somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-১১

১৬ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতালী:
ইসরাইলের পারমানবিক প্রোগ্রামের গোপন তথ্য বৃটিশে পাচার করার কারণে ১৯৮৬ সালে ইতালির রাজধানী রোম থেকে ইসরাইল নাগরিক মোডাচাই ভ্যানুনুকে অপহরণ করে ইসরাইল নিয়ে আসে মোসাদ। পরে তাকে জেলে ঢুকানো হয়।

ফিলিস্তিনের কয়েকটি অভিযান:

মিউনিখ ম্যাসাকারে অভিযুক্ত ইসারাইলের নাম দেয়া ব্লাক সেপ্টেম্বরের সদস্যদের ফিলিস্তিনে ১৯৭২ সালে হত্যা করা হয়। এই অপারেশনের নাম দেয়া হয় অপারেশন র্যাথ অব গড। ১৯৭৩ সালের জুলাইয়ে নিরপরাধ আহমেদ বৌচুকিকে তার গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে হাটার সময় হত্যা করা হয়। তাকে ব্লাক সেপ্টেম্বরের অভিযুক্ত আলী হোসেন সালামেহ’র আশ্রয়দাতা মনে করা হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে হত্যা করা হয় পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন নেতা ওয়াদি সাদাদকে। ১৯৭৯ সালে হত্যা করা হয় পিএলও’র আসসাদিকা নেতা জুহাইর মুহসিনকে। ফাতাহ নেতা আবু জিহাদকে ১৯৮৮ সালে হত্যা করে টুনিস রেইড নামের ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সের এক সদস্য। ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ নেতা ফাতি শিকাকিকে হত্যা করা হয় ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৭ সালে আম্মানে হামাসের এক সহযোগি সংগঠনের মিছিলে হামাস নেতা খালেদ মাশালকে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যা করতে এজেন্ট পাঠিয়েছিল মোসাদ। তাদের দুইজনকে জর্দানে আটক করা হয়েছিল। তাদের কাছে ছিল কানাডার জাল পাসপোর্ট। এবছরই প্রায় ৭০জন ফিলিস্তিনি মুক্তির বিনিময়ে হামাস নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য পিএলওকে চাপ দিয়েছিল মোসাদ। এসময় আহমেদ ইয়সিন ফিলিস্তিনে বন্দি ছিলেন। এর সাত বছর পর ২০০৪ সালে তিনি যখন মুক্তি পান তখন ইসরাইল হেলিকপ্টার থেকে গোলা নিক্ষেপ করে তাকে হত্যা করে। তিনি ফিলিস্তিনে ইসলামের মূল ধারার নেতৃত্ব দিতেন। একই বছর গাড়ি বোমায় হত্যা করা হয় হামাসের অপর নেতা ইয ইল-দীন শেখ খলিলকে। ২০০৬ সালে লেটার বোমা পাঠানো হয় দ্য পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন নেতা বাসাম আবু শরীফকে। তিনি পিএলও’র প্রেস অফিসার ছিলেন। অবশ্য ১৯৭২ সালে মোসাদের লেটার বোমায় তিনি চারটি আঙ্গুল ও একটি চোখ হারিয়েছিলেন।

অপারেশন প্রিং অব ইয়ুথ:

১৯৭৩ সালের ৯ রাতে ও ১০ এপ্রিল ভোররাতে লেবাননে বিমান হামলা চালায়। একই সময় ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সের স্পেশাল ফোর্স ইউনিট বৈরুত, সিডন ও লেবাননে পিএলও’র টার্গেটকৃত নেতাদের খুঁজছিল ও সম্ভাব্য স্থানে হামলা করছিল। এই অপারেশনের নাম দেয়া হয়েছিল অপারেশন স্প্রিং অব ইয়ুথ।

আফ্রিকা অঞ্চলে মোসাদের অপারেশন

১৯৮৪ সালে মোসাদ ও সিআইএ ইথিওপিয়ার ইহুদিদের সহায়তার জন যে অপারেশন পরিচালনা করে তার নাম দেয়া হয় অপারেশন মোসেস। ১৯৭৬ সালে উগান্ডায় এয়া ফ্রান্স ফ্লাইট ১৩৯ বিমান ছিনতাই করেছিল মোসাদের এজেন্টরা। বন্দি মুক্তির জন্য তারা এই বিমান ছিনতাই করেছিল। এটি অপারেশন অন্টাবি নামে পরিচিত।

৯/১১-এর দায়:

নাইন ইলেভেনের দায় কার এ বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। যদিও সিআইএ’র এক সময়ের বিশ্বস্ত ওসামা বিন লাদেন ও তালেবানকে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আর এর শাস্তি হিসেবে দখল করে নেয়া হয়েছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ দেশ আফগানিস্তান। ইসরাইল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে ২০০১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জেরুজালেম পোস্টের ইন্টারনেট সংস্করণে বলা হয়, হামলাকালিন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে ৪ হাজার ইহুদি কাজ করত। কিন্তু বিমান হামলায় মাত্র একজন নিহত হয়েছে। পরে আরো দু’জনের নিহতের কথা বলা হয়। ওই দিন এত বিশাল সংখ্যক ইহুদি কিভাবে নিরাপদে ছিল তার জবাব আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি বা দেয়নি। অথচ যে সময়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা হয়েছে প্রতিদিন ওই সময়ে অনেক ইহুদি অফিসে উপস্থিত থাকত। ব্যতিক্রম শুধু হামলার দিন। সিআইএ বরাবরই এই হামলায় মোসাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছে। ‘আমেরিকান ফ্রি প্রেস উইকলি’ তে প্রকাশিত এক রির্পোটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ৯/১১ এ নিউ ইয়কে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছিল ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। ৯/১১ এর ঘটনায় ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এর সম্পৃক্ততার পক্ষে ‘নিউ ইর্য়ক টাইমস’ আরও কিছু তথ্য উল্লেখ করেছে। এতে বলা হয় টুইন টাওয়ারে হামলার খবরে ফ্লাইট ১১ এবং ফ্লাইট ১৭৫ এর যাত্রী পাচঁ ইসরাইলী নাগরিকদের আনন্দ উল্লাস তাদের সন্দেহের সৃষ্টি করে। এসব ইসরাইলীদের ৭১ দিন কারাবাসের পর মোসাদ মুক্ত করে নিয়ে যায়। উইকলি’তে উল্লেখ করেছে যে, হোয়াইট হাউজের নির্দেশে সি আই এ ৯/১১ এর ঘটনায় ইসরাইল গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এজেন্টদের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি গোপন করেছে। কেননা ৯/১১ এর পুরো বিমান হামলার ঘটনাটিই সিআইএ মোসাদ এর যৌথ প্রযোজনায় ঘটানো হয়েছে। এর লক্ষ্য ছিল আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের নেতৃত্বে ইরাক ও আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালানোর পটভূমি তৈরি করা (সূত্র-দৈনিক সংগ্রাম)। ৯/১১ এর একাদশ বার্ষিকীতে মার্কিন খ্যাতনামা রাজনৈতিক বিশ্লেষক মার্ক ড্যানকফ প্রেস টিভিতে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন-২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে এবং সেনা সদন দপ্তর পেন্টাগনে সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পপনাকারী হচ্ছে ইহুদীবাদী ইসরাইল। এ হামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইসরাইলই এর সঙ্গে জড়িত ছিল।

মোসাদের ইয়াসির আরাফাত কানেকশন:

ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের নেতা ইয়াসির আরাফাত কি মোসাদ বা সিআইএ’র হয়ে কাজ করেছেন এমন প্রশ্ন প্রচলিত আছে। ইসরাইলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে ইয়াসির আরাফাতকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করেছে সিআইএ। এজন্য বৃদ্ধ বয়সে এক খৃস্টান নারীকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল ইয়াসির আরাফাতের সাথে। বিয়ের পর তিনি ইসরাইল প্রশ্নে অনেক নমনীয় ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তি হয়েছিল ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে। শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছিল তাকে। জাতীয়তাবাদী নেতা ইয়াসির আরাফাতকে নমোনীয় হতে মোসাদ সিআইএ’র সহায়তা নিয়েছে। তার মৃত্যুকে অনেকে হত্যাকান্ড বলছেন।

মুসলিম ব্রাদারহুড নিমূলে মোসাদের ভূমিকা

মধ্যপ্রাচ্যে কুখ্যাত ইসরাইলের অন্যকম প্রধান বাধাঁ মনে হতো মুসলিম ব্রাদারহুডকে।কারণ এ অবৈধ রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে মুসলিম ব্রাদারহুড জিহাদ ঘোষনা করেছিল।তাই মিশর,সিরিয়া, ও ইরাকে মুসলিম ব্রাদারহুডের সুগভীর প্রভাব নিমূলের জন্য ব্রাদাহুডের নামেই রেডিও স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।সেখান থেকে ব্রাদারহুডের দ্বীনি প্রোগ্রাম সমূহ সম্প্রচার করা হতো, আবার সেই স্টেশন থেকেই আরব সরকার গুলোর বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে উসকানী দেয়া হতো। পরবতীতে জামাল আব্দুন নাসের সরকার আসইউতে এমন রেডিও স্টেশন আবিস্কার করেছে।জানা গেছে, বহিঃশক্তির সাহায্যে এবং আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এই স্টেশন পরিচালিত হচ্ছিল, কিন্তু তখনো পযন্ত হাজারো ব্রাদারহুড সদস্য কে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে, নাসেরের পরবতী সরকার কতৃক গঠিত তদন্ত কমিটি এ কথা স্বীকার করেছে।এভাবে নাসেরকে মিসরীয়দের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য আমেরিকা একজন বিশেষজ্ঞকে মিসরে প্রেরণ করে, তারই পরামশে প্রকাশ্য জনসভায় নাসেরের ওপর জীবনঘাতী হামলার নাটক মঞ্চস্ত করা হয়েছিলো। পরবতীতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক রাতেই পুরো দেশ থেকে পঞ্চাশ হাজার মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
কুয়েত থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন আল মুজতামার অনুসন্ধানী রিপোট, একজন বড় দায়িত্বশীল কমকতা স্বীকার করেছেন, মিসরে সংগঠিত ষোলটি বিস্ফোরণের মধ্যে যেসব বিস্ফোরণ বিদেশী পযটক ও মিসরী কতৃপক্ষের ওপর ঘটানো হয়, তার একটি ভিডিও তৈরি করা হয়। আর এসব বিস্ফোরণ ঘটানো ও ভিডিও তৈরির সাথে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও মাকিন গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এ সরাসরি জড়িত ছিল।যখন সে কমকতাকে জিজ্ঞেস করা হলো, কেন সরকার পুরো বিষয়টি জানার পরও তা জনগণের সামনে প্রকাশ করল না। তিনি জবাবে বলেন, দুটি বাধাঁর কারণে সরকার তা করেনি। একটি হচ্ছে মাকিন সরকার নারাজ হবে, অপরটি হচ্ছে, জনগণ নারাজ হবে। মাকিন সরকার নারাজ হওয়ার কারণ, তার সংস্থার জড়িত থাকার কথা জনসাধারণে প্রকাশ হয়ে পড়বে, আর আমাদের জনসাধারণ নারাজ হওয়ার কারণ, আমরা এতো দিন পযন্ত জনগণকে আশ্বস্ত করে আসছি, ইসরাইলের সাথে সুসম্পক সৃষ্টি আমাদের স্বাথের পক্ষে।মিসরী পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিশেষজ্ঞগণ মিসরে বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত বিস্ফোরণ ও জীবনঘাতী হামলায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি ও গোলাবারুদ সম্পকে বিশ্লেষণ করে বলেণ, এগুলো বাইরে থেকে আমদানীকৃত এবং সেগুলো এত মূল্যবান, কোনো সরকারই কেবল তা বহন করতে পারে। মিসরী এক কমকতা ১৯৯৩ সালের একটি গোয়েন্দা মামলার উদ্ধুতিক্রমে বলেন, যুগপৎ গ্রীক ও মিসরী নাগরিক ইহুদী অভিনেত্রী লূসি মিসরের শীষস্থানীয় সরকারী কমকতাদের সাথে দৈহিক ও আথিক সম্পকের বিনিময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেসব ফাইল চুরি করে নেয়, যাতে মুসলিম ব্রাদারহুডের সক্রিয় সদস্যদের পূণাঙ্গ বিবরণ ছিল।
পরে সেই ফাইলগুলো ইহুদী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ঘাতক দলের কাছে হস্তান্তর করে।তারপর মোসাদ সদস্যরা ফাইলের বিবরণ অনুযায়ী মিসরী পুলিশের উদি পরে শত শত ব্রাদারহুড কমীকে নিশ্চিহৃ করে।এ কমকতা ১৯৯৩ সালে এস্কান্দারিয়া উপকূলে বোমা বিস্ফোরণে ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে একটি লিফলেট পাওয়া যায়। উক্ত লিফলেটে লেখা ছিল, বিস্ফোরণ ঘটানোর কারণ হচ্ছে, মিসরী সরকার কাফির ও নিলজ্জ। এই সরকারের আমলে নারী-পুরুষ উলঙ্গ হয়ে গোসল করে।আমরা এ সরকারকে নিমূল করব। লিফলেটের নিচে এস্তান্দারিয়া ইউনিভাসিটির প্রফেসর ও ছাত্রদের নাম লেখা ছিল।এ সরকারী কমকতা বলেন, সরকার এই ঘটনায় পুরো দায়-দায়িত্ব ব্রাদারহুডের ঘাড়ে চাপানোর নিদেশ দেয়। আলজেরিয়ায় এ ধরণের ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। ‘এক সাথে ৬০ জন মানুষকে নিমমভাবে হত্যা করা হয়’, ‘শিশু ও নারীদের পেট চিরে হত্যা করা হয়’, ‘পঞ্চাশ জন নারী বাড়ী থেকে উধাও হয়ে যায়’, ‘ভরা বাজারে গাড়ী বোমা হামলায় ৮০ জন নিহত’, এসব ঘটনার ব্যাপারে পশ্চিমা সংবাদ সংস্থাগুলোর ভাষ্য হলো, হত্যাকারীদের হদিস পাওয়া যায়নি, কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, মৌলবাদীরা এর সাথে জড়িত থাকতে পারে। আরো ধারণা করা হচ্ছে, সরকারকে বদনাম করার জন্য এ ধরণের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। খোদ আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আব্দুল আজীজ বু-তাফলিকার বক্তব্য অনুযায়ী ১৯৯০ থেকে ২০০৪ সাল পযন্ত সে দেশে দুই লাখ মানুষ নিহত হয়েছে, ২০ হাজার গুম হয়েছে, ৬ লাখ আহত হয়েছে, ২২ মিলিয়ন জনগণ দারিদ্রসীমার নীচে চলে এসেছে এবং ২০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে।(সূত্র-পশ্চিমা মিডিয়ার স্বরুপ)

ইহূদীদের সর্বশেষ ষড়যন্ত্রের শিকার ড. আফিয়া সিদ্দিকা যিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন স্নায়ু বিজ্ঞানী। অসামান্য ধীসম্পন্ন পি.এইচ.ডি ডিগ্রীধারী এ মহিলার সম্মানসূচক অন্যান্য ডিগ্রী ও সার্টিফিকেট রয়েছে প্রায় ১৪৪টি। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রন্ডেইস বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে Neurology বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। আফিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নায়ু বিজ্ঞানে পড়ালেখা ও উচ্চতর গবেষণা করেন। তিনি হাফিযে কু র‘আন ও আলিমা। পবিত্র কুর‘আন ও হাদীসে পারদর্শিনী এ মহিলা ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত দ্বীনদার ও পরহেযগার। ইসলামী আদর্শ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি রয়েছে তাঁর স্ট্রং কমিটমেন্ট। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফ.বি.আই পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আল কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথিত অভিযোগে ২০০৩ সালে ড. আফিয়াকে তাঁর তিন সন্তান আহমদ, সুলায়মান, ও মরিয়মসহ করাচীর রাস্তা থেকে অপহরণ করে। পাকিস্তানের কোন কারাগারে না রেখে এবং পাকিস্তানী আদালতে উপস্থাপন না করে তাঁকে আফগানিস্তানের বাগরাম সামরিক ঘাঁটিতে বন্দী করে রাখা হয়। এরপর চলে তাঁর উপর অমানুষিক শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন। বাগরামে কুখ্যাত মার্কিন কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা বলেছেন, ‘নির্যাতনের সময় একজন নারী বন্দির আর্তচিৎকার অন্য বন্দিদের সহ্য করাও কষ্টকর ছিল। ওই নারীর ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে অন্য বন্দিরা অনশন পর্যন্ত করেছিল।
পরবর্তী সময়ে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় নিউইয়র্কের এক গোপন কারাগারে। বর্তমানে তিনি পুরুষদের সাথে ওই কারাগারে বন্দী। কারাবন্দী নং ৬৫০। অব্যাহত নির্যাতনের ধকল সইতে না পেরে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। প্রথম থেকেই তিন সন্তানকে তাঁর থেকে পৃথক রাখা হয়। এখনো তিনি জানেন না তাঁর সন্তানত্রয় কোথায়? তারা আদৌ বেঁচে আছেন কিনা। পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান দাবী করে বলেন তাঁর দু’সন্তান ইতোমধ্যে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত আফগান কারাগারে অত্যাচারে মারা গেছে। তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা ড. আফিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাতে তুলে দিয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
ড. আফিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর বক্তব্য হলো, তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর সঙ্গে থাকা হাতব্যাগ তল্লাশী করে মার্কিন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা সম্বলিত কাগজপত্র, গজনীর মানচিত্র, রাসায়নিক অস্ত্র তৈরীর নিয়মাবলী ও রেডিওলজিক্যাল এজেন্ট সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। ব্রিটেনের দি ইন্ডিপেন্টেডেন্ট পত্রিকার সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ব্রন্ডেইস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রীধারী একজন পাকিস্তানী-আমেরিকান তাঁর হাত-ব্যাগে করে মার্কিন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা নিয়ে ঘুরছেন, এটি কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?
নিউইয়র্কে আদালতে ১২ সদস্যের জুরি বোর্ড নানা আইনি বিষয় পর্যালোচনা করে এবং সর্বসম্মতভাবে আফিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। হত্যা চেষ্টা ও লাঞ্ছিত করাসহ সাতটি অভিযোগে তাকে ২০ বছরের করাদণ্ড প্রদান করা হয়। গোপন কারাগারে তিন বছর তিনি বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। রায় ঘোষণার পর আফিয়া আদালতে চিৎকার করে বলেন, ‘আমেরিকা নয়, ইসরাইল থেকে এসেছে এ রায়।’ তিনি আগেই বলেছিলেন, কোনো ইহুদি বিচারক থাকলে তিনি (আফিয়া) ন্যায়বিচার পাবেন না। সরকারি আইনজীবীরা আদালতে বলেন, পাকিস্তানি পরমাণু বিজ্ঞানী বোমা তৈরির নির্দেশিকা বহন করেছিলেন। অতি সম্প্রতি নিউইয়র্কের একটি আদালত মার্কিন গোয়েন্দা ও সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা চেষ্টার দায়ে ড. আফিয়া সিদ্দিকাকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। ড. আফিয়া সিদ্দিকা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং ২০০২ সাল পর্যন্ত সেখানেই বসবাস করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকালে তাঁকে যারা চিনতেন তাদের সবাই বলেছেন, আফিয়া অত্যন্ত ভদ্র এবং ইসলামের প্রতি তার বিশেষ দরদ ছিল। ২০০৩ সালে করাচি থেকে তিন সন্তানসহ গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তাদের অপহরণ করে। এরপর আফগানিস্তানের বাগরাম কারাগারে গোপনে তাকে আটকে রাখা হচ্ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তখন অনেক মাতামাতি হলেও ২০০৮ সালে গজনীতে ওই গুলির ঘটনার আগে গণমাধ্যমে আর তাঁর নাম শোনা যায়নি। নিউইয়র্কের আদালতে কেবল গজনীর ওই ঘটনারই বিচার হয়েছে। তাঁকে অপহরণ বা বাগরামে আটকে রাখা সংক্রান্ত অভিযোগের কোনো তদন্ত হয়নি। আফিয়া সিদ্দিকির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা এর আগে বিভিন্ন সময়ে আল-কায়েদাকে অর্থায়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হামলা পরিকল্পনার কথা বলে এসেছেন। তাঁর আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, আফিয়ার বিচার প্রক্রিয়ায় দ্বৈতনীতি অনুসরণ করেছে মার্কিন প্রশাসন।

* দেশে দেশে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন ঃ-

মাকিন সাম্রাজ্যবাদ দেশে দেশে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে সারা পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন গুরুত্বপূণ অঞ্চল সমূহে সামরিক বিভিন্ন ঘাঁটি স্থাপন করেছে। এ সামরিক ঘাঁটির প্রধান লক্ষ্য বিশ্বময় আধিপত্য অক্ষুন্ন রাখা এবং বিরোধীদের নিমূল করা।বিশ্বব্যাপী মাকিন সাম্রাজ্যবাদের ৭০০টি সামরিক ঘাটি রয়েছে।সারা পৃথিবীকে একক নেতৃত্বে পরিচালনার মানসে এ সামরিক ঘাটি গুলো করা হয়। এর কয়েকটির উল্লেখ নিন্মে দেয়া হলো।
# বিশ্বে মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ঘাঁটি সমূহ
১. এভিয়েনো এয়ার বেস-এটি ইতালির এভিয়েনোতে অবস্থিত।
২. ইনকিরলিক এয়ার বেস-এটি তুরস্কের ইনকিরলিকে অবস্থিত।
৩. নেটো এয়ার বেস গিলেন কিবচেন-এটি জামানীর গিলেন কিবচেনে অবস্থিত।
৪. জয়েন্ট ফোস কমান্ড ব্রুনসাম-এটি নেদারল্যান্ডেসের ব্রুনসামে অবস্থিত।
৫. ক্যাডেনা এয়ার বেস-এটি জাপানের ক্যাডেনা ওকিনভিয়ায় অবস্থিত।
৬. কুনসান এয়ার বেস-এটি দক্ষিণ কোরিয়ার কুনসানে অবস্থিত।
৭. লেজিস ফিল্ড-এটি পতুগালের প্রেই দ্য ভাইটরিয়ায় অবস্থিত।
৮. মিসওয়া এয়ার বেস-এটি জাপানের মিসওয়ায় অবস্থিত।
৯. মোরো এয়ার বেস-এটি স্পেনের মোরো ডিলাফ্রন্টেরায় অবস্থিত।
১০. ওসান এয়ার বেস-এটি দক্ষিণ কোরিয়ার সংটনে অবস্থিত।
১১. রাফ ফেল্টওয়েল-এটি যুক্তরাজ্যের ফেল্টওয়েলে অবস্থিত।
১২. রাফ ল্যাকেন হেলথ-এটিও যুক্তরাজ্যের ল্যাকেন হেলথ অবস্থিত।
১৩. রাফ মিলডেনহল-এটিও যুক্তরাজ্যের মিলডেনহলে অবস্থিত।
১৪. রাফ ক্রোটন-এটিও যুক্তরাজ্যের ক্রোটনে অবস্থিত।
১৫. রামস্টেইন এয়ার বেস-এটি জামানীর রামস্টেইন মিসেনবাকে অবস্থিত।
১৬. স্পেংডাইলেম এয়ার বেস-এটিও জামানীর স্পেংডাইলেমে অবস্থিত।
১৭. ওকোটা এয়ার বেস-এটি জাপানের টোকিওতে অবস্থিত।
# বিশ্বে মাকিন নৌঘাঁটি সমূহ
১. দিয়াগো গাসিয়া-এটি ভারত মহাসাগরে অবস্থিত।
২. পাল হারবার-এটি হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত।
২. সুবিক বে-এটি প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত।
৩. গুয়াম-এটিও প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত।
৪. ওকিনাওয়া-এটি জাপান সাগরে অবস্থিত।
৫. ওয়ান তানামো-এটিও প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থি।


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×