাসীর উদ্দেশ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।মধ্য যুগে মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে পরিচালিত ক্রুসেডকে রুখার জন্য সুলতান সালাউদ্দীন আয়ুবী, নুর উদ্দীন জঙ্গির মতো বীর সেনানীর আগমন ঘটেছিল মুসলিম বিশ্বে। কিন্ত আজ কোন সালাউদ্দীন আয়ুবী নেই, নেই নুর উদ্দীর জঙ্গিও।চারদিকে দালাল আর মোনাফেকে ভরে আছে মুসলিম বিশ্ব। তাইতো বিশ্বের দিকে দিকে আজ নির্যাতিত শিশু ও নারীদের আত্মচিৎকার পৃথিবীর আকাশ বাতাসকে ভারী করে তুলেছে, কিন্তু এরপরও নিশ্চুপ মুসলিম বিশ্ব! যারা একটু সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, দালাল মুসলিম শাসকরা তাদের কোমর ভেঙ্গে দিচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে ইহুদী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সহযোগিতায় তাদের নির্মূল করা হচ্ছে। উদাহারণস্বরুপ মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের কথা বলা যায়।অভিযোগ ওঠেছে এখানেও আরব বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদের দালাল খ্যাত কিছু রাষ্ট্রের পৃষ্টপোষকতা। আজকের ফিলিস্তিনে মানবতার দুশমন ইহুদীদের গণহত্যা, কাশ্মীর, আরাকানসহ পৃথিবীর দিকে দিকে আর্ত মানবতার হাহাকার ধ্বনি মুমিনদের অন্তরকে ক্ষত-বিক্ষত করছে। আরো বেশি ক্ষত-বিক্ষত করতেছে মুসলিম বিশ্বের অকল্পনীয় নিলিপ্ততায়। মুসলিম উম্মাহর হতভাগ্য একজন নগন্য সদস্য হিসাবে হৃদয়ে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, মনের ভেতরে যে আকুতি তৈরি হয়েছে, মুসলিম তরুণদের অবক্ষয়ের অঘোর ঘুমে দেখে মনে যে বেদনার নীল নদ তৈরি হয়েছে, হিংস্রতার যে মহাপ্লাবন দু’চোখকে অশ্রুসিক্ত করেছে, তিলে তিলে মুসলিম উম্মাহর নিঃশেষ হওয়া দেখে হৃদয়ে যে মহা যন্ত্রনার স্রোত বয়ে যাচ্ছে তাই কলমের তুলিতে আকার চেষ্টা করেছি। মুসলিম সেই ভাইদের জন্য যারা মানবতার বিরুদ্ধে পরিচালিত এ ক্রুসেডকে রুখে দেয়ার হিম্মত নিয়ে সামনে অগ্রসর হবে।কারণ শক্রকে খতম করতে হলে তার সম্পর্কে, তার শক্তি সামর্থ সম্পর্কে জানতে হবে। তবে হতাশার নিকস কালো অন্ধকারে একটু আশার ঝলক হচ্ছে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইতিমধ্যে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা আমরা বইয়ের শেষে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তবে সেটার জন্য আরো কত সাগর রক্তের প্রয়োজন হবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। হয়রত উমর (রাঃ) এক নির্যাতিত মানুষের আহবানে সাড়া দিয়ে ফিলিস্তিন জয় করেছিলেন, মুহাম্মদ বিন কাশিম ভারত বর্ষের এক নির্যাতিত বোনের আহবানে ছাড়া দিয়ে গোটা ভারত বর্ষ জয় করেছিলেন। আজ কোথায় সেই উমর আর কাশিমের উত্তরসুরীরা? ভীরুর মতো প্রান বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছো! অথচ মুসলিম বীর সেনানীরা দ্বীনের জন্য, ইসলামের জন্য প্রান বিলাতে সদা আকুল থাকতেন। আপনাদে সেই আকুল প্রাণ আল্লাহর তরবারী খ্যাত খালেদ বিন ওয়ালিদের মৃত্যু শয্যায় আকুলতার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চায়। মৃত্যুর সময় তিনি কেঁদে কেঁদে আকুলতার স্বরে সঙ্গীদের বললেন, কুফর ও ইসলামের বড় বড় জিহাদে আমি সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছি, আমার শত শত সাথী আমার চোখের সম্মুখে জান্নাতের প্রানে শাহাদাতের মৃত্যুবরণ করেছেন, কিন্তু জিহাদের সেই ময়দানে আমার শাহাদাতের মৃত্যু নসিবে জুটে নাই, বিছানায় আমাকে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে, তাই আমি সেই দুঃখে অজোর নয়নে কান্না করতেছি, হে আমার প্রানের সাথীরা! আমার এ আকুতিটুকু মুসলিম উম্মাহর সেই সব মুসলিম যুবকদের কাছে পৌঁছে দিও, যারা প্রানের ভয়ে জিহাদের ময়দানে যেতে চায় না। আসুন মুসলিম উম্মাহর এ চরম সংকটময় মুহুর্তে অবক্ষয়ের ঘুম থেকে জেগে খালেদের মতো, তারেকের মতো, মুহাম্মদ বিন কাশিমের মতো, সুলতার সালাউদ্দীন আয়ুবীর মতো ইসলাম ও মানবতার শক্রুদের রুখে দেই।পরিশেষে মৃদ্রনজনিত কারণে অনেক ভূলক্রটি হতে পারে। যে কোন সহৃদয় পাঠক উক্ত ভূল ও অসংগতি দেখিয়ে দিলে আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। উক্ত বইটি বিশেষ করে মুসলিম যুব সমাজের উদ্দেশ্যে লিখিত তাই এটির মাধ্যমে মুসলিম যুব সমাজ সামান্য উপকৃত হলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে বলে আশা করি। বিশ্ব কবি আল্লামা ইকবাল (রহ) বলেছেন,
‘শেরকি সরপে বিল্লি খেল রাহী
ক্যাসা হ্যায় মুসলমা কা বদনাসিব
তাছবীহ কি দানুমে জন্নাত টুড রাহী।’
অর্থাৎ-সিংহের মাথার উপর বিড়াল খেলা করছে, বড়ই দূর্ভাগা মুসলমান
তারা শাহাদাতের আকাঙ্খা ভূলে, তাছবীহর দানার মধ্যে জান্নাত অনুসন্ধান করছে।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে মুসলিম উম্মার এ মহাসংকটময় মুহুর্তে যথাযথ ভূমিকা পালন করার তৌফিক দান করুন আমীন।
আল্লাহর রহমতের একান্ত অনুগ্রহপ্রার্থী
মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ
কক্সবাজার।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:২৬