somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব সন্তান হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলামের সর্ব শেষ নবী

০৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মোহাম্মদ বলা হয় ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং ইসলামী বিশ্বাসমতে আল্লাহ বা ঈশ্বর কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী তথা বার্তাবাহক রাসুল যার উপরে আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল । অমুসলিমদের মতে তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রবর্তক । অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা এবং বিশেষজ্ঞদের মতে মুহাম্মাদ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় নেতা । তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হলো আধ্যাত্মিক এবং জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন । তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনেও । সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য । বিবাদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা অর্জন ।


আরবি ক্যালিগ্রাফিতে লিখিত
মুহাম্মাদের নাম


সে সময়ের আরবে অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল ব্যবসায় ও পশুপালন । নোমেডীয় অঞ্চলের সাথে এখানকার বাণিজ্য যোগাযোগ ছিল । আরব বলতে এখানে মক্কা ও মদিনা এবং এদের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলো নিয়ে গড়ে ওঠা অংশকে বুঝানো হয়েছে । এই অংশের সাথেই মুহাম্মাদের জীবনের সাক্ষাৎ সম্পৃক্ততা ছিল ।


হেরা গুহা, এখানেই মুহাম্মাদ প্রথম প্রত্যাদেশ পান
প্রত্যাদেশ অবতরণের পর মুহাম্মাদ বুঝতে পারেন যে, এটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাকে পুরো আরব সমাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড়াতে হবে কারণ সে সময় নেতৃত্বের ভীত ধ্বংস করা ব্যতীত ইসলাম প্রচার এবং প্রতিষ্ঠার অন্য কোন উপায় ছিলনা । তাই প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন । মুহাম্মাদের আহ্বানে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন তার সহধর্মিণী খাদিজা । এরপর মুসলিম হন মুহাম্মাদের চাচাতো ভাই এবং তার ঘরেই প্রতিপালিত কিশোর আলী ইসলাম গ্রহণের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর । ইসলামের বাণী পৌছে দেয়ার জন্য নবী নিজ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা করেন । এই সভায় কেউই তার আদর্শ মেনে নেয়নি এই সভাতে শুধু একজনই ইসলাম গ্রহণ করে সে হলো আলী । ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি ছিল নবীর অন্তরঙ্গ বন্ধু আবু বকর । এভাবেই প্রথম পর্যায়ে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন । এবং এই প্রচারকাজ চলতে থাকে সম্পূর্ণ গোপনে ।
মুহাম্মাদের উপর অনেক জীবনীকার জীবনীগ্রন্থ লিখেছেন । তার জীবনীগ্রন্থকে সাধারণভাবে সিরাত গ্রন্থ বলা হয় । মুহাম্মাদের ইন্তেকালের পর হতে অনেক মুসলিম এবং অমুসলিম তার জীবনীগ্রন্থ লিখেছে । এর মাঝে উল্লেখযোগ্য নামগুলি হলো ইবনে ইসহাক রচিত মহানবীর সর্বাধিক প্রাচীনতম নির্ভরযোগ্য জীবনী সংকলন সীরাতে ইবনে ইসহাক যা অনেকের মতে বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত এবং তা হতে সম্পাদিত সীরাতে ইবনে হিশাম, আল তাবারী রচিত সীরাতে রাসূলাল্লাহ ইবনে কাসীর রচিত আল সীরাত আল নববিয়াত মার্টিন লিংসের মুহাম্মদ হিজ লাইফ বেজড অন দ্য আর্লিয়েস্ট সোর্সেস ক্যারেন আর্মস্ট্রং রচিত মুহাম্মদ এ বায়োগ্রাফি অব দ্য প্রফেট এবং মুহাম্মদ এ প্রফেট অব আওয়ার টাইম মার্মাডিউক পিকথাল রচিত আল আমীন এ বায়োগ্রাফি অব প্রফেট মুহাম্মদ সাম্প্রতিককালে রচিত আর্ রাহীকুল মাখতূম বাংলা ভাষায় গোলাম মোস্তফা রচিত বিশ্বনবী এয়াকুব আলী চৌধুরীর নুরনবী আরো অনেকে লেখেছেন । মুহাম্মাদ বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন । প্রচলিত ধারনা মোতাবেক তার জন্ম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ই রবিউল আওয়াল বা আরবি রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখে । প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মন্টগোমারি ওয়াট তার পুস্তকে ৫৭০ সাল উল্লেখ করেছেন । তবে তার প্রকৃত জন্মতারিখ উদঘাটন সম্ভবপর নয় । তাছাড়া মুহাম্মদ নিজে কোনো মন্তব্য করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি । এজন্যই এ নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে । এমনকি জন্মমাস নিয়েও ব্যপক মতবিরোধ পাওয়া যায় । যেমন, একটি বর্ণনায় তার জন্ম ৫৭১ সালের ৯ই রবিউলআওয়াল ২৬শে এপ্রিল সাইয়েদ সোলাইমান নদভী, সালমান মনসুরপুরী এবং মোহাম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে । তবে নবীর জন্মের বছরেই হস্তী যুদ্ধের ঘটনা ঘটে এবং সে সময় সম্রাট নরশেরওয়ার সিংহাসনে আরোহনের ৪০ বছর পূর্তি ছিল এ নিয়ে কারো মাঝে দ্বিমত নেই । মুহাম্মাদের পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব তার জন্মের প্রায় ছয় মাস পূর্বে পরলোকগমণ করেন । তত্কালীন আরবের রীতি ছিল যে তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ দেহ এবং সুঠাম গড়ন তৈরির জন্য জন্মের পরপরই দুধ পান করানোর কাজে নিয়োজিত বেদুইন মহিলাদের কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফেরত নিতেন । এই রীতি অনুসারে মুহাম্মদকেও হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবের অপর নাম হালিমা সাদিয়া তার হাতে দিয়ে দেওয়া হয় । এই শিশুকে ঘরে আনার পর দেখা যায় হালিমার সচ্ছলতা ফিরে আসে এবং তারা শিশুপুত্রকে সঠিকভাবে লালনপালন করতে সমর্থ হন । তখনকার একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য শিশু মুহাম্মদ কেবল হালিমার একটি স্তনই পান করতেন এবং অপরটি তার অপর দুধভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন । দুই বছর লালনপালনের পর হালিমা শিশু মুহাম্মদকে আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন । কিন্তু এর পরপরই মক্কায় মহামারী দেখা দেয় এবং শিশু মুহাম্মাদকে হালিমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয় । হালিমাও চাচ্ছিলেন শিশুটিকে ফিরে পেতে । এতে তার আশা পূর্ণ হল ।


মসজিদ-এ-নববী
ইসলামী বিশ্বাসমতে এর কয়েকদিন পরই একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে একদিন শিশু নবীর বুক চিরে কলিজার একটি অংশ বের করে তা জমজম কূপের পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হয় ফেরেশতা জিব্রিল এবং ফেরেশতা মিকাইল । এই ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে বক্ষ বিদারণের ঘটনা হিসেবে খ্যাত । এই ঘটনার পরই হালিমা মুহাম্মাদকে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন । ছয় বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি মায়ের সাথে কাটান । এই সময় একদিন আমিনার ইচ্ছা হয় ছেলেকে নিয়ে মদীনায় যাবেন । সম্ভবত কোন আত্মীয়ের সাথে দেখা করা এবং স্বামীর কবর জিয়ারত করাই এর মূল কারণ ছিল । আমিনা ছেলে মুহাম্মদ ও শ্বশুর এবং দাসী উম্মে আয়মনকে নিয়ে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদীনায় পৌছান । তিনি মদীনায় একমাস সময় অতিবাহিত করেন । একমাস পর মক্কায় ফেরার পথে আরওয়া নামক স্থানে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন । মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মোত্তালেব শিশু মুহাম্মাদকে নিয়ে মক্কায় পৌঁছান । এর পর থেকে দাদাই মুহাম্মাদের দেখপাল করেন । মুহাম্মদের বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন তার দাদাও মারা যান । মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে মোহাম্মদের দায়িত্ব দিয়ে যান ।


তুরস্কের এদ্রিনে মহানবীর নামের স্বাক্ষর সম্বলিত লিপি
আবু তালিব ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আরবদের নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার সিরিয়া সফরে যেতেন । মুহাম্মাদের বয়স যখন ১২ বৎসর তখন তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন । প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারলেননা । যাত্রাপথে বসরা পৌছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাবু ফেললেন । সে সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল । শহরটিতে জারজিস সামে এক খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন । তিনি তার গীর্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন । এ সময় তিনি বালক মুহাম্মাদকে দেখে শেষ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন । ফুজ্জারের যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন নবীর বয়স ১৫ বছর । এই যুদ্ধে তিনি স্বয়ং অংশগ্রহণ করেন । যুদ্ধের নির্মমতায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন । কিন্তু তার কিছু করার ছিলনা । সে সময় থেকেই তিনি কিছু একটি করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন । তার উত্তম চরিত্র ও সদাচরণের কারণে পরিচিতমহলে সবাই তাকে আল-আমিন বলে সম্বোধন করতেন ।

মুহাম্মাদের নবুওয়তের আগে জীবণ এবং ইসলাম ধর্ম প্রচারের প্রাথমিক দশায় আরবের মানচিত্রঃ
আরবদের মধ্যে বিদ্যমান হিংস্রতা, খেয়ানতপ্রবণতা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমনের জন্যই হিলফুল ফুজুল নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় । মুহাম্মাদ (সঃ) এতে যোগদান করেন এবং এই সংগঠনকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট ভূমিকা রাখেন । বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় তরুণ বয়সে মুহাম্মাদের তেমন কোন পেশা ছিলনা । তবে তিনি বকরি চরাতেন বলে অনেকেই উল্লেখ করেছেন । সাধারণত তিনি যে বকরিগুলো চরাতেন সেগুলো ছিল বনি সা'দ গোত্রের । কয়েক কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি মক্কায় বসবাসরত বিভিন্ন ব্যক্তির বকরিও চরাতেন । এরপর তিনি ব্যবসা শুরু করেন । মুহাম্মাদ অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবসার কাজে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেন । এতই খ্যাতি তিনি লাভ করেন যে তার উপাধি হয়ে যায় আল আমিন এবং আল সাদিক যেগুলোর বাংলা অর্থ হচ্ছে যথাক্রমে বিশ্বস্ত এবং সত্যবাদী । ব্যবসায় উপলক্ষ্যে তিনি সিরিয়া, বসরা, বাহরাইন এবং ইয়েমেনে বেশ কয়েকবার সফর করেন । মুহাম্মাদের সুখ্যাতি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবহিত হয়েই তাকে নিজের ব্যবসার জন্য সফরে যাবার অনুরোধ জানান । মুহাম্মাদ এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং খাদীজার পণ্য নিয়ে সিরিয়ার অন্তর্গত বসরা পর্যন্ত যান ।

খাদীজা মাইছারার মুখে মুহাম্মাদের সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ভূয়সী প্রশংশা শুনে অভিভূত হন । এছাড়া ব্যবসায়ের সফলতা দেখে তিনি তার যোগ্যতা সম্বন্ধেও অবহিত হন । এক পর্যায়ে তিনি মুহাম্মাদকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । তিনি স্বীয় বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনব্বিহরের কাছে বিয়ের ব্যাপরে তার মনের কথা ব্যক্ত করেন । নাফিসার কাছে শুনে মুহাম্মাদ বলেন যে তিনি তার অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন জানাবেন । মুহাম্মাদ তার চাচাদের সাথে কথা বলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন । বিয়ের সময় খাদীজার বয়স ছিল ৪০ আর মুহাম্মাদের বয়স ছিল ২৫ । খাদীজার জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিয়ে করেননি । খাদীজার গর্ভে মুহাম্মাদের ৬ জন সন্তান জন্মগ্রহণ করে যার মধ্যে ৪ জন মেয়ে এবং ২ জন ছেলে । তাদের নাম হলোঃ কাসেম, যয়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম', ফাতিমা এবং আবদুল্লাহ । ছেলে সন্তান দুজনই শৈশবে মারা যায় । মেয়েদের মধ্যে সবাই ইসলামী যুগ পায় এবং ইসলাম গ্রহণ করে এবং একমাত্র ফাতিমা ব্যতিত সবাই নবীর জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করে ।
মুহাম্মাদের বয়স যখন ৩৫ বছর তখন কা'বা গৃহের পূনঃনির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় । বেশ কয়েকটি কারণে কাবা গৃহের সংস্কার কাজ শুরু হয় । পুরনো ইমারত ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করা শুরু হয় । এভাবে পুনঃনির্মানের সময় যখন হাজরে আসওয়াদ (পবিত্র কালো পাথর) পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয় তখনই বিপত্তি দেখা দেয় । মূলত কোন গোত্রের লোক এই কাজটি করবে তা নিয়েই ছিল কোন্দল । নির্মাণকাজ সব গোত্রের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল । কিন্তু হাজরে আসওয়াদ স্থাপন ছিল একজনের কাজ । কে স্থাপন করবে এ নিয়ে বিবাদ শুরু হয় এবং চার-পাঁচ দিন যাবৎ এ বিবাদ অব্যাহত থাকার এক পর্যায়ে এটি এমনই মারাত্মক রূপ ধারণ করে যে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয় । এমতাবস্থায় আবু উমাইয়া মাখজুমি একটি সমাধান নির্ধারণ করে যে পরদিন প্রত্যুষে মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে যে প্রথম প্রবেশ করবে তার সিদ্ধান্তই সবাই মেনে নেবে । পরদিন মুহাম্মাদ সবার প্রথমে কাবায় প্রবেশ করেন । এতে সবাই বেশ সন্তুষ্ট হয় এবং তাকে বিচারক হিসেবে মেনে নেয় । আর তার প্রতি সবার সুগভীর আস্থাও ছিল । যা হোক এই দায়িত্ব পেয়ে মুহাম্মাদ অত্যন্ত সুচারুভাবে ফয়সালা করেন । তিনি একটি চাদর বিছিয়ে তার উপর নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ রাখেন এবং বিবদমান প্রত্যেক গোত্রের নেতাদের ডেকে তাদেরকে চাদরের বিভিন্ন কোণা ধরে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বলেন এবং তারা তা ই করে । এরপর তিনি পাথর উঠিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করেন ।
নবুওয়ত প্রাপ্তি
একাদশ শতাব্দীর পারসিয়ান কুরআনের একটি পৃষ্ঠা
ইসলামিক তথ্যসূত্রানুসারে চল্লিশ বছর বয়সে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ নবুওয়ত লাভ করেন । অর্থাৎ এই সময়েই সৃষ্টিকর্তা তার কাছে বানী প্রেরণ করেন । আজজুহরি বর্ণিত হাদীসে অনুসারে মুহাম্মাদ সত্য দর্শনের মাধ্যমে ওহী লাভ করেন । ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর মুহাম্মাদ প্রায়ই মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন । তার স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাকে খাবার দিয়ে আসতেন । হাদীসের বর্ননা অনুযায়ী এমনি একদিন ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিব্রাইল তার কাছে আল্লাহ প্রেরিত বানী নিয়ে আসেন এবং তাকে এই পংক্তি কটি পড়তে বলেন:


পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন । সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে । পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না ।

উত্তরে মুহাম্মাদ জানান যে তিনি পড়তে জানেন না, এতে জিব্রাইল তাঁকে জড়িয়ে ধরে প্রবল চাপ প্রয়োগ করেন এবং আবার একই পংক্তি পড়তে বলেন । কিন্তু এবারও মুহাম্মাদ নিজের অপারগতার কথা প্রকাশ করেন । এভাবে তিনবার চাপ দেয়ার পর মুহাম্মাদ পংক্তিটি পড়তে সমর্থ হন । মুসলিমদের ধারনা অনুযায়ী এটিই কুরআনের প্রথম আয়াত গুচ্ছ; সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত। বর্ননায় আরোও উল্লেখ আছে প্রথম বানী লাভের পর মুহাম্মাদ এতই ভীত হয়ে পড়েন যে কাঁপতে কাঁপতে নিজ গ্রহে প্রবেশ করেই খাদিজাকে কম্বল দিয়ে নিজের গা জড়িয়ে দেয়ার জন্য বলেন । বারবার বলতে থাকেন, "আমাকে আবৃত কর"। খাদিজা নবীর সকল কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন এবং তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নেন । ভীতি দূর করার জন্য মুহাম্মাদকে নিয়ে খাদিজা নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নওফেলের কাছে যান । নওফেল তাকে শেষ নবী হিসেবে আখ্যায়িত করে । ধীরে ধীরে আত্মস্থ হন নবী । তারপর আবার অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য । একটি লম্বা বিরতির পর তাঁর কাছে দ্বিতীয় বারের মত স্রষ্টার বানী আসে । এবার অবতীর্ণ হয় সূরা মুদ্দাস্‌সির-এর কয়েকটি আয়াত । এর পর থেকে গোপনে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন মুহাম্মাদ ।

ছবি তথ্যঃ ইন্টারনেট এবং বাংলা পিডিয়া সহ আরো অনেক সাইট
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১:৪১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×