স্যাডিজম নামক রোগটি Medical Dictionary তে খুঁজলে এর অস্তিত্ব হয়তো খুঁজে পাওয়া নাও যেতে পারে । কারণ এটি কোন Typical রোগ নয় , এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ , লক্ষণ ও প্রতিকার নেই । কিন্তু সমাজে এ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয় । জীবন চলার পথে SADIST লোকের খপ্পরে পড়েননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল ।
SADISM কি ?
অন্যকে কষ্ট দিয়ে কিংবা অপরের দুঃখ – কষ্ট দেখে আত্ম-প্রসাদ লাভকে SADISM বলা হয়। আর যে ব্যক্তির মধ্যে এই নেতিবাচক গুণটি অতিরিক্ত মাত্রায় দৃশ্যমান তাকে আমরা SADIST বলে থাকি । এ ব্যাধিটিকে কিছুটা মনস্তাত্বিক Catagory তে ফেলা যেতে পারে । একটু অন্যভাবে যদি বলা হয় তবে অন্যের ভালো সহ্য করতে না পারা , অপরকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে বিকৃত আনন্দ লাভ করাই SADISM. অর্থাৎ এক কথায় SADISM এক ধরনের মানসিক বিকারগ্রস্ততা বৈ কিছু নয় ।
প্রকারভেদ ও প্রকৃতি
SADISM এর কোন সুনির্দিষ্ট প্রকারভেদ ও প্রকৃতি নেই । বিভিন্ন ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে এটি বিভিন্ন রূপে এবং বিভিন্ন মাত্রায় প্রকাশ পায় । যিনি এ মানসিক বিকার গ্রস্ততায় আক্রান্ত , তিনি অবচেতন মনেই রোগটি লালন করে থাকেন । SADIST ব্যক্তিবর্গের সামাজিক অবস্থান ভেদে এর প্রকৃতি এবং রূপও ভিন্ন হয়ে থাকে ।
সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত বিরূপ প্রকৃতি , বনের হিংস্র জীব জন্তুর সাথে লড়াই করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে । ডারউইনের “যোগ্যতমের জয় ” থিয়োরি সেই আদিকাল থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দীতে এসে আজও প্রাসঙ্গিক এবং পরিক্ষিত সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত । শুধু পার্থক্য হচ্ছে এখন মানুষই মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী , অন্য কেউ নয় । জীবনের সকল ক্ষেত্রে একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করে মানুষকে টিকে থাকতে হচ্ছে । এ প্রতিযোগিতায় যিনি শক্তিমান তিনি সর্বদা দুর্বলকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন । আর দুর্বল চেষ্টা করছেন শক্তি সঞ্চয় করে শক্তিমানকে ছাড়িয়ে যেতে । এভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা এক সময় SADISM এর দিকে মোড় নেয়।অর্থাৎ শক্তিমান বা উপরস্থ ব্যক্তি দুর্বল বা অধস্তনকে দাবিয়ে রাখার অস্ত্র হিসেবে তাকে পদে পদে হেনস্থা বা অপদস্থ করে মনে আত্মপ্রশান্তি অনুভব করেন ।
সেক্সুয়াল সিডিজম
এটা একধরনের বিকৃত যৌন রুচি (Sexual Perversion)। এই ধরনের বিকৃতিতে পুরুষ সঙ্গীটি তার স্ত্রী যৌনসঙ্গীকে আঘাত করে, ব্যথা দিয়ে বা বিভিন্ন অত্যাচার করে চরম যৌনতৃপ্তি (Gratification) লাভ করে। এই বিকৃত রুচির লোকটিকে বলা হয় স্যাডিস্ট (Sadist)। স্যাডিস্ট তার সঙ্গীনিকে লাঠি বা চাবুক দিয়ে পিটিয়ে, কামড়ে দিয়ে এমনকি ছুরি দিয়ে কেটে বা অন্যভাবে আঘাত করে বেদনার্ত হতে দেখে পরিতৃপ্তি লাভ করে। বিকৃতির চুড়ান্ত পর্যায়ে অনেক স্যাডিস্ট তার সঙ্গীনিকে হত্যা করে তার যৌনতৃপ্তি লাভ করে, তখন একে বলা হয় Lust murder । কোনো কোনো মহিলাও এমন বিকৃত রুচির যৌনাচারে অভ্যস্ত হতে পারে। এ ধরনের মানসিক বৈকল্যের জন্য অবশ্যই মনোরোগ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া উচিত।
নারী ও শিশু নির্যাতন – SADISM এরই ভিন্ন রূপ
নারী ও শিশু নির্যাতনের নানাবিধ কারণ থাকতে পারে । কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে এর জন্য পুরুষের SADIST মন মানসিকতাকেই অনেকাংশে দায়ী করা যায় । আমাদের পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে নারীর অবস্থান থাকে সব সময় নিচে । পুরুষ নারীকে তার একান্ত অনুগত , আজ্ঞাবহ হিসাবে পেতেই বেশি পছন্দ করে থাকে । কিন্তু নারী যদি যোগ্যতায় প্রায় পুরুষের সমকক্ষ হয়ে যায় তখন ব্যক্তিত্বের সংঘাত অনিবার্য । আর তখনই পুরুষের মধ্যে SADISM এর বহিঃ প্রকাশ ঘটে নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে । নারীর বাইরে চলাচল , চাকুরি ইত্যাদির উপর বিধি নিষেধ আরোপ করে পুরুষ তার পুরুষত্ব জাহির করে । এছাড়া যৌতুক দাবী , বিচ্ছেদের হুমকি প্রদান ইত্যাদি আচরণ পুরুষের SADIST মন মানসিকতার পরিচয় বহন করে ।
জন্মের পর শিশুর মানসিক বিকাশ নির্ভর করে তার অভিভাবক তথা বাবা মায়ের উপর । ছোটকাল থেকে শিশুরা হেসে খেলে , আনন্দের সাথে শিক্ষা গ্রহন করবে এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু কতিপয় বাবা মা শিশুদের শাসনের নামে নানা রকম নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ব করে শৈশবেই তার মানসিক বিকাশকে বাধা গ্রস্থ করে তোলেন । আমি বাবা মায়ের শাসনের বিপক্ষে নই । কিন্তু শাসনের সীমা পরিসীমা সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারনার অভাবে অনেক অভিভাবক যা করে থাকেন তা রীতিমতো শিশু নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে । সন্তানের সঙ্গে বাবা মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাঞ্ছনীয় । কিন্তু SADIST বাবা মা পরিবারে শাসকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হন যা আদৌ কাম্য নয় ।
কর্মক্ষেত্রে SADISM
কর্মক্ষেত্রে ও SADISM এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে । অফিসে যদি আপনার উপরস্থ কর্মকর্তা SADIST মন মানসিকতার অধিকারী হন তবে আপনাকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে । উনি প্রতিনিয়ত আপনার কাজের খুঁত খুঁজে বেড়াবেন এবং কোন ভুল খুঁজে পেলে আপনার উপর টর্নেডো ঝড় বয়ে যাবে ! ভাই বোন , আত্মীয় কিংবা কোন বন্ধুর বিয়েতে attend করবেন বলে ২/১ দিনের ছুটি চাইলে SADIST Boss অবাক হয়ে বলবেন -”আরে আমি তো নিজের বিয়েতেই ছুটি পাইনি । ভাই বোন, আত্মীয় স্বজনের বিয়েতে ছুটির কি প্রয়োজন? “বাবা – মায়ের অসুস্থতার জন্য ছুটি চাইলে ছুটি তো দিবেই না , উল্টো আপনাকে উপদেশ বানী শুনাবে এই বলে, “আপনি তো আর ডাক্তার নন , ছুটি গিয়ে কি করবেন? তার চেয়ে এক কাজ করুন , বাড়িতে কিছু টাকা পয়সা পাঠিয়ে দিন , আপনার বাবা মায়ের ভাল চিকিৎসা হবে । এভাবেই SADIST boss আপনাকে মানসিক চাপে রেখে পুলকিত হবেন।
রাজনীতিতে SADISM
রাজনীতিতেও SADISM এর উপস্থিতি লক্ষণীয় । সরকারী দল কর্তৃক বিরোধী দলকে সংসদে কথা বলতে না দেওয়া , নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা হরতাল পালনে বাধা প্রদান , বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য এর এলাকায় উন্নয়নে অনীহা ইত্যাদি সরকার দলীয় SADISM এর উদাহরণ । একই ভাবে বিরোধী দল কর্তৃক লাগাতার হরতাল আহবান করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা , লাগাতার সংসদ বর্জন , সকল ক্ষেত্রে সরকারকে অসহযোগিতা করা বিরোধী দলীয় SADISM এর প্রকৃষ্ট উদাহরন ।
SADISM হতে মুক্তির উপায়
সকল স্তরে মনের সংকীর্ণতা পরিহার করে সবাইকে উদারমনা হতে হবে।
পরিবার , কর্মক্ষেত্র , রাজনীতি সকল ক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝা পড়া ভাল থাকলে SADISM এর কুপ্রভাব হতে মুক্তি সম্ভব ।
মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত মতাদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে । কিন্তু অন্যের মতাদর্শকে অবজ্ঞা না করে সংলাপ বা আলোচনার মাধ্যমে অনেক জটিল সমস্যার শ্রেয়তর সমাধান সম্ভব ।
নারী ও শিশুকে কখনও অবলা বা দুর্বল না ভেবে তাদেরকে মানুষ হিসবে মূল্যায়ন করতে হবে ।
কর্মক্ষেত্রে উপরস্থ কর্মকর্তাকে অধিনস্তদের প্রতি সহানুভুতিশীল হতে হবে । নিজের অতীত অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা অধীনস্থদের উপর প্রয়োগ না করে বরং এ থেকে শিক্ষা নিয়ে অধীনস্থদের সাথে ভাল আচরন করলে সবার মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হবে । অফিসে ফিরে আসবে প্রাণ চাঞ্চল্য । বিনিময়ে এর সুফল ভোগ করবে সবাই
সর্বোপরি , আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় না হলে SADISM এর রাহু গ্রাস থেকে মুক্তির আশা হবে সুদূর পরাহত।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৪৯