অনেক দিন গান শুনি না.। আজ কি মনে হল গান শুনতে বসলাম....
হঠাৎ একটি গান খুব মনে ধরলো..
"মাঝে মাঝে পৃথিবীটা ছোট মনে হয়.
কোথায় রাখবো পা..পথ চলা দুরে থাক.
নুজো এ পিঠ আমার একটু বিরতি পাক.
এত স্বপ্নের বোঝা নিয়ে দাঁড়াবো কোথায়.???
ঠিকই তো বলেছে..শিল্পী.. আমাদের পৃথিবী আজ কত ছোট হয়ে গেছে.। বিজ্ঞান আজ আমাদের এ কোথায় নিয়ে এসেছে একবার ভেবেছেন কি..?
**********
কিন্তু আমাদের দেশে পৃথিবী ছোট হবার কেমন প্রভাব পড়েছে আমি সেই বিষয়ে কিছু লিখছি.। এটা নিতান্তই আমার মনের কিছু অযাচিত ভাবনার ফসল.।
আমি কাউকে আঘাত করতে বা তিরস্কার করতে চাচ্ছি না..। কারও মনে লাগলে ক্ষমা করবেন...
কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি না .. তাই বিচ্ছিন্ন ভাবেই শুরু করলাম.।
আমাদের দেশের যারা গন্যমান্য ব্যাক্তি আছেন তারা বেশের ভাগই আকারে ছোট.. আর তাই তাদের চিন্তা ভাবনা ও কথা বার্তাও কেমন জানি ছোট হয়ে এসেছে..। আর তাইতো সংসদে দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে সেই বিষয়ে আলোচনা না করে তাদের ক্ষুদ্রতম মনস্তাত্ত্বিক প্রতিহিংসা ফুটিয়ে তুলছেন..।
আর এই প্রতিহিংসার ফসল হল হরতাল অবরোধ নৈরাজ্য ও যাবতীয় ছোট খাটো হামলা মামলা , রাহাজানি ভাংচুর ও এই জাতীয় অন্যান্য কর্মকান্ড । এছাড়াও পুলিশের ছোট খাটো লাঠি খেলা তো আছেই..
শিক্ষা ব্যবস্থাও ছোট হয়ে গেছে.. তা নাহলে কেন আমাদের উচ্চ শিক্ষিত উকিল গন আদালতে মুখ থাকতে হাতাহাতি করবেন.।
আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের ছোট নজরের কথা তো সবারই জানা.। যারা শিক্ষা দেবেন তারাই বা কেন ছাত্রীদের দিকে ছোট নজরে তাকাবেন.।
চাকুরির বাজারও এখন ছোট ..। কারণ রেফারেন্স শব্দটা একে এত বেশি ছোট করে ফেলেছ.। দেশে যেন সবারই মামা খালুতে ভরে গেছে.।.. তাছাড়া টাকার ব্যাপার তো আছেই.।
স্থান সংকটের কথা আর কি বলবো..দিন দিন না প্রতিদিনই কয়েকটা করে বিল্ডিংয়ের জন্ম হচ্ছে এই শহরে.। জাইগা পাবেন কোথায়.। নদীও ভরাট হয়ে যাচ্ছে..আর যারা প্রতিনিয়ত বাসে চেপে আমাদের এই ঢাকা শহরে চলাফেরা করেন তারা তো ভালই বোঝেন..। রাস্তাও তো মনে হয় ছোট হয়ে গেছে.। দেখুন না কত ছোট ছোট গাড়ি তবুও রাস্তায় জ্যাম.।
সবারই তো দেখি সময়ও কমে গেছে এখন ..। কেউ কাউকে সময় দিতে চায় না.। সবায় আছে দৌড়ের ওপর.।
মানুষের জীবনও আজ ছোট হয়ে এসেছে.। এই শহরে যারা আছেন সবাই কোন না কোন রোগে ভুগছেন.। এইতো সেদিন দেখলাম ৩০/৩৫ বছরের একটা মানুষ স্ট্রোক করে মরে পড়ে আছে । মানুষ জায়গাটাই ছোট্ট করে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে.। আর এখন তো সরকারি বেসরকারি বা ক্ষমতাধর লোকজনের বিষয়ে কোন মতামত প্রদান করলেও অনেকের জীবন ছোট হয়ে যায়.।
বর্তমানে যুবতী মেয়েদেরও জীবন খুব ছোট হবার ঘটনা ঘটছে এদেশে.। এবং এর জন্য দায়ি করা হচ্ছে যুবক ছেলেদের.। এতে অনেকেই আবার বিনা দোষে ছোটও হচ্ছে.। আর এই কাজ কে ছোট করে ইভ-টিজিং নাম দেয়া হয়েছে ।
কিন্তু যুবতীদের এই ছোট ছোট পোশাক পরা দেখলে তো যুবকদের মনে একটু ঝড় ওঠেই তাই না.। যুবতীদের ঐ হেলেদুলে হাটা যে কত যুবকের চরিত্র ছোট করে ফেলছে তা তো কেউ দেখেনা..।
অনেকে তাই রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে ঐ যুবতিকে অফার করছে প্রেম করার জন্য.। অনেকে সফল হচ্ছে রং পাকা পকেটও নয় ফাকা চেহারাটাও আদর মাখা.একেই লাগাবো আঠা বাকি গুলার মুখে ঝাটা.. যুবতীরা এমন করার পর.কিছু ছেলে আংগুর ফল টক বলে অন্য ফলের সন্ধানে যাচ্ছে .. আর যারা নিজেকে বীর পুরুষ ভাবে তারা অকর্ম করার ছোট খাটো চেষ্টা চালাচ্ছে.।
আর প্রেম জুটি ছোটখাটো চিপাই-চুপাই বা বন্ধুর ছোট ফ্লাটে যেয়ে অনেক গভীর ভাবে মেলামেশা করছে .।
আবার যদি কোন ভাবে জোড়া লেগেও যাও তাতেও সমস্যা । এই তো ২ দিন আগেই চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রেম করার অপরাধে মেয়ের বাবা ও ফুপা মিলে প্রেমিক ছেলেটাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ছোট পাট খেতের মাঝে ভাল মত ধোলাই দিয়ে চলে যায় । পরে হাসপাতালে ছেলেটির মৃত্যু ঘটে । ছেলেটির বাব মা এর সব স্বপ্নই ছোট হতে হতে শেষ হয়ে গেছে.।
মিডিয়া জগতও ছোট হয়ে গেছে.. কার কাণ পেকেছে তাও এখন মিডিয়া কেমন করে জানো জেনে যায়..। একেবারেই ইউনিক ব্যাপার.। আবার নাটক সিনেমাও এখন মনে হয় একটু ছোট আকারে প্রকাশিত হয়..। যার ফলে জনগণ ছবির মূলভাব দেখেই পুরা কাহিনী বলে ফেলতে পারে ছোট আকারে..। আর আমাদের হিরোইনদের ছোট ছোট পোশাকের কথা আর নাই বা বললাম ..
সংগীত জগতে এখন তো অটো-টিউনের জয়জয়কার চলছে.। যার কল্যাণে অনেক বড় গলার শিল্পও তাদের কন্ঠ ছোট করে ফেলেছেন যেন যাদুর কাঠির ছোয়া..। আর গান তো খুব একটা লিখা লাগে না.. পুরাতন দিনের গান গুলা একটু ঘসে মেজে টিউন করে ছেড়ে দিলেই হয়.. অমক ফিচারিং তমকের অ্যালবাম......।
এখন প্রায় অলিতেগলিতে স্কুল কলেজ হওয়াতে স্কুলে ছাত্র ছাত্রীও শিক্ষকদের সমান সংখ্যক উপস্থিতি দেখা যায়..। অর্থাৎ তাদের উপস্থিতিও ছোট আকারের হয় ..।
আর রেজাল্টের ক্ষেত্রেও এখন আগের সেই বড় বড় ডিভিশন বাদ দিয়ে (+) (-) নাম দেয়া হয়েছে আর সাথে যুক্ত করছে A B C D E ......
দেশে এখন অর্ধশতকের বেশি ব্যাংক .। তাই তদের কার্যক্রমও ছোট হয়ে এসেছে.। আবার এটিএম বুথ হওয়ায় তো রাস্তাঘাটেও ব্যাংকের ছোট সংস্করণের অবস্থান বলা যায়..।
অনেক লিখে ফেললাম.। আমারও ধৈর্য্য ছোট হয়ে এসেছে ..। আজ এই পর্যন্তই .। আগামীতে আবার আপনাদের সামনে হাজির হব নতুন কোন কথামালা নিয়ে..।
ভাল থাকবেন ছোট করে..।
আমার এখানে অনেক কিছুই বাদ পড়েছে লেখাটি ছোট করার জন্য
তাই মন্তব্য করার সময় আপনারা সেগুলো ছোট করে উল্লেখ করে দিবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৬